(প্রথম পরীক্ষার পরে CMC-র পূনঃর্মূল্যায়ন, সেক্যুলারিটি এবং ডিসপেনসারির প্রসার – ১৮৩৯-১৮৪১)
আমরা আগের অংশে দেখেছি, মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার সরকারি নির্দেশে (২৮ জানুয়ারি, ১৮৩৫) বলা ছিল যে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়কাল ৪ বছরের কম নয় এবং ৬ বছরের বেশি নয়। এদিকে মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা হয়েছিল সাড়ে তিনবছরের মাথায়। এজন্য এদেরকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি দেওয়া হয়নি – দেওয়া হয়েছিল letters testimonial। ২১ নভেমবর, ১৮৩৮-এ এই রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছিলেন এস নিকলসন, জে গ্র্যান্ট, জে আর মার্টিন এবং ডানকান স্টুয়ার্ট। এর সাথে পাস করা ছাত্রদের এক সেট করে বই দেওয়া হয়েছিল যাতে পরবর্তী সময়ে পড়া বা প্র্যাক্টিসের কাজে লাগে। নীচে বইয়ের তালিকা দেওয়া হল।
এছাড়া লর্ড অকল্যান্ড নিজের হাতে পরীক্ষার প্রথম ছাত্র উমাচরণ শেঠের হাতে সোনার ঘড়ি পরিয়ে দেন। (O. P. Jaggi, Medicine in India: Modern Period, 2011, পৃঃ ৪৮)। এছাড়া সেবছরের ক্যালকাটা মন্থলি জার্নাল-এও এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। অন্যান্য বেশিরভাগ যে প্রাইজগুলো দ্বারকানাথ দিয়েছিলেন তার সম্পূর্ণ লিস্ট আগের অংশে দিয়েছিলাম। এদেরকে যে ডিপ্লোমা বা লেটারস টেস্টিমনিয়াল-এর সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিলিপি নীচে দিলাম।
প্রথম পরীক্ষার পরে CMC-র পূনঃর্মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনার আগে মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরের পরিবেশে এবং কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সেগুলো নিয়ে কিছু কথা বলে নিই।
ক্যালকাটা মন্থলি জার্নাল (থার্ড সিরিজ, ভল্যুম ৩, ১৮৩৭)-এ “Lord Auckland’s Soirees” শিরোনামে অকল্যান্ড যেসমস্ত বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন তার একটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল। সে বিবরণের মধ্যে ও’শনেসির গ্যালভানিক যন্ত্র নিয়ে যে নতুন পরীক্ষা করেছিলেন তার খবর ছিল। এই গ্যালভানিক যন্ত্রের ক্ষমতা ছিল ৩ অশ্বক্ষমতাবিশিষ্ট। (পৃঃ ১০৫) একই জার্নালে (থার্ড সিরিজ, ভল্যুম ৪) আরেকটি খবর ছিল – “A hospital has, since, beginning of the current month (April), been established on the premises of the Medical College, for the benefit, principally of that excellent institution. It consists of two wards, namely the medical and surgical.” (পৃঃ ২১৮)
এশিয়াটিক জার্নাল-এর নভেম্বর, ১৮৩৮, সংখ্যায় “New Church – Proselytism” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় (পৃঃ ১৪০)। সে সংবাদে বলা হয় – হিন্দু কলেজের বিপরীত দিকে কলকাতার লর্ড বিশপ এবং Archdeacon একটি নতুন চার্চের শিলান্যাস করবেন। হিন্দু কলেজের ডিরেক্টরদের এবং মেডিক্যাল কলেজের কলেজ কাউন্সিলের তরফে এই চার্চ প্রতিষ্ঠা না করার জন্য প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছিল লর্ড বিশপকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল – ঐ অঞ্চলে কোন খ্রিস্টান বাসিন্দা নেই, সবাই হিন্দু। ফলে এই চার্চের প্রতিষ্ঠা ধর্মান্তরকরণের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে মানুষের কাছে বার্তা যাবে যা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
মেডিক্যাল কলেজ থেকে যে চিঠিটি দেওয়া হয়েছিল বিশপের কাছে তাতে লেখা হয়েছিল –
“My Lord – We, the professors, secretary and the undersigned officers of the Medical College of Calcutta, beg leave most respectfully to submit the conclusions we are compelled to form, respecting the proposed erection of a church for Christian worship in the immediate vicinity of the Hindu College, and intended for pastoral charge of the Rev. Krishna Mohun Banerjee, an ex-student of the Hindu College, and a convert from the Hindu persuation.” এরপরে যোগ করা হয় – “We regard this measure as one calculated to cause withdrawal from the Hindu and Medical Colleges, and from the School Society’s flourishing seminaries, as many students, who now crowd these successful seats of native education.”
