ছোটোবেলায় ঠাকুমার মুখে শোনা বাঘাই সর্দারের গপ্পো আমাদের খুব মজিয়ে রাখতো। দু চারদিন পরপরই আমরা বায়না জুড়তাম – ঠাকুমা, আমাদের বাঘাইয়ের গল্প বলো। আমরা তিন ভাইবোন পালা করে ঠাকুমার কাছে আমাদের দাবি পেশ করতাম। ফলে ঠাকুমা খুব বিরক্ত হবার সুযোগ পেতেন না। আমাদের মধ্যে যে কোনো একজন আবদার পেশ করতেই পিন চাপানো রেকর্ডের মতো ঠাকুমার ঝুলি উপচে পড়া গপ্পো শুরু হয়ে যেতেই বাকি দুজন সুরসুর করে এসে
হাজির হতাম অকুস্থলে। ঠাকুমা মুচকি হেসে শুরু করতেন তাঁর গল্পের আসর।
“বাঘাই হলো এক পাইক। সেই সময় জমিদারদের বাড়িতে পাইক, লেঠেলদের রমরমা ছিল। বাঘাই ছিল তাদেরই এক জন। তবে সে ছিল এক চৌকশ লাঠিয়াল। বনবনিয়ে বাঘাই যখন লাঠি ঘোরাতো, তখন তাকে স্পর্শ করে কার সাধ্যি! এহেন লাঠিয়াল বাঘাই, স্রেফ লাঠি ঘুরিয়েই নাকি বাঘের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছিল। সেই থেকেই নাকি বাহারুল থেকে তার নাম হয় বাঘাই।”
বাঘ, ব্যাঘ্র,শের, শার্দুল,দ্বীপী যে নামেই ডাকা হোক না কেন সেই নামেই মার্জার পরিবারের এক রাজসিক সদস্যের দেখা মিলবে। বাঘের সঙ্গে আমাদের লোকজীবনের এক নিগূঢ় সম্পর্ক রয়েছে । তার অগণিত পরিচয় আমরা পাই দেশীয় আখ্যানে, লোকগাথায়, লোকনৃত্যে, লোকগান কিংবা লোক যাত্রায়। শ্রীনাথের কথা মনে পড়ে? সেই যে ভর সন্ধ্যায় মেজদার তত্বাবধানে ম্লান সেজবাতির আলোয় পড়তে বসা ভাইদের পাঠবাসরে হঠাৎ করে ব্যাঘ্র সাজে হাজির হওয়া বহুরূপী! উঠোন ছেড়ে বারান্দায় উঠে আসতেই এক হুলস্থুল কাণ্ড! ভাগ্যিস সে যাত্রায় পিসিমা এসে রক্ষা করেছিলেন , না হলে অনেক লাঞ্ছনা সইতে হতো তাকে। আসলে মার্জার পরিবারের সদস্য হওয়ায় এককালে মানুষের সঙ্গে বাঘের সম্পর্ক হয়তো অনেকটাই সহজ তারে বাঁধা ছিল, না হলে ভাগ্নে গুপীচন্দ্রের অমন কাঁপা গলার গানে বাঘমামা অত সহজে বশ মেনে নিদ্রালু হয়ে পড়ে?
