পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি খবরের (১৫ মার্চ, ২০২৩) শিরোনাম হল – “ভাইরাস আউটব্রেক ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল লিভস ১৯ চিল্ড্রেন ডেড অ্যান্ড থাউজেন্ডস ইন হসপিটাল”। গ্রাম এবং দূরাগত অঞ্চল থেকে আগত বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনদের ঠাঁই হয়েছে বিসি রায় শিশু হাসপাতালের ভেতরে। কোভিড-উত্তর বিশ্বে আজ অ্যাডেনোভাইরাসের সংক্রমণ এ বছরে যেমন, সামনের বছর হয়তো অন্য কোন ভাইরাসের, যেমন রেস্পিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাসের, সংক্রমণ ঘটবে। পরের বছর আবার অন্য কোন ভাইরাস। বাস্তবে এ ঘটনা ভারতে এই মুহূর্তেই ঘটছে। মহারাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ১৬ মার্চ, ২০২৩ অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে ২৩ বছরে্র এক ডাক্তারি ছাত্র সহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এই সাবটাইপের সংক্রমণে। ১৯৬৮ সালে বিশ্বে শেষবারের মতো H3N2 সংক্রমণের অতিমারি হয়েছিল।
এখানে আমাদের ভাবতে হবে, মানুষের দেহে নিত্যনতুন ভাইরাসের যে সংক্রমণ ঘটছে, বিশেষ করে কোভিড অতিমারি-পরবর্তী পর্যায়ে, এ কি নিতান্ত অনিবার্য ছিল? কিংবা পশ্চাদপটে অন্য কোন কার্যকলাপ মানুষের বাস্তুতন্ত্রের ভাইরাসের প্যাণ্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। একটি সংক্রমণের গভীরে গিয়ে বিচার করলে সংক্রমণের সাথে জড়িয়ে থাকে একাধিক বিষয় – (১) সংক্রমণের বায়োলজি, (২) সংক্রমণ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সহ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কাঠামো এবং চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীর দল কতটা প্রস্তুত (কোভিডের সময় তাবড় দেশের স্বাস্থ্য কাঠামোর একেবারে ছিন্নভিন্ন অবস্থা আমরা সবাই দেখেছি), এবং (৩) সংক্রমণগুলোর “ড্রাইভার” কি?
যদি বায়োলজির চোখ দিয়ে দেখি, তাহলে অ্যাডেনোভাইরাস হল ৯০-১০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘের একটি ডিএনএ ভাইরাস যার কোন ‘এনভেলপ’ নেই এবং আকৃতিতে যার ২০টি মুখ রয়েছে। ৫০ রকমের বেশি অ্যাডেনোভাইরাস পাওয়া যায়, যার মধ্যে টাইপ ৩, ৪ এবং ৭ সবচেয়ে সংক্রামক। আবার ৮, ১৯, ৩৭, ৫৩ এবং ৫৪ টাইপের ভাইরাস চোখের সংক্রমণ বেশি ঘটায় (‘কেরাটোকনজাংটিভাইটিস’)। এই সংক্রমণে যেমন সাধারণ সর্দি-কাশি-গলার অসুবিধে-জ্বর হতে পারে, অন্যদিকে তেমনি নিউমোনিয়া থেকে বমি-পায়খানাও হয়। হয় দীর্ঘকালীণ কাশি। বেশিরভাগ শিশু এবং বয়স্কদের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ, দুর্বল ইমিউনিটির জন্য উপযুক্ত প্রতিরোধ শরীর গড়ে তুলতে পারেনি এবং, ফলশ্রুতিতে, নিউমোনিয়ায় মৃত্যু ঘটেছে। রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ (বাবা-মা-র ক্ষেত্রে যেটা ঘটবেই), বাতাস-বাহিত হয়ে হাঁচি-কাশি থেকে খরে পড়া ভাইরাসের দূরে ছড়িয়ে পড়া, এমনকি আক্রান্তের মল-বাহিত হয়েও (যেমন ডায়াপার পাল্টানোর সময়) সংক্রমণ ছড়ায়। H3N2 ভাইরাস থাকে শূকরের শরীরে। আমেরিকার বিশ্বখ্যাত মান্য সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেবশন (সিডিসি)’ একে ‘ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস’ বলেছে, অর্থাৎ মূল ভাইরাসের বদল হয়ে নতুন চরিত্র লাভ করেছে, ভাইরাসের এই সাবটাইপটি তৈরি হয়েছে।
সংক্রমণের ড্রাইভারসমূহ
নেচার, সায়ান্স, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন, নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রথম সারির বন্দিত জার্নাল এবং সংবাদপত্র বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের নিজেদের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র থেকে মানুষের সমাজে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে – সর্বগ্রাসী কর্পোরেট লোভ, প্রকৃতির ওপরে প্রভুত্ব করার উদগ্র বাসনা, এবং কৃষি জমির চরিত্রের রূপান্তর। সমস্ত ভাইরাসই নিজেদের বাস্তুতন্ত্রে হাজার হাজার ধরে বেজায় সুখে ছিল।
আজকের বিভিন্ন ভাইরাস মানুষের শরীরে এলো কি করে? এর কোন সরল, একরৈখিক, একমাত্রিক উত্তর নেই। এখানেই আমাদের ভাবতে হবে নিওলিবারাল অর্থনীতি, পুঁজির সর্বময় অস্তিত্ব এবং কর্পোরেট পুঁজির প্রয়োজনে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো মুনাফার লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এবং তার ফলে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য ভেঙ্গেচুড়ে গেছে, প্রকৃতির নিজস্ব বাসিন্দারা মানুষের দেহে এদের নতুন বাসস্থান খুঁজে নিয়েছে।
প্রকৃতি মানে একদিকে যেমন মানুষ রয়েছে, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে মানুষের চেয়ে লক্ষ কোটি গুণ বেশি অরণ্যানী, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গের সমারোহ, অগণন অণুজীবের বৈচিত্র্য, এবং এই নীল গ্রহ। আমরা আমাদের নিজেদের দেহের অভ্যন্তর থেকে শুরু করে প্রকৃতি এবং আমাদের চারপাশের জীবজগৎ সবার ওপরে শুধু প্রভুত্ব করে যাবার দুর্দম আকাঙ্খা পোষণ করি। সবার সাথে আমাদের যুদ্ধ। আমরা জিনকে শিকার করি। শিল্পবিপ্লব-উত্তর পৃথিবীতে প্রকৃতিকে পুঁজির দাস এবং ক্রয়যোগ্য পণ্য হিসেবে দেখার যে মানসিকতা ৩০০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী মানসিকতায় সঞ্চারিত হয়েছে তার গোড়া ধরে টান না মারলে আমাদের মুক্তি ও পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনা নেই। এ লড়াই ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ের চেয়েও শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী।
