#বুঝে_নেওয়া_উচিত–ডি এস এ হলো, ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন। ডি এস ও নয় এটা। ডি এস ও-র ছাতা আছে। আমাদের নেই। ছাতা মাথায় নিয়ে বেরোয় জমিদাররা। আমরা, শ্রমিক। কৃষক। জনগণ।
এককালে যখন ডি এস এ করতাম খুব আর চেয়ারের ভাঙা হাতল, কেটলি ভর্তি গরম জল আর ডিঅডরেন্ট স্প্রের মুখে দেশলাই মেরে বাওয়াল করতাম বিন্দাস, তখন পৃথিবী ছিল বেশক পায়ের নিচে। জুতোর তলায়। প্রজাবৎ। চাইলেই সিগারেটের ফিল্টার গোড়ালি উঁচু করে সদর্পে ঘষে দিয়ে, সপাট শট মারতাম দূরে। তাচ্ছিল্যে। কলেজ ভর্তি লাল কালির পোস্টার, অবিলম্বে গ্রেপ্তার চাই। নীচে, নাম আমাদের। সেই পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়েই ফ্লেক ধরতাম কাঠি ঠুকে। আর পুলিশি খাতায় পাঁচ ধারায় অভিযোগ। জজ সাহেবের সামনে সদর্পে বেইল নেওয়া।
ছাদে হতো জুনিয়রদের মগজ ধোলাই। ভয়ে মাথা নিচু করে থাকত বাচ্চাগুলো, যেরকমটা ছিলাম আমরা ষোলোই আগস্ট, ২০০০ সালে। আর চটি ফটফটিয়ে, ভ্রু-তাচ্ছিল্যে মিটিংয়ে প্রবেশ করতাম আমরা, ঠিক যেভাবে ঢুকেছিল অভিজিৎদা, সুরজিৎদা, রাকেশদা, স্যান্ডিদারা। ওই ষোলই আগস্ট, দুই হাজারেই।
প্রথমে পার্টি করতে চাইত না কেউ। কেইই বা চায়? মায়ের কাজললতা আর বাবার গলা খাঁকারি থেকে সদ্য বেরিয়ে, কলকাতায় পড়তে এসে? আমরা তো পড়তেই এসেছি তাই না? পড়ব ,শিখব, অধ্যবসিব…গড়ব নতুন ভারত কলকালিতে। এই তো উচিত। ছাত্রানং ডট ডট ডট তপঃ।
পার্টি অর্থাৎ ডি এস এ, ভাঙতো ওই বুনিয়াদি ভ্রমকেই। পড়তে হবেই। করতেও। কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি হলো, লড়তে হবে। বাংলার আকাশ তখন লাল।দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এস.এফ.আই। ছোবল মারছে সোমেন মিত্রর স্নেহধন্য ছাত্র পরিষদ। পড়ব যে, যথেষ্ট পরিমাণে মড়া কই? কাটব কী? বহুমূল্য বিদেশি পাবলিকেশন সুলভে, বা বলা ভালো নিখরচায় জোগাবে কে? দুঃস্থ ছাত্র ছাত্রীদের? আর গুজরাটে যখন খুব খুব খুব হিসাব কষে হবে নরমেধ যজ্ঞ, তখন, সযত্নে চুল আঁচড়ে, স্নিকার্স পরে কলেজ ক্লাস করতে আসাকে উটপাখির বালিতে মুখ গুঁজে রাখা… বলবে কে? কে আউড়াবে ভাস্কর… অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
এই ভাবেই ডি এস এ হয়েছিলাম আমরা। আমরা যারা, তারা আজও ডি এস এ ই। আজীবন। বা বলা ভালো আমৃত্যু।
তো সেই সময়, যখন পার্টি করতে চাইতাম না আমরা, আর দাদারা রোজ বোঝাতো, তবুও বাঙালির শিষ্টতায় বাধতো, তখন, এস এফ আই আর ছাত্র পরিষদ… হিসাবে ভুল করে ফেললো। আমাদের 2000 এর মিলেনিয়াম ব্যাচ, মেডিক্যাল কলেজ মেইন হোস্টেলকে, রোজ রাতে থ্রেট দিতে শুরু করলো নাগাড়ে।