আমাদের কলকাতা শহরের সীমানা ছাড়িয়ে একটুখানি দক্ষিণে গেলেই আমরা সোঁদর বনের এলাকায় ঢুকে পড়বো। বাদাবনের অমন গহীন জঙ্গল হলো দক্ষিণ রায়ের খাস তালুক। কে এই দক্ষিণ রায় ? তিনি হলেন ব্যাঘ্র কুলপতি। বাদাবনের মানুষজন তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য ঐ গহন অরণ্যের আরণ্যক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। অথচ জঙ্গলেই বাস হলদেটে চামড়ার ওপর কালো ডোরাকাটা বাঘেদের। ঐ অঞ্চলের মানুষের লোকবিশ্বাস, দক্ষিণ রায়ের পুজো দিয়ে জঙ্গলে গেলে তিনি সবরকম বিপদ আপদে রক্ষা করবেন মানুষকে। সেই বিশ্বাস থেকেই আবহমান কাল ধরে বনবিবির সাথে সাথে দক্ষিণ রায়ের পূজার আয়োজন গোটা সোঁদরবনে।
প্রশ্ন হলো, মার্জার পরিবারের সদস্যভূক্ত এই প্রাণিটির প্রতি কেন আমাদের এমন বিশেষ দুর্বলতা? বিশেষজ্ঞদের মতে হাজার হাজার বছর আগে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তির্ণ ভূখণ্ড জুড়ে এই সুদর্শন মার্জারটি বিপুল সংখ্যায় বিচরণ করতো, ঠিক যেভাবে মেনি,পুশি আর হুলোর দল শহরের অলিগলি চড়ে বেড়ায় ঠিক তেমনি আর কি! প্রতিদিন দেখাদেখির সুবাদে মানুষ ক্রমে ক্রমে বাঘের সৌন্দর্য, সামর্থ্য, শিকার ধরার ক্ষেত্রে সাবলীল ভঙ্গিমার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। একসময় নিজেদের বাঘের মতোই ভাবতে শুরু করে। আর এমন ভাবনার বীররস একটু একটু করে মজিয়ে ফেলে তাদের।
এই ব্যাপারে আমাদের প্রতিবেশী চিনদেশ ছিল সবার আগে। হয়তো এই কারণেই চিনা সংস্কৃতির সঙ্গে বাঘ ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। চিনদেশের জনপ্রবাদ, লোককথা, চিত্রকলা এবং প্রচলিত লোকাচারের মধ্যে এই বলবান,শৌর্যবান, বুদ্ধিমান প্রাণিটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যায়। চৈনিক ধারার পরম্পরাগত চিত্রকলায় তাই বাঘের মূর্ত ও বিমূর্ত উপস্থাপন কয়েক প্রজন্মের রীতিতে পরিণত হয়েছে। তাঁদের কাছে বাঘ নিছক এক হিংস্র বন্যপ্রাণি মাত্র নয় সে হলো এক শুভ চেতনার প্রতীক যে যুগযুগ ধরে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করে আসছে। চিনা রাশিচক্রে বাঘের স্থান তিন নম্বরে যেখানে বলা হয়েছে যে বাঘ রাশির জাতক জাতিকারা হন সাহসী, বলবান, ধৈর্য্যশীল এবং সহানুভূতিশীল মানুষ। বাঘের একান্ত গুণাবলীর চমৎকার আরোপন ব্যক্তি মানসে।
সুন্দরবনের মানুষের পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মানুষজনের মধ্যে বাঘের গুণগ্রাহীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। সুপ্রাচীন মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন সিলমোহর ও অন্যান্য নিদর্শে বাঘের অবয়ব খোদিত রয়েছে । ধর্মীয় অনুষঙ্গ অনুসারে বাঘ হলো ভগবান শিব ও দেবী দুর্গার বাহন। তাই এই দুই দেব দেবীর ভক্তদের কাছে বাঘের কদর রয়েছে। মহারাষ্ট্রের ওয়ারলি উপজাতীয় মানুষদের আরাধ্য ওয়ার্ঘিয়া হলেন ব্যাঘ্র দেবতা। দক্ষিণ ভারতে বাঘের দেবতা হলেন লর্ড আয়াপ্পান আর দেবী দুর্গা যুদ্ধ করেন শেরওয়ালী মা হিসেবে বাঘের পিঠে পা রেখে।
বৌদ্ধধর্মে বাঘ ঠাঁই পেয়েছে রাগ বা ক্রোধের প্রতীক রূপে। সাইবেরিয়ার টুঙ্গুস উপজাতীয় মানুষদের কাছে সাইবেরিয় বাঘ হলো এক পূজনীয় আরাধ্য। জাতীয় পশু হিসেবে বাঘের স্বীকৃতি মিলেছে ভারতবর্ষ, বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। বাঘ হলো শৌর্য, বীর্য ও পরাক্রমের প্রতীক। তাই ভারতীয় শাসকবর্গ বিভিন্ন সময়ে নিজেকে প্রবল প্রতাপশালী রাজা হিসেবে তুলে ধরতে বাঘকে অবলম্বন করেছেন। এই বিষয়ে সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন মহীশূর সম্রাট টিপু সুলতান। তাঁর প্রধানতম প্রতিপক্ষ ছিল ইংরেজরা। বহিরাগত বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তিনি যে রাষ্ট্র নিশান উড়িয়ে ছিলেন তার প্রেক্ষাপটে ছিল ব্যাঘ্র চর্ম বা অজিন।
