আরণ্যক উপন্যাসের গোড়াতেই বিভূতিভূষণ জানিয়েছিলেন – “স্বচ্ছন্দ প্রকৃতির লীলাভূমি আমার হাতেই বিনষ্ট হইয়াছিল, বনের দেবতারা সেজন্য আমায় কখনও ক্ষমা করিবেন না জানি। নিজের অপরাধের কথা নিজের মুখে বলিলে অপরাধের ভার শুনিয়াছি লঘু হইয়া যায়। তাই এই কাহিনীর অবতারণা।”
আমারও এ প্রবন্ধের অবতারণাও এই একটিমাত্র কারণে।
(সৌঃ নেচার জার্নাল)
প্রবন্ধের প্রেক্ষাপট
আমেরিকার ১৮তম প্রেসিডেণ্ট ছিলেন ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ের্স (Franklin Pierce) – ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৭ সাল অব্দি। তাঁকে ১২ জানুয়ারি, ১৮৫৪ (ভিন্ন মতানুযায়ী ১৮৫৫) সালে রেড ইন্ডিয়ানদের Suwamish এবং Duwamish ট্রাইব-এর নেতা চিফ সিয়াটল (Chief Seattle) একটি চিঠি লেখেন বলে জানা যায়। ৪ জুন, ১৯৭৬ সালে The Irish Times পত্রিকায় এ চিঠি ছাপা হয়। যদিও গবেষকমহলে এ বিষয়ে কিছু মতদ্বৈধ আছে। কিন্তু চিঠিটির অন্তর্বস্তু আমাদের গোচরে আসা দরকার – বিশেষ করে বর্তমান সময়ে। এ চিঠির ভিন্ন ভার্সন (যদিও মূল স্পিরিটে একই রয়েছে) এবং চিফ সিয়াটলের কথা Albert Furtwangler-এর Answering Chief Seattle (Seattle: University of Washington Press, 1997, পৃঃ ১০-১৭) এবং Clarence B. Bagley-র History Progress of King County, Washington (Charles J. Hutchsosn, 1916)-এ ছাপা হয়েছে। বর্তমান চিঠিটি খানিকটা পরিবর্তিত রূপে অনুবাদ করছি। (উৎসঃ “Chief Seattle’s Speech” – https://www.historylink.org/File/1427, accessed ৮ আগস্ট, ২০২২)
“Chief Seattle, as seen by Dr. H. A. Smith, 1887” ছাপা হয় History Progress of King County, Washington পুস্তকে। স্মিথ লিখেছেন – “In the early days of Seattle old Chief Seattle ruled the destiny of the tribe. In later years the descendents of his followers have become divided and separated until they are but wandering tribes, eking out a livelihood by fishing, hunting and berry picking.”
(চিফ সিয়াটলের ১৮৬৪ সালের ফটো। তুলেছিলেন E. M. Sammis, Courtesyঃ Seattle Public Library। ডান পাশে চিফ সিয়াটলের কন্যার ফটো।)
প্রায় ১৭০ বছর পরেও চিফ সিয়টলের সে চিঠি আজও প্রাসঙ্গিক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সে সময়ে আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে (এখন যে অঞ্চল ওয়াশিংটন) Suwamish এবং Duwamishদের কাছ থেকে ২০,০০,০০০ একর জমি জোর করে কিনে নিতে চেয়েছিলেন। তার জবাবে চিফ সিয়াটলের এই চিঠি।
কি লিখেছিলেন চিফ সিয়াটল তাঁর চিঠিতে?
“সে ছিল এক দিন আমাদের” (There Was A Time)
“এক সময়ে আমাদের লোকেরা এই সমগ্র অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকত, যেমন বায়ু-তাড়িত সমুদ্রের ঢেউ ঝিনুকের খোল বাঁধানো মেঝেকে আবৃত করে রাখে। কিন্তু সে সময় দীর্ঘকাল আগে হারিয়ে গেছে, যেমন হারিয়ে গেছে আমাদের গোষ্ঠীর মহানুভবতার স্মৃতি। কিন্তু আমি আমাদের অসময়ে মৃত্যুর জন্য বিলাপ করব না। একে ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের ফ্যাকাশে-মুখ ভাইদের তিরষ্কারও করব না। হয়তো বা আমাদের নিজেদেরকেই এরজন্য খানিকটা দোষারোপ করতে হয়।
যখন আমাদের যুবকেরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছে কোন বাস্তব বা কাল্পনিক ভুলের জন্য, এবং নিজেদের মুখমণ্ডল কালো রঙে বিকৃত করে দিয়েছে, তাদের হৃদয়ও তখন বিকৃত এবং কালো হয়ে গেছে। সেরকম মুহূর্তে তাদের নিষ্ঠুরতা বাঁধ মানেনা, নিষ্করুণ হয়ে ওঠে। ওদেরকে সংযত করা যায়না।
কিন্তু আমাদের আশা থাকুক যে লাল-মানুষ এবং তাদের ফ্যাকাসে-মুখ ভাইদের মধ্যে শত্রুতা যেন আর ফিরে না আসে। আমাদের সবকিছুই রয়েছে হারানোর জন্য, জয় করার জন্য কিছুই নেই।
এটা সত্য যে আমাদের বীর যুবকদের প্রতিশোধ নেওয়া, এমনকি নিজেদের জীবনের বিনিময়েও, লাভ হিসেবে মনে করা হয়, কিন্তু যে বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধারা যুদ্ধের সময়ে ঘরে বসে থাকে এবং যাদের সন্তানেরা যুদ্ধে হারিয়ে যায় তারা এই লাভক্ষতি অনেক ভালো বোঝে।
এমনটা কি কখনো হতে পারে? (But Can This Ever Be?)
তোমাদের ভগবান তোমাদের ভালোবাসে আর আমাদের ঘৃণা করে। তাঁর শক্ত দুহাতে সাদা মানুষদের ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে যেমন বাচ্চাদেরকে বাবারা ধরে এগিয়ে নেয়। কিন্তু তিনি তাঁর লাল সন্তানদের পরিত্যাগ করেছেন। তিনি তোমাদের প্রতিদিন শক্তিশালী করে গড়ে তুলছেন, আর শীঘ্রই সমগ্র অঞ্চল এরা ভরে ফেলবে – যখন আমাদের মানুষেরা দূরে অপসৃয়মান ঢেউয়ের মতো ক্ষয়ে যাবে, আর কখনো প্রবাহিত হবেনা। সাদা মানুষের ভগবান তাঁর লাল সন্তানদের ভালোবাসতে পারেন না, রক্ষা করতেও নয়। এদেরকে অনাথ বলে মনে হয়, যারা সাহায্যের জন্য দিগন্তের কোথাও তাকাতে পারে না।
কিভাবে আমরা পরস্পরের ভাই হতে পারি? কি করে তোমাদের পিতা আমাদের পিতা হবেন এবং আমাদের সমৃদ্ধি এনে দেবেন? কি করে আমাদের স্বপ্ন থেকে জাগিয়ে তুলবেন আমাদের মহান গুণাবলী সহ?
