আমি নিশ্চিত, ডাঃ সুধাকর মানসিক ভারসাম্যহীন।
ভারসাম্যের যে খেলাটায় আমরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি – এই যে ভুরভুর করে ভেসে আসা ছুটির দিনের মাংসের গন্ধের মাঝে অনাহারী মানুষদের কথা একটু ভেবে নেওয়া – প্রাইম আর নেটফ্লিক্সে কাটিয়ে দেওয়া সময়ের মাঝে একটু করে কাঁচালঙ্কায় কামড়, অর্থাৎ রেলগাড়ি বা ট্রাকে পিষে যাওয়া মাংসের দলা, যা পূর্বমুহূর্তেই মানুষ ছিল – এই ভারসাম্যের খেলাটিতে তিনি দক্ষ নন।
অতএব, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
তাছাড়া ডিগ্রির দিকটা খেয়াল রাখলেও দেখতে পাবেন, নেহাত পাগল না হলে কেউ অমন যোগ্যতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢোকে না। কেননা, এ তো জানা-ই কথা, আপনার যদি এলেম থাকে, তাহলে আপনি বড়লোক হতে চাইবেন – যার যতো প্রতিভা বা যোগ্যতা, তার তত বড় গাড়ি তত বড় বাড়ি – ব্যাঙ্কব্যালান্স ততই শাঁসালো। আর এও তো বলে দেওয়ার কিছু নেই, যে, অর্থোপার্জনের আসল পথ এঁদো সরকারি হাসপাতাল নয় – রাজপথ ওই ঝাঁচকচকে কর্পোরেট হাসপাতাল।
আমার এক ঘনিষ্ঠ শিক্ষক-তথা-দাদা-কে তার কিশোরপুত্র বলেছিল – বাবা, জানো তো, আগে লোকে ভাবত, যাদের কোথাও যাওয়ার নেই, একমাত্র তারা-ই গভর্নমেন্ট হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট করায়। আর এখন তো আমার বন্ধুরাও বলে, যে ডাক্তারগুলোর অন্য কোথাও কিছু হিল্লে হয় না, শুধু তারাই গভর্নমেন্ট হাসপাতালে চাকরি করে।
কোভিড পরিস্থিতিতে পাঁচতারা হাসপাতালসমূহের দায়বদ্ধতা পালনের গ্লোরিয়াস ভূমিকা দেখার পরেও চিন্তাভাবনায় বদল আসার সম্ভাবনা নেই।
কাজেই, বুঝতেই পারছেন, হাইফাই ডিগ্রি নিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যুক্ত থাকার অর্থ – মাথার গণ্ডগোল।
যেখানে নিজেরটুকু গুছিয়ে রাখতে শেখা-ই আসল শিক্ষা – সেখানে সব ডাক্তার পিপিই-এন-নাইন্টিফাইভ পাচ্ছেন কিনা, সে নিয়ে কথা বলতে বসা, যা কিনা ডাঃ সুধাকর করেছিলেন, তা যে ঘোর অশিক্ষা বা কাণ্ডজ্ঞানহীনতা – বা ভারসাম্যের অভাব – আশা করি, বলে দিতে হবে না।
রাস্তাঘাটে পাগল দেখলে আমরা কী করি? ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে, যেন দেখতে পাইনি এমন ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যাই। আর উদ্যোগী ও আমোদপ্রিয় মানুষেরা একটু-আধটু পাগল ক্ষেপান – মাঝেমখ্যে ইঁটপাটকেল ছুঁড়ে আনন্দ পান। অন্ধ্র পুলিশ, স্পষ্টতই দ্বিতীয় দলে। “মানসিক ভারসাম্যহীন” ডাঃ সুধাকরকে জামা খুলে পিছমোড়া করে বেঁধে রাস্তায় হাঁটিয়েছেন – দাবাং-এর চুলবুল পাণ্ডের ভাষায় বিটউইন-টু-লেগস রুলের গুঁতো দিয়েছেন কিনা, জানি না – দিলেও আলাদাভাবে দোষের কিছু নেই।
জীবনানন্দকে স্মরণ করুন –
“অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;”
এবং সেই খেলা যাদের রক্তের মধ্যে মাত্রাছাড়া পরিমাণে, তাদের পরিণতি কী, সে কি আর বলে দিতে হবে!!!
ডাঃ সুধাকর, আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি নিশ্চয়ই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আমাদের আর পাঁচজনের মতো পুরু ত্বক আপনি নিশ্চয়ই অর্জন করতে সক্ষম হবেন – কোনটা বললে ভালো শোনায় এবং কোন কাজটা কখন করলে সামাজিকভাবে দেখতে ভালো লাগে, এই জরুরী শিক্ষাটুকু নিশ্চয়ই আপনি দ্রুত অর্জন করবেন।
আমরা সকলেই আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি – প্রতীক্ষায় আছি, হেলিকপ্টার থেকে আগামী পর্যায়ের পুষ্পবৃষ্টির মুহূর্তে আপনার হাস্যোজ্জ্বল সেল্ফি কবে দেখতে পাবো!!
ডাঃ সুধাকর, গেট ওয়েল সুন – দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো, থুড়ি, দ্য নেশন ওয়ান্টস ইউ ব্যাক টু হ্যাপিনেস।
এমন পাগলে ভরুক ভারত
তা হলে বর্তে যাবে
ছাগলে যে সবই ঘাস খেয়ে গেল
মাঠ টা বাঁচাবে কে?