ইংরেজদের প্রতি টিপু সুলতানের রাগ বা বিদ্বেষ এতোটাই প্রবল ও অকপট ছিল যে তিনি কাঠের তৈরি একটি স্থাপত্য তৈরি করিয়েছিলেন যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি পূর্ণবয়স্ক শার্দুল তার শিকার, এক পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ইংরেজের শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। আসলে এটি ছিল একটি পাইপ অর্গান। বর্তমানে বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই কাঠের তৈরি মূর্তির সাহেবের হাত তুলে ধরলে ক্ষিপ্ত বাঘের গর্জন আর মুমুর্ষু সাহেবের করুণ আর্তনাদ শোনা যেত।
ক্রীড়া জগতেও বাঘের দাপট নেহাৎই কম নয়।১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল শহরে বসলো ২৪ তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আসর। এই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরের প্রতীক বা ম্যাসকট কী হবে ? উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ম্যাসকট ঠিক করতে প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হলো। মোট ৪৩৪৪ জন তাতে অংশগ্রহণ করে। প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত চারটিকে – খরগোশ , কাঠবিড়ালি, একজোড়া মান্দারিন হাঁস আর বাঘ – চূড়ান্ত পর্বের জন্য বেছে নেওয়া হলো। শেষ হাসি অবশ্য হাসলো বাঘ – হোদোরি, আট বছরের এক বাঘ।
শিল্পী কিম্ হাইয়ুন তৈরি করলেন এই জনপ্রিয় ম্যাসকট। অবশ্য হোদোরির এক সঙ্গিনী ছিল।তার নাম রাখা হয়েছিল হোসুনি। তবে হোসুনির গরিমা চাপা পড়ে গিয়েছিল তার পুরুষ সঙ্গী হোদোরির জনপ্রিয়তার কাছে।আর তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলারা মাথা উঁচিয়ে গর্জন করেছে কবে?
সাতসকালেই বাঘের তাড়া খেয়ে অনেক অনেক কথার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি এবার ঘরে ফেরার পালা। প্রয়াত চিত্রপরিচালক শ্রী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মশাই বাঘ বাহাদুর নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ১৯৮৯ সালে। প্রফুল্ল রায়ের লেখা কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে বাঘ নাচিয়ে ঘুনুরামের সুখ দুঃখের কথা উঠে এসেছে অসাধারণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। মনোরঞ্জনের আধুনিক উপকরণ এসে গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা বিনোদনের লোকায়ত উপকরণগুলোকে বেমালুম হজম করে নিয়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে উঠে আসে বাঘ নাচিয়ে ঘুনুরামের সংগ্রামের কাহিনি।
বাঘ নাচ এখনও টিকে আছে পৃথিবীর নানা দেশে কেবলমাত্র দেশজ লোকায়ত জীবন ও বিশ্বাসের গভীর ভিত্তিকে আঁকড়ে ধরে রেখে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে – যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভারতবর্ষ, নেপাল ,চিন, জাপান, থাইল্যান্ডে বাঘ নাচের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশের তিন দক্ষিণী রাজ্য কেরালা, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকে এখনও বাঘ নাচের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রের নাগপুর অঞ্চলে এখনও বাঘ নাচের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