১৮২০-৩০-এর দশক থেকেই বিশেষত ইংল্যান্ডে এবং আমেরিকায় অতি ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরাশক্তির জরাজীর্ণ অবস্থা জমিতে সার প্রয়োগের চাহিদা বিপুলভাবে বাড়িয়ে তুললো। ১৮২৩ সালে ইংল্যান্ডে হাড়ের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪,৪০০ পাউন্ডের, ১৮৩৭ সালে বেড়ে হল ২৪,৬০০ পাউন্ড। একইসঙ্গে বিভিন্ন পাখির নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ মলের (guano) চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। ১৮৪১ সালে লিভারপুল বন্দরে ১,৭০০ টন গুয়ানো আমদানি করা হয়েছিল, ১৮৪৭-এ ২২০,০০০ টন। শুধু গুয়ানোর সরবরাহ অবাধ রাখার জন্য আমেরিকা ১৮৫৬ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে শিল্পপতিদের চাপে ‘গুয়ানো আইল্যান্ড অ্যাক্ট’ পাশ করিয়ে ফেললো। ১৮৫৬ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে ৯৪টি দ্বীপখণ্ড এবং পাহাড় দখল করে নিল। যদিও সরকারিভাবে ৬৬টির কথা স্বীকার করা হল। ২০২২ সালেও আমেরিকার দখলে থাকা এরকম দ্বীপের সংখ্যা ৯টি। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে – “জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে রোগের dynamics-কে প্রত্যক্ষত বা অপ্রত্যক্ষত বদলে দেবার (‘মনোকালচার’)। জমির প্রসারণের ফলে বেশি করে অণুজীবেরা মানুষের বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করবে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে জনসমষ্টির বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে, চরিত্রে র্পরিবর্তন হচ্ছে, ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সংযোগের অর্থাৎ রোগের বাহক ভেক্টর এবং মানুষের এবং রোগের ধারকদের ধরণ বদলে যাচ্ছে।”
আরেকদিকে, ইতিহাস বিখ্যাত “Irish Potato Famine” তো ঘটেছিল বেশি মুনাফার জন্য একই ধরণের ফসল (monoculture agriculture) বছরের পর বছর ধরে একই জমিতে ফলনোর পরিণতিতে – অভিজ্ঞ কৃষকদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরণের চাষের ফলে (rotational cropping) যে জমির উর্বরা শক্তি বজায় রাখে এ ধারণা আন্তর্জাতিক মুনাফার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করেনি। এর একটি পরিণতি হল “আইরিশ পোট্যাটো ফেমিন”। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ন্যূনতম “potato wage”-এর কাহিনীও – “What became known as the “potato wage” enabled the extraction of the most labor for the least cost, driving the cost of labor close to its theoretical minimum. Then disaster struck. The microorganism Phytopthera infestans arrived, presumably from the Americas, and found the effective monocultures of potatoes an ideal background environment for rapid spread. Potatoes rotted in the fields and the storehouses.” (John H. Vandermeer, The Ecology of Agroecosystems, 2011, পৃঃ ৫) ডাবলিন শহরে এই দুর্ভিক্ষে মৃত হতদরিদ্র শ্রমিকদের স্মরণে রাওয়ান গিলেসপির এক অসামান্য ভাস্কর্য রয়েছে।
কৃষি উৎপাদনে চরিত্রের এই পরিবর্তন নতুন রোগের “প্যান্ডোরা’স বক্স”-এর দরজা খুলে দিয়েছে – “Oil palm, rubber plantation and rice paddy monocultures have reduced species richness compared with primary and secondary forests, and these monocultures are structurally less complex than natural forests typically exhibiting a more uniform age structure, lower or no canopy, sparse undergrowth, less stable and more extreme microclimates, and greater levels of human disturbance and presence. Evidence suggests that such changes related to physical characteristics of the landscape or biodiversity loss itself could favour disease carrying hosts or vectors or increase the efficacy of disease transmission to remaining hosts (in this case people).” (Hiral A. Shah, Paul Huxley, Jocelyn Elmes & Kris A. Murray, “Agricultural land-uses consistently exacerbate infectious disease risks in Southeast Asia”, Nature, 20 Sptember, 2019, pp. 1-13, পৃঃ ৭)
