(আমার এই প্রবন্ধের কিছু তথ্যের জন্য ডঃ হিমাদ্রিশেখর বেরার কাছে ঋণী)
ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁর অবসররগ্রহণের পূর্বে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে আমাদের আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় দুইটি – প্রথম, তিনি বিচারের দেবীর কালো পটি দিয়া বাঁধা চক্ষু খুলিয়া দিয়াছিলেন – যাহাতে আইনের বিচারে সবাইকে সমান জ্ঞান করিয়া উন্মুক্ত চোখে সমস্ত কিছু দেখিতে পান এবং সুবিচার প্রদান করেন; দ্বিতীয়, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যে শিক্ষার্থী তরুণীর (অভয়া) নৃশংসতম অত্যাচার, ধর্ষণ ও খুনের বিরুধে (যাহাকে বেশিরভাগ মানুষ “প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন) লক্ষাধিক মানুষের প্রতিবাদদৃপ্ত পদচারণা এবং সুতীব্র জনরোল বাংলা সহ ভারতের ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে প্রতিবাদমুখর করিয়াছিল, হাইকোর্টের বিচারাধীন সে মামলাটিকে চন্দ্রচূড় suo motto নিজের হাতে তুলিয়া লন।
বিচারের দেবীর এক হাতে ধরা বিচারের তুলাদণ্ড, অন্য হাতে ধরা রহিয়াছে ভারতের স্বাধীন সংবিধান – যাহার জন্য কোটি কোটি মানুষ সংগ্রাম করিয়াছে, সহিয়াছে অকথ্য নির্যাতন ব্রিটিশ ও ভারতীয় পুলিশের হাতে এবং নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া, প্রেম-ভালোবাসা-সংসার-জাগতিক সুখের মায়া বিসর্জন দিয়া আত্মবলিদান দিয়াছে।
আমাদের অতি মূল্যবান সংবিধান ও ন্যায় বিচারের ধারক বিচারের দেবী সংবিধানের কাছে শপথ নেওয়া বিচারক মারফত কী কী দেখিলেন অভয়া-বিচারের মামলায়? কী কী রায় দিলেন? সেই রায়ের মাঝে কী অসঙ্গতির কোন চিহ্ন রহিয়া গেল? আমরণ জেলবন্দী থাকিবার জন্য নিম্নবিত্ত পরিবারের সামান্য সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরিরত সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কেইবা উপযুক্ত দোষী হইতে পারে? ইহার ফাঁসীর দাবীতে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁহার পারিষদবর্গ বড়োই আকুল এবং উদগ্রীব হইয়া উঠিয়াছেন। ফাঁসীর দাবীতে মামলা হাইকোর্ট অবধি পৌঁছিয়াছে। দেখিয়া শুনিয়া খটকা লাগে। এদিকে আবার সদ্য নির্বাচিত সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর দ্বিতীয়বার ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতাভার গ্রহণ করিয়াই মৃত্যদণ্ডের পক্ষে জোরালো সওয়াল করিতেছেন। ফলে আমাদের তো তাহা আবশ্যিকভাবে করিতেই হইবে – ইহাই আপাতত বিশ্বের বিধিলিপি।
অসঙ্গতি – ১
(সৌজন্যঃ আনন্দবাজার পত্রিকা – ২২.০১.২০২৫)
সহজ কথায় বুঝিলে ও বলিলে, শিয়ালদহ কোর্টের বিচারক মামলায় পেশ করা অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণে যথেষ্ট সন্তুষ্ট হইতে পারেন নাই। এই জন্য মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হইতে বিরত রহিয়াছেন। সিবিআই একটি “নির্ভীক”, “নিরপক্ষে” এবং কেন্দ্রীয় স্বারষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন এক স্বায়ত্ত্বশাসিত তদন্তকারী সংস্থা। কাজেই ইহারা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হইয়া কলুষমুক্ত থাকিয়া সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজিয়া বাহির করিবে, এমনটাই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত। কিন্তু জনতার উতরোল সে কথা বলে না। এমনকি এক প্রাক্তন বিচারপতি এই সংস্থাকে “খাঁচার তোতা”ও বলিয়াছিলেন। আসলে অস্বাভাবিকের রাজত্বে কেইবা আর স্বাভাবিক থাকে!