তোমাদের ঈশ্বরকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়। তিনি সাদা মানুষদের কাছে এসেছেন। কিন্তু আমরা তাঁকে কখনো দেখিনি, কখনো কণ্ঠস্বরও শুনিনি।
তিনি সাদা মানুষদের আইনকানুন দিয়েছেন। কিন্তু যে লক্ষ কোটি লাল সন্তানেরা এই সুবিস্তীর্ণ মহাদেশ ছেয়ে ছিল, যেমন তারারা গগনতল ভরিয়ে রাখে, তাদের জন্য তাঁর কোন শব্দ নেই।
না, আমরা দুটি স্বতন্ত্র জাতি এবং চিরকাল এমনটাই থাকব। আমাদের মাঝে “common” কিছু নেই। আমাদের পিতৃপুরুষদের ভস্ম পবিত্র এবং তাদের চিরঘুমের স্থানটিও পবিত্র ভূমি। কিন্তু তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষের সমাধিক্ষেত্র থেকে দূরে, আরও দূরে চলে যাও, কোন অনুশোচনা ছাড়া।
ওয়াশিংটন থেকে আমেরিকার Great Chief এরকম খবর পাঠিয়েছেন যে তিনি আমাদের জমি কিনে নিতে চান। গ্রেট চিফ আমাদের বন্ধুত্ব এবং শুভেচ্ছার বার্তা পাঠিয়েছেন। এগুলো তাঁর মহানুভবতা, কারণ আমরা জানি প্রতিদানে আমাদের বন্ধুত্বের প্রয়োজন খুব সামান্যই। কিন্তু আমরা আপনার প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখব, কারণ আমরা যদি বিবেচনা না করি তাহলে সাদা মানুষেরা বন্দুক হাতে এসে আমাদের জমি নিয়ে নিতে পারে।
চিফ সিয়াটল আপনাদের জানাচ্ছে যে আমাদের কথাকে আপনারা গণ্য করতে পারেন – ততটাই সৎভাবে যেভাবে সাদা বন্ধুরা ঋতুচক্রের আবর্তন দেখে। ঐ দ্যাখো আকাশ যে আমাদের পিতৃপুরুষের ওপরে সমবেদনার অশ্রুজল বর্ষণ করেছে অগুন্তি শতক জুড়ে, এবং যা আমাদের কাছে এখন শাশ্বত মনে হচ্ছে সে বদলে যেতে পারে। আজ এটা পরিষ্কার দেখাচ্ছে, আগামীকাল মেঘে ঢেকে যেতে পারে। আমার কথা তারাদের মতো – কখনো অস্তমিত হয়না।
কিভাবে তোমরা আকাশকে, জমির উষ্ণতাকে কিনতে বা বেচতে পার? এ ধারণা আমাদের কাছে আজব ঠেকছে। আমরা সতেজ বাতাস কিংবা জলের লহরীকে নিজস্ব বলে ভাবিনা। যেগুলো আমাদের অধিকারে নেই সেগুলোকে তোমরা আমাদের কাছ থেকে কিনবে কি করে?
এই ধরিত্রী আমাদের সবার কাছে পবিত্র। প্রতিটি ঝকমকে পাইন গাছের চুড়ো, প্রতিটি বালুকাময় বেলাভূমি, ঘন জঙ্গলের প্রতি কণা কুয়াশা, প্রতিটি গান গাওয়া পতঙ্গ আমাদের স্মৃতিতে পবিত্র, আমাদের মানুষদের অভিজ্ঞতায় অপাপবিদ্ধ। বৃক্ষের মধ্য দিয়ে যে রস সঞ্চালিত হয় তা আমাদের লাল-চামড়ার লোকেদের স্মৃতি বহন করে।
সাদাদের মধ্যে মৃত মানুষেরা যখন তারাদের মাঝে হেঁটে যাবার জন্য রওনা দেয় তখন তারা তাদের জন্মভূমির কথা ভুলে যায়। আমাদের মৃতরা কখনো তাদের অপরূপ জন্মভূমিকে ভুলে যায়না, কারণ এই পৃথ্বী লাল মানুষদের মাতা। আমরা পৃথ্বীর একটি অংশ এবং পৃথ্বী আমাদের একটি অংশ।
মধুগন্ধময় ফুলেরা আমাদের বোন, শিংওয়ালা জন্তুরা, অশ্বের দল, রাজকীয় ঈগল – এরা সবাই আমাদের ভাই। শস্যপ্রান্তর, মানুষ এবং শাবকদের উষ্ণ দেহ এরা সবাই এক পরিবারে বাস করে।
এজন্য, যখন ওয়াশিংটনের গ্রেট চিফ আমাদের বার্তা পাঠান যে তিনি আমাদের জমি কিনে নিতে চান তিনি বড়ো কারবার করতে চাইছেন। তিনি আমাদের বার্তা পাঠিয়েছেন যে আমাদের বসবাসের জন্য একটি স্থান সংরক্ষিত করে রাখবেন যেখানে আমরা সবাই আরামে একে অন্যের সাথে বসবাস করতে পারব। তিনি আমাদের পিতা হবেন, আর আমরা হব তাঁর সন্তান।
এ কারণে আমাদের জমি কিনে নেবার বিষয়টি আবার বিবেচনা করব। কিন্তু এটা সহজ হবেনা, কারণ এই জমি আমাদের কাছে পবিত্র। নদীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের ঝিলিমিলি কেবলমাত্র জল নয়, এটা আমাদের পূর্বপুরুষের শোনিত।
আমরা যদি এই জমি বিক্রি করে দিই তাহলে তোমরা অবশ্যই মনে রাখবে মৃত্তিকা পবিত্র, এবং সন্তানদের শেখাবে যে তারা নিজেরা এবং হ্রদের পরিষ্কার জলে তাদের প্রতিটি প্রতিবিম্ব আমাদের মানুষদের জীবন ও স্মৃতির কথা বলে। জলের মর্মরধ্বনি আমাদের পিতার এবং তাঁর পিতার কণ্ঠস্বর বয়ে নিয়ে আসে।
নদীরা আমাদের বোন, এবং তৃষ্ণা মেটায়। আমাদের ডিঙ্গি নৌকোগুলোকে বয়ে নিয়ে যায়, আমাদের সন্তানদের খাদ্য জোগায় এই নদীরা।
যদি আমরা আমাদের জমি বিক্রি করে দিই তাহলে তোমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে এবং তোমাদের সন্ততিদের শেখাতে হবে এই নদীরা আমাদের এবং তোমাদের আত্মার আত্মীয়। এজন্য এরপর থেকে যেভাবে তোমরা তোমাদের ভাইবোনদের শুভকামী হয়ে দেখাশোনা কর, সেভাবে নদীগুলোকেও দেখাশোনা করবে।
আমরা জানি যে সাদা মানুষেরা আমাদের ভাবনার পথ বুঝতে পারেনা। জমির একেক খণ্ড ওদের কাছে একই রকম। কারণ ওরা হচ্ছে আগন্তুক, যারা রাতের বেলা আসে এবং নিজেদের যা প্রয়োজন সেসব জমির কাছ থেকে নিয়ে চলে যায়।
এই পৃথিবী তার ভাই নয়, বরঞ্চ শত্রু। যখন সে জমি দখল করে জয়ী হয় তখন কেবল এগোতে থাকে। তার বাবার কবরস্থান আর সন্তানের জন্মগত অধিকার পেছনে ফেলে যায়। কোন তোয়াক্কা না করে তার পিতার সমাধিক্ষেত্রকে ভুলে যায় আর সন্তানদের কাছ থেকে জমিকে ছিনিয়ে নেয়। সে তার মা, এই পৃথিবী, নিজের ভাই আর গগনমণ্ডলকে এমনভাবে দেখে যেন এগুলো কেনাবেচার সামগ্রী, এগুলোকে লুণ্ঠন করা যায়, বেচে দেওয়া যায়, যেন এরা ভেড়ার পালের মতো বা কাঁচের জপমালার মতো। তার অপ্রশমনীয় খিদে পৃথিবীকে গিলে খাবে এবং পেছনে পড়ে থাকবে এক মরুভূমি।
আমি তোমাদের বুঝতে পারিনা। তোমাদের পথের থেকে আমাদের পথ আলাদা।
তোমাদের শহরের দৃশ্য লাল মানুষদের চোখকে যন্ত্রণাবিদ্ধ করে। হয়তো এ কারণে যে লাল মানুষেরা বর্বর এবং এসব বোঝেনা। সাদা মানুষদের শহরে কোন শান্ত নীরবতার জায়গা নেই।
কোন জায়গা নেই যেখানে বসন্তে পাতার আওয়াজ কিংবা পতঙ্গের পাখা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যায়। যেহেতু আমি একজন বর্বর এবং ভালো বুঝিনা – শহরের হট্টগোল আমাদের কানকে পীড়া দেয়। জীবনের আর কি অর্থ থাকতে পারে যখন রাতচরা পাখীর কর্কশ ডাক কিংবা পুকুরধারে ব্যাংয়েদের তর্ক-বিতর্ক না শোনা যায়? আমি একজন লাল মানুষ, আমি এগুলো বুঝতে পারিনা।
ইন্ডিয়ানরা মধ্যবেলার বৃষ্টিধোয়া বাতাসের নরম আওয়াজ কিংবা খাটো পাইন গাছের সৌগন্ধ পছন্দ করে।
লাল মানুষদের কাছে বাতাস বড়ো মূল্যবান। কারণ পৃথিবীর সমস্ত জীবন কণা – পশু, বৃক্ষ, এবং মানুষ – একে ভাগ করে নেয়। সাদা মানুষেরাও যে শ্বাস নেয় তা তো অনুভবই করতে পারেনা। দীর্ঘদিন ধরে মারা যাচ্ছে এমন একজন মানুষের মতো দুর্গন্ধেও সে অসাড় হয়ে থাকে।