এবোলার ছড়িয়ে পড়া নিয়েও একই কথা প্রযোজ্য। ২০১৩ সালে এবোলা মহামারি হবার পরে “Did Ebola Emerge in West Africa by a Policy-Driven Phase Change in Agroecology? Ebola’s Social Context” শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এখানে দেখানো হয়েছে ব্রিটিশ পরিচালিত নেভাদার কোম্পানি “ফার্ম ল্যান্ড অফ গিনি লিমিটেড” ৯,০০০ হেক্টর জমি গিনিতে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় – ভুট্টা এবং সয়াবিন চাষের জন্য। এরপরে সে জমিতে palm oil উৎপাদন শুরু হয়। এরপরে প্রবেশ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানি। ফলাফল? “Bushmeat need not be a default explanation for any given outbreak, however. Field (2009) noted that deforestation, including from oil palm planting, changes foraging behavior of the flying fox, fixating now on horticulture crops, and expands interfaces among bats, humans, and livestock. Fruit bats in Bangledesh transmitted Nipah virus to human hosts by urinating on the date fruit of the planted palm trees humans cultivated.” (পৃঃ ২৫৩৫)
এর সাথে যুক্ত করুন, পলিটিকাল সায়ান্স জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের পর্যবেক্ষণ, যে দেশগুলোতে এবোলা হয়েছিল সেসব দেশে “স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং পরের পর গৃহযুদ্ধ ও ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধের’ অবসানে পশ্চিমী দুনিয়ার সাহায্য বন্ধ হয়েছিল। এং ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের তরফে ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট পলিসি’ চাপিয়ে দেবার ফলে এক নিদারুণ দারিদ্র্য এদের গ্রাস করে।” এর পরিণতিতে, যখন এবোলা সংক্রমণ শুরু হল তখন বহুক্ষেত্রেই চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীদের কাছে সাম্ন্য গ্লাভস কিংবা মাস্ক ছিলনা। সহজেই বোঝা যায়, একটি দেশের স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্যনীতির সাথে জড়িয়ে থাকে রাষ্ট্রের চরিত্র, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থ, এবং মানুষের মূল্য স্বাস্থ্যনীতির কেন্দ্রে থাকবে কি না, এ প্রশ্নটি।.
পাম তেল বেশ কিছুদিন অতি লাভজনক আন্তর্জাতিক ব্যবসা। দানবীয় বহুজাতিক কোম্পানিরা দুভাবে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করে – (১) সরাসরি বিভিন্ন দেশের ওপরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক চাপ সৃষ্টি করে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এর ফলন ঘটায়, কিংবা (২) দরিদ্র বা মধ্য কৃষকদের নগদ মুনাফার লোভ দেখিয়ে জমিতে চাষের ধরণ রূপান্তরিত কর। যেভাবেই করুক, শেষ অব্দি বহুজাতিকের বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয়। অন্যদিকে কৃষির চরিত্র বদলে যায়। কৃষকের সামাজিক মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটে। ১৮৭০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে অকল্পনীয় গতিতে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে (আগস্ট ১০, ২০২২) নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে একটি সংবাদের শিরোনাম “In the Amazon, a U.N. Agency Has a Green Mission, but Dirty Partners”। এ সংবাদে বলা হল – “এমনকি যদিও রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে এবং ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার সাংঘাতিকভাবে কমাতে বলছে, কিন্তু এর “development arm” মাঝেমাঝেই তেল এবং গ্যাস শিল্পের চিয়ার লিডার হিসেবে কাজ করছে।”
২০১৪ সালে কয়েকজন গবেষক EcoHealth জার্নালে (২৩.০৫.২০১৪) শিরোনামের এক গবেষণাপত্রে (“Anthropogenic Land Use Change and Infectious Diseases: A Review of the Evidence”) বলেছিলেন – “জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে রোগের dynamics-কে প্রত্যক্ষত বা অপ্রত্যক্ষত বদলে দেবার। জমির প্রসারণের ফলে বাশি করে অণুজীবেরা মানুষের বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করবে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে জনসমষ্টির বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে, চরিত্রের্পরিবর্ত্ন হচ্ছে, ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সংযোগের অর্থাৎ রোগের বাহক ভেক্টর এবং মানুষের এবং রোগের ধারকদের ধরণ বদলে যাচ্ছে।”
মনে রাখতে হবে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে চক্রবৃদ্ধি হারে ডিডিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ইনসেক্টিসাইড এবং পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে অণুজীবেরা বেঁচে থাকার জন্য পরিবর্তিত ইকোলজির সাথে নতুন করে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলে এদের জিনের মধ্যে মিউটেশন ঘটে। আবার নতুন কীটনাশক, আবার নতুন মিউটেশন এবং নতুন রোগ। ভাইরাসের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে আবির্ভাব ছাড়াও ম্যালেরিয়ার নতুন প্রজাতি জন্ম নিচ্ছে আমাদেরকে আক্রমণের জন্য। এমনকি পশু-পাখিরাও এ আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা।