এই প্রতিবাদের নির্যাস দাঁড়ায় যে খ্রিস্টীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ যদি হিন্দু তথা দেশীয় সমাজের ভাবাবেগে আঘাত করে নতুন শিক্ষার প্রবাহকে যদি ব্যাহত করে তাহলে সেটা বন্ধ করতে হবে – “whatever thwarts the progress of this, must postpone proportionately the march of their religious conversion.” চিঠির নীচে স্বাক্ষরকারী হিসেবে নাম ছিল
প্রথম নির্দেশে জাত-ধর্ম-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে যে সেক্যুলার চরিত্রের ঘোষণা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল ১৮৩৮ সালের জুলাই মাসে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকেরা এর একটি সবল উদাহরণ স্থাপন করলেন।
এতো হল মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশ্ন। কিন্তু ও’শনেসির উদ্যোগে তখন এগিয়ে চলেছে নতুন নতুন ওষুধ উদ্ভাবন ও পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ। ১৮৩৮ সালের গোড়ায় সম্ভবত ইংরেজ সরকার এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে কলহের কারণে পেরু সরকার ভারতে ৫ বছরের জন্য Peruvian bark বা সিঙ্কোনা গাছের ছাল, যা থেকে অতি প্রয়োজনীয় কুইনাইনের মতো ওষুধ তৈরি হত, রপ্তানি করা নিষিদ্ধ করে। “ক্যালকাটা মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি”-র ১৮৩৮ সালের আগস্ট মাসের সভায় ও’শনেসি সভ্যদের নজর এ সমস্যার দিকে আকৃষ্ট করেন। এরপরে সভার সদস্যদের সামনে তিনি তাঁর আবিষ্কার করা কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে (বাংলায় সহজলভ্য আফিম থেকে যা তৈরি করেছিলেন) narcotine দিয়ে চিকিৎসা করা ৩২ জন রোগীর বিবরণ পেশ করেন। এরমধ্যে ২টি কেসের ক্ষেত্রে স্বয়ং ডঃ গুডিভ ফল পেয়েছিলেন।
১৪ অক্টোবর, ১৮৩৮-এ ও’শনেসি এই ট্রায়াল দেন মেডিক্যাল কলেজ এবং অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহায়তায়। এসসময়ে নার্কোটিনের আবিষ্কার এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল যে ল্যান্সেট-এর মতো আন্তর্জাতিক মানের পিয়ার-রিভিউড জার্নালে জুলাই ২০, ১৮৩৯-এ প্রকাশিত হয়েছিল নার্কোটিন তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং ম্যালেরিয়ার ইন্টারমিটেন্ট ধরনের জ্বরের চিকিৎসায় এর ফলাফল।
২০ জনের বেশি চিকিৎসক (সবাই বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসের সামরিক চিকিৎসক) ১৪১টি কেসের চিকিৎসা করেছেন। এরমধ্যে ১২৫ জনের সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। ৫ জন চিকিৎসাধীন। ১১ জনের ক্ষেত্রে কোন ফল পাওয়া যায়নি। উল্টোদিকে, ১৭টি ক্ষেত্রে যেখানে কুইনাইন ব্যর্থ হয়েছে সেখানে নার্কোটিন সফল হয়েছে। ২১ জন প্র্যাক্টিশনার যারা নার্কোটিন ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে ১৭ জন অতি সন্তোষজনক মন্তব্য করেছেন, ২ জন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি, ২ জন কেবল সংখ্যাভিত্তিক রিপোর্ট ছাড়া আর কিছু জানাননি।
কুইনাইনের থেকে অনেক কম দামে (১ আউন্সের মূল্য ৬ আনা) এই ওষুধ পাওয়া যাবে বলে ও’শনেসি জানান। তিনি আরও নিশ্চয়াত্মক ফলাফলের জন্য নার্কোটিনের (আজকের ভাষায়) মাল্টি-সেন্ট্রিক ট্রায়াল করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল দুর্গম এবং কলেরা অধ্যুষিত অঞ্চলে, যেমন বার্মার Kyok Phoo, Akyab এবং চট্টগ্রাম, তমলুক ও রংপুরের মতো জায়গায় এ ওষুধ রোগীদের উপরে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হোক। কিন্তু বাংলার মেডিক্যাল বোর্ড এতে গররাজি হয়। ফলে নার্কোটিনের পরবর্তী ফলাফল অজানা থাকে।
কলকাতার “মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি”র ১৮৩৮ সালের অক্টোবর মাসের মিটিংয়ে ও’শনেসির এই নতুন আবিষ্কার নিয়েই বিস্তৃত আলোচনা হয়েছিল। তিনি দেখিয়েছিলেন, ১ লক্ষ টাকার কমে সমস্ত ভারতবাসীর জন্য সরকার এই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। এবং সেসময়ে বিদেশ থেকে আমদানি বিভিন্ন ওষুধের জন্য (যেমন সিঙ্কোনার ছাল, কুইনিন, Sarsaparilla, জোলাপ, Antharides Olive Oil, পিপারমেন্টের তেল, Rhubarb, Colocynth, Scamony এবং মানা – প্রায় ৩০০ ধরনের নানারকম উপাদান) যে খরচ হয় তার ১/৫ অংশ খরচে চিকিৎসা করা সম্ভব। “মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি”র আলোচনার অংশ রাখছি এখানে।
মেডিক্যাল কলেজের প্রথম পরীক্ষা নেবার অব্যবহিত আগে এসমস্ত পরীক্ষা কলেজের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে হয়েছে। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতির আগে সম্ভবত ছাত্রদের পক্ষে এগুলো দেখা বা অংশগ্রহণ করার অবকাশ ছিল বলে মনে হয়না।
নার্কোটিনের বিভিন্ন রোগে এবং উপসর্গে ব্যবহারের একটি তালিকা ও’শনেসি দিয়েছিলেন এবং অন্য সদস্যরা অনুমোদন করেছিলেন। সে তালিকা হল – (১) purgative হিসেবে (ও’শনেসি হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন ৪টি পূর্ণ ডোজ এক পাইস মূল্যে পাওয়া যায়); (২) diuretic তথা প্রস্রাব বৃদ্ধিকারক হিসেবে; (৩) ব্লিস্টার হিসেবে; (৪) নার্কোটিক বা ঘুম পাড়ানিয়া হিসেবে; এবং (৫) emetic তথা বমনোদ্রেককারী হিসেবে। সোসাইটির সম্পাদক হিসেবে গুডিভ কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন।
প্রথম পরীক্ষার পরে CMC-র পূনঃর্মূল্যায়ন
পরীক্ষার পরে যারা লেটারস টেস্টিমনিয়াল-এ স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের তরফে একটি মূল্যায়ন পাঠান জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশনস বা GCPI-এর কাছে। এর জবাবে টি এ ওয়াইজের স্বাক্ষরিত একটি বৃহদাকৃতি মূল্যায়নপত্র (৮০ থেকে ৯৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত। GCPI, ১৮৩৯) লেখা হয় GCPI-এর তরফে। টি এ ওয়াইজ সেসময় GCPI-এর সেক্রেটারি ছিলেন। যেসমস্ত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সেগুলো সবকটিই ভারতবর্ষে মেডিক্যাল শিক্ষার ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতের শিক্ষার অভিমুখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। এবার মূল্যায়নের প্রধান বিষয়গুলো দেখা যাক।