যদি আমরা আমাদের জমি বিক্রি করে দিই তাহলে তুমি অবশ্যই মনে রাখবে বাতাস আমাদের কাছে মূল্যবান, সমস্ত জীবনকে বাতাস ধারণ করে আছে। যদি আমাদের জমি কিনে নাও তাহলে সে জমি তোমরা আলাদা করে রাখবে এবং পবিত্র রাখবে।
সে পবিত্র ভূমিখণ্ডে এমনকি সাদা মানুষেরাও যাবে ফুল এবং তৃণভূমির সুগন্ধে মধুর বাতাসের স্বাদ আস্বাদনের জন্য।
যদি আমি তোমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করি, তাহলে আমি একটি শর্ত দেব – সাদা মানুষেরা এ প্রান্তরের সমস্ত পশুকে নিজেদের ভাই হিসেবে দেখবে।
আমি একজন বর্বর এবং আমি অন্য কোন পথে ভাবতে পারিনা। আমি দেখেছি প্রেইরি তৃণভূমিতে হাজার হাজার মোষ মরে পচছে – এদেরকে সাদা মানুষেরা ফেলে গেছে। পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেন থেকে মজা পাবার জন্য গুলি করে এদেরকে মারা হয়েছে।
আমি একজন বর্বর। আমি সত্যিই বুঝিনা ধোঁয়া-ওগরানো ঘোড়া (চলমান ট্রেন) কি করে মোষদের থেকে মূল্যবান হতে পারে! মোষদেরকে শুধু আমরা বেঁচে থাকার জন্য হত্যা করি। পশু ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কিভাবে সম্ভব?
যদি সমস্ত পশু চলে যায় তাহলে মানুষও মরে যাবে মহাবিশ্বে অসীম নিঃসঙ্গতার মধ্যে। পশুদের ক্ষেত্রে যা ঘটে, মানুষের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটে। সবাই পরস্পর-সংযুক্ত। পৃথিবীর বুকে যা নেমে আসবে ধরিত্রীমাতার সন্তানদের ওপরেও নেমে আসবে সে দুর্দৈব।
তোমাদের সন্তানদের তোমরা শেখাবে যে তাদের পায়ের নীচের মৃত্তিকাতে তাদের প্রপিতামহদের ভস্ম রয়েছে। তারা যাতে মাটিকে শ্রদ্ধা করতে পারে সেজন্য তাদের শেখাও পৃথিবী আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন দিয়ে পূর্ণ। তোমরা আমাদের যা শিখিয়েছ, সন্তানদেরও সেটাই শেখাও – এই পৃথিবী হচ্ছে মা। যা কিছু পৃথিবীকে আঘাত দেয়, আহত করে সে সবকিছুই পৃথিবীর সন্তানদেরও আঘাত দেয়। যখন মানুষ মাটিতে থুতু ফেলে সে নিজের ওপরেই থুতু ফেলে।
আমরা জানি – পৃথিবী মানুষের অধিকারে নয়। মানুষ পৃথিবীর অধিকারে। মানুষ জীবনের জাল বোনেনি। যা কিছু এই জালের ক্ষেত্রে কাজ করে তা আসলে নিজের ক্ষেত্রেই করে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে যা ঘটে পৃথিবীর সন্তানদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে। আমরা এগুলো জানি। প্রতিটি জিনিস পরস্পর-সংযুক্ত যেমন রক্তের বন্ধনে পরিবার বাঁধা থাকে।
এমনকি সাদা মানুষেরাও, ঈশ্বর যাদের সঙ্গে হাঁটেন এবং কথা বলেন, একটি সাধারণ নিয়তিকে এড়াতে পারবেনা। আমরাও হয়তো সবশেষে পরস্পরের ভাই হতে পারি। আমরা জানি যে হয়তো একদিন সাদা মানুষেরাও হয়তো বুঝবে যে পৃথিবী তাদের কাছে মূল্যবান। এবং পৃথিবীর ক্ষতি করা আসলে পৃথিবীর স্রষ্টার প্রতি ঘৃণাকে স্তুপীকৃত করে তোলা। কোন এক রাতে হয়তো দেখবে তোমরা যে শয্যাকে অপবিত্র করছ সে শয্যায় তোমরা বর্জ্য পদার্থে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আছ।
কিন্তু তোমাদের শেষ মুহূর্তগুলোতে তোমরা হয়তো এরকম ধারণায় উদ্ভাসিত হবে যে ঈশ্বর তোমাদেরকে এই প্রান্তরগুলোতে নিয়ে এসেছেন এবং কোন বিশেষ উদ্দেশ্য তোমাদের মাঝে দিয়েছেন – এই জমির দখলদারি আর লাল মানুষদের ওপরে প্রভুত্ব।
যখন সমস্ত মোষকে জবাই করে ফেলবে, সব বুনো ঘোড়াকে পোষ মানিয়ে ফেলবে, অরণ্যের গোপন গহীন অঞ্চল প্রচুর মানুষের গন্ধে ভারী হয়ে যাবে আর ফলবান পর্বত চুড়া নোংরা হয়ে থাকবে কথা বলা তারের জালে তখন কোথায় পাবে ঘন বনজঙ্গল? সেগুলো বিদায় নিয়েছে।
ঈগলগুলো কোথায়? এরাও বিদায় নিয়েছে। এবং এটা কেমন হবে যে দ্রুত ধাবমান পাখীগুলোকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে শিকার করে ফেলবে? জীবনের পরিসমাপ্তি হবে, শুরু হবে বেঁচে থাকা (The end of living and the beginning of survival)।
“আমরা হয়তো সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবার আগে সামান্য কটা দিন বাঁচব। যখন পৃথিবী থেকে শেষ লাল মানুষটিও অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং আমাদের স্মৃতি কেবলমাত্র প্রেইরির তৃণভূমির ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘের মতো রয়ে যাবে, তখনও তটভূমি আর অরণ্য আমাদের মানুষদের আত্মাকে ধরে রাখবে। কারণ তারা এই পৃথ্বীকে ভালোবাসে যেমন একজন নবজাতক ভালোবাসে মায়ের হৃদস্পন্দন।
এই পৃথিবীর যত্ন নিও, যেমনটা আমরা এতদিন নিয়েছি। জমির কাছ থেকে যেমন নিচ্ছ তেমন জমিকে ফিরিয়ে দিও – তোমাদের স্মৃতিতে এটা রেখো। এবং তোমাদের সমস্ত শক্তি ও পৌরুষ দিয়ে, সমস্ত হৃদয় দিয়ে একে রক্ষা কোরো – তোমাদের সন্ততিদের জন্য। ঈশ্বর যেমন আমাদের সবাইকে ভালোবাসেন তেমন করে ভালোবেসো একে। এই ধরাতল ঈশ্বরের কাছে মহা মূল্যবান। এমনকি সাদা মানুষেরাও তাদের সাধারণ নিয়তিকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।”
সাদা মানুষের নতুন কৃষি – লোভের নতুন চেহারা
১৮২০-৩০-এর দশক থেকেই বিশেষত ইংল্যান্ডে এবং আমেরিকায় অতি ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরাশক্তির জরাজীর্ণ অবস্থা জমিতে সার প্রয়োগের চাহিদা বিপুলভাবে বাড়িয়ে তুললো। ১৮২৩ সালে ইংল্যান্ডে হাড়ের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪,৪০০ পাউন্ডের। ১৮৩৭ সালে সেটা বেড়ে হল ২৪,৬০০ পাউন্ড (£)। একইসঙ্গে বিভিন্ন পাখির নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ মলের (guano) চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। ১৮৪১ সালে লিভারপুল বন্দরে ১,৭০০ টন গুয়ানো আমদানি করা হয়েছিল, ১৮৪৭-এ ২২০,০০০ টন। (Hungry for Profit: The Agrobusiness Threat to Farmers, Food, and The Environment, ed. Fred Magdoff, John Bellamy Foster and Frederick H. Buttel, 2000, পৃঃ ৪৪)