আমাদের হর্ষধ্বনি
অতঃপর দেশের রাজা-রানী (রূপকার্থে) নির্বিঘ্নে, নিরুত্তাপ এবং নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে, প্রসন্ন হৃদয়ে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন…। দুষ্ট লোক ধরা পড়িয়াছে। কোটাল উহাকে পাকড়াও করিয়াছে। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে। এবার বিচারালয়ে উহার বিচার হইবে। সাজা তো হইবেই।
সবাই হরিধ্বনি কর। উদ্বাহু হইয়া আনন্দ প্রদর্শন কর। এ ধরা কলুষমুক্ত হইবে। বিচারালয়ের উপরে বিচারালয়। তাহার উপরে সর্বোচ্চ বিচারালয়। সর্বত্র দুষ্ট লোককে চিনিয়া ফেলা হইয়াছে – কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।
কিছু মেধাসম্পন্ন, গোঁয়ারগোবিন্দ এবং নাছোড় বিচার-প্রার্থী যুবকযুবতী ও সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ কিছুদিনের জন্য স্বল্পস্থায়ী জনরোল তৈরি করিয়াছিল বটে, তবে তাহাতে নগর কোটাল, ন্যায়ালয় বা রাজা-রানী কেহই বিচলিত হন নাই। তেল খাওয়া যন্ত্রের মতো মসৃণভাবে সমগ্র বিষয়টি নিতান্ত মসৃণভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়াছে। রাজা-উজির-মন্ত্রী-সান্ত্রী-কোটাল-ন্যায়ালয় সবাই তাহাদের কাজ সুসম্পন্ন করিয়াছে – পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ ও সুসংবদ্ধ যোগাযোগ রক্ষা করিয়া। আর আমরা তো জানিই, মানুষের স্মৃতি স্বল্পস্থায়ী – “বিংশ শতাব্দীতে শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর”। এই বিশ্বাসে রাষ্ট্র চলে, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত উপাদান চালু থাকে।
অসঙ্গতি – ২
মেধাবী, গোঁয়ারগোবিন্দ এবং নাছোড় বিচার-প্রার্থী জুনিয়র ডাক্তারেরা জনতার দরবারে একগুচ্ছ প্রশ্ন উপস্থাপিত করিয়াছে – মানুষের বিচারের জন্য। প্রশ্নগুলি আমরা ভাবিয়া দেখিতে পারি। কোন ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা নাই। প্রকৃত ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে সুবিধা হইতে পারে। উহাদের ভাষায় প্রশ্নগুলি নিম্নরূপ।
“প্রশ্ন ১:
অভয়ার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে মাথায় রক্তক্ষরণের উল্লেখ রয়েছে, যা কঠিন surface এ আঘাতের কারণে হতে পারে। কিন্তু যদি ম্যাট্রেসে গলা চেপে খুন হয়, তবে scalp এর নীচে রক্তক্ষরণ কীভাবে হয়? সেমিনার রুমে কোনো ধস্তাধস্তির বা রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে সি এফ এস এল রিপোর্টে বলেছে। তাহলে আঘাতটি কোথায় এবং কিসের দ্বারা হয়েছে? রিপোর্টে দেওয়াল বা অন্য কোথাও কোনো রক্ত বা নমুনার চিহ্ন নেই, তাহলে ঘটনাস্থল আদৌ কি সেমিনার রুম?
প্রশ্ন ২:
অভয়ার মা-বাবাকে আত্মহত্যার কথা নন- মেডিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট সুপার ফোনে জানিয়েছিলেন। কেন তিনি আত্মহত্যার কথা বলেছিলেন এবং নন-মেডিক্যাল ব্যক্তি হয়ে সেটা বুঝলেন কীভাবে? কেউ কি তাকে আত্মহত্যার কথা জানাতে বলেছিল? সিবিআই চার্জশিটে তার স্টেটমেন্ট কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?
প্রশ্ন ৩:
অভয়ার বাবা-মাকে সেমিনার রুমে ঢুকতে না দিয়ে ৩ ঘণ্টা বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, কেন? কার নির্দেশে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি? ওই সময় সেমিনার রুমে এত বহিরাগত ছিল কেন এবং তারা কী করছিল? সেই ঘটনার পরবর্তী সিসিটিভি ফুটেজের কথা চার্জশিটে কেন উল্লেখ নেই?
প্রশ্ন ৪:
কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন FIR করেনি? কেন অভয়ার মা-বাবাকেই FIR করতে হয়েছিল? মৃতদেহের কাছে তাদের ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। সৎকারে পুলিশের দ্রুততা কেন? কে বা কারা এই নির্দেশ দিয়েছিল?
প্রশ্ন ৫:
নির্যাতিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও সঞ্জয় রাইয়ের নখের স্যাম্পেলে তার ডিএনএ পাওয়া যায়নি, এবং নির্যাতিতার নখের স্যাম্পেলে সঞ্জয় রাইয়ের ডিএনএ মেলেনি। তাহলে যদি সঞ্জয় রাই একাই অপরাধী হয়,এটা কীভাবে সম্ভব?
প্রশ্ন ৬:
নির্যাতিতার চোয়ালের নীচে যে sucking mark এর উল্লেখ আছে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে সেখান থেকে swab নেওয়া হয়নি কেন? কেন শুধু nipple swab ই নেওয়া হল? CFSL রিপোর্টে nipple swab এও সঞ্জয় রাই ছাড়া অন্য মানুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে, তার খোঁজ কেন করা হচ্ছে না?
প্রশ্ন ৭:
চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সিসিটিভি-তে সঞ্জয় রাই ছাড়া আরও অনেককে দেখা গেছে রাত ২.৩০ থেকে ৪.৩০ পর্যন্ত(যা অভয়ার সম্ভাব্য মৃত্যু সময়),কিন্তু তাদের কাউকেই চিহ্নিত করা হয়নি। সঞ্জয় রাই একমাত্র চিহ্নিত হলেন, অন্যদের চিহ্নিত না করার কারণ কী? তদন্তকারীরা কি বাকিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেননি?
প্রশ্ন ৮:
একটা জায়গায় একজন মাত্র খুনি একাই ধর্ষণ করে একজনকে মেরে ফেলল, তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হল, অথচ গোটা ঘরের কোথাও খুনির কোন হাতের ছাপ, আঙুলের ছাপ মিলল না। খুনি কি গ্লাভস পরে এসেছিল খুন করার জন্য? নাকি তদন্তকারীরা আঙুলের ছাপ খোঁজার চেষ্টা করেনি?
প্রশ্ন ৯:
অভয়ার মৃতদেহ যে ম্যাট্রেসের ওপর পাওয়া যায় তার ওপর বিছানো চাদর পরিপাটি করে সাজানো।ল্যাপটপ, ব্যাগ, পাশে রাখা জুতো – সব ই খুব গুছিয়ে রাখা। ধর্ষণ, খুনের পর কীভাবে সবকিছু এরকম পরিপাটি ভাবে থাকতে পারে? তাহলে কি ধর্ষক বা তার সহায়করা চেয়েছিল এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে, আর তাই সবকিছু এরকম গুছিয়ে রেখে দিয়েছিল?
প্রশ্ন ১০:
৯ তারিখে অটোপসি থেকে স্যাম্পেল নেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাব এ পাঠানো হল ১৪ তারিখ। এত দেরি কেন?সঞ্জয় রাই কে আটক করা হয় ৯ তারিখ রাতে, কিন্তু তার রক্তমাখা জামাকাপড় ব্যারাক থেকে নিয়ে আসা হয় ১২ তারিখ। আবার এত দেরি -কেন? কিছু তথ্য প্রমাণ পরিবর্তন বা লোপাট এর মাঝে হয়নি তো?
প্রশ্ন ১১:
চার্জশিট অনুযায়ী সঞ্জয় রাই ভোর ৩:২০ তে আর জি কর হাসপাতালে ঢোকে, তারপর ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং e যায় ৩:৩৪ এ, বেরিয়ে আসে ৩:৩৬ এ। এরপর ইমার্জেন্সী বিল্ডিং এর 4th floor এ যায়(সময় দেওয়া নেই)। ৪:০৩ এ তাকে 3rd ফ্লোরে চেস্ট মেডিসিন ওয়ার্ডের সিসিটিভি তে দেখা যায়। এর মাঝে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় সে কোথায় ছিল? এই সময় সে কী করছিল?
প্রশ্ন ১২:
সঞ্জয় রায় এর ব্লু টুথ ইয়ারফোনের উপর ভিত্তি করে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। চার্জশিটে চেস্ট মেডিসিন সিসিটিভিতে সঞ্জয় রাই এর গতিবিধির বর্ণনা দেওয়া আছে। ৪:০৩ এ ব্লুটুথ ইয়ারফোন গলায় সঞ্জয় ক্যামেরার ডানদিক থেকে ওয়ার্ডের দিকে যায়। ৪:৩২ এ সে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়, তখন তার গলায় ইয়ারফোন ছিল না। এর মধ্যে একবার ৪:৩১ এ ওয়ার্ড থেকে তাকে ক্যামেরার দিকে যেতে দেখা যায়, এবং আবার ওয়ার্ডে ফিরে যায়। লক্ষণীয় ভাবে এই সময় তার গলায় ইয়ারফোন টি ছিল কি না তা চার্জশিটে উল্লেখ নেই। কেন?
প্রশ্ন ১৩:
সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবের রিপোর্টে নির্যাতিতার যৌনাঙ্গ ও পায়ুর স্যাম্পেল এ অন্তত অন্য একজনের ডি এন এ পাওয়া গেছে। কে সে? প্রশ্ন হল ২১শে আগস্ট এই তথ্য সিবিআই এর হাতে জমা পড়া সত্ত্বেও তা নিয়ে তদন্তের কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেল না এবং অন্য মহিলা বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের কোন খোঁজ সিবিআই এখনো বের করে উঠতে পারল না কেন? সিবিআই কি আদৌ তাদের খোঁজার চেষ্টা করেছে?
প্রশ্ন ১৪:
হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী, কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের কাজের জায়গা পেরিয়ে অভিযুক্ত সঞ্জয় রাই এর মতো বাইরের লোক কিভাবে এরকম নৃশংস অপরাধ করতে পারে? স্বাস্থ্যকর্মী যদি তার দ্বিতীয় বাড়ি অর্থাৎ নিজকর্মস্থলে সুরক্ষিত না থাকে তাহলে রোগী, রোগীর পরিজনদের নিরাপত্তা কোথায়? সরকারি কর্মস্থলে নিরাপত্তা প্রত্যেক কর্মীর নৈতিক অধিকার, এ ঘটনা চরম সরকারি অপরদার্থতার পরিচয় নয় কি?
প্রশ্ন ১৫:
জাল ওষুধ,সেলাইন,সরকারি তহবিল নয়-ছয়, ব্যবহৃত ইনজেকশন এবং ওষুধপত্র বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানি ইত্যাদি নানান দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। অথচ তার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য রাজ্য সরকার এখনো কেন সরকারি ছাড়পত্র প্রদান করছে না? এর পেছনে কি কোন বড় ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?
প্রশ্ন ১৬:
ম্যাজিস্ট্রেট ইনকুয়েস্টে অভয়ার ডান হাতের অনামিকায় চোটের উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে এই আঘাতের কোন উল্লেখ নেই। কেন নেই?
প্রশ্ন ১৭:
মৃত্যুর দিন ও তারপর শাসকশ্রেণীর বিধায়ক, স্বাস্থ্যভবনের উচ্চপদস্থ কর্মী,অন্য কলেজের প্রভাবশালী ডাক্তারবাবু, আমলাতন্ত্র সাথে অসংখ্য পুলিশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে কি ষড়যন্ত্র করছিলো?
প্রশ্ন ১৮:
১৪ই আগষ্ট বহিরাগত দ্বারা আর জি কর হাসপাতালে যে ভাংচুর চালানো হয়, সেই ঘটনার সাথে যে ১০০০ এর কাছে মানুষ জড়িত তারা কারা? কে তাদের সংগঠিত করলো? কেনো তারা হাসপাতালে এসে আন্দোলনকারীদের বা সেমিনার রুমের খোজ করছিল, ঘটনার সাথে যোগসূত্র নিয়ে রাজ্যে বা কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এর ভূমিকাই বা কি?
প্রশ্ন ১৯:
সিবিআই পেশ করা তথ্য অনুসারে অবশ্যই সঞ্জয় রাই দোষী, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই, তবে অভয়ার পোস্টমর্টেমে দেহের বাইরে ও ভেতরে,চোখে,যৌনাঙ্গে যে বিপুল পরিমাণ আঘাত এর কথা উল্লেখ আছে তা কীভাবে একার পক্ষে ওই অল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব? সিবিআই প্রথম চার্জশিটে সন্দীপ ঘোষ আর অভিজিৎ মণ্ডলকে তথ্য প্রমাণ লোপাটে যুক্ত থাকার কথা বলেছিল এবং তাদের গ্রেফতার করেছিল, তবে কেন দ্রুত সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রকাশ করে তদন্ত প্রক্রিয়া এগোনো যাচ্ছে না? কেন্দ্র ও রাজ্যের সেটিং তত্ত্ব যা মিডিয়া বা লোকমহলে চর্চিত তাহলে কি কোথাও সত্যিই বলে ধরে নিতে হবে?
প্রশ্ন ২০:
অভয়ার ন্যায় বিচারের দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যেও কুলতলি, জয়গাঁও বা জয়নগর এ সংগঠিত হলো খুন ধর্ষনের মতো নৃশংস ঘটনা! পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছে বারবার। কিছু স্থানে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে, ফাঁসির সাজা দিয়ে রাজ্যসরকার অভয়ার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুকৌশলে দায়ী করছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় এই দ্রুততা, পুলিশ-প্রশাসনের এই উদ্যম কি কেবল আন্দোলনের চাপ পড়লেই আমরা দেখতে পাবো? অপরাধী রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান নয় বলেই কি এত তাড়াতাড়ি তাকে শাস্তি দেওয়া গেল? অভয়ার ধর্ষণ খুনের অপরাধীরা ক্ষমতাবান বলেই কি তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে? বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে এত বড় গণ আন্দোলনের পরেও আমরা বিচার পাব না কেন? দেশের স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে কেন?”
উপসংহার
আমাদের আদরের কন্যাটি তাহার কর্মস্থলে “নিরাপদ” হাসপাতাল-নামক খাঁচার মধ্যে মরিয়াছে। শুধু মরে নাই, ধর্ষিতা এবং দৃশ্যমানভাবে নির্যাতিতা হইয়াছে। “আমরা বিচার চাই” বলিয়াছিলাম। বলিয়াছিলাম “বিচার দাবী করি”। কাহার কাছে? বধির, দৃষ্টি ও হৃদয়হীন রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটির কাছে? সভ্যসমাজে জনতার আদালতে বিচার হয়না। একেবারেই কাম্যও নয়। শুধু জনরোল, জনোচ্ছাসের প্লাবন হয়তো ইহা সম্ভব করিলেও করিতে পারে। সেই সঙ্গীত কী ধ্বনিত হয় আমাদের মনে?
শোনা যায়, বিগত নভেম্বর মাসে অভয়ার বিবাহ হইবার কথা ছিল। বাকি ইতিহাস? ওর মা-বাবার বুকচাপা দীর্ঘশ্বাস ও হতাশ্বাস, হৃদয়ের মাঝে ডুকরিয়া ওঠা ক্রন্দনের কী কোন মূল্য আছে তদন্তকারী সংস্থা, সরকার এবং এর তোষামোদকারী সুবিপুল পারিষদবর্গের কাছে? এমনকি ন্যায়ালয়ের কাছেও?
নেকড়ে-ওজর মৃত্যু এলো
মৃত্যুরই গান গা-
মায়ের চোখে বাপের চোখে
দু’তিনটে গঙ্গা!
দূর্বাতে তার রক্ত লেগে
সহস্র সঙ্গী
জাগে ধ্বক ধ্বক, যজ্ঞে ঢালে
সহস্র মণ ঘি!
যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে
যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুজে দিয়ে
বিষের টোপর নিয়ে।
…
নিভন্ত এই চুল্লিতে আগুন ফলেছে!
আমরা যা জানি প্রমাণ করতে ব্যর্থ। সুতরাং। ফের নতুন করে মামলা সাজানো গেলে যদি কোন সুরাহা হয়
Sir . Darun laglo lekha ta pore..
যে প্রশ্ন গুলো তোলা হোল সমস্ত জনসাধারনের। হাইকোর্ট কিভাবে এগোয় মানুষ তার প্রতিক্ষায়। যদি উচ্চ আদালত সহযোগিতা করে আশার আলো দেখা হয়ত যেতে পারে।
প্রিয় দাদা,ইহা সুবিদিত যে আইন কেবল রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্র রক্ষা করিবার উপায় মাত্র। ক্ষুদিরামের ক্ষুদ্র প্রয়াস তৎকালে দেশদ্রোহে ভূষিত হইয়াছিল, বর্তমান কাল উহাকে সন্ত্রাসবাদী উপাধি দান করিয়াছে।ভগৎ সিংহ,জালিয়ানওয়ালাবাগ,নৌবিদ্রোহ কেহই, কি রাষ্ট্র কি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল কাহারওই সহানুভূতি আদায় করিতে সক্ষম হয় নাই ফলতঃ আইন এবং বিচার এই ক্ষেত্রগুলিতে কঠোরতম অবস্থান গ্রহণ করিয়াছিল।
এক্ষণে, এই অভাগী তিলোত্তমা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ করিয়া সকল রাষ্ট্রনেতার দুঃস্বপ্নের কারণ হইয়াছিল তাই তাহার সকল স্মৃতি অপসারণ করিবার নিমিত্ত যথারীতি আইন এবং বিচার পূর্ণোদ্যমে উদ্যোগী।
,কি অবস্থা ,,,,,” সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ”