বর্তমান ইন্টারনেটের দৌলতে কোনও খবর ছড়িয়ে পড়তে একদমই সময় লাগে না। বেশিরভাগ সময়ে তার সত্যি-মিথ্যা বিচারের ইচ্ছে বা ধৈর্য কোনওটাই থাকে না। বিশেষ করে তা যদি চিকিৎসা এবং চিকিৎসক সংক্রান্ত হয়। ব্যস, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে গায়ের ঝাল মেটানোর জন্য কত খারাপ মন্তব্য করা যায় তার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। কিন্তু এতে করে সেই চিকিৎসক, যিনি বহু পরিশ্রম করে সামান্য সম্মান অর্জন করেছেন তাঁর কী মানসিক সমস্যা হতে পারে তা ভাবার কোনও দায় তাদের থাকে না। তবে এবার ডাক্তারবাবুদের হাতেও অস্ত্র এসে গেছে। তাদের মানহানি করার চেষ্টা করলে কেউ রেহাই পাবে না। সে যত বড় কেউকেটা-ই হোন না কেন।
ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি এভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তিকে যদি কোনও ব্যক্তি জনসমক্ষে কারও ক্ষতি হবে জেনেও মৌখিকভাবে, লেখালেখির দ্বারা, কোনও ছবি, ভিডিও ব্যবহার করে কিংবা ঈশারার মাধ্যমে কিছু প্রকাশ করেন তাহলে তা ব্যক্তির মানহানি বলে বিবেচিত হবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে মানহানি হল কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্কে খারাপ কথা বলে বা লিখে সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা, যার মধ্যে কোনও সত্যতা নেই।
মানহানি দুভাবে হতে পারে।
প্রথমত, মৌখিকভাবে মিথ্যে অপবাদ রটানো। ‘অমুক ডাক্তার ওই রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে’ বলে লোক জড়ো করে ডাক্তারকে হেনস্থা করা এমনকী গায়ে হাত তোলার ঘটনা আর নতুন কিছু নয়।
দ্বিতীয়ত, লেখার মাধ্যমে কারও মানহানি করার চেষ্টা। যদি সেই লেখা ইন্টারনেটে প্রচার করা হয় তাহলে তাকে সাইবার স্পেস বা অনলাইন ডিফামেশন বা মানহানি বলা হবে। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরূদ্ধে মানহানিকর কোনও লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায়, ই মেলের মাধ্যমে ছড়ানো হয় তাহলে তা মানহানি করা হয়েছে বলেই ধরা হবে।
ভারতের সংবিধানে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি দু ধরনের আইনেই মানহানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির সম্পর্কে বলা আছে আর ৫০০ ধারায় বলা আছে মানহানি করা হলে কী কী শাস্তি হতে পারে সে সম্পর্কে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থার মানহানি করা হলে জরিমানা অথবা দু বছর পর্যন্ত জেল কিংবা দুটোই হতে পারে। এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে বৈদ্যুতিন তথ্যকেও যোগ করার জন্য আইনে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৯ ধারা(সুনাম নষ্ট করার জন্য জালিয়াতি করা)য় বলা হয়েছে, যদি কেউ অকারণে ও অন্যায়ভাবে কারও কিংবা কারও সুনাম নষ্ট করার জন্য কোনও বৈদ্যুতিন নথি জাল করে তাহলে অবমাননাকারীর শাস্তিস্বরূপ আর্থিক জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস অথবা জেল ও জরিমানা দুটোই হতে পারে। যে কোনও ব্যক্তির মানহানি করা হলেই তিনি নাগরিক আইনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারায় বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে এমন কিছু বলা যাবে না যাতে অন্যের সম্মানহানি হয়।
কাজেই ভেবে পোষ্ট করুন।
খুব ভালো লিখেছো