রোগটা কী?
জরায়ুর (Uterus) ভিতরে আসার বদলে প্রেগন্যান্সি যদি জরায়ুর বাইরে আসে তাকে বলা হয় ‘এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি’। স্বাভাবিক অবস্থায় নিষিক্ত ডিম্বাণু এই নালী বেয়ে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হওয়ার কথা। এর বদলে যদি সে ডিম্ববাহী নালীতেই থেকে যায় তাহলেই বিপদ। সামান্য কিছুদিন বাড়ার পর সে ওই সূক্ষ্ম নালীটিকে ফাটিয়ে দেয়। ফলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। এই রক্তক্ষরণ বাইরে থেকে বিশেষ দেখা যায় না কারণ তা পেটের মধ্যেই জমা হতে থাকে। প্রথম দিকে একমাত্র উপসর্গ হতে পারে ব্যথা। প্রেগন্যান্সির কথা জানা থাকলে হয়তো এই সম্ভাবনার কথা ভাবা যেতে পারে কিন্তু বুঝতে হবে মেয়েদের পক্ষে সবসময় প্রেগন্যান্সির কথা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ রোগীর স্বার্থে একটু সন্দেহবাতিক হতেই হয়।
কাদের বেশি হয়?
একবার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হলে আবার হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। ফ্যালোপিয়ান টিউবে যে কোন সার্জারি হয়ে থাকলে বা কোনো সংক্রমণ হয়ে থাকলেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা বাড়ে। ধূমপান করলে বা কৃত্রিম প্রজনন চিকিৎসা যেমন IVF করালেও এই সম্ভাবনা বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা এই সব ইতিহাস না থাকলেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়া সম্ভব।
রোগ নির্ণয়
মূলত তিনটি সূত্র। ব্যথা, ব্লিডিং এবং পিরিয়ডে দেরি। এইরকম কোনো পরিস্থিতি পেলেই ইউরিন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ডায়াগনোসিস করা সব সময় সহজ নয়।
চিকিৎসা
রাপচার করে যাবার আগে বা ফেটে যাবার আগে ধরা পড়লে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে তার জন্যও হাসপাতালে ভর্তি থাকলে ভালো। আর ফেটে গেলে জরুরিভিত্তিক সার্জারি ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এই অপারেশন সময়মতো না করালে রোগীর প্রাণহানিও হতে পারে। অতএব সাধু সাবধান।
প্রতিরোধ
প্রেগন্যান্সি আটকাতে পারলে ectopic প্রেগন্যান্সিও কমবে। এটা তো সহজ ভাবনা। কিন্তু কিভাবে আটকাবেন? এখানেও উত্তর সহজ। প্রস্তুত না থাকলে গর্ভনিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এই দায়িত্ব মেয়েদের একার নয়। ছেলেদেরও সমান ভূমিকা থাকা দরকার। পিল, কনডোম, কপার-টি ইত্যাদি হাজারো উপায় আছে। এই লেখায় সে সবের বিস্তারিত বর্ণনায় গেলাম না। চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিজেদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিটা বেছে নিতে হবে।
শেষের কথা
প্ল্যানড এবং আনপ্ল্যানড দুটো ক্ষেত্রেই এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হতে পারে। মূল বিষয়টি হল সময়মতো রোগ নির্ধারণ এবং চিকিৎসা। প্রেগন্যান্সির শুরুতে পেটে ব্যথা হলে বুঝে নিতে হবে ভ্রূণ জরায়ুর ভিতরে আছে না কি বাইরে। তার জন্য দরকার আলট্রাসোনোগ্রাফি এবং রক্ত পরীক্ষা। বাড়ি বসে কিটে ইউরিন পরীক্ষা করা যায়। সেটা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলেও প্রেগন্যান্সির সাত থেকে নয় সপ্তাহে একটি আলট্রাসোনোগ্রাফি করিয়ে নেওয়া ভালো। তাতে ভ্রূণের অবস্থান বোঝা যায়। প্রস্তুত না থাকা অবস্থায় প্রেগন্যান্সি এসে গেলে অনেকে স্বেচ্ছায় গর্ভপাত চান। তাতে কোনো আপত্তি নাই। সেক্ষেত্রে আমার অনুরোধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কিনে ওষুধ খাবেন না। তার আগে জেনে নেওয়া দরকার ভ্রূণ কোথায় আছে। বাজার চলতি বা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি নষ্ট করা যায় না। তাতে ভয়ানক বিপদ হতে পারে।