৪/৩/১৯৯০
শৈবাল–আমাকে
প্রথমে নির্বাচনের খবর। আমরা একটাও জিততে পারিনি। জনকও হেরেছে। ভেড়িয়া ৭০০০ ভোটে জিতেছে। আমরা গ্রামে ১২ হাজার ভোট পেয়েছি। বি. জে. পি. ২১ হাজার ভোট পেয়েছে। বি. জে. পি. আমাদের প্রচুর ভোট কেটেছে। লোহারার রানী বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যাই হোক হারাতে ভালোই হয়েছে।
তুই পখাঁজুর আর বস্তারের দুটো ম্যাপ পাঠাবি। এদিকে আমাদের মজদুরেরা মনে হয় তিন চার মাসের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল হচ্ছে। আমাদের পক্ষে ইলেকশানে লড়া ঠিক নয়। কারণ ঠিকমতো সংগঠন না থাকলে আমরা ইলেকশনের ফালতু চক্করে পড়ে যাচ্ছি। ইলেকশনে সম্বন্ধে সাধারণ ধারণা খুবই খারাপ। আমাদের লোকেরা অন্য পার্টিগুলো থেকে আলাদা কিছু ভাবে না।
হাসপাতাল মোটামুটি চলছে। ভীড় খুব হচ্ছে। এখনও ওপরেই রুগী ভর্তি হচ্ছে। নিচের ওয়ার্ড চালু করার মতো স্টাফের অভাব।
নতুন কি কি করা যেতে পারে suggestion পাঠাবি।
২৩/৭/১৯৯০
শৈবাল–আমাকে
আমরা ভালোই আছি, আমাদের একটা এ্যাম্বুলেন্স এসেছে। দুটো বুকলেট বেরিয়েছে, একটা জ্বরের উপর আর অন্যটা রক্তদানের উপর। ফাগুর গানের সংকলন বেরিয়েছে। গতকাল নিয়োগীজি ভিলাই গেছেন। আজ থেকে ACC সিমেন্টের মজদুরদের জন্য ভুখ হরতাল বসার কথা, এখনও অব্দি কোন খবর আসেনি।
তুই অতি অবশ্যই ৭ তারিখ আসবি, আশা করি তুই আসবিই। স্মরজিৎ ও দীপুকে অতি অবশ্যই আসতে বলবি। আমি ওদের জন্য বাঁশের আর লেবু গাছের ব্যবস্থা করে রাখবো।
তোকে ১০০০ টাকা পাঠিয়েছি, আসার সময় তিনটে ড্রাম ও চারটে হেভি লিফটার আনবি। তোর আসার সময় ওপরের অপারেশন থিয়েটার চালু হবে। এখন শেষ কাজকর্ম চলছে।
আমরা O.T. care এর অর্ডার দিয়েছি। আশা করি পনেরো/ কুড়ি দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ট্রাক মালিকরা হাসপাতালকে X-ray machine দিতে চায়, কিন্তু নেওয়া হবে কিনা এখনও ঠিক হয়নি।
৬/১১/১৯৯০
শৈবাল—আমাকে
মাঝে শরীর খারাপ হয়েছিল। তার উপর দেশের যা অবস্থা আর মূল্যহীন রাজনীতির যে চূড়ান্ত খেলা চলছে তাতে নিজেকে বড় অসহায় লাগছে। আমার মনে হয় বেশীর ভাগ লোকেই মনে মনে অনেকটা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। অবশ্য বেশীর ভাগই এটাতে কোনরকম মাথা ঘামায় না। আজ করসেবার নামে হাজার হাজার লোক শুধু রামকে ভালবাসে বলে যায়নি। মনে হয় তারা মুসলমান বিদ্বেষ থেকেই অনেকটা প্রেরণা পেয়েছে। আমার মনে হয় আজকের বুদ্ধিজীবিদের রাস্তায় নামা উচিত।
যাই হোক আমরা আর একটা প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছি। মহারাষ্ট্রের উপর একটা লেখা পাঠালাম। ভালো লাগলে কাউকে দিতে পারিস।
