রাস্তায় কি ভিড়। কদিন আগেই ফাঁকা রাস্তায় স্কুটারে সোদপুর যাওয়ার সময় নিজেকে ভিআইপি মনে হতো। আমার সেই ভিআইপি স্ট্যাটাস মুছে গেছে। একশো মিটার যেতে দশবার ব্রেক চাপতে হচ্ছে।
লক ডাউনের শুরুতে দেশে করোনা রোগী ছিল ৩৪১ জন ও মৃত ৬ জন। অথচ প্রায় প্রত্যেকেই করোনা আতংকে ভুগছিলেন। সন্ধ্যের পর রাস্তাঘাট শ্মশান হয়ে যেতো।
আর আজ যখন ২.৫ লাখ রোগী আর ৭.৫ হাজার মৃত, তখন সকলের ভয় উবে গেছে। না উবে উপায়ও নেই। অপরিকল্পিত লক ডাউনে অধিকাংশ মানুষেরই পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
কোমরে ব্যথা, পায়ে ব্যথা নিয়ে অনেক রোগী আসছেন। লোকজন সাইকেল নিয়ে বসিরহাট থেকে বড়বাজার চলে যাচ্ছেন। অল্প কটা বাস চলছে। কিন্তু তাতে ওঠার জন্য প্রায় যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নিজের চোখে না দেখলে সেই যুদ্ধ বিশ্বাস করা কঠিন।
সরকার পুরোপুরি হাত তুলে নিয়েছে। না, পুরোপুরি নয়। ট্রেন এখনো বন্ধ আছে। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় জনস্রোত পুরোটাই নেমে পড়েছে রাস্তায়।
তবে অল্প হলেও মহামারীর কয়েকটি ভালো দিকও আছে। আজ একজন রোগী এসেছিলেন। তার স্টেশনে লটারির দোকান ছিলো। মার্চ মাস থেকে বন্ধ। আগেও তাঁর কথা লিখেছি।
তাঁর সুগার নর্মাল। নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন। এখন তিনি ঘুরে ঘুরে ফল বিক্রি করেন। হাসি মুখে বললেন, ‘ডাক্তারবাবু, লটারির থেকে ফলের ব্যবসা ভালো। অন্তত লোককে ঠকাচ্ছি মনে হয় না। আর লটারির ব্যবসা করবো না।’
একদল দামাল ছেলে মেয়ে, যারা এতোদিন নিজের কেরিয়ারের বাইরে খুব বেশি কিছু চিনত না, তারা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলা জুড়ে। পৌঁছে যাচ্ছে আমফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনে অথবা অনাহার ক্লিষ্ট পুরুলিয়ার গ্রামে। ক্ষমতার রাজনীতিকে পরাজিত করে এরাই এখন বাংলার মুখ।