শুধু গুয়ানোর সরবরাহ অবাধ রাখার জন্য আমেরিকা ১৮৫৬ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে শিল্পপতিদের চাপে Guano Island Act পাশ করিয়ে ফেললো। ১৮৫৬ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে ৯৪টি দ্বীপখণ্ড এবং পাহাড় দখল করে নিল। যদিও সরকারিভাবে ৬৬টির কথা স্বীকার করা হল। ২০২২ সালেও আমেরিকার দখলে থাকা এরকম দ্বীপের সংখ্যা ৯টি। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫)
আমরা যদি সময়কাল খেয়াল করি তাহলে দেখব, যে সময়ে চিফ সিয়াটল চিঠি লিখছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে সেরকম সময় দিয়ে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। পূর্বোদ্ধৃত দীর্ঘ চিঠিতে এরকম ইঙ্গিতই বারংবার করেছেন রেড ইন্ডিয়ানদের দলপতি। তাঁদের কয়েক শতাব্দি-সিঞ্চিত অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন জমির সাথে জমির দখলদারদের এক চিরকালীন বিচ্ছেদ জন্ম নিচ্ছে। পূর্বোক্ত পুস্তকে মন্তব্য করা হচ্ছে – “The decline in natural soil fertility due to the disruption of the soil nutrient cycle accompanying capitalist agriculture, the growing knowledge of the need for specific soil nutrients, and limitations in the supply of both natural and synthetic fertilizers that would compensate for the loss of natural fertility, all contributed, therefore, to a widespread sense of a crisis in soil fertility.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫)
মানুষ এবং ভূমির মধ্যে এরকম চিরকালীন বিচ্ছেদকে মার্ক্স অভিহিত করেছেন “metabolic rift” বলে – “irreparable rift in the interdependent process of social metabolism”। বেলামি ফস্টার মন্তব্য করছেন – “To insist that large-scale capitalist society created such a metabolic rift between human beings and the soil was to argue that the nature-imposed conditions of sustainability had been violated. “Capitalist production,” Marx observed, “turns towards the land only after its influence has exhausted it and after it has devastated its natural qualities.” (John Bellamy Foster, Marx’s Ecology: Materialism and Nature, 2000, পৃঃ ১৬৩)
“মেটাবলিক রিফট”-এর একটি ধারণা নীচের ডায়াগ্রাম থেকে পাওয়া যাবে।
১৮৮৩ সালে প্রকাশিত হল মার্ক্সের চিরকালের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ও কমরেড ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলসের ডায়ালেকটিকস অফ নেচার । বইটি অসম্পূর্ণ চেহারায় ছিল। প্রকৃতির সাথে মানুষের ডায়ালেকটিকাল সম্পর্ক নিয়ে এ পুস্তকে তিনি মৌলিকভাবে আলোচনা করেন। এ পুস্তকে তিনি বলছেন – “যখন আল্পস পর্বতের ইতালীয়রা দক্ষিণের ঢালের পাইন বনকে সম্পূর্ণত ব্যবহার করে নিঃশেষ করে ফেলল, এবং পরে উত্তরের ঢালেও, তখন তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলনা যে একাজ করার ফলে তারা তাদের অঞ্চলের ডেয়ারি শিল্পের গোড়া ধরে কেটে ফেলছে। আরও কম ধারণা ছিল যে এরফলে প্রায় সারা বছর ধরে প্রবাহিত পাহাড়ি ঝর্ণার জলধারা শুকিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় এদের অনুমানেও ছিলনা এর ফলশ্রুতিতে বর্ষার সময় সমতল অঞ্চলে ভয়ংকর জলের প্লাবন নেমে আসবে।” (Dialectics of Nature, Progress Publishers, Moscow, ১৯৮৬, পৃঃ ১৮০)
এরপরে এঙ্গেলস যোগ করেন – “এভাবে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিদেশী মানুষদের ওপরে আমরা যেভাবে বিজয়ীর কর্তৃত্ব কায়েম করি সেভাবে প্রকৃতির ওপরে শাসন চালাতে পারিনা – যেন কেউ একজন প্রকৃতির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রভুত্ব চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের মাংস, রক্ত এবং মস্তিষ্ক নিয়ে প্রকৃতির এক অংশ হিসেবে অস্তিত্ব ধারণ করি। এবং প্রকৃতির ওপরে আমাদের সমস্ত প্রভুত্বের ভিত্তিতে রয়েছে এই বাস্তবতা যে অন্য সব প্রাণীর তুলনায় আমাদের সুবিধেজনক অবস্থান হল আমরা প্রকৃতির নিয়মকানুনকে আমরা শিখে নিতে পারি আর সঠিভাবে সেগুলো প্রয়োগ করা সম্ভব।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮০)
কৃষির রূপান্তর – দুর্ভিক্ষ – নতুন রোগ
ওপরে আমেরিকার মুনাফার উদগ্র বাসনা থেকে গুয়ানো দ্বীপসমূহ দখল নিয়ে স্বল্প কথা বলেছিলাম। গুয়ানো সাম্রাজ্যবাদের বলি দ্বীপগুলোর চেহারা কি হতে পারে তার একটুকরো চিত্র দেখা যাক। এক ছোট দ্বীপ Nauru বা নাহরু। ১৮৮৮ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অব্দি জার্মানদের দখলে ছিল। এরপরে কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ার দখলেও থাকে।
ওরকম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি সবুজ দ্বীপের পরিণতি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে দেখে নেওয়া যাক – “Inch for inch, Nauru is the most environmentally ravaged nation on earth. So much of the island has been devoured by strip-mining begun 90 years ago that Nauruans face the prospect that they may have to abandon their bleak, depleted home … After generations of mining, the environmental devastation of Nauru is nearly total. Four-fifths of the island has been mined out, leaving behind a pitted, ghostly moonscape of gray limestone pinnacles, some as tall as 75 feet. The only habitable land is a narrow coastal fringe shaded by coconut palms. Because of the mining, even the weather has deteriorated. The waves of heat that rise from the mined-out plateau drive away rain clouds, leaving the sun-baked island plagued by constant drought … Environmentalists say it is unlikely that the land will ever produce enough food to feed the population.” (Philip Shenon, “A Pacific Island Nation Is Stripped of Everything”, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ডিসেম্বর ১০, ১৯৯৫, পৃঃ ৩)