ডাক্তারের প্রয়োজন খুব বেড়েছে, একদমই সময় পাওয়া যাচ্ছে না। তুই বা চঞ্চলা পারলে চলে আয়। প্রদীপের সাথে দেখা হলে ওকে আসতে বলিস।
১৮/১/১৯৯১
শৈবাল–আমাকে
সুরেশবাবুর হাতে তোর চিঠি ও লেখা পেয়েছি। তোর লেখাটা ভালো হয়েছে, তবে আমার নামটা দেওয়াতে আমার আপত্তি আছে। লেখাটা আরো একটু বড় হলে ভালো হত। এছাড়া বিফলতার দিকগুলো আরো বেশী করে দেখালে ভালো হত।
যাই হোক মাঝে আমি বেশ কয়েকবার বাইরে গিয়েছিলাম। নর্মদা ঘাঁটী আন্দোলনে ছিলাম। বেশ নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হলো। মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলাম।
মালিকের সাথে সমঝোতা হয়েছে। তবে মাঝে আরো ১২ জন মজদুর গ্রেপ্তার হয়েছিল। ২০ জন মজদুরকে ট্রাকে করে ভান্ডারা জেলায় ছেড়ে আসে। অনেক অত্যাচারের পর সমঝোতা হল। লালহরা ঝান্ডা এই প্রথম মধ্যপ্রদেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হলো (মহারাষ্ট্রের গড়চিড়োলি আর চন্দ্রপুর জেলায়)।
এদিকে ভিলাই এর আন্দোলন চলছে। কবে ফয়সলা হবে বলা মুস্কিল। নিয়োগীজি এখন ভিলাইতেই রয়েছে। এদিকে ফিরত ঝাবুয়া জেলায় ইউনিয়ন বানিয়েছে। ওটা আগে বেনীরাম সাহুর দখলে ছিল। আমরা ঝাবুয়াতেও গিয়েছিলাম, মজদুররা সবাই ভীল আদিবাসী।
তোর চোখের কি খবর? শঙ্কর নেত্রালয় কি বললো?
নর্মদার ওপর উৎস মানুষে একটা লেখা পাঠিয়েছি।
এদিকে খাঁড়ি যুদ্ধ বেশ জমে উঠেছে। কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছি না, আমাদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে কিছু করা উচিত।
২২/৩/১৯৯১
শৈবাল—চঞ্চলাকে
আমাদের এখানে আন্দোলন চলছে। নিয়োগী এখনও জেলে রয়েছেন। আজ অবশ্য হাইকোর্ট থেকে একটা কেসে জামিন হয়েছে। তবে আরও একটা কেস রয়েছে। এদিকে ভিলাই-এ আন্দোলন তেজ গতিতে চলছে। যতদিন যাচ্ছে ততদিন লোকেরা জুড়ছে। সম্বল চক্রবর্তী আবার আগের ভূমিকা নিয়েছে। সব জায়গায় নতুন মজদুর সাপ্লাই করছে। যেখানে আমাদের আন্দোলন চলছে সেখানে সম্বলের নেতৃত্বে লোকেরা নতুন করে মিছিল করে কাজে যাচ্ছে। সম্বলের সাথেই Simplex-এর agreement হয়েছে। তবে আমাদের আন্দোলন বিফল হলেও মজদূররা সম্বলের চরিত্র ও তথাকথিত ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর চরিত্র ভালভাবে বুঝেছে। তবে সবাই খুবই আশাবাদী।
আশীষের চোখের অবস্থা কি জানাবি। মদন সিং হঠাৎ মারা গিয়েছে। মজদুররা অনেক voluntary retirement নিচ্ছে। Management লোভনীয় scheme নিয়ে লোভ দেখাচ্ছে। ইউনিয়ন থেকে সবাইকে বোঝানো হচ্ছে।