Mark Hamilton Lytle তাঁর The Gentle Subversive (2007) পুস্তকে র্যাচেল কারসনের দুনিয়া কাঁপানো বই সাইলেন্ট স্প্রিং নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলছেন – “কারসন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্টদের নজর পরিবেশের দিকে যাতে নিবদ্ধ হয় সে কাজে সাহায্য করেছিলেন। র্যাচেলের পেস্টিসাইডের ওপর আক্রমণের মধ্যে এই অ্যাক্টিভিস্টরা আরও বেশি করে খুঁজে পেয়েছিল কর্পোরেট ক্যাপিটালিজমের বিভিন্ন শয়তানি। লাভের জন্য উদগ্র বাসনা, তাদের অভিমত অনুযায়ী, কোন জনহিতকর কাজ নয়, বরঞ্চ কেমিক্যাল কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করেছিল আরও বেশি বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে, যা পৃথিবীর অধিকতর ক্ষতিসাধন করবে। তাদের বিজ্ঞাপনের কুহক জালে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কি মূল্য চোকাতে হচ্ছে সেটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই বিদ্রোহীরা কারসনের বিশ্বাসকে প্রসারিত করেছে – “জনগণের” অধিকার আছে সেসমস্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার যেগুলো জীবনের জন্য ক্ষতিকর।” (পৃঃ ২০৭)
র্যাচেল কারসন তাঁর সাইলেন্ট স্প্রিং (২০০২) গ্রন্থে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছিলেন কেঁচোর কথা – ডারউইনের The Formation of Vegetable Mould, through the Action of Worms, with Observations on Their Habits-কে উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছিলেন, কেঁচোরা জমির স্তর ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়িয়ে তোলে এবং জমির উর্বরা শক্তিকে রক্ষা করে। কোথায় গেল কেঁচোরা? অনেকটা “Where have all the flowers gone”-এর মতো।
২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১-এর অতিমারির পরে ২০০৯ সালে Predict Project বলে একটি প্রোজেক্ট তৈরি করা হয় প্রাণী জগৎ থেকে কি পরিমাণ নতুন ভাইরাস মানুষের দেহে এবং বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করছে সেটা দেখার জন্য। মানুষ-প্রকৃতি-জীব জগৎ এই স্বাভাবিক ভারসাম্য অপূরণীয়ভাবে ভেঙ্গে যাবার ফলাফল হচ্ছে এই ভাইরাসদের মনুষ্য জগতে প্রবেশ। কিন্তু লস এঞ্জেলস টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী (২.০৪.২০২০) এই প্রোজেক্ট ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করে দেবার আগে USAID-এর সাহায্যপুষ্ট এই প্রোগ্রাম ১,২০০ বিভিন্ন ভাইরাসকে চিহ্নিত করে যার মধ্যে ১৬০টি নোভেল করোনাভাইরাস ছিল। য়ুহান সহ পৃথিবীর ৬০টি ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী এবং টেকনিশিয়ানদের ট্রেইনিং দেওয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু কলমের এক আঁচড়ে এরকম একটি মূল্যবান প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিল। বিজ্ঞানের ক্ষতি হল, গবেষণা স্তব্ধ হল। পরিণতিতে কোন প্রতিরোধ ছাড়া বারংবার আক্রান্ত হবে মানুষ।
আমেরিকা ও ভারতের স্বাস্থ্যকাঠামোর বর্তমান চেহারা
২০১৭ সালের নভেম্বরের ২ তারিখে চিকিৎসক মহলে মান্য জার্নাল নিউ ইংল্যান্ড অফ মেডিসিন-এ (NEJM, ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ১৭৬.১) প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (“Primary care spending rate – A lever for encouraging investment in primary care”) প্রশ্ন তোলা হয়েছিল – “কেন আমেরিকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেনা? যেখানে ভুরি ভুরি প্রমাণিত তথ্য দেখিয়েছে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশি বিনিয়োগ রোগী এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা উভয়ের জন্যই ভালো। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বেশি বেশি তত্ত্বাবধানের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যের জন্য কম খরচ, রোগীর বেশি পরিমাণ সন্তুষ্টি, হাসপাতালে এবং ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হবার ঘটনা হ্রাস পাওয়া এবং মৃত্যুর হার কমে যাওয়া। আমেরিকার মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার বাজারে যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসক বেশি থাকে তাহলে খরচের হার কম হয় আর যত্নের গুণগত মান বেশি হয়।” এ নিবন্ধেই বলা হয়েছিল – “এতসবের পরেও আমেরিকাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াকে ক্রমাগত অবমূল্যায়িত করা হচ্ছে।” এর আগে একই জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে (“Primary Care — The Best Job in Medicine?”, আগস্ট ৩১, ২০০৬)-এ বলা হয়েছিল – “মি. বি-র মতো অনেক রোগীর সাথে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যের একজন চিকিৎসক হিসবে আমার কাছে একটি পুরষ্কার … আমেরিকার মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে স্পেশালিটি করার (ইন্টার্নাল মেডিসিন, ফ্যামিলি মেডিসিন এবং পেডিয়াট্রিকস) অনুপাত ১৯৯৮ সালের ৫০% থেকে ২০০৬-এ ৩৮%-এ নেমে এসেছে।” আমেরিকায় ইন্সিউরেন্সের ভয়াবহ ফলাফল নিয়ে ২০১৩ সালে NEJM-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (“ডেড ম্যান ওয়াকিং”,” নভেম্বর ১৪) একজন কালো, দরিদ্র মানুষের মানুষের ইন্সিউরেন্স না থাকার জন্য ক্যান্সারের কারণে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাবার অন্তিম পর্যায়ে দু’জন চিকিৎসক সখেদ মন্তব্য করেছিলেন – “We find it terribly and tragically inhumane that Mr. Davis and tens of thousands of other citizens of this wealthy country will die this year for lack of insurance.”
