একটা সেকেন্ড হ্যান্ড হুইল চেয়ার নিলামে বিক্রি হবে। বিজ্ঞাপনে লেখা “১২৭ সেমি × ৫৮ সেমি × ৭২ সেমি। লাল ও মেরুন চামড়ায় মোড়া। চেয়ারটির মোটরে পেনি ও গাইলস ড্রাইভ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। নিলামের সফল দর দেওয়া ক্রেতা চেয়ারটির সঙ্গে একটি ধাতব পাদানি ও চামড়ায় মোড়া কুশনও পাবেন।”
ঠিক এমনটা না হলেও পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক সংগঠনের কাছ থেকে একটি হুইল চেয়ার উপহার পেয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বাবুসোনা সেনাপতি। বছর দুয়েক আগে একটি প্রথম শ্রেণীর খবরের কাগজের পাতায় আমরা দেখেছিলাম খবরটি। আরো দেখেছিলাম যে, যে স্কুলে বাবুসোনার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়েছে, সেখানে হুইল চেয়ারটি নিয়ে উঠে যাওয়ার মত ঢালু সিঁড়ি বা র্যাম্প ছিল না। ফলে বাবুসোনাকে বাধ্য হয়ে বাবা মা-এর কোলে চেপে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে হয়েছিল।
সেই হুইল চেয়ারটার গল্পে ফিরে যাই। বিখ্যাত নিলাম সংস্থা ক্রিস্টি ওই চেয়ারটি বিক্রি করে ২.৮ কোটি টাকায়। চেয়ারটির পূর্বতন মালিক ছিলেন স্টিফেন হকিং। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। যিনি নিজেও মোটর নিউরন অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। নিলামে সংগৃহীত অর্থের গোটাটাই দান করা হবে ওই বিরল অসুখের গবেষণায়।
বাবুসোনা সেনাপতি কোনওদিন আক্ষরিক অর্থে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। তার দুটো পা-ই পোলিও আক্রান্ত। তবুও বাবুসোনা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কে বলতে পারে যে সুযোগ পেলে বাবুসোনাও একদিন হয়ে উঠতে পারে না স্টিফেন হকিং-এর মতো বিশ্বখ্যাত।
স্টিফেন হকিং পাল্টে দিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী শব্দটার মানে। বাবুসোনারাও পাল্টে দিচ্ছে, ওরা প্রতিবন্ধী নয়, অক্ষম নয়। ওরা বিশেষ ভাবে সক্ষম, ওরা প্রতিস্পর্ধী।
হকিং ও বাবুসোনারা সমাজ থেকে কোনো দয়া, মায়া, করুণার প্রত্যাশী নয় কিন্তু সমাজের কিছু দ্বায়িত্ব কর্তব্য থেকে যায় তাদের প্রতি। স্কুল কলেজ, প্রেক্ষাগৃহ, হাসপাতাল, স্টেশন এই সমস্ত জায়গায় কেন থাকবে না ঢালু সিঁড়ি বা র্যাম্প যেটা বেয়ে ওই হুইল চেয়ার চালিয়ে সটান উঠে যাবে বাবুসোনারা? স্বাধীনতার এত বছর বাদেও কেন আমরা এটুকু পরিকাঠামো গড়ে দিতে পারলাম না ওদের জন্য? স্টিফেন হকিং-এর তিরোধান দিবসে এ প্রশ্নের জবাব চাইতে যাওয়া কি ভুল?