(সম্ভবত এই সময়ে, মাস ঠিক মনে নেই নিয়োগীজি কলকাতায় আসেন। আমাকে জানান আমার সাথে দেখা করতে চান। চঞ্চলা তখন মেটিয়াবুরুজ সেবাসদনে কর্মরত। হাসপাতালের দোতলায় ওর ছোট কোয়ার্টার। নিয়োগী এক বন্ধুকে নিয়ে এখানে আসেন। রাতে থাকেন, আমি রান্না করি। মাটিতে বিছানা করে বসে অনেকক্ষণ কথা হয়। নিয়োগী বলেন আপনাদের দুজনকে রাজহরায় ফেরত চাই। আমি জানাই পড়াশোনা শেষ করে যাব। উনি মেনে নেন। অন্য অনেক কথার মধ্যে জানান ওনার উপর দুবার life attempt হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করি যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করছেন না কেন? নিয়োগীজি বলেন, কেউ বা কারা যদি ঠিক করে আমাকে মারবে, তাহলে মারবেই। এত সাবধানতার পরেও রাজীব গান্ধীকে বাঁচানো গেল না, আমি তো কোন চুনোপুঁটি।)
২৫/৪/১৯৯১
শৈবাল—আমাকে
এদিকে সব ভালোই চলছে। সরকার ও মালিকরা বেশ ভালোই মোর্চাবন্দী করেছে। ফয়সলা কবে হবে বলা মুস্কিল। এখনো ম্দুররা যথেষ্ঠ ধৈর্য্যের সাথে আন্দোলন করছে। অনেক নতুন ফ্যাক্টরির মজদুররাও আসছে। গত তিসরা এপ্রিল নিয়োগীজি ছাড়া পেয়েছে। তবে B.J.P. সারা judiciary- কে হাতে করেছে। এর পেছনে মালিকরা কাজ করছে। সম্বল স্বমহিমায় ভিলাইতে কাজকর্ম চালাচ্ছে। মাঝে Simplex-এর মালিকরা সম্বলের সাথে agreement-ও করে। ACC-ও agreement-এ signature করে। অথচ ALC আমাদের পাঁচবার ডাকে, কিন্তু মালিকপক্ষ একবারও উপস্থিত হয়নি। কিভাবে মালিক ও সম্বলরা agreement করল বোঝা মুস্কিল, তবে CPI, CPIM, Congress, B.J.P., মালিক সবই একজোট হয়েছে।
১১/৫/১৯৯১
শৈবাল—আমাকে
আমরা এবারে নির্বাচনে দাঁড়াইনি কারণ ঘসনীন বাই-এর ফর্ম বাতিল হয়ে যায়। তবে আমরা জনতা দল আর বাম মোর্চাকে সমর্থন করছি। কিন্তু কাঁকেরে হয়ত অরবিন্দ নেতামকে সমর্থন করা হবে। এখানে জনতা দলের ভোট নেই বললেই হয়। শুধুমাত্র symbol-টা রাখার জন্য একজনের নাম রেখেছে। এদিকে আমরা যদি সমর্থন না করি তবে বিজেপি জিতবে। তাই বেশ সমস্যা তৈরী হয়েছে। দুর্গ ও রাজনাদগাঁওয়ে আমরা জনতা দলকে সমর্থন করছি।
এদিকে আন্দোলনের অবস্থা আগের মতোই। সিমপ্লেক্স গ্রুপ কোনরকম সমঝোতা করতে রাজী নয়। নির্বাচনের আগে কিছুই হবে না। তবে নিয়োগীজির আশা 20th June একটা ফয়সালা হতে পারে। মজদুররা এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোন পার্টির নেতাদের ঘন্টার পর ঘন্টা জেরা ও ঘেরাও চলছে। মাঝে ভোরা, কনক তিওয়ারী, বাসুদেও চন্দ্রাকর, চন্দুলাল চন্দ্রাকর, মনরাখন লাল সাহু (বিজেপি)-কে অপমান করা হয়েছে। ১৪ তারিখ পাটোয়াকে করা হবে। ভোরা মারও খেয়েছে।
পুলিশি অত্যাচার সমানে চলছে। মাঝে প্রায় ৫০০ জনকে ভিলাই, কুমারী, উরলা ও বালোদা বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। এখনো ৭০ জন জেলে আছে। আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। যদি দরকার হয় তবে তোদেরও সাহায্য করতে হবে। Update-টা পুণ্যই বার করছে। পুণ্য আজ ভোপাল থেকে আসবে।