জানুয়ারির ১০ তারিখে (২০২৩) বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে (একসময়ে পাঠক সংখ্যা ৩০,০০,০০০ অব্দি ছিল) একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে “The Coming Collapse of the U.S. Health Care System” শিরোনামে। এ প্রতিবেদনের শুরুতে খানিকটা বর্ণনার ঢং-এ বলা হয়েছে – “সকাল ৪টে বাজে, এবং আপনি জেগে উঠলেন যেন বুক ভেঙ্গে যাবে এরকম এক ব্যথা নিয়ে। আপনার পরিবার ৯১১ নম্বরে (ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য আমেরিকার সার্বজনীন নম্বর) ফোন করল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রশিক্ষিত প্যারামেডিকেরা (চিকিৎসকের সাহায্যকারী বাহিনী) চলে এল এবং ডায়াগনোসিস করল এটা হার্ট অ্যাটাক। তারা আপনাকে জানাল, আপনাকে ৪৫ মিনিট দূরে নিয়ে যেতে হবে কারণ গত কয়েক মাসে ২টি স্থানীয় হাশোপাটাল বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি হাসপাতালে এসে পৌঁছনোর পরে দেখা গেল অস্বাভাবিক রকমের ঠাসাঠাসি ভিড় এবং হাসপাতাল থেকে জানানো হল আপনার জন্য হাসপাতালে কোন আইসিইউ বেড খালি নেই। কারণ স্টাফের অভাবে ৫০% আইসিইউ বেড ব্যবহার করা যাচ্ছেনা, অন্য বেডগুলো ইমার্জেন্সি রোগীতে ভর্তি। এরকম দুঃস্বপ্নের রাত অতিমারি-উত্তর সময়ে আমাদের দেশের হেলথ কেয়ার দেবার ক্ষেত্রে নিতান্ত পরিচিত ঘটনা। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ যেখানে আধুনিকতম চিকিৎসার সুযোগ সুবিধে এবং সর্বাধুনিক আবিষ্কার রয়েছে সেখানে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় এরকম কোন মারাত্মক “প্রত্যাশা” নেই।” এটুকু পড়ার পরে যেকোন পাঠকের মনে হতে পারে – এ তো আমেরিকা নয়, ভারতের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি দেখছি!
ওই প্রতিবেদনে পরে বলা হল, “অতিমারি-উত্তর এরকম দুঃস্বপ্নের কারণ বহুবিধ। যেভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত পেশাদারদের যেভাবে দেখা হত ও মূল্যায়ন করা হত, অতিমারির পরিণতিতে এ অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। অতিমারির উত্তুঙ্গ সময়ে এদেরকে বীর হিসেবে গণ্য করা হত, যারা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে কমিউনিটিকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্নরকম। নিউ ইয়র্ক শহরে প্রায় ৭,০০০ নার্সের ধর্মঘট শোচনীয় অবস্থার প্রতীকী প্রকাশ।” পরিশেষে বোলা হয়েছে, “আমরা যদি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে মানুষের জন্য বিনিয়োগ না বাড়াই এবং মানুষকে মূল্য দিতে না শিখি, তাহলে এই সুড়ঙ্গের শেষে কোন আলোর রেখা দেখতে সমর্থ হব না।” আমাদের অভ্যস্ত কানে এ কথাগুলো যেন দৈব বাণীর মতো শোনায়। প্রসঙ্গত, নার্সদের বিক্ষোভ কেবলমাত্র আমেরিকাতে সীমাবদ্ধ নয়। ইংল্যান্ডে “Thousands of nurses beginning two-day strike – and walkout will be much bigger than last month” (Sky News, 18 January, 2023)
এ প্রতিবেদনেই জানানো হচ্ছে, “প্রতিদিন আমরা শুনতে পাচ্ছি যে গোটা দেশ জুড়ে হাসপাতালগুলোর অনেক মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। হাসপাতালগুলো ওবস্টেট্রিক, শিশুচিকিৎসা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের জরুরী বিভাগ বন্ধ করে দিচ্ছে হাসপাতাল বাঁচানোর জন্য।” এখানে মনে রাখতে হবে, আমেরিকার অধিকাংশই প্রাইভেট এবং কর্পোরেট হাসপাতাল। মানুষ নয়, মুনাফাই এদের কাছে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। “স্টাফের অভাব এই সংকটের সূচনা করেছে। অতিমারি-উত্তর অবস্থায় হাসপাতালে স্থায়ী স্টাফের পরিবর্তে অস্থায়ী, কাজ-চালানোর মতো স্টাফদের নিয়োগ করা হচ্ছে। অল্পদিনের চুক্তিতে নিযুক্ত এই স্টাফদের (locum staff) ক্ষেত্রে চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক গড়ে ওঠার সময় পায়না।” আমাদের বাংলায় কিংবা ভারতবর্ষে আদুরে “পার্মানেন্ট কন্ট্র্যাকচ্যাল” নামের নতুন ধরনের যে নিয়োগ পদ্ধতি চালু হয়েছে তার সাথে আমরা চমৎকার মিল খুঁজে পাচ্ছি। সংকটের কোন সীমা, দেশ কিংবা ভৌগোলিক পরিধি নেই বোধহয় – মাত্রা এবং গুণগত প্রভেদ ছাড়া।
কার্যত কয়েকটি বিষয়কে জ্বলন্তভাবে সামনে এনেছে – (১) প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব – আমেরিকার ৪৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করার মাঝে যে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, (২) সর্বক্ষণের চিকিৎসকের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী চুক্তিতে ডাক্তার নিয়োগ শুরু হয়েছে, এবং, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, (৩) স্বল্পকালীন চুক্তিতে ডাক্তার নিয়োগের ফলে “চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক গড়ে ওঠার সময় পায় না”।
এখানে দুয়েকটি তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী আমেরিকায় ডাক্তারি পড়ুয়াদের মধ্যে ফ্যামিলি প্রাকটিস, জেনারেল প্র্যাকটিস বা ওখানকার গ্রামীণ প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে ভীষণরকম অনীহা দেখা যাচ্ছে। নীচের গ্রাফ থেকে সেটা বোঝা যাবে।