Nauru-র পরিণতি একাধিক সাম্রাজ্যবাদের সরাসরি লুণ্ঠনের ফলে। কিন্তু ইতিহাস বিখ্যাত “Irish Potato Famine” তো ঘটেছিল বেশি মুনাফার জন্য একই ধরণের ফসল (monoculture agriculture) বছরের পর বছর ধরে একই জমিতে ফলনোর পরিণতিতে – অভিজ্ঞ কৃষকদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরণের চাষের ফলে (rotational cropping) যে জমির উর্বরা শক্তি বজায় রাখে এ ধারণা আন্তর্জাতিক মুনাফার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করেনি।
এরই একটি পরিণতি হল কুখ্যাত “আইরিশ পোট্যাটো ফেমিন”। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ন্যূনতম “potato wage”-এর কাহিনীও – “What became known as the “potato wage” enabled the extraction of the most labor for the least cost, driving the cost of labor close to its theoretical minimum. Then disaster struck. The microorganism Phytopthera infestans arrived, presumably from the Americas, and found the effective monocultures of potatoes an ideal background environment for rapid spread. Potatoes rotted in the fields and the storehouses.” (John H. Vandermeer, The Ecology of Agroecosystems, 2011, পৃঃ ৫)
ডাবলিন শহরে এই দুর্ভিক্ষে মৃত হতদরিদ্র শ্রমিকদের স্মরণে রাওয়ান গিলেসপির এক অসামান্য ভাস্কর্য রয়েছে।
নীচের ডায়াগ্রাম থেকে বোঝা যাবে কিভাবে চিফ সিয়াটলদের মতো জমির অন্তরাত্মার সাথে জড়িয়ে থাকা কৃষকের ভালোবাসা-উপজাত উৎপাদন সর্বোচ্চ মুনাফাদায়ী “মনোকালচার” কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে – প্রায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী।
কৃষি উৎপাদনে চরিত্রের এই পরিবর্তন নতুন রোগের “প্যান্ডোরা’স বক্স”-এর দরজা খুলে দিয়েছে – “Oil palm, rubber plantation and rice paddy monocultures have reduced species richness compared with primary and secondary forests, and these monocultures are structurally less complex than natural forests typically exhibiting a more uniform age structure, lower or no canopy, sparse undergrowth, less stable and more extreme microclimates, and greater levels of human disturbance and presence. Evidence suggests that such changes related to physical characteristics of the landscape or biodiversity loss itself could favour disease carrying hosts or vectors or increase the efficacy of disease transmission to remaining hosts (in this case people).” (Hiral A. Shah, Paul Huxley, Jocelyn Elmes & Kris A. Murray, “Agricultural land-uses consistently exacerbate infectious disease risks in Southeast Asia”, Nature, 20 Sptember, 2019, pp. 1-13, পৃঃ ৭)
এবোলার ছড়িয়ে পড়া নিয়েও একই কথা প্রযোজ্য। ২০১৩ সালে এবোলা মহামারি হবার পরে “Did Ebola Emerge in West Africa by a Policy-Driven Phase Change in Agroecology? Ebola’s Social Context” শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় (Environment and Planning A 2014, volume 46, pages 2533 – 2542)। এখানে দেখানো হয়েছে ব্রিটিশ পরিচালিত নেভাদার কোম্পানি “ফার্ম ল্যান্ড অফ গিনি লিমিটেড” ৯,০০০ হেক্টর জমি গিনিতে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় – ভুট্টা এবং সয়াবিন চাষের জন্য। এরপরে সে জমিতে palm oil উৎপাদন শুরু হয়। এরপরে প্রবেশ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানি।
ফলাফল? “Bushmeat need not be a default explanation for any given outbreak, however. Field (2009) noted that deforestation, including from oil palm planting, changes foraging behavior of the flying fox, fixating now on horticulture crops, and expands interfaces among bats, humans, and livestock. Fruit bats in Bangledesh transmitted Nipah virus to human hosts by urinating on the date fruit of the planted palm trees humans cultivated.” (পৃঃ ২৫৩৫)
ট্রুথআউট সংবাদ সংস্থার একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় – “The majority of global deforestation today is driven by multinational corporations, including Cargill, JBS and Mafrig, as well as their creditors BlackRock, JPMorgan Chase and HSBC. These corporations clear acres of land for the mass production of a single cash crop. The Amazon, for example, is primarily being destroyed for products that people in Western countries buy but do not necessarily need — palm oil, sugar cane or various biofuels like ethanol.” (“Deforestation and Monoculture Farming Spread COVID-19 and Other Diseases”, মে ১২, ২০২০)
নামী নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন জার্নালে “গ্লোবালাইজেশন, ক্লাইমেট চেঞ্জ, অ্যান্ড হিউম্যান হেলথ”-এর মতো প্রবন্ধ (এপ্রিল ৪, ২০১৩, পৃঃ ১৩৩৫-১৩৪২)। প্রকাশিত হচ্ছে “Wildfires, Global Climate Change, and Human Health” শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধ (নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন, নভেম্বর ২৬, ২০২০, পৃঃ ২১৭৩-২১৮১)
২০১৪ সালে কয়েকজন গবেষক EcoHealth জার্নালে (২৩.০৫.২০১৪) এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন “Anthropogenic Land Use Change and Infectious Diseases: A Review of the Evidence” শিরোনামে। এ গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে – “জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে রোগের dynamics-কে প্রত্যক্ষত বা অপ্রত্যক্ষত বদলে দেবার। জমির প্রসারণের ফলে বেশি করে অণুজীবেরা মানুষের বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করবে। জমি ব্যবহারের পরিবর্তনের ফলে জনসমষ্টির বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে, চরিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে, ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সংযোগের অর্থাৎ রোগের বাহক ভেক্টর এবং মানুষের এবং রোগের ধারকদের ধরণ বদলে যাচ্ছে।”