” সাইন কর পেপারে। নে। সদস্যপদ।নয়ত শালা আলিমুদ্দিনে খবর চলে যাবে বাঁ#। উদমা কেলিয়ে মদের বোতল গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বাথরুমে শাওয়ার চালিয়ে দেব। বলব, মদ খেয়ে হুজ্জত করছিল স্যার। তাই ক্যাল দিয়েছি বাধ্য হয়ে। ”
এসব বলতো এস এফ আই এর দাদারা।
আর ছাত্র পরিষদ? সেখানে তো নীল রক্তের সমাবেশ। তারা ভারতে থাকতো না। থাকতো না ইন্ডিয়াতেও। গুজরাট হোক বা নর্মদা বাঁচাও… এসব ছুঁতো না তাদের কিছুতেই।
ঠিক এই সময়েই আমরা বিদ্রোহ করলাম।
মিলেনিয়াম ব্যাচ। মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা।
মেইন হোস্টেল।
এক রাতে ওই বাচ্চারা মুঠো তুললাম সব্বার আগে। সঙ্গে, কিংবা বলা ভালো নেপথ্যের পুরোধারা এগিয়ে এলো। ফার্স্ট টু ফাইনাল ইয়ার ডি এস এ, একদিন তছনছ করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল এস এফ আই দুর্গ। ছাত্র পরিষদ নাক উঁচামি। দীর্ঘ বিশ বা ত্রিশ বছর পরে আপামর ছাত্রছাত্রীকে বুঝিয়ে উঠতে পারলো– প্রতিবাদ করাটা দরকার। প্রতিবাদ, জরুরি। পেলো, ইউনিয়ন।এবং সগর্বে ঘোষণা করলো , মাথার উপর কোনো বাবাজির পতাকা নেই আমাদের। সেই যে ঘোষণা, সেসব সমস্ত আজও বরকরার। যারা ডি এস এ, তারা আজও চায়েওয়ালা, চটিওয়ালা কিংবা ন্যাকামুখ চশমাওয়ালা কারো কাছে মাথা নোয়ায়নি।
ডি এস এ মতলব, হরবখত ডি এস এ।
কিন্তু কেন বলছি এতসব কথা।
সেসব দিনে যখন জানতাম, আসপাশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ অর্থাৎ আর জি কর, ন্যাশনাল, এন আর এস কিংবা এমনি কলেজ– বঙ্গবাসী আর প্রেসিডেন্সি থেকে দলে দলে এস এফ আই আসছে চেইন, বাঘনখ আর পাঞ্চ নিয়ে এবং ব্যাক আপ দিচ্ছে আলিমুদ্দিন তখন, সেই তখন আমরা ভাবতাম মনের সাহস বাড়াতে লেজেন্ড অফ ভগৎ সিং দেখে নিই চল্ একবার… অথবা রঙ দে বসন্তী।
দেখে নিতামও।
আর জোর পেতাম, লড়তে। আজীবন… আমৃত্যু হকের জন্য লড়তে। সুন্দর যা, শিব যা, তারও ঊর্ধ্বে উঠে অসুন্দরের সম্মুখীন হতে, তাণ্ডবে। নটরাজ সম।
পাশ পাইয়াছি আজ বছর সতেরো হলো।
কিন্তু
আগুন এখনো চাপা আছে সেই দগদগে শপথে।
প্রমাণ পেলাম
অজয় অতুল এর সুর দেওয়া এই গানটা শুনে।
মেডিক্যাল কলেজ? ডি এস এ জুনিয়ার্স? তোরা শুনছিস?
হাল ছাড়বি না। জমি ছাড়বি না একটুও।
পড়বি অবশ্যই।
মানুষ হবি তার আগে। কেমন?
আর হ্যাঁ, দমে গেলে, গানটা শুনে নিস।
?
Amazon হয়তো নেই তোদের। কোথায় পাবি? এখনো তো ছাত্র তোরা। তাই ইউ টিউব লিংক দিলাম প্রথম কমেন্টে।
হারবি না। কেমন?
ছাড়বি না।
আর ভুলবি না কিচ্ছু।
হয়ত পারবি না সব ঠিক করে দিতে, এ দেশের।
কিন্তু ভুলবি না।
জাগিয়ে রাখবি, দগদগে ক্ষতকে।
আজীবন।
নাকি…
অমৃত্য?
( এ লেখা তাঁদেরকেও, যাঁরা ভাবেন আমি সিপিএম)
আজ এম সি ডি এস এ-র ৪৫ বছর হলো।