ভারতে এবং পশ্চিমবঙ্গেও তো আমরা একই চিত্র দেখতে অভ্যস্ত। এর জন্য শেষ অব্দি এর খেসারত দিতে হয় কোটি কোটি প্রান্তিক মানুষকে – যাদের কাছে স্বাস্থ্যের কোন সুযোগ পৌঁছয় না। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং মানুষের জন্য নিবেদিত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী এদের কাছে নিষ্ঠাভরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৪২ কোটি মানুষের দেশে এ প্রয়াস সমুদ্র থেকে এক আঁজলা জল তুলে নেবার মতো। কিন্তু এসব সত্বেও এদের নিরলস প্রচেষ্টা লাগাতার চালু থাকে। কোভিড-উত্তর সময়ে এ চেহারা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মিডিয়ায় আছড়ে পড়া লাগাতার “স্বাদু” খবরের প্রচারের জেরে এগুলো পেছনে চলে যায়। আমাদের “বন্দে ভারত” এক্সপ্রেস আছে, “টুকরে টুকরে গ্যাং” বা “আর্বান নক্সাল” আছে, আছে “লাভ জিহাদ” কিংবা হেট স্পিচ”। আছে সর্দার প্যাটেলের বিশাল মূর্তি। আছে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে কোটি কোটি টাকার রসালো কাহিনী। আছে ইতিহাসের পরিবর্তে ইতিহাস নিয়ে নিত্যনতুন গালগল্প, ইতিহাসের পুনর্লিখন এবং পুনর্নিমাণ। এর মাঝে মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্যের সুযোগ কথা বলার সময় কোথায়? কে বলবে? কেন বলবে? স্বাস্থ্য রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট দেয় না। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রটিকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি প্রায়-পূর্ণত কর্পোরেটদের হাতে – শিক্ষার মতই। ক্রমাগত রাষ্ট্র হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।
Lancet জার্নালে ২৪ আগস্ট, ২০১৯-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ জানাচ্ছে – ২০১৮-তে সবচেয়ে বেশি রেভেন্যু দেয় এরকম ১০০টি সংস্থার মধ্যে ৬৯টি হল কর্পোরেট সংস্থা, ৩১টি সরকারি সংস্থা। (“From primary health care to universal health coverage – one step forward and two steps back”, Lancet, August 24, 2019, pp. 619-621) পূর্বোক্ত প্রবন্ধে দুটি মনোযোগ দেবার মতো পর্যবেক্ষণ আছে – “UHC, প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিপরীতে, রোগের ক্ষেত্রে যেগুলো সামাজিকভাবে নির্ধারণ করে সেই “social determinants of health” এবং কমিউনিটি অংশগ্রহণের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে থাকে”। এবং “কেয়ার” বা যত্নের পরিবর্তে “কভারেজ” (coverage) এই শব্দটি স্বাস্থ্যের সীমায়িত পরিসর বোঝায়, এবং বোঝায় যে একটি ইন্সিরেন্স স্কিমে কতগুলো নাম (সবার নাম নয়) তালিকাভুক্ত হবে।
আরও বিপজ্জনক হল UHC-র ইন্সিউরেন্স-নির্ভর মডেলকে প্রোমোট করা হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য কম অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্যের প্রোগ্রামকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করে”। প্রসঙ্গত মনে রাখবো ভারতের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় এত ঢক্কানিনাদের পরেও জিডিপি-র ১-১.৫%-এর মধ্যে। ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটির বেশি। এবার মাথাপিছু গড় ব্যয় কতো হিসেব করুন। শুধুমাত্র চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যায় – এ সংখ্যা ইংল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। (National Health Policy 2017, 2015)
(৫) বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৮-এর আলমা-আটার ঘোষণাপত্রে হু-র তরফে হ্যাফডান ম্যালারের অধিনায়কত্বে স্পষ্টত “New International Economic Order (NIEO)”-এর ধারণা উচ্চারিত হয়েছিলো। দেশের সম্পদ বিতরণের ব্যাপারেও সেখানে আলোচনা হয়েছিলো। পৃথিবীর ১৩০টির বেশি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেসব দেশে, অর্থাৎ পৃথিবীর এক বড়ো সংখ্যক দেশে, এরকম দৃষ্টিকোণ থেকে মেডিক্যাল সিলেবাসও তৈরি হচ্ছিলো। সহজেই বোঝা যায়, দৃষ্টিকোণ এবং পরিস্থিতি বদলের সাথে সাথে মেডিক্যাল সিলেবাস এবং শিক্ষার ধরণও বদলে যাবে।
আলমা-আটার ঘোষণাপত্রকে কোন কোন গবেষক স্বাস্থ্যের জগতে Magna Carta-র সাথে তুলনা করেছেন (Magna Carta for health)। ১৯৮০-র দশক থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মন্দা এবং নিওলিবারাল অর্থনীতির উত্থানের ফলে হু কোণঠাসা অবস্থানে চলে যেতে লাগলো। ইংল্যান্ডের থ্যাচার এবং আমেরিকার রেগান হু-কে হুমকি পর্যন্ত দিতে শুরু করে। হু-কে দেওয়া এদের অনুদান প্রায় বন্ধ করে দেয়। হু-র অপরাধ হল ১৯৭৭-এ “এসেনশিয়াল মেডিসিনস প্রোগ্রাম” নেয় যেখানে জেনেরিক ড্রাগস (দামী ব্র্যান্ডের পরিবর্তে) ব্যবহার করার বিধান দেওয়া হয়। প্রত্যাশিতভাবেই দানবীয় বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো এর প্রবল বিরোধিতা করে। ১৯৮১ সালে আবার এক বিপত্তি ঘটালো হু – International Code for Marketing Breast Milk Substitutes-এর নীতি নিল! মায়ের বুকের দুধের বদলে বেবি ফুডের প্রচারক ও উৎপাদক নেসলের মতো কোম্পানির (যে একটি মাঝারি সাইজের মধ্যবিত্ত দেশ কিনে রাখার ক্ষমতা রাখে) রোষানলে পড়লো, এদের সঙ্গী হিসেবে রইলো এদের দ্বারা প্রভাবিত আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো।