খুব সহজ প্রশ্ন উঠবে – জমির ব্যবহারে পরিবর্তন (ল্যান্ড ইউজ চেঞ্জ) কারা করলো? কি উদ্দেশ্যে? যে উদ্দেশ্যে (খনিজ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্পদের জন্য) ব্রাজিলের রেন ফরেস্টের ২৫% পুড়িয়ে দেওয়া হয় সে উদ্দেশ্যে? শিল্প বিপ্লব পরবর্তীতে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, এবং ক্রমাগত নিওলিবারাল অর্থনীতির প্রায়-একমাত্র হয়ে ওঠার পরে, প্রকৃতির উপরে প্রভুত্ব এবং পুঁজির প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহারের বিষময় ফল আমরা ভোগ করছি।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত (এপ্রিল ২, ২০২০) প্রবন্ধে (“Escaping Pandora’s Box – Another Novel Coronavirus”) বলা হচ্ছে – “আমাদের অবশ্যই এটা বুঝতে হবে যে ৭.৮ বিলিয়ন (৭৮০ কোটি) মানুষের থিকথিকে ভিড়ে ভরা পৃথিবীতে বিভিন্ন ঘটনার একসাথে ঘটা – যেমন, মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন, পরিবেশের পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের অপ্রতুল মেকানিজম – বিভিন্ন অস্পষ্টভাবে লুকিয়ে থাকা প্রাণী জগতের ভাইরাসকে মানুষের দুর্দৈব করে তুলেছে।” মানুষের চরিত্রের পরিবর্তনের মাঝে মুনাফার উদগ্র আকাঙ্খা এবং আধিপত্যের দুর্মর বাসনাও অন্তর্ভুক্ত হবে। ২০১৯ সালে (১১ জুন, ২০১৯) নেচার-এ প্রকাশিত রিভিউ আর্টিকলের শিরোনাম ছিল “Emerging human infectious diseases and the links to global food production”। এখানে ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অনুমিত ১১০০ কোটি মানুষের জন্য জুনোটিক রোগ কি কাণ্ড ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক বার্তা রয়েছে।
বিবিসি নিউজ-এ প্রকাশিত (১০.০৯.২০২০) অন্য একটি খবরের শিরোনাম “Wildlife in ‘catastrophic decline due to human destruction, scientists warn”। রিপোর্টে বলা হচ্ছে – “আমরা আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলছি – যে জায়গাটিকে আমাদের বাড়ি বলি আমরা – আমাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ঝুঁকি নিয়ে। এখন ধরিত্রী আমাদের কাছে মরিয়া SOS পাঠাচ্ছে এবং আমাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।” আরেকটু বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে – “নতুন ধরনের কম্পিউটার মডেল থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে আমরা এখনো আমাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়াকে থামাতে পারি, এমনকি বাসস্থান হারিয়ে যাওয়াকে বিপরীতমুখীও করতে পারি যদি আমরা অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিই এবং যেভাবে আমরা খাদ্য তৈরি করি ও উদরসাৎ করি সেটাকে পরিবর্তন করা যায়।” এর আগে (৬.০৫.২০১৯)
বিবিসি নিউজ-এ প্রকাশিত অন্য একটি খবরের শিরোনাম ছিল “Nature crisis: Humans threaten 1m species with extinction’”। এ রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছিল – “১৯৮০ থেকে ২০০০-এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকায় ১০ কোটি হেক্টর ট্রপিক্যাল ফরেস্ট হারিয়ে গেছে পশুখাদ্যের জন্য পশুচারণের জমি তৈরি করতে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনের উপযোগী গাছ লাগানোর দরুন। বনের চেয়েও বেশি আক্রান্ত জলা জমি – ১৭০০ সালে যে পরিমাণ ছিল ২০০০ সালে তার ১৩%-এ এসে ঠেকেছে।” সর্বগ্রাসী নিওলিবারাল অর্থনীতি ও কর্পোরেট পুঁজি সমস্ত অণুজীবের বাসস্থান কেড়ে নিয়েছে। তাদের নতুন বাসভূমির ঠিকানা এখন ক্রমাগত মানুষের শরীর হয়ে উঠছে।
Mark Hamilton Lytle তাঁর The Gentle Subversive (2007) পুস্তকে র্যাচেল কারসনের দুনিয়া কাঁপানো বই সাইলেন্ট স্প্রিং নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলছেন – “কারসন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্টদের নজর পরিবেশের দিকে যাতে নিবদ্ধ হয় সে কাজে সাহায্য করেছিলেন। র্যাচেলের পেস্টিসাইডের ওপর আক্রমণের মধ্যে এই অ্যাক্টিভিস্টরা আরও বেশি করে খুঁজে পেয়েছিল কর্পোরেট ক্যাপিটালিজমের বিভিন্ন শয়তানি। লাভের জন্য উদগ্র বাসনা, তাদের অভিমত অনুযায়ী, কোন জনহিতকর কাজ নয়, বরঞ্চ কেমিক্যাল কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করেছিল আরও বেশি বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে, যা পৃথিবীর অধিকতর ক্ষতিসাধন করবে। তাদের বিজ্ঞাপনের কুহক জালে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কি মূল্য চোকাতে হচ্ছে সেটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই বিদ্রোহীরা কারসনের বিশ্বাসকে প্রসারিত করেছে – “জনগণের” অধিকার আছে সেসমস্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার যেগুলো জীবনের জন্য ক্ষতিকর।” (পৃঃ ২০৭)
র্যাচেল কারসন তাঁর সাইলেন্ট স্প্রিং (২০০২) গ্রন্থে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছিলেন কেঁচোর কথা – ডারউইনের The Formation of Vegetable Mould, through the Action of Worms, with Observations on Their Habits-কে উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছিলেন, কেঁচোরা জমির স্তর ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়িয়ে তোলে এবং জমির উর্বরা শক্তিকে রক্ষা করে। কোথায় গেল কেঁচোরা? অনেকটা “Where have all the flowers gone”-এর মতো।
নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ “How Humanity Unleashed a Flood of New Diseases” (Ferris Jabr, জুন ২৫, ২০২০) অনুযায়ী, মানুষের শরীরের ৬০ থেকে ৭৫% রোগ আসে প্রাণী জগত থেকে। লেখক বলেছেন – “যে সমস্ত অণুজীবেরা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে (Zoonotic pathogens) তারা আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করেনা কিংবা কাকতালীয় ভাবে আমাদের ওপরে হোঁচট খেয়ে পড়েনা। যখন প্রাণীদের থেকে মানুষে রোগের প্রবেশ ঘটে কিংবা উল্টোটা হয়, এর কারণ সাধারণত আমরা আমাদের ‘shared ecosystem’-কে নতুন করে গড়ে নিয়েছি এমন এক ভাবে যে পারস্পরিক স্থানান্তর (transition) অনেক বেশি সম্ভাব্য করে তোলে। অরণ্য নিধন, খনি খনন করা, নিবিড় চাষ এবং শহরের লাগামহীন ভাবে বিস্তার ঘটা এদের স্বাভাবিক বাসস্থান ধ্বংস করে দেয়। বনের জীবদের বাধ্য করে মানুষের সমাজে ঢুকে পড়তে।”
