ঠিক কবে থেকে কাদম্বিনী বসুর চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল সেটা জানতে পারিনি। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি যে ১৮৮২ সালে উনি এফ এ পাশ করার পরেই ডাক্তারি পড়ার চেষ্টা করেন কিন্তু গ্র্যাজুয়েট না হওয়ার কারণে সুযোগ পাননি। এর পরে ১৮৮৩ সালে বি এ পাশ এর মধ্যে উনি প্রেম করে বিয়ে করেছেন নিজের থেকে ১৭ বছরের বড় বিপত্নীক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। বিয়ের সময় দ্বারকানাথের দুই সন্তান, কন্যা বিধুমুখী আর পুত্র মানসিক প্রতিবন্ধী সতীশচন্দ্র। চিকিৎসক হওয়ার সেই অদম্য ইচ্ছে কিন্তু কমে নি।
বি এ পাশ করার পরে আবার আবেদন করেন।
মেডিক্যাল কাউন্সিল আপত্তি করে। বিদেশি শাসকের আমলাতন্ত্রের আপত্তির কারণ তবু কিছুটা আন্দাজ করা যায়। কিন্তু এর সাথে দেশীয় লোকজনও হৈ চৈ শুরু করে। একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়বে এমন অনাসৃষ্টি কান্ড তারা সহজে মেনে নেয় নি। মেডিক্যাল কলেজের একজন বাঙালি অধ্যাপকের তো ঘোর আপত্তি ছিল।
পত্রিকায় ২রা জুলাই, ১৮৮৩ সালে ওইসব আপত্তিকে তাদের বিবেচনায় “যুক্তিসঙ্গত” আখ্যা দিয়ে লেখা হল, “শ্রীমতি কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (বসু?) বি. এ. কলিকাতার মেডিকেল কালেজে প্রবিষ্ট হইয়াছেন। মেডিকেল কালেজের অনেক শিক্ষক কয়েকটি প্রধান কারণ দর্শাইয়া স্ত্রীলোকদিগের উক্ত কালেজে প্রবিষ্ট করিবার সম্বন্ধে আপত্তি করেন। তাঁহারা বলেন, উক্ত কালেজে ছাত্র দিগের রাত্রিতে যখন কালেজে থাকিতে হয়, তখন দুইজন করিয়া ছাত্র একঘরে থাকে। এরূপ অবস্থায় স্ত্রীলোক কিরূপ করিয়া পুরুষের সহিত এক ঘরে থাকিবে। এবং যখন ছাত্রদিগকে পুরুষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বুঝাইয়া দিতে হয়, তখন পুরুষ শিক্ষক স্ত্রীলোকদিগকে কিরূপে উহা বুঝাইয়া দিবে। আরও অন্যান্য আপত্তির মধ্যে উক্ত কালেজের একজন ছাত্র বলেন যে নিয়ম আছে সমস্ত বক্তৃতাতে উপস্থিত না থাকিলে, পরীক্ষা তে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। এবং যদি এই পাঁচ বৎসরের মধ্যে কোন রমণীর গর্ভ হয়, তবে প্রসবকালীন তিনি কি করিয়া বক্তৃতায় উপস্থিত থাকিবেন ?”
এর বিপরীতে দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখ আন্দোলন করেন। এসব জানার পরে ছোট লাট রিভার্স অগাস্টাস টমসনের হস্তক্ষেপে মেডিক্যাল কাউন্সিল তাদের আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে কাদম্বিনীকে ভর্তির অনুমতি দেয়। বাধা বিপত্তি এড়িয়ে ভর্তি হয়েও বিপদ কাটেনি। কিছু পরীক্ষকের রোষে (সম্ভবত ওই বাঙালি চিকিৎসক অধ্যাপক ও ছিলেন তার মধ্যে) কাদম্বিনী মেটিরিয়া মেডিকা ও এনাটমিতে ফেল করেন। তাঁকে গ্রেস নম্বর দিয়ে পাশ করানো হয়।
এই গ্রেস দেয়া নিয়েও পত্রিকা লেখে, “শ্রীমতী গঙ্গোপাধ্যায় মেটিরিয়া মেডিকা ও এনাটমিতে ফেল হন। এখন শুনিতেছি সিন্ডিকেটের দয়ায় তিনি এ পরীক্ষায় পাশ করেন”
এই আপত্তিকর “দয়া” শব্দটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা আমরা এক্ষুনি দেখবো। ১৮৮৮ সালে কাদম্বিনী গ্রাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ উপাধি পেয়ে কলেজ থেকে বের হন। এর পরে ১৮৯২ সালে স্বামী পুত্র কে বাড়িতে রেখে বিলেত যান আর ১৮৯৩ সালের মধ্যে এডিনবরা থেকে LRCPL এবং LRCS আর গ্লাসগো থেকে LFPS এই তিন খানি ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।
বাকিটা ইতিহাস। এই ইতিহাসও একটু আধটু পড়তে হয়, “নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়”।
১৮ই জুলাই ছিল কাদম্বিনী গাঙ্গুলির জন্মদিন।