আমাদের ভারতবর্ষে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১১.৮% মানুষ। এবং যে হারে ডায়াবেটিস বাড়ছে তাতে অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা চীনকে হারিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেব।
করোনা মহামারীর সময়ে এই ডায়াবেটিস রোগীরা পড়েছেন বিপদে। বিভিন্ন জায়গায় প্রচারিত হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যুহার অনেক বেশি। সেসব শুনে তাঁরা ভীত হয়ে পড়ছেন। অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন। তাঁদের জন্যই এই প্রতিবেদন।
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
এর উত্তর ‘না’। ডায়াবেটিক ও নন ডায়াবেটিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একই।
তবে ডায়াবেটিস রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর জীবনের ঝুঁকি বেশি।
কেন ঝুঁকি বেশি?
ডায়াবেটিস রোগীদের কোষ নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি কম হয় এবং ম্যাক্রোফেজের (যে কোষ গুলি বাইরে থেকে দেহের ভেতরে আসা জীবাণুকে ধ্বংস করে) ফ্যাগোসাইটোসিসের ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে রোগ জীবাণু খুব সহজেই দেহে জাঁকিয়ে বসতে পারে।
তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের বয়সও সাধারণত বেশি হয়। তাঁদের মধ্যে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ বেশি দেখা যায়। এই সব গুলিতেই করোনা রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যুহার অনেক বেশি।
কিভাবে ঝুঁকি কমানো যায়?
অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণে রেখে। আমাদের দেশের প্রায় ৮০% ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না (ঠিকই লিখেছি, ৮০%ই)। তাদের HbA1C ৭ % এর বেশি থাকে।
দরকার হলে রক্তে গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইনসুলিন শুরু করতে হবে। রক্তের গ্লুকোজ খালি পেটে ১১০মিগ্রা/ডেসিলি এর নীচে এবং ভরা পেটে ১৬০ মিগ্রা/ডেসিলি এর নীচে নামানোর চেষ্টা করতে হবে।
আর কি সাবধানতা নেওয়া উচিৎ?
১. অন্যদের মতোই কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়াসহ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। টাকাপয়সা, খবরের কাগজ, বাইরের কোনো জিনিস স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে নিতে হবে। বাইরে বেরোতে বাধ্য হলে মাস্ক পরতে হবে। অন্যদের সাথে অন্তত ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরে কখনোই চোখে, মুখে নাকে হাত দেওয়া যাবে না।
২. এ সময় বাইরে হাঁটতে যাওয়ার দরকার নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বাড়িতে, বারান্দায় বা ছাদে হাঁটতে হবে এবং হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
৩. বাড়িতে ডায়াবেটিসে আক্তান্ত ব্যক্তির জন্য গামছা, খাওয়ার থালা-বাসন, জামাকাপড় সব আলাদা করতে হবে। যারা নিয়মিত বাড়ির বাইরে বেরোন, তাদের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
৪. খুব প্রয়োজন ছাড়া এসময় চিকিৎসকের ক্লিনিকে বা হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। ছোটো খাটো সমস্যায় ফোনে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
৫. করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও (যেমন, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ ও পরবর্তী পরিষেবা নেওয়ার জন্য দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।
আর সব শেষে একটাই কথা বলার রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শুধু করোনাই নয়, যক্ষ্মা, মূত্রনালির সংক্রমণ, বিভিন্ন নিউমোনিয়াও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এগুলিও করোনার চাইতে কম ভয়ঙ্কর নয়।
Bachalen daktar babu