৫/৫/১৯৯১
শৈবাল—আমাকে
আমরা ভালো আছি। হাসপাতালে দিন দিন ভীড় বাড়ছে, ১৫০-এর কম হচ্ছেই না। একদমই আরাম করার উপায় নেই। প্রদীপ আবার আসার কথা ভাবছে। আমি প্রদীপ আর রত্নাকে তাড়াহুড়ো করে চিঠি দিলাম। কিন্তু কোন উত্তর নেই। বুঝতে পারছি না ওরা আসবে কিনা। ডাক্তারের খুবই দরকার। তোর জানাশোনা কেউ আসতে চাইলে কথা বলিস। আমরা ২০০০ টাকা পর্যন্ত দিতে পারবো। এখন আর্থিক অবস্থা ভালো। ভরুয়া দাসকে সরানোর পর থেকেই হাসপাতালের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
নিয়োগীজি ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই ভিলাইতে রয়েছেন। ওরা সবাই এখন থেকে ভিলাইতেই থাকবে। একটা বাড়ী ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এদিকে ভিলাইএর আন্দোলন আগের মতোই চলছে। সরকারী তরফে কিছুটা হলচল শুরু হয়েছে।
পুণ্য স্বামী অগ্নিবেশের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছে। এবারে আমাদের কেউ দাঁড়ায়নি। আমরা শর্ত সাপেক্ষে বাম মোর্চা ও জনতা দলকে সমর্থন করব।
৮/৯/১৯৯১
শৈবাল—আমাকে
আমাদের পাম্পটা হল N.P. jet pump (GEC)। আমাদের পাম্পটা এখন সাত মিনিট মোটামুটি হাফ ইঞ্চি জল দেয়। তারপরে ধীরে জল আসতে থাকে। তবে দশ পনেরো মিনিট বন্ধ রাখলে আবার পাঁচ মিনিট ভালোই জল আসে। তোরা ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখিস। যদি suction head টা ১২৫ feet নীচে করা হয়, যাতে পাম্পের উপর প্রেশার না পড়ে তার জন্য কি করা উচিত জানাবি। এছাড়া submersible pump লাগালে এই bore-এ sufficient জল পাওয়া যাবে কিনা জানাবি।
আমাদের জলের আর ডাক্তারের সমস্যাটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। তত্ত্বের সমস্যাটাতো রয়েছেই।
ডাক্তারের ব্যাপারটার কি করা যায় একটা ভেবেচিন্তে জানাবি। একজনকে ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা দেওয়া যেতে পারে। আমরা তিনতলাটা বানাবো ভাবছি। এক-চতুর্থ তৈরী হয়েছে। এখন মোটামুটি ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে দু’শ-র নীচে খুব কম দিনই রোগী আসে। সাহুবাবুর ছেলের জন্য একটা হুইল চেয়ার চাই। তুই যদি চেয়ারটা কিনে পাঠাস তাহলে ভালো হয়, টাকা যোগাড় হয়ে আছে।
২৯/৯/১৯৯১
ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা থেকে টেলিগ্রাম—আমাকে
কমরেড নিয়োগী আজ শহীদ হয়েছেন ভিলাই ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের আততায়ীদের হাতে।
ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা।
শেষ