প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়ান্স-এর বিভিন্ন সংখ্যায় (১৮৩৬-১৮৩৭ সালে) মেডিক্যাল কলেজে ইউরোপীয় ধাঁচে মেডিক্যাল শিক্ষার অসম্পূর্ণতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে – কখনো প্রাসঙ্গিক, কখনো মেডিক্যাল কলেজের কাছে প্রত্যাশার অতিরিক্ত দাবী রাখা হয়েছে।
(১) অবলুপ্ত নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশনের (NMI) উন্নততর রূপ (স্বাতন্ত্র্য ছাড়া) হিসেবে মেডিক্যাল কলেজের সমালোচনা করা হয়। কারণ মাত্র দুজন শিক্ষক নিয়ে (তৃতীয় শিক্ষক ও’শনেসি যুক্ত হয়েছিলেন ৫ আগস্ট, ১৮৩৫-এ) কোন নির্দিষ্ট সিলেবাস ছাড়া এবং হাতে গোণা দু-তিনটে বিষয় (অ্যানাটমি, কেমিস্ট্রি, মেটেরিয়া মেডিকা এবং প্র্যাক্টিস অফ ফিজিক) নিয়ে কলেজ চালু হয়।
আমরা স্মরণে রাখবো – এর আগে একাধিকবার ব্রামলে, গুডিভ এবং ও’শনেসি সিলেবাসের অনুপস্থিতি এবং আধুনিক ইউরোপীয় টেক্সটবুক না থাকা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। নিজেদেরকে পথ চলতে চলতে সিলেবাস তৈরি করতে হয়েছে এবং বই লিখতে হয়েছে। রিপোর্টে এঁদেরকে সমালোচনার ক্ষেত্রে এগুলোকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হল। মোট ১৭টি বিদেশী আন্তর্জাতিক জার্নাল থেকে খেটেখুটে এরা কাজ চালানোর মতো সিলেবাস তৈরি করেছিলেন। এই জার্নালগুলোর মধ্যে ৮টি ব্রিটিশ এবং ৯টি ফরাসী জার্নাল ছিল। (মেল গরম্যান, “ইন্ট্রোডাকশন অফ ওয়েস্টার্ন সায়ান্স ইনটু কলোনিয়াল ইন্ডিয়াঃ রোল অফ দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ”, প্রসিডিংস অফ দ্য আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি, সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, পৃঃ ২৭৬-২৯৮) এমনকি এর কয়েকবছর বাদে প্রোফেসর জ্যাকসন বলেছিলেন তাঁরা শিক্ষাদানের যে পদ্ধতি অনুসরণ করছেন – “being very nearly, if not identical with the system pursued in the celebrated Ecoles Clinique of Paris and Straburgh”। (General Report of the Late General Committee of Public Instruction, 1840-41 & 1841-42, p. 96)
(২) অবশ্য এই রিপোর্টে (GCPI, 1939) মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ডিসেকশনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। এবং একইসাথে NMI-এর ছাত্রদের অঙ্গস্থানিকতা সম্পর্কে কিছুমাত্র ধারণা না থাকার জন্য রোগীরা কিভাবে মারা গেছে তার তিনটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রথম, একজন রোগীকে অবান্তরভাবে আর্সেনিক দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য মৃত্যু হয়। দ্বিতীয়, হিপ জয়েন্টে একটি বড়ো ফোঁড়ার অপারেশন করতে গিয়ে আর্টারি কেটে ফেলা। অবশেষে দ্রুত ডঃ গ্র্যান্টের কাছে নিয়ে গিয়ে রোগীকে বাঁচানো হয়। তৃতীয়, একজন মহিলার গর্ভপাত হবার পরে তার জরায়ুতে বেশ কয়েকটি কপারের টুকরো ঢোকানো হয়। অবশেষে তার মৃত্যু ঘটে। এখানে বিস্ময়করভাবে “native doctoress” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। (GCPI, ১৮৩৯, পৃঃ ৮২)। এ শব্দের ব্যবহার কি ধাইকে বোঝাচ্ছে? কিংবা কোন মহিলা নেটিভ ডাক্তারকে বোঝাচ্ছে? দ্বিতীয় সম্ভাবনার কোন ইতিহাস আমরা এখন অব্দি খুঁজে পাইনি। ফলে এটি রহস্যাবৃত হয়ে থাকলো। নীচে হুবহু লেখাটি দিলাম। (GCPI, 1939, পৃঃ ৮২)
(৩) মেডিক্যাল কলেজ তৈরির আগে যে স্পেশাল কমিটি তৈরি করা হয়েছিল বাংলার মেডিক্যাল শিক্ষার হালহকিকত বুঝতে (১৮৩৪ সালে কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে) তাদের একটি রেকমেন্ডেশনে বলা হয়েছিল – “Lectures should be delivered on the following subjects: Anatomy with dissection of the human body, 2. Chemistry, 3. Materia Medica, 4. Practice of Physic, 5. Surgery and Midwifery, 6. Chemical Lectures and Medico-Legal Medicine.” এর সাথে “a Hospital to be attached to the Institution”-এর প্রস্তাবও দেওয়া হয়। (GCPI, 1939, পৃঃ ৮৪) অবশ্য এস নিকলসন, জে গ্র্যান্ট, জে আর মার্টিন এবং ডানকান স্টুয়ার্টের পেশ করা রিপোর্টে “the annexation of a Clinical Hospital”-এর কথা বলা হয়েছিল পরিষ্কারভাবে। (GCPI, 1939, পৃঃ ৬০) ১৮৩৮-এর এপ্রিল মাসে ৩০ জন রোগীকে রাখা যায় এরকম একটি হাসপাতাল যুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। (Centenary of the Medical College, 1934, পৃঃ ১৮)
১৮৩৪ সালে এই রেকমেন্ডেশন করা হয়েছিল সত্যি কথা। এবং এসব কারণের জন্য তীব্র ভাষায় বলা হয় – “what the College was expected to do, that the means were not adapted to end.” (GCPI, 1939, পৃঃ ৮৫) কিন্তু আরেকটি ঐতিহাসিক সত্যি আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। ২৮ অক্টোবর, ১৮৩৬-এ ডিসেকশন হবার পরপরই ৯ মার্চ, ১৮৩৭-এ মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন সেক্রেটারি ডেভিড হেয়ার GCPI-এর তৎকলীন সেক্রেটারি জে সি সি সাদারল্যান্ডকে একটি সুদীর্ঘ চিঠি লেখেন। (GCPI, ১৮৩৬, অ্যাপেন্ডিক্স ৮, পৃঃ ১৬৩-১৬৬)