কেরালা রাজ্যের বিখ্যাত ওনাম উৎসবের সময় পুলিক্কালি বা বাঘ নাচের প্রচলন রয়েছে। মালয়ালম ভাষায় পুলি শব্দের অর্থ হলো লেপার্ড বা বাঘ এবং কালি শব্দের অর্থ হচ্ছে খেলা। দশদিনের ওনাম উৎসবের চতুর্থ দিনে পুলিক্কালির আয়োজন করা হয়। এই নাচের মধ্য দিয়ে বাঘ শিকারের রোমাঞ্চকর আনন্দ লাভের চেষ্টা করেন এই প্রজন্মের মালয়ালিরা। এই নাচের নাচিয়েরা নিজেদেরকে বাঘের মতো আকর্ষণীয় সাজে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয় এবং শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন পরম্পরাগত তালবাদ্য যেমন থাকিল, উডুক্কু এবং চেন্ডার ছন্দোবদ্ধ তালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। গোটা অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় মহান পৌরাণিক রাজা মহাবলীকে। কোচির শাসক মহারাজা রাম ভার্মা শাখতান থাম্পুরান এই বাঘ নাচ বা পুলিক্কালিকে ওনামের অবশ্য পালনীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করেন। আজও ত্রিশুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এই নাচ করা হয় যথাযথ মর্যাদায়।
কেমন আছে এই সময়ের শার্দূলরা ? এর উত্তরে বলবো – খুব ভালো নেই। এক সময় রাজা মহারাজারা নিজেদের বীরত্ব প্রদর্শন করতে নির্বিচারে বাঘ শিকার করেছে।১৯৬৬ সালে আইন করে বাঘ মারা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার আগেই অনেক অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। একসময় পৃথিবীর বুকে বিচরণ করতো আট প্রজাতির বাঘ তবে নানান কারণে তিন উপপ্রজাতির বাঘ পৃথিবীর বুক থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়ার কারণে নীচের পাঁচটি প্রজাতির বাঘ এখনো টিকে আছে।
- ভারতীয় বাঘ বা রয়াল বেঙ্গল টাইগার
( Panthera tigris tigris) এদের দেখা যায় উপমহাদেশের চারটি দেশে – ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানে।
- ইন্দোচিন বাঘ ( Panthera tigris corbetti ) এই প্রজাতির বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র হলো থাইল্যান্ড ও উপদ্বীপিয় মালয়েশিয়ায়। এছাড়া মায়ানমার, দক্ষিণ চিন, কম্বোডিয়া,লাওস ও ভিয়েতনামে।
- সাইবেরিয় অথবা আমুর বাঘ ( Panthera tigris altaica) রাশিয়ার আলতাই পার্বত্য অঞ্চল এদের দেখা মেলে।
- সুমাত্রার বাঘ ( Panthera tigris sumatrae ) ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত সুমাত্রা দ্বীপে এরা থাকে।
- দক্ষিণ চিনের বাঘ ( Panthera tigris amoyensis ) এরা মূলত চৈনিক বাঘ।
এই মুহূর্তে কেমন আছে আমাদের পরিবেশের বাঘেরা? এককথায় উত্তর দিতে হলে বলবো – ওরা খুব ভালো নেই, আবার হতাশার মধ্যেও সামান্য আলোর রেখাও যে দেখা যাচ্ছেনা তাও কিন্তু নয়। প্রশাসনিক স্তরে খানিকটা উদ্যোগ বেড়েছে, বন্য প্রাণিদের সংরক্ষণের জন্য আইনি বিধি নিয়ম আগের তুলনায় খানিকটা কড়া হয়েছে, কিন্তু এতো সব করেও বাঘেদের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত করা যায়নি গণ সচেতনতার অভাবে। ইদানিং শুরু হয়েছে এক নতুন আদিখ্যেতা – টাইগার সাফারি। কোথায় গেলে লালু,ভুলু, টমির মতো শার্দুল দর্শন সম্ভব হবে তা আগাম জানিয়ে, চলছে ঢালাও প্রচার। ভিড় জমাতে কসুর করছেন না এ কালের শহুরে বাবুর দল। শিকারের মতো এও এক গর্হিত প্রবণতা। কিন্তু শুনছে কে, নিয়ম মানছে কে?রোজ এই একই রুটিন।
প্রখ্যাত লেখক, পরিবেশ প্রেমী, সংবেদনশীল শিকারি জেমস এডওয়ার্ড করবেট ( ১৮৭৫–১৯৫৫) বাঘকে সংরক্ষণ করা কেন প্রয়োজন সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন –
“A tiger’s function in the scheme of things is to help maintain balance in nature and if ,on rare occasions when driven by dire necessity,he kills a human being or when his natural food has been ruthlessly exterminated by man ,he kills two percent of the cattle he is alleged to have killed ,it is not fair that for these acts a whole species should be branded as being cruel and blood thirsty.”