একটি গবেষণাপত্র (“(Re-)Making a People’s WHO”, প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ পত্রিকায় জুলাই ১৬, ২০২০, সংখ্যায়) অনুযায়ী যেসব দেশ হু-র পরামর্শ শুনেছে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরে জোর দিয়েছে তারা তুলনায় কোভিড-১৯ আক্রমণে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে – যেমন, জার্মানি, ভিয়েতনাম, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিনল্যান্ড।
নিওলিবারাল অর্থনীতি, অতিবৃহৎ বহুজাতিক সংস্থা, নিওলিবারাল অর্থনীতির বাহক ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এবং পৃথিবীর বড়ো রাষ্ট্রগুলোর চাপে হু নিজের অবস্থান বদলাতে বাধ্য হচ্ছে।
এখানে আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়তে পারে, হ্যাফডান ম্যালারের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে আলমা-আটা-য় গ্রহণ করা “Declaration of Alma-Ata – International Conference on Primary Health Care”-এর কথা যেখানে প্রথমবারের জন্য আক্ষরিক অর্থে একটি বিশাল আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হল বিশ্ববাসীর সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা (comprehensive primary health care) সুনিশ্চিত করার কথা এবং সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে “২০০০ সালের মধ্যে সকলের জন্য স্বাস্থ্য”-র শ্লোগান গৃহীত হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণভাবে, আলমা-আটা সনদের ১০ নম্বর ধারায় যা বলা হয়েছিল তার মূল কথা ছিল – পৃথিবীর দূরতম প্রান্তের স্বাস্থ্যের সুযোগহীন মানুষটির জন্যও প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে হবে। এবং এজন্য যুদ্ধ ও যুদ্ধাস্ত্রের পরিবর্তে স্বাধীনতা, শান্তি, দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা এবং নিরস্ত্রীকরণের নীতি গ্রহণ করতে হবে যার মধ্য দিয়ে একটি দেশের সুষম বিকাশের জন্য আরো বেশি মানবসম্পদ সৃষ্টি হতে পারে।
“সকলের জন্য স্বাস্থ্য”, “স্বাস্থ্য আমার অধিকার” এবং “সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা”-র ধারণা ১৯৭৮ থেকেই নিঃসাড়ে বদলাতে শুরু করে। প্রথমে আসে “সিলেক্টিভ প্রাইমারি হেলথ কেয়ার (বেছে নেওয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা)”, তারপরে এলো GOBI (growth monitoring, promotion of oral rehydration, promotion of breast feeding, immunization) এবং পরবর্তীতে খুব খোলাখুলি ভার্টিকাল বা রোগ-কেন্দ্রিক প্রোগ্রাম। কমিউনিটির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি জীবন্ত ও সক্রিয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রোগ্রাম পরিত্যক্ত হল। এর বিষময় ফল আমরা এই অতিমারির সময়ে প্রত্যক্ষ করছি।
নেচার-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে (“হাউ কোভিড হার্ট দ্য ফাইট এগেইন্সট আদার ডেঞ্জারাস ডিজিজেস”, ২১ এপ্রিল, ২০২১) দেখানো হয়েছে – ভারতে লকডাউন ঘোষণা হবার পরে প্রতিমাসে টিবি রোগী সনাক্তকরণ উদ্বেগজনকভাবে ৭০% হ্রাস পেয়েছে। ২০২১-এর মার্চ অব্দি, হু-র হিসেব অনুযায়ী, চিকিৎসা না-হওয়া এবং সনাক্ত না-হওয়া বিশ্বব্যাপী টিবি রোগীর সংখ্যা অন্তত ১০,০০,০০০। ফলে অনেক বেশি করে টিবি সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ছে। ২০২০-তে সম্ভবত ৫০০,০০০ টিবি রোগী মারা গেছে।
পোলিয়ো রোগীর সংখ্যা ৫৫৪ (২০১৮) বেড়ে ১,২১৬ (২০২০) হয়েছে। শিশুদের রুটিন ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে গেছে। PLoS জার্নালের একটি সম্পাদকীয়তে (“নিউক্লিয়ার ওয়েপনস অ্যান্ড নেগলেক্টেড ডিজিজেসঃ দ্য টেন-থাউজ্যান্ড-টু-ওয়ান গ্যাপ”, এপ্রিল ২৭, ২০১০) – “১১টি নিউক্লিয়ার শক্তিসম্পন্ন দেশের নিউক্লিয়ার সমরাস্ত্র তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের যা ব্যয় করে তার একটি অতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ (১/১০,০০০ ভাগ) ব্যয় করলে অবহেলিত রোগগুলিকে নির্মূল করা যেত, এবং বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে এগনো যেত।”
ভারতের ক্ষেত্রে, ২০১৬ সালে সংসদীয় কমিটির প্যানেল রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ১০,১৮৯ জন মানুষের জন্য ১ জন সরকারি ডাক্তার, প্রতি ২,০৪৬ জনের জন্য সরকারি হাসপাতালে একটি বেড বরাদ্দ এবং প্রতি ৯০,৩৪৩ জনের জন্য একটি সরকারি হাসপাতাল – এই হচ্ছে সেসময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যের চিত্র। ২০২০ সালের মার্চ মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩৭ কোটি মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে বেড রয়েছে ৭,১৩,৯৮৬টি। এর অর্থ দাঁড়ায়, প্রতি ১০০০ ভারবাসীর জন্য ০.৫টি করে বেড। বিহারে আবার এই সংখ্যা ১০০০-এ ০.১১, দিল্লিতে ১.০৫ – বৈষম্য সহজেই চোখে পড়ে। এরসাথে যুক্ত করতে হবে, হু-র দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এইমস থেকে পাস করে বেরনো ৫৪% ডাক্তার বিদেশে পাড়ি দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে জনসমাজের গর্ভ থেকে এ দাবী আরও জোরদার হয়ে ওঠা দরকার।
বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টর ইন-ডোর রোগীর ৮০% এবং আউটডোর রোগীর ৬০%-এর পরিষেবা দেয়। এর ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্যখাতে ৭০% ভাগ খরচ নিজেদের পকেট থেকে মেটাতে হয়, মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ে। AIIMS-এর মতো সরকারী ভর্তুকী পুষ্ট আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ছাত্রদের শতকরা ৫৪ জন পাড়ি দেয় বিদেশে, এদেশে থাকে না।
আমেরিকান অর্থনৈতিক দর্শন তৈরি করে নেয় চিকিৎসা পণ্যের বাজার। সরকারী হাসপাতাল পড়ে থাকে হতদরিদ্রদের জন্য। ভারতবর্ষে আমরা আমেরিকান মডেলকে অনুসরণ করছি, ইউরোপের “ওয়েলফেয়ার স্টেট”-এর মডেল নয়। কিন্তু ২৫ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপির আমরিকায় ১৮% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার পরেও ওখানকার মানুষ স্বাস্থ্যের সবচেয়ে অসুখী দেশের একটি। স্বাস্থ্যের মোট বাজেটের মাত্র ৫.৪% বরাদ্দ প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য। সমগ্র চিকিৎসক সংখ্যার ৩০%-এরও কম নিযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে।
ভারতে (প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে) স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় এখনো ২%-এর কম। ফলে সহজেই অনুমেয়, কি অতি সামান্য পরিমাণ অর্থবরাদ্দ পড়ে থাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের জন্য। বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতে খরচের চিত্রটি একবার দেখে নেওয়া যাক।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া ভালো। “গোরু নিয়ে রচনা”-র মতো স্বাস্থ্যে-সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার মূলে আছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা অবহেলিত থাকা, ব্যাপারটা সবক্ষেত্রে এরকম নয় নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ওপরে প্রাথমিক গুরুত্ব আরোপ না করলে আমরা জনস্বাস্থ্যের অধিকাংশ সমস্যারই সমাধান করতে পারবো না। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ওয়েব সাইটে “প্রাইমারি হেলথ কেয়ার” শীর্ষক ঘোষণার শুরুতেই বলা হয়েছে – “নিজের পকেট থেকে স্বাস্থ্যের জন্য বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ১০% বা তার বেশি টাকা খরচের দরুন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যে তলিয়ে যায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ‘কেয়ার’-এর হস্তক্ষেপ বাড়াতে পারলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের ৬ কোটি মানুষের জীবন বেঁচে যাবে এবং গড় আয়ুষ্কাল ২০৩০ সালের মধ্যে ৩.৭ বছর বাড়বে।”
ফলাফল? একটি দেশের আভ্যন্তরীন সম্পদ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মানুষ বেশি কর্মক্ষম হবে। এর চেয়ে বেশি প্রাপ্তি আর কি হতে পারে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে “হেলথ সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভঃ রিফর্মস অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট ২০০৫-২০০৯” নামে একটি ২০ পৃষ্ঠার পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল – “সমস্ত ‘বেসিক’ মেডিসিন সবকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত রয়েছে যাতে আরও বেশি বহির্বিভাগের রোগীরা ওষুধ পায়।” এছাড়াও প্রসূতি মায়েদের যত্ন ইত্যাদি নিয়ে নানা তথ্য রয়েছে। কিন্তু বাস্তব কি বলে?
স্বাস্থ্য মাফিয়া কর্পোরেট এবং তাদের দোসরদের পরিকল্পিত একমুখী বিশ্ব কেবলমাত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ক্ষমতা (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক,) বিশ্বের প্রতিটি মানুষ কে নিয়ন্ত্রন করবে এবং সম্পদের মালিকানা নিজেদের থাকবে।লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব,অপরিক্ষিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ,সব হয়েছে মাঝারি ও ছোট ব্যাবসা থেকে সামাজিক ও পারিবারিক জীবন কে চুরমার করে পুঁজির কেন্দ্রীয় করনের জন্য। এখনো পর্যন্ত লকডাউন থেকে ভ্যাকসিন পরবর্তী মৃত্যু নিয়ে কোন কথা শোনা যাচ্ছে না, নয়া ভ্যাকসিন ক্যানসার প্রতিরোধে বাজারে হাজির। স্বাস্থ্য যখন বানিজ্য তখন সপিং মলের বাইরে ৯৯%বিশ্ববাসী থাকবেন এটাই নয়া দিগন্ত।
পড়ে খুবই ভালো লাগল। যা সাধারণ ভাবে ভাবতে পারি না সেই ভাবনার দ্বারগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায় আপনার লেখা পড়লে।