হেয়ার এই চিঠিতে বলেন – “The time has arrived when it becomes necessary that the students of the Medical College should enter upon a more practical course of education … than has hitherto engaged their attention.” এজন্য তিনি কমিটিকে জানান “a regulated supply of patients should be submitted to their charge “। আমি এর আগে ডিসেকশনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছিলাম “the dead teach the living”। ডিসেকশন পর্বটি যেহেতু সম্পন্ন হয়েছে এজন্য সঙ্গতভাবেই জীবিত রোগীদের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ক্লিনিক্যাল জ্ঞান আয়ত্ত করা প্রাথমিক গুরুত্বসম্পন্ন হয়ে উঠলো। হেয়ার বলছেন – কলকাতার সাহেবদের জন্য নির্দিষ্ট General Hospital-এ ছাত্ররা কেবল ইউরোপীয় রোগী দেখতে পাবে এবং সেখানে সার্জারি হয়না। নেটিভ হাসপাতালে সার্জিকাল কেস ভর্তি হয় এবং রোগীরা এদেশীয়। উপরন্তু, হেয়ারের বক্তব্য, “many of the diseases are so rapid as to require constant watching by those who wish to study them with profit, or who desire to benefit the patients under charge.” (পৃঃ ১৬৪-১৬৫)
এজন্য তাঁর বক্তব্য হল যে একটি নতুন হাসপাতাল তৈরি করতে হবে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে কিংবা একেবারে এর সন্নিহিত কোন স্থানে “wherein the patients shall be made available for clinical instructions to the students of that institution, and supplying the chief desideratum for completing the College as a School of medicine.” (পৃঃ ১৬৫) অর্থাৎ যে সমালোচনা ১৮৩৯ সালে করা হচ্ছে তার উপযুক্ত প্রস্তুতির কথা ১৮৩৭-এর গোড়ায় ডেভিড হেয়ার GCPI-এর কাছে রাখছেন। তিনি জানাচ্ছেন, ইউরোপীয় রোগীদের রোগের বৈচিত্র্য কম। এদেশের ট্রপিক্যাল পরিবেশে রোগের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। এবং পাস করে বেরিয়ে ছাত্রদের প্রধানত এদেশের রোগীদের দেখতে হবে। এজন্য বেশি বেশি করে এদেশের রোগ এবং রোগী সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা বিশেষ জরুরি। সম্ভবত এসব কথা এবং পরামর্শ আদৌ কানে তোলা হয়নি।
এমনকি একথাও তাঁর পরামর্শে ছিল যে ইউরোপের মতো এখানেও যেসব রোগীরা “as were unwilling to enter the hospital and were too sick to appear at the dispensary” তাদেরকে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা বাড়িতে দেখে আসতে পারে। (পৃঃ ১৬৬)
(৪) এ পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে ১৮৩৮ সালের অক্টোবর-নভেম্ব মাসে ১০ দিন ধরে কঠোর এবং জ্ঞান নিংড়ে নেওয়া পরীক্ষা (ইউরোপের স্কুলগুলোর মতো বা আরও শক্ত) প্রকৃতপক্ষে যোগ্যতাসম্পন্ন prospective মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে বলে মনে হয়। সিলেবাসের ঘাটতি খানিকটা পূরণ করা হয়েছে পরীক্ষা দিয়ে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়ান্স-এর নভেম্বর সংখ্যায় (১৮৩৮) মন্তব্য করা হয়েছিল – “such an examination is highly creditable to the pupils and especially to their teacher.”
(৫) রিপোর্টে মন্তব্য করা হয় লর্ড অকল্যান্ডের অভিভাবকত্বে “the Institution was constituted a College”। (পৃঃ ৮৬) ডেভিড হেয়ার এ কথা দুবছর আগে বলেছিলেন।
১৮৩৯-এ পুরষ্কার দেবার অনুষ্ঠানের শেষে সার্জন জুন গ্র্যান্ট বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বক্তব্যের শেষ অনুচ্ছেদটি ছিল –
(৬) GCPI-এর এই রিপোর্টে ও’শনেসির চিঠির উল্লেখ করে “Native Subordinate Medical Class” খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। (পৃঃ ৮৮) উল্লসিতভাবে জানানো হয়, মেডিক্যাল কলেজ দেখিয়েছে “to what extent the education of a young Hindu can be carried”। (পৃঃ ৯০)
(৭) এই রিপোর্টেই প্রথমবারের জন্য ৬ থেকে ৮ জন “এলিট” ছাত্রকে মেডিক্যাল শিক্ষা সম্পূর্ণ করার জন্য ইউরোপে উচ্চতর শিক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর জন্য কত খরচ হবে তার একটি নির্দিষ্ট হিসেবও করা হয়। (পৃঃ ৯১-৯৩) আমার বিচারে এর ফলে সবচেয়ে বড়ো যে লাভ হবে বলে কমিটি মনে করেছিল তাহল “the young men would learn to think in English”। (পৃঃ ৯৩) ভারতীয় তথা বাংলার ছাত্ররা যদি ইংরেজিতে চিন্তা করতে শেখে তাহলে ইংরেজ শাসনের স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য এর অধিক কোন সুসংবাদ হতে পারেনা।
(৮) রিপোর্টে মনে হয় শ্লাঘার সাথে বলা হয়েছিল – “The result has proved beyond cavil that the Hindus by proper management may be reconciled to a course of tuition, utterly at variance with his preconceived notions, his prejudices, and his superstitions. It has proved that in capacity of acquirement the Hindus in no way inferior to the Europeans.” (পৃঃ ৯৫) এখানে আমাদের রামমোহনের প্রেরিত হিন্দু খুলির বিচারের কথা মনে পড়বে নিশ্চয়ই (পূর্বে আলোচিত)। একই সাথে আলোচিত হল “educated and uneducated must always differ in the ratio of enlightenment, and the claims which knowledge has to a higher rate of wages.” (পৃঃ ৯৫)
ভারতের ইতিহাসে শুরু হল উপার্জনের জন্য পড়াশুনো – education to earn। এখানে প্রায় ১০০ বছর আগের একটি লেখার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯২৫ সালে দ্য ফিল দে কাপ্পান জার্নালে জর্জ অ্যালেন অজারস (Odgers) লিখেছিলেন – “The Indian medical graduate fails to find in the villages an opening similar to that existing in the American rural and village sections … One is safe in saying that in India there is almost a complete absence of honorary services and personal interest in educational activities by the wealthier and educated classes, who in America have done so much to foster public education.” (পৃঃ ৩-৪) এ সমস্যার সমাধান হল মেডিক্যাল কলেজের গ্রাজুয়েটদের প্রত্যেকের চাকরির সংস্থান হবার প্রস্তাবের ফলে – হয় হয় সরকারি, কিংবা রেলওয়ে বা চা বাগানের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা খোদ মেডিক্যাল কলেজে কিংবা কোন স্কুলে অথবা প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে।
(৯) অবশ্য শেষ অবধি ছাত্রদের ইউরোপে পাঠানোর পরিকল্পবনা পরিত্যক্ত হয় – “it has been objected to the proposal of sending home half a dozen or more youths of the Medical College to study in England, that no good can accrue from sending.” (পৃঃ ৯৮)