করবেট সাহেবের কথার রেশ টেনে আজ এই আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসের দিনে আমরাও বলি– বাঘ আমাদের জাতীয় পশু শুধু নয়, পাটকেল রঙের লোমশ চামড়ার ওপর কালো ডোরাকাটা দাগওয়ালা এই শার্দুল মহারাজ আমাদের দেশের ১৪০ কোটি মানুষের শৌর্য , বীর্য ও পরাক্রমের প্রতীক। একে রক্ষার দায়িত্ব তাই আমাদের। মনে রাখতে হবে,আজ বাঘ আছে তাই বন আছে,বন আছে তাই গাছ আছে,গাছ আছে তাই প্রাণ আছে,প্রাণ আছে বলেই আমরা সবাই টিকে আছি এখনও।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
ছবিগুলো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কাছে ঋণ স্বীকার করছি।
গল্প,প্রজাতি ভাগ,লোক কথা,লোক প্রথা,অতীত – বর্তমান,ইতিহাস – ভূগোল,পরিবেশ সব মিলে টোটাল বাঘ প্যাকেজ।অনেক কথা জানা গেল।
গতকাল আনন্দবাজারে পড়লাম বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ।সেই তুলনায় বনভূমি কম।সবদিকটাই দেখতে হবে।
Darun hoyeche.
সাতসকালেই বাঘ মামার কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙেছে। লেখক অবশ্য জানিয়েছিলেন যে এমন কিছু একটা ঘটবে। বাঘ নিয়ে ছোট্ট পরিসরে একটি মনোগ্রাহী আলোচনা। এই লেখা ছোট বড় সবার মন জয় করবে। এমন লেখা আরও চাই।
দারুন সব তথ্য। কত নতুন কিছু জানলাম। ব্যাঘ্র দিবসের সেরা প্রাপ্তি।
সব মিলিয়ে জমজমাট লেখা
শার্দুল মহারাজ কে যতই বাঘমামা বলে আমরা নৈকট্য জাহির করতে চাইনা কেন, পরাক্রমশালী এই প্রাণীটির রাজকীয় চলন,বলন সম্ভ্রমে আমাদের জীবন গাথার সাথে একে যুক্ত করে দিয়েছে। আমাদের গর্বের এই প্রাণীটিকে যাতে আর ও স্বচ্ছন্দে বিচরণভূমি আমরা দিতে পারি,সেই বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তরিক ভাবে সামিল হ ওয়া প্রার্থনীয়।এতো আকর্ষণীয় ভাবে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য লেখক কে ধন্যবাদ।
Opurbo! Oshadharon lekha! Somriddho Bolam!
পড়তে পড়তে মনে হল বাঘ নিয়ে কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখছি। লেখক গল্পের ছলে অনেক অজানা তথ্যে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। ওদের অনেক পরে এই পৃথিবীতে এসে মানুষ ভাবছে এই পৃথিবীটা শুধুই তাদের। এইসব বাঘ টাগ দিয়ে কি হবে? এই পৃথিবীতে
ওরা ছিল বলেই আমরা আছি, ওদের বাঁচার অধিকার আমাদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়, এই বোধ জনমানসে তৈরি হোক, এই লেখা অনেক পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।