কৃষি এবং পশু ফার্মিং-এর নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত নিদর্শন ধরা আছে ইয়ুভাল হারারির স্যাপিয়েনস পুস্তকে – “দুগ্ধখামারগুলোতে একটু অন্যরকম উপায়ে পশুদের ইচ্ছেমত ব্যবহার করা হয়। সাধারণত গাভী, ছাগী কিংবা ভেড়ী শুধুমাত্র বাছুর বা বাচ্চা জন্মের পরেই দুধ উৎপাদন করে, তাও ততক্ষণ পর্যন্তই যতক্ষণ তাদের সন্তানদের সেটা দরকার হয়। এখন, খামারে দুধের জোগান অব্যাহত রাখার জন্য যেটা করা হয় সেটা হল সেইসব বাছুর, ছাগলের বাচ্চা কিংবা ভেড়ার বাচ্চাদের জন্মের পরেই হত্যা করা হয়। আর তারপর যতদিন সম্ভব ততদিন ধরে মায়েদের দুধ দোয়ানো হয়। তারপর আবার তাদের অন্তঃসত্ত্বা বানানো হয়। এটা এখনও খুবই প্রচলিত একটা পন্থা। এখনকার অনেক দুগ্ধখামারে একটা দুধ দেয়া গাভীকে হত্যা করার আগে মোটামুটি বছর পাঁচেক বাঁচে। এই পাঁচ বছর সময়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই সে অন্তঃসত্ত্বা থাকে। তাকে প্রতি ৬০ কি ১২০ দিন পর পর নিষিক্ত করা হয় যাতে সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। তার সন্তানকে জন্মের পরপরই তার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। গাভীগুলোকে লালন পালন করা হয় পরের প্রজন্মের দুধ উৎপাদনকারী হিসেবে আর ষাঁড়গুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাংসের খামারে।” (অনুঃ মোস্তাক আহমেদ, শুভ্র সরকার, সুফিয়ান লতিফ এবং রাগিব হাসান, বাংলাদেশ, পৃঃ ৯০)
এরপরে আর নতুন করে কি বলার থাকতে পারে? সমস্যাকে আদ্যোপান্ত হৃদয়ঙ্গম করা, গভীরে ভাবা এবং সামাজিক সংলাপ শুরু করা ছাড়া আর বিশেষ কোন পথ খোলা আছে বলে মনে হয়না। পরবর্তী প্রজন্মের যদি হৃদয় এবং বৌদ্ধিক জগত সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হয়ে কেবলমাত্র প্রকৃতিগ্রাসী কোন প্রাণীর মতো না হয় তাহলে তারা আমাদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকাবে – আমরা অন্তত ৩০০ বছর ধরে চলা এই অপরাধগুলোর প্রজন্মগত সাক্ষী ও নীরব মদতদাতা।
এখানেও মার্ক্সের ভাষা ধার করে বলতে হয় – “In every stockjobbing swindle every one knows that some time or other the crash must come, but every one hopes that it may fall on the head of his neighbour, after he himself has caught the shower of gold and placed it in safety. Après moi le déluge! [After me, the flood] is the watchword of every capitalist and of every capitalist nation. Hence Capital is reckless of the health or length of life of the labourer, unless under compulsion from society.” (ক্যাপিটাল, ৩য় খণ্ড, চ্যাপ্টার ১০, https://www.marxists.org/archive/marx/works/1867-c1/ch10.htm#81)
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তরফে ২০০৯ সালে একটি সুবৃহৎ পুস্তক প্রকাশ করা হয় – Awakening Africa’s Sleeping Giant: Prospects for Commercial Agriculture in the Guinea Savannah Zone and Beyond। সে বইয়ের শেষের দিকে বলা হচ্ছে – “এটা বিস্ময়কর নয় যে, সফল বাণিজ্যিক কৃষির বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান পরিচালনা-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কিভাবে বিভিন্ন মন্ত্রী দপ্তরের মধ্যে সার্ভিস এবং ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করা হবে। এটা সেটা হবে একাধিক স্তরে – বিভিন্ন দপ্তরের বিনিয়োগ এবং পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগের মধ্যে মেলবন্ধন করে। এখানে একেবারে ওপরের তলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন যিনি নিশ্চয়তা দেবেন যে কোন একটি বিশেষ অঞ্চলের কৃষির বিকাশ প্রাধান্য পাবে, যেমনটা ব্রাজিল এবং থাইল্যান্ডের উদাহরণ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে।” (পৃঃ ১৯২)
এরকম “প্রয়োজনীয়” রাজনৈতিক নেতৃত্বের চেহারা আমাদের দেশে “Forest (Conservation) Rules, 2022”-এর মধ্য দিয়ে দেখা গেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে – অরণ্য অঞ্চলের অধিবাসীদের আগাম অনুমতি ছাড়াই যারা প্রাইভেট পুঁজি বিনিয়োগ করবে তারা নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন করতে পারতে পারবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো প্রভাবশালী সংবাদপত্রে ভারতে ফরেস্ট রক্ষার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়েছিল “Risking Their Lives, for Little Pay, to Guard India’s Forests” (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২)।
সংবাদটি সঠিক। কিন্তু অরণ্যকে তো প্রকৃতপক্ষে বাঁচিয়ে রাখে Chief Seattle-এর মতো অরণ্যের সন্তানেরা। তাঁদের অরণ্যের অধিকার আজ লুঠ হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট পুঁজির কাছে। নতুন সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর মধ্য দিয়ে আগামীদিনে এর বিষময় ফল ভোগ করবে সমগ্র ভারতবর্ষ।
PLoS One জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে (জুন ৩, ২০২২) “State-led agricultural subsidies drive monoculture cultivar cashew expansion in northern Western Ghats, India” শীর্ষক গবেষণাপত্র। এই গবেষণাপত্রের সিদ্ধান্ত – “Our study deepens the understanding of how government-led agricultural subsidies drive farmers’ uptake of cashew cultivars, farmers’ cashew management practices, and how these factors drive deforestation in this landscape at the state and farm level.”
