অতিমারীতে মানসিক চাপের দুটি অন্যতম প্রধান কারণ হল —
১) অনিশ্চয়তা,
২)পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব বোধ।
এখন সারা দেশ জুড়ে চলছে লক ডাউন। এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে জানা নেই। এই ভীষণ অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই। যে যেমন কাজ করেন বেশির ভাগের কাজ বন্ধ। শুধু লড়াই করে চলেছেন অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবায় যুক্ত মানুষজন। স্কুল বন্ধ, কাজেই পড়ুয়ারাও চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, উপার্জনের পথ বন্ধ, এমতাবস্থায় অনিশ্চয়তার মেঘ আমাদের ঘিরে ধরেছে। বাড়ছে মানসিক চাপ । যার ফলে উদবেগ আর ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। তার ওপর আছে সামাজিকভাবে একাকী হয়ে পড়ার চাপ।
এই সমস্ত পরিস্থিতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রায় নেই বললেই চলে। এই নিয়ন্ত্রণহীনতার বোধ আমাদের মধ্যে উদবেগ সৃষ্টি করে অনেক বেশি।
এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আসুন দেখে নেওয়া যাক কি ভাবে মন যথা সম্ভব চিন্তামুক্ত করা যায়। কি ভাবেই বা এই উদবেগের সঙ্গে যুঝতে পারা যেতে পারে।
* প্রথমত: বুঝতে হবে এই পরিস্থিতিতে যে উদবেগ তৈরি হচ্ছে তা খুবই স্বাভাবিক। নিজেদের অস্তিস্ত্ব রক্ষার খাতিরে বিপদের সামনাসামনি হলে এমন উদবেগ খুব স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হবে। কাজেই আপনি একা নন। এই অবস্থায় বেশির ভাগ মানুষের উদবিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক।
* কাজেই উদবেগকে অস্বীকার করার চেষ্টা না করে নিজের মনে আগে এই সত্যকে গ্রহণ করতে হবে। আপনি একা নন আরও অনেকেরই এই পরিস্থিতিতে উদবেগ তৈরি হচ্ছে।
* উদবেগ আসলে কি? উদবেগ কি আপনার জীবনের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যাবে পরিস্থিতির সম্বন্ধে আপনার মনে যে অনুভূতি তৈরি হচ্ছে সেটাই উদবেগ।
* তার মানে উদবেগ মনের আবেগ মাত্র। কখনই সমগ্র পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
* এবার দেখে নেওয়া যাক এই আবেগ কেন তৈরি হচ্ছে? কারণ আমরা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নেতিবাচক ভাবছি। যেমন উপার্জনের ক্ষতি হবে, কাজ হারিয়ে ফেলতে পারি, খাবার বা ওষুধ ফুরিয়ে গেলে কি হবে এই ধরণের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে মনে আসে ভয় যে খারাপটাই ঘটবে।
* এই সত্য বুঝে গেলে মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এখন উদবেগ আর অচেনা নয় চেনা শত্রু। আপনি একা নন অনেকেরই এই কষ্টকর অনুভূতি হচ্ছে এমনটা ভাবতে পারলে অস্থির ভাব কিছুটা হলেও কমবে।
* যেহেতু প্রত্যেকের স্বাভাবিক রুটিন বদলেছে তাই বাড়িতে থাকাকালীন নিশ্চিন্ত ভাব বজায় রাখতে একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করুন।
* নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করুন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
* এই আপতকালীন পরিস্থিতিতে কি ভাবে সময়কে পছন্দমতো কাজে ব্যবহার করা যায় সে সম্বন্ধে ভাবুন। মানে লক ডাউনের ইতিবাচক দিকটা কি ভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্বন্ধে নিজেকে বোঝান।
* প্রতিদিন একটা বিশেষ কাজ করুন। যেমন কাগজপত্র গুছোতে পারেন বা কেউ একটা ছবি আঁকতে পারেন বা কিছু লিখতে পারেন। কোন রান্না করতে পারেন।
* কিছু ভাল লাগার কাজ করুন তাতে পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর যে বোধ তা কিছুটা শিথিল হবে।
* অনিশ্চিত এই সময়ে প্রিয়জনের সাথে ফোনে কথা বলুন।
* প্রতিদিন যে সময় আপনার কাজের সময় সেই সময়ে নিয়ম মেনে কিছু কাজ করুন। আসলে আমরা অভ্যাসের দাস তাই এই পরিস্থিতিতে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়ো খবর থেকে দূরে থাকুন।
* মনে রাখবেন খারাপ সময় আসে আবার কেটে যায়। তাই উদবেগ তৈরি হলে তা নিয়ে অযথা চিন্তিত হবেন না। কিছুক্ষণ গভীর ভাবে নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিন ও মনে মনে ভাবুন আপনার সব উদবেগ, দুশ্চিন্তা নিশ্বাসের সঙ্গে শরীর থেকে বার হয়ে যাচ্ছে।
উদবেগের কারণে খুব অসুবিধা হলে আমাদের হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করে কথা বলুন।
কোভিড ১৯ অতিমারীতে মানসিক উদ্বেগ দূর করতে ডক্টরস’ ডায়ালগের হেল্প লাইনঃ ডা সুপূর্ণা দাসঃ 9830374187 / রুমঝুম ভট্টাচার্যঃ 9748060816 । সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা।।