(১০) কিন্তু আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখা হয় এই রিপোর্টে –
প্রথম, “it was disposed as an experiment to annex a secondary school in the Medical College in which Medical Science, and practice to the extent prescribed by the course proposed by the College Council, might be taught in the Hindustanee dialect.” (পৃঃ ৮৯) অস্যার্থ, যে নেটিভ মেডিক্যাল স্কুলকে অবলুপ্ত করে দেওয়া হল ১৮৩৫-এ সে স্কুলকে ভিন্ন চেহারায় মেডিক্যাল কলেজের গর্ভে গুঁজে দেওয়া হল ১৮৩৯-এ। নিয়তির পরিহাস! কারণ সেসময় দিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ লেগেই রয়েছে। মোটের উপরে প্রশিক্ষিত অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সামরিক বাহিনীতে।
দ্বিতীয়, ভারতে দেশীয়দের জন্য নির্মিত কোন সিভিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের জন্য আবাসিক শিক্ষার প্রস্তাব (আজ যেটা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনো) দেওয়া হল এবং পরে বাস্তবায়িত করা হল। এ বিষয়টি ভারতের শিক্ষার যাত্রার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। রিপোর্টে বলা হল, আলোচ্য কমিটি – “intimated that it was disposed to erect accommodation for the lodging of extra pupils who might be candidates for instruction.” (পৃঃ ৮৯) ২৮ নম্বর প্রস্তাবে এই রেসিডেনশিয়াল শিক্ষা নিয়ে বলা হল – “It is free lodgings, and trusts that this indulgence and facility, of acquiring the qualifications for a profession will induce a sufficient number of candidates to offer.” (পৃঃ ৮৯)
উল্লেখযোগ্য, এসময়য়ে মেডিক্যাল কলেজে হিন্দু মুসলিম ছাড়াও কলকাতার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এবং আর্মেনিয়ান ছাত্ররা ভর্তি হত। এমনকি এখনকার শ্রীলঙ্কা থেকেও ছাত্ররা পড়তে আসতো। “Six pupils have arrived at the Medical College from Ceylon … they are lodged and boarded at College, at the expense of the Government … Another division will follow in May next.” (The Asiatic Journal, vol. XXVIII – New Series, January-April, 1839, পৃঃ ২৬৫)
(১১) মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষাদানের যেসব পরীক্ষা করা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে বলা হল – “The experiment under consideration, it is believed, is similar to that successfully tried in Egypt by Clot Bay.” (পৃঃ ৯৩) এখানে উল্লেখ্য, আমি ক্লট বে-র পরীক্ষার ব্যাপারে একেবারে গোড়ার দিকে আলোচনা করেছিলাম। নেপোলিয়ানের যুদ্ধের পরে মিশর যখন ফরাসীদের দখলে আসে তখন ওখানে আধুনিক ইউরোপীয় পদ্ধতিতে মেডিসিন শিক্ষার প্রচলন করা হয়। এমনকি ডিসেকশনও শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে পথিকৃৎ ছিলেন একজন ফরাসী সার্জন Antoine Clot। তিনি ফ্রান্সের ঐতিহাসিক শিক্ষকদের কাছে মেডিক্যাল শিক্ষালাভ করেছিলেন। মিশরে ডিসেকশন সহ আধুনিক মেডিক্যাল শিক্ষার পাঠ্যক্রম তিনিই প্রথম তৈরি করেন ১৮৩১-৩২ সালে। (বিস্তৃত আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য – Gerard N. Burrow, “Clot-Bey: Founder of Western Medical Practice in Egypt,” Yale Journal of Biology and Medicine 48 (1975): 251-275; H. Ruf, “Antoine Barthélémy Clot–Bey, a physician from Marseille founder of Western medicine in Egypt,” History of Science and Medicine 45.1 (2011): 71-80.)
(১২) কমিটির তরফে এটাও পরামর্শ হিসেবে রাখা হয় যে “in future each student should attend at least three courses of the practice of surgery, three courses of the practice of physic and material medica, and two courses of operative surgery.” (The Calcutta Monthly Journal, vol. 6, no. 9, September 1873, p. 340)
দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করি।
প্রথমটি হল কলকাতার পার্সি ধনকুবের হোমাসজি ভিকাজির (যিনি মেডিক্যাল কলেজের জন্যও অর্থসাহায্য করেছেন) সার্জারি। “Hormasjee Bhicajee, a respectable native merchant and ship-builder, was induced to lay aside prejudice, and submit to the operation of lithotomy performed by Dr. Fogerty … The result of this and other operations has led us to the conclusion, that the natives of the country are daily becoming more and more alive to the benefit derived from the employment of European skill in the treatment of disease.” (“Excerpta,” Asiatic Journal and Monthly Register XXVII (107) – New Series (November 1838), পৃঃ ১৬২)
দ্বিতীয়টি হল “Medical Student’s Skill” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল ক্যালকাটা মন্থলি জার্নাল-এ (Calcutta Monthly Journal, Third Series, 1839, পৃঃ ১৭১)। এই খবরটির বিস্তৃত রিপোর্ট বেরোয় এশিয়াটিক জার্নাল-এ (ভল্যুম ২৯ – নিউ সিরিজ, মে-আগস্ট, ১৮৩৯)। এ খবরে বলা হয় – “বছর কুড়ির রাধানাথ দাস নামের একটি দেশীয় যুবক বাড়ির উঁচু বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়-মৃত অবস্থায় চলে যায়। কবিরাজদের ডাকা হয়। তারা বলে এই ছেলেটিকে বাঁচানো মানুষের ক্ষমতার বাইরে। অন্তর্জলী যাত্রার জন্য একে নদীর ধারে নিয়ে যেতে হবে। চারপায়া প্রস্তুতও করা হয়। এসময়ে মেডিক্যাল কলেজেরর ছাত্র রামনারায়ণ দাস উপস্থিত হয়। রোগীকে পরীক্ষা করে তার ডায়াগনোসিস হল রোগীর concussion of brain হয়েছে। The patient was bled by him, and in a few hours, so far recovered, that he could speak; and has since, gradually got quite well.” (আগস্ট, ১৮৩৯, পৃঃ ২৪৯) পূর্বোধৃত ক্যালকাটা মেডিক্যাল জার্নাল-এ মন্তব্য করা হয়েছিল “first triumph of the Medical College and must be gratifying to the Professors”। (পৃঃ ১৭১)
সহজেই অনুমেয়, এ দুটি ঘটনা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়বে এবং বেশি বেশি মানুষ আধুনিক চিকিৎসা এবং মেডিক্যাল কলেজের প্রতি আকৃষ্ট হবে। রামনারায়ণ দাসের ঘটনা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যে British and Foreign Medical Review-তেও (January, 1845, পৃঃ ৭৬) এ ঘটনার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐতিহাসিক সি এ বেইলির একটি মন্তব্য ভিন্নভাবে আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক। বেইলি বলছেন – “Physicians were, in addition, important information gatherers for the state.” (C. A. Bayly, Empire & Information: Intelligence gathering and social communication in India, 1780-1870, 2007, p. 265) অন্যত্র বলছেন – “The conquerors needed to reach into and manipulate indigenous systems of communication in new colonies.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬)
চিকিৎসকেরা কিভাবে রাষ্ট্রের তরফে “important information gatherers” হয়ে উঠলো এবার এর বাস্তবতা দেখবো ডিসপেনসারির প্রসারের মধ্য দিয়ে।
GCPI-এর ১৮৩৯-৪০ সালের রিপোর্ট
৫ম বছরের রিপোর্টে বলা হল অক্টোবর মাসে ৫০ জন ছাত্রকে সিলেক্ট করা হয়েছিল। এছাড়াও ২০ জন লিস্টে আছে। (GCPI, 1839-’40, পৃঃ ৩৪) একটি বড়ো ফিমেল হসপিটাল যা প্রসূতি বিভাগ হিসেবে কাজ করবে সেটা তৈরি করা হয়েছে। এতে ১০০ জন রোগীকে রাখা যাবে। এছাড়া ১৮৩৯ সালের এপ্রিল মাসে যে Male Hospital খোলা হয়েছিল সেখানে ইউরোপীয়ান এবং দেশীয় সবধরনের রোগীই ভর্তি থাকে। এখানে ৭০ জন মেডিক্যাল এবং সার্জিক্যাল রোগী ভর্তি থাকে। শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণ এবং নীচু জাতের যেকোন মানুষ পরপর বেডে শায়িত থাকত। এতে কোন ভেদাভেদ ছিলনা। এবং ব্রাহ্মণরাও এ ব্যবস্থা সানন্দে মেনে নিয়েছিল। (পৃঃ ৩৫) কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকার জন্য এদের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।
একটি ডিসপেনসারিও হাসপাতালের সাথে যুক্ত ছিল। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকত। কলেজের স্নাতক নবীনচন্দ্র মিত্র ডিসপেনসারির দায়িত্বে ছিল। ডঃ গুডিভও দেখাশোনা করতেন। (পৃঃ ৩৬)
কলেজের “ফাউন্ডেশন স্টুডেন্ট” ছিল ৪৮ জন, “ফ্রি স্টুডেন্ট” ৩৮ জন। শেষোক্ত ছাত্ররা সমস্ত ধর্মীয় পরিচয়য়েরই ছিল। বলা হচ্ছে – সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় এবং আর্মেনিয়ান পরিবারের ছাত্ররা কলেজে অ্যাডমিশন নিয়েছে। (পৃঃ ৩৬) এখানে লক্ষ্যণীয় ৫ম বর্ষে এসে “ফাউন্ডেশন স্টুডেন্ট” এবং “ফ্রি স্টুডেন্ট” এই দুধরনের ক্যাটিগরি দেখা যাচ্ছে।
তৎকালীন সিংহল থেকে ১০ জন খ্রিস্টান ছাত্রকে পাঠানো হয়েছে – “At present they are not well accommodated, but it is hoped that some arrangement will be made ere long to provide them with better quarters. (This has since been done)” (পৃঃ ৩৭) ৪ জন ছাত্র কলেজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং নতুন ১০ জন ছাত্র প্রবেশ করেছিল। গত রিপোর্টের পরে ৭ জন ছাত্র ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করেছে। এদেরকে দিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদ, কানপুর, বেরিলি, বেনারস, মুর্শিদাবাদ, আসাম এবং মিরাটের ডিসপেনসারিতে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন হিসেবে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। (পৃঃ ৩৭) এই রিপোর্টে কলেজের “most distinguished Student of the Institution” রাজকৃষ্ণ দের অকাল মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করা হয়। (পৃঃ ৩৮)
এবার আসি ডিসপেনসারির বিবরণে। অ্যাপেনডিক্সের পৃষ্ঠা clxxiii (173) থেকে clxxx (180) অব্দি বিস্তৃত এই রিপোর্ট। বলা হয়েছে – “Some operations, both capital and minor, have been performed, but neither do the Surgical nor the Medical cases seem to possess any remarkable degree of interest.” (পৃঃ clxxiv) আগ্রা ডিসপেনসারির রিপোর্ট তুলে ধরে রাম ঈশ্বর অবস্থির কৃতিত্ব স্বীকার করা হয়। (প্রাগুক্ত)
মোট ১১টি ডিসপেনসারির কথা ১৮৩৯-৪০-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে। ১৮৩৮ থেকেই বিভিন্ন বড়ো শহরে ডিসপেনসারি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিকে মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক যে চিকিৎসকেরা বেরোচ্ছে তাদের ওপরে এই ডিসপেনসারিগুলোর দায়িত্ব দেওয়া শুরু হল। এখানে ১৮৪৬ সালে লেখা W H Sykes-এর মূল্যায়নের গুরুত্ব আছে – “India sanctioned the establishment of Dispensaries in some of the large towns in the Bengal Presidency. They were to be under the Civil Assistant Surgeon of the station, who was to be allowed fifty rupees per mensem, including his vaccination duties. An educated young man from the Medical College at Calcutta, on a salary varying from 40 to 100 rupees, but latterly fixed at 100 rupees, was to be placed in charge of the Dispensary.” (Sykes, “Statistics of the Government Charitable Dispensaries of India, Chiefly in the Bengal and North-Western Provinces”, Journal of the Statistical Society of London, March 1847, Vol. 10, No. 1, pp. 1-37)
ঢাকার ডিসপেনসারিতে নবীনচন্দ্র পাল, চট্টগ্রামে রাজকৃষ্ণ চ্যাটার্জি, পুরীতে একজন নেটিভ ডাক্তার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ চালিয়েছে।
চট্টগ্রাম ডিসপেনসারি – সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন রাজকৃষ্ণ চ্যাটার্জি।
পুরী ডিসপেনসারি – সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন নীলমনী দত্ত। মোট ৪১৮টি কেসকে ভর্তি করা হয়েছিল প্রধানত জ্বর এবং পেটের গণ্ডগোলের জন্য। (পৃঃ clxxv)
ভারতে চিকিৎসার ইতিহাসে হাসপাতাল বা ডিসপেনসারিতে এসে রোগীর আত্মপরিচয়হীন কেস নম্বরে পর্যবসিত হয়ে যাওয়া শুরু হল। যদিও ইউরোপে এই রূপান্তর শুরু হয়েছিল আরও আগে। একজন মান্য গবেষকের পর্যবেক্ষণ দেখা যাক – “The consultative relationship took the form of a processing exercise in which the ambiguity and individuality of each case was systematically eliminated by the application of foreknown diagnostic procedures, the function of which was to allocate the patient to a category within the nosological system. It was as a member of that category, i.e., as a suitable case for treatment, that he conducted the remainder of his relationship with his practitioner.” (N D Jewsosn, “The disappearance of the sick-man from medical cosmology, 1770–1870”, International Journal of Epidemiology 2009; 38: 622–633)
মুর্শিদাবাদের ডিসপেনসারিতে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হলেন মেডিক্যাল কলেজের গ্র্যাজুয়েট পঞ্চানন শ্রীমনী। এখানে আরেকবার উল্লেখ করা দরকার, মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বেরলেই সে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট পদমর্যাদার হত। ফলে পরবর্তী সময়ে বারংবার এটা বলার কোন প্রয়োজন নেই। এখানে ১৩৯১ জন রোগীকে দেখা হয়েছিল – প্রধানত জ্বর, রিউম্যাটিজম এবং পেটের গণ্ডগোলের রোগী। গড়ে প্রতিদিন দেখাতে আসা রোগীর সংখ্যা ১৩৩। উল্লেখ করা হল – “some Country Medicines, such as Kala Dana and Kut Kelija, have been introduced into use.” (পৃঃ clxxvi) ইউরোপীয় মেডিসিনের সাথে দেশীয় মেডিসিনের বহুল প্রয়োগ হতে শুরু করল গ্র্যাজুয়েট ডাক্তারদের হাত ধরে ডিসপেনসারির মধ্য দিয়ে।
পাটনার ডিসপেনসারির দায়িত্বে ছিলেন রাম ঈশ্বর অবস্থি। ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ – ৪৪ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিল, ৭ জন পলায়ন করেছিল, ৫ জন মারা গিয়েছিল। বহির্বিভাগের মোট রোগীর সংখ্যা ৫৪৯২ জন, যার মধ্যে ৩৩২০ জন সুস্থ হয়েছিল এবং ১৮০৩ জন পরে আর দেখাতে আসেনি। রাম ঈশ্বর অবস্থির কাজ এত ভালো মানের ছিল যে কমিটির তরফে রেকমেন্ড করা হয় – “we again beg to report our recommendation for the higher grade of Sub-Assistant Surgeon, as suggested in our despatch No. 823, dated 26th March last.” (পৃঃ clxxvi)
বেনারস সিটি হাসপাতাল এবং সেক্রোল ডিসপেনসারি – দায়িত্বে গ্র্যাজুয়েট ঈশানচন্দ্র গাঙ্গুলী। ইনি অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল – “he expects peculiar advantage from his services in introducing indigenous remedies, and in the preparation of Chemical articles.”
সেক্রোল ডিসপেনসারিতে দুজন শিক্ষানবিশকেও নিযুক্ত করা হয়েছিল – ঝামার এবং ভান্ডি দাস। (পৃঃ clxxvii)
এলাহাবাদ ডিসপেনসারির মূল দায়িত্বে ছিলেন পঞ্চম যে যুবককে ১৮৩৮-এর পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছিল সেই শ্যামাচরণ দত্ত। এখানে বহির্বিভাগে মোট রোগীর হিসেব পাওয়া যাচ্ছে ২৭৬২ জনের – ১৬২২ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখানে লক্ষ্যণীয়ভাবে কিছু অপারেশন করা হয়। নীচে তালিকা দিলাম।
১৮৪০-এর বিচারে মেডিক্যাল কলেজে নয়, একটি ডিসপেনসারিতে এত রকমের এবং এসব অপারেশনের তালিকা রীতিমতো সম্ভ্রম এবং ঈর্ষা করার মতো।
বেরিলি ডিসপেনসারির মূল দায়িত্বে ছিলেন যাদবচন্দ্র শেঠ। তিনি যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন প্র্যাক্টিস করেছেন। যাহোক, বহির্বিভাগে মোট রোগীর সংখ্যা ৩০৬২ – এর মধ্যে ১৯৬৫ জন সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে, ৭৪৫ জন পালিয়ে গেছে, এবং ২০ জন মারা গেছে। (পৃঃ clxxviii)
কানপুর ডিসপেনসারির মূল দায়িত্বে ছিলেন রামনারায়ণ দাস। এঁর ব্যাপারে আগে আলোচনা করেছি “concussion of brain”-এর রোগীকে সারিয়ে তোলার ঘটনায়। প্রসঙ্গত, রামানারায়ণ দাস মূত্রথলির পাথর বের করা বা লিথোটমি অপারেশনের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। এমনকি একটি ৭ বছরের শিশুর অপারেশন করে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলেন। তাঁর নিজের বয়ানে – “all the lithotomy operations that have been performed in this dispensary were successful, and all the cases got well without any dangerous symptoms, as peritonitis and others, and we are proud to say that we have not lost a single patient in this operation.” কানপুরের পরে জবলপুরে গিয়েও তিনি সফলভাবে এই অপারেশন করেন। (Half-yearly Reports of the Government Charitable Dispensaries established in the Bengal and, North-western Provinces, from lst August 1840, to 31st January 1842) স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের নতুন ডাক্তারদের ওপরে ভরসা ও বিশ্বাস উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। ইউরোপীয় আধুনিক মেডিসিন বেশি বেশি করে বিপুল জনসমাজে পৌঁছতে শুরু করলো। একইসাথে পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্যের বীজও রোপিত হচ্ছিল।
দিল্লী ডিসপেনসারির সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন ছিলেন আর হেমিং। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ১৯৩৯ – যার মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে ১৪৯৫ জন, ৩৮৪ জনের ক্ষেত্রে ফলাফল অজানা।
আগ্রা ডিসপেনসারির দায়িত্বে ছিলেন উমাচরণ শেঠ – মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্র। ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ – ৪ জন সুস্থ, ৪ জন পালিয়েছে এবং ১ জন মারা গেছিল। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৩৪৯০। এদের মধ্যে হয় প্রবর্তীতে আর আসেনি কিংবা ফলাফল অনিশ্চিত এরকম রোগীর সংখ্যা ৩১৮৬। গড়ে প্রতিদিন ৩০৭ জন রোগী দেখাতে আসত। উমাচরণ ২০টি চোখের ছানির অপারেশন করেছিলেন। এছাড়াও ছোটখাটো অপারেশনের সংখ্যা এই হিসেবের বাইরে। ৫টি amputation করেছিলেন। এছাড়াও “has also been zealously and successfully engaged in introducing Country Medicines.” (পৃঃ clxxvix)
সাইকসের পূর্বোক্ত প্রবন্ধের হিসেব অনুযায়ী ১৮৪৬ সালের প্রথমভাগ পর্যন্ত ডিসপেনসারি-গুলোতে মোট ২৬৭,৪৫৬টি ‘কেস’ দেখা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪,৬১৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩-৪)
অধুনা ক্ল্যাসিক ডেভিড আর্নল্ডের কলোনাইজিং দ্য বডি-তে আর্নল্ড দেখিয়েছেন “enclave medicine” (আর্মি ব্যারাক, জেল ইত্যাদি) থেকে পাবলিক হেলথের সূচনা হয় ভারতবর্ষে – “Even if the reach and efficacy of Western medicine was strictly limited in the period up to the 1860s and, as Radhika Ramasubban contends, barely extended beyond a small European enclave, it was nonetheless important in laying the foundation for later developments and in establishing the claims of Western medicine, and of Western authority more generally, over India and its colonial subjects.” (পৃঃ ১৮) এখানে আমার আপত্তি থাকছে।
এতক্ষণের আলোচনায় দেখলাম ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনসমাজে পশ্চিমী মেডিসিন ভারতীয় জনতার মাঝে মান্যতা এবং গ্রাহ্যতা লাভ করে। এর ভরকেন্দ্রে ছিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বেরনো প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের। ফলশ্রুতিতে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিসপেনসারি থেকে পাবলিক হেলথ – এরকম একটি যাত্রাপথ আমাদের সামনে ঐতিহাসিকভাবে উন্মোচিত হল।
আধুনিক রাষ্ট্রের চৌহদ্দির বাইরে বিপুল জনতা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের মেডিক্যাল নজরদারির আওতায় চলে এল। শুধু তাই নয়, এরা ক্রমাগত আধুনিক হাইজিন, স্যানিটেশন এবং হেলথ প্রোগ্রামগুলোর technique আয়ত্ত ও আত্মীভুত করে নিল। নতুন অর্থ নিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের চেতনায় স্থান পেল।
যাঁরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে দ্বারকানাথ গুপ্ত কখনো সরকারি চাকরি করেননি। সাফল্যের সাথে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেছেন এবং নিজস্ব ওষুধের দোকান চালিয়েছেন। রামকুমার দত্ত এবং গোবিন্দচন্দ্র গুপ্তও দ্বারকানাথের পথে হেঁটেছেন। এতে মানুষ তুলনায় অনেক কমদামে ওষুধ পেয়েছে। নবীনচন্দ্র মুখার্জি আসামের চা বাগানে মাসে ১৫০ টাকা মাইনেতে চাকরি করেছেন। শিবচন্দ্র কর্মকার এবং নবকৃষ্ণ গুপ্ত সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষকতা করেছিলেন। নবীনচন্দ্র মিত্র কলেজের আউটডোর ডিসপেনসারির দায়িত্বে ছিলেন। (GCPI, 1839-40, পৃঃ clxxx)
জ্ঞানগর্ভ সুখপাঠ্য
Darun lekha.
Anek kichhu janlam.
Khub valo laglo .
পরিশ্রমী, তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।
এই সিরিজ লেখাটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি মাইলফলক হতে চলেছে৷। অসাধারণ।
Dear Jayanta — reading through your present paper on formative days of Calcutta Medical College ( 1839 – 1841) — certain hazy pictures ( long entrenched in my mind ) are getting cleared with sharper focus. On “Dispensary Movements ” in India by British Colonialists — in an effort to “Colonizing the Body” to borrow David Arnold’s famous view point — your detailed analysis of the gradually unfolding of events is a bewildering composition. This historical narrative is quite different from Prof. S. Pandya ( an alumni of Grant Medical College ;Bombay) and some other’s referral on this less discussed topic -dispensary movement– amongst concerned South Asian scholarships. This subtle movement in many different but allied forms were on practice in southern India by early Jesuits to later western colonial administrators. Hence its reactions amongst the local public in Peninsular India was different. I was never aware of an attempt to establish a proselytizing institute in the vast open space — opposite ” Hindu College”. Obviously this was the place where CMCH, Calcutta University, Presidency College etc. stand today. To the best of my knowledge this vast sprawling land ( from Bowbazar Street to Harrison Road – nee Mahatma Gandhi Rd.) — belonged in the main to — Motilal Seal, Ram Comal Sen , David Hare and Sham Laha etc. Unquestionably your mentions on William Brooke O’Shaughnessy’s stellar contributions to India in the formative days of establishment of Western Scientific Medicine in India — is a sort of revelation. All these days we were knowing only “Prof. Goodeve “of those days ( He was an equally great Englishman whose service to this country is ‘non nonpareil’). True to your wont your essays are suffused with dialectical materialism style of description. Looking forward to your future posts…. regards — n.da
‘
.
খুব সুন্দর সহজ ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।