এরপরে বিচারের ভার যুক্তি-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের হাতে – চিকিৎসকদের হাতেও।
চীফ সিয়াটেলের চিঠিটার আর কিচ্ছু লেখার দরকার নেই।
ওটা পৃথিবীর সেরা কবিতা।সর্বশ্রেষ্ঠ দলিল।
কোন বইয়ে পাবো?
পাঠভবনে রাখবো।
সিয়াটলবাবুর ভাষণ এইখানে পাবেন, https://www.historylink.org/File/1427
Excellent written sir
এ ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে |
তুমি পাম তেলের কথাই ভাব না।
১) ইন্দোনেশিয়ায় palm oil কিভাবে সে দেশের এবং তাবৎ দুনিয়ার অরণ্যধ্বংস করে চলেছে, তাই নিয়ে আমরা একবার দেখে নিই, সায়ন্টিফিক অ্যামেরিকান কি বলছেন,
“It’s no wonder that worldwide demand for palm oil has surged in recent years. Long used in cosmetics, palm oil is now all the rage in the snack food industry, since it is transfat-free and therefore seen as healthier than the shortening it replaces.
But to produce palm oil in large enough quantities to meet growing demand, farmers across Southeast Asia have been clearing huge swaths of biodiversity-rich tropical rainforest to make room for massive palm plantations. Today palm oil production is the largest cause of deforestation in Indonesia and other equatorial countries with dwindling expanses of tropical rainforest. Indonesia’s endangered orangutan population, which depends upon the rainforest, has dwindled by as much as 50 percent in recent years.”
(https://www.scientificamerican.com/article/harvesting-palm-oil-and-rainforests/)
শুধু তো জঙ্গল নয়, জঙ্গলের সঙ্গে বন্যপ্রাণী, পাখী, সব নিশ্চিহ্ন হয়ে চলেছে,
Audubon বলছেন,
“Indonesia is ground zero for palm oil, a substance that, unbeknownst to most Americans, has quietly invaded our lives. Now present in half of all products on U.S. grocery store shelves—from crackers and ice creams to lotions and lipsticks—the cheap, versatile commodity also is on a precipitous rise in India, China, and beyond. Glob- ally, production of palm oil has doubled during the past decade, and is set to do so again by 2020.
Cultivation of the oil palm plant already has exacted a devastating toll on the birds of Indonesia (and of Malaysia, where most of the rest of the world’s oil palm is grown). Here on Sumatra, more than 75 percent of the 102 lowland-forest-dependent bird species are now considered globally threatened. And BirdLife International reports that 27 of the island’s 34 Important Bird Areas contain major tracts of just the sort of lowland forest prized by the industry.”
(https://www.audubon.org/magazine/fall-2016/as-global-demand-palm-oil-surges-indonesias)
অর্থাৎ কিনা অর্ধেক রেনফরেস্ট সাবাড়, তিন চতুর্থাংশ পাখী লোপ পেতে চলেছে।
আমরা কোথায় থামব, জয়ন্তদা?
তাতে অবিশ্যি ভারতে সে তেল কেনা থেমে থাকেনি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানাচ্ছেন,
“India’s palm oil imports in July are set to jump to the highest in 10 months because of a hefty correction in prices and as Indonesia allows more exports of the tropical oil, four dealers told Reuters.
Higher purchases by India, the world’s biggest importer of vegetable oils, may add support for Malaysian palm oil prices, which are trading near a one-year low”
(https://www.business-standard.com/article/markets/india-s-july-palm-oil-imports-may-surge-to-10-month-high-as-prices-plunge-122070600491_1.html)
সিয়াটল বাবুর আর্তনাদ শুনলে মন খারাপ লাগে নিশ্চয়ই |
তা, ঘরের কাছে, নিজেদের দেশেও তো একটু ভাবনা চিন্তা করতে হবে?
Darun likhechen sir. Sobar corporate er das e porinoto hoche . Keu bad nei
অসাধারণ বললে কিছুই বলা হয়না। কিন্তু এত অসহায় লাগে —- depression এসে যায়। আমরা কি সত্যিই নিয়তি-নির্দিষ্ট আত্মহননের পথেই চলতে বাধ্য?
ভাবতে পারিনা, মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের একমাত্র ঠিকানা (এখন পর্যন্ত জানা) থেকেও প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে? সম্পূর্ণ বিশ্ব প্রাণহীন হয়ে যাবে? পুঁজিবাদের ধ্বংস অভিযানই শেষ কথা বলবে?
সেই মহাপ্রলয় থেকে প্রকৃতিকে বাঁচাতে ধ্বংস করো, ধ্বংস করো, ধ্বংস করো বিশ্ব-পুঁজিবাদকে।
Asadharon bolle Kom bola hobe. E ek anobaddo lekha. Bohu ajana jinis jante parlam. 🙏🙏
ধ্বংসলীলা চলবেই। এখন মানুষের থেকে মুনাফার মূল্য বেশী।
অরণ্যের মানুষদের মূল্য আরও কম।
আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য?
ওসব কথার কথা।
কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলাম। তখন নিজের চোখে বিখ্যাত অরণ্যসম্পদগুলির আয়তন এবং গাছপালার ঘনত্ব যে হারে গত কুড়ি বছরে কমেছে তাতে হতবাক হয়েছি।
আপনার লেখা যদি সরকারের চেতনা বাড়াতে সাহায্য করে তবে মঙ্গল।
ধন্যবাদ, ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।