পুনর্গঠিত মেডিক্যাল কলেজ – ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ – অংশ ৫
আমরা আগের অংশে দেখেছিলাম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশে পাবলিক হেলথের সূচনা হয়েছিল। এবং মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তাররা এই ডিসপেনসারিগুলোর দায়িত্বে ছিল। একথাও বলেছিলাম যে অধুনা ক্ল্যাসিক ডেভিড আর্নল্ডের কলোনাইজিং দ্য বডি-তে আর্নল্ড কার্যত বলেছেন “enclave medicine” (আর্মি ব্যারাক, জেল ইত্যাদি) থেকে পাবলিক হেলথের সূচনা হয় ভারতবর্ষে। যদিও তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন – “Where, then, does this history of expanding medical responsibility and authority within the army leave relations between the military and civilian society in India?” (পৃঃ ৯৬)
“এনক্লেভ মেডিসিন” থেকে পাবলিক হেলথ – আর্নল্ডের এই ধারণাটির ক্ষেত্রে আমি আপত্তি করেছিলাম। কারণ ভারতে ১৮৩৮ পরবর্তী সময়ে ডিসপেনসারির প্রসার আমাদের সামনে ভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্র হাজির করে। ১৮৩৯-৪০ সালের মেডিক্যাল কলেজের বার্ষিক রিপোর্ট থেকে জেনেছিলাম যে মোট ১১টি ডিসপেনসারিতে মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। সবক্ষেত্রেই প্রায় পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এঁরা কাজ করতেন। “It is recorded that many dispensaries were at this time opened in various parts of the Province, supported partly by the Government and partly by private subscription. These were placed under the charge of Sub-Assistant Surgeons passed from the newly formed Medical College, and under the immediate superintendence of Civil Surgeons.” (Centenary, পৃঃ ২৪)
১৮৪৬ সালের প্রথমভাগ পর্যন্ত ডিসপেনসারিগুলোতে মোট ২৬৭,৪৫৬টি ‘কেস’ দেখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৯৪,৬১৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এই বিপুল জনসমষ্টির মাঝে পশ্চিমী চিকিৎসার সুফল পৌঁছেছিল। প্রায় চক্রবৃদ্ধি হারে নতুন চিকিৎসার সুফল বিশাল জনসমষ্টির ক্ষেত্রে পৌঁছেছিল। আবার এর পাশাপাশি ভারতীয় চিকিৎসাবিধি – আয়ুর্বেদ বা ইউনানি বা দক্ষিণ ভারতে সিদ্ধা – মানুষের মাঝে যথেষ্ট গ্রহণীয় ছিল। আমরা পরবর্তী সময়ে এর আলোচনা করব।
ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনসমাজে পশ্চিমী মেডিসিন ভারতীয় জনতার মাঝে মান্যতা এবং গ্রাহ্যতা লাভ করে। এর ভরকেন্দ্রে ছিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বেরনো প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের। ফলশ্রুতিতে মেডিক্যাল কলেজ থেকে (>) ডিসপেনসারি থেকে (>) পাবলিক হেলথ – এরকম একটি যাত্রাপথ আমাদের সামনে ঐতিহাসিকভাবে উন্মