আজকে নাকি বাবা দিবস…. এসব যদিও ফেসবুকে এসেই জানতে পারি….
বাবা দিবসে এটুকুই চাওয়া যে ওই বছরের পর বছর ছেঁড়া চপ্পল আর নিজের জন্য একটাও শার্ট না কেনার বাধ্যতামূলক ত্যাগ (প্রচলিত ফেইসবুক পোস্টে বাবাদের ছবি) থেকে বাবাদের মুক্তি দেয়া হোক!!
বাবা-কে ছবি বিশ্বাসের মতন দূরের মানুষ হয়ে থাকতেও কেউ বলেনি…. কেউ বলেনি কঠিন মানুষ হয়ে থাকতে থাকতে দূরের মানুষ হয়ে যেতে….. হ্যা, তবে উপার্জন করে এনেই নিজের সব দায় শেষ বা উপার্জন করে এনে উদ্ধার করে দিচ্ছি এই চিন্তাধারা নিয়ে থাকলে একদিন দূরের মানুষ হয়ে যেতেই হয়…. তখন আফসোস করে লাভ কি?
তার চেয়ে বরং শুরু থেকেই বাবাদের সুযোগ দেওয়া হোক না কাছের মানুষ হয়ে ওঠার….. পরিবারে দেখি অনেকসময় সেই সুযোগটাই দেওয়া হয়না…..”আরে ছেলেরা কি পারে নাকি এসব বাচ্চার কাজ করতে!” – বলে শুরুতেই বাবাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়, কোথাও আবার ছেলেদের তৈরিই করা হয় এটা শিখিয়ে দিয়ে যে বাচ্চা মানুষ করাটা আসলে তোমার বউ এর দায়িত্ব!!!
আজকে এসে গৃহকর্ম বা সন্তানপালনে আপনি যতোই চেষ্টা করুন সমতা আনার, আশেপাশের কেউ না কেউ এসে নাক গলাবেই…. কে বলেছে কর্মক্ষেত্রে শুধু মেয়েদেরই শুনতে হয় যে, “আপনি কাজে আসলে বাচ্চাকে কে দেখছে?”, ছেলেদেরও শুনতে হয়, “আরে বাচ্চা নিয়ে আপনার কি চাপ আবার? ওটাতো আপনার বউ বুঝবে”… বন্ধুদের মধ্যে যে ছেলেটা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে বাচ্চার জন্য তাকে শুনতে হয়, “কি এতো বাচ্চা বাচ্চা করিস বলতো, ওগুলো মেয়েছেলেদের কাজ”
আমাদের সমাজে স্নেহশীল পুরুষ-কে “দুর্বল” বলে তাচ্ছিল্য করা একটা চিরাচরিত practice! অথচ এরাই বাবার রাগের মধ্যেই ভালোবাসা “খুঁজে” নিতে বলবে! মানে কেনো? কষ্ট করে খুঁজে নিতে হবে কেনো?? ভালোবাসার মতন একটা ভালো জিনিস, প্রকাশ করতে সমস্যা-টা কোথায়??
মোদ্দা কথা হলো সেই যদি বাবাকে বাচ্চার সাথে বড়ো হওয়ার সুযোগ না দিয়ে দূরের মানুষ করেই রাখবেন, তাহলে আর বার্ধক্যে একলা হয়ে যাওয়া নিয়ে কান্নাকাটি কেনো?? শৈশবে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রাতজাগা না থাকলে, বাচ্চার কৈশোর বা যৌবনে বাবার সাথে মনের কথার আদানপ্রদান হবে কি করে??
মা হওয়ার জন্য যেমন না খেয়ে থেকে স্যাক্রিফাইসটা করার কোনো দরকার নেই, বাবা হয়ে ওঠার জন্যও বছরের পর বছর একটাই জামা পরে পরিবারকে অনেক সুখে রাখার দরকার নেই…. অর্থনৈতিক টানাপোড়েন থেকে বাচ্চাকে দূরে রেখে, তাকে “সবটুকু” দিয়ে বড়ো করা এমনিও ভালো practice নয়, ওর চেয়ে বরং ভাগ করে নেওয়া ভালো, সুখ-দুঃখ বা জামার দাম…..!
বাবাদের বরং একটু এই image টা থেকে মুক্তি দেয়া হোক…. উপার্জন আজকের দিনে অনেক মা-ই করেন… বাবাও বরং জড়িয়ে থাকুক স্নেহ আর মমতায়… বাবার গন্ধ চিনে নিক শিশু… বাবার কোলে নিশ্চিন্তে থাকুক… “বাবার হাতের রান্না” জায়গা করে নিক শৈশবের নস্টালজিয়ায়…. বাবাকেও এসে বলা যাক প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি…. বাবা বন্ধু হোক, কাছের মানুষ হোক…. ❤️
১৬ ই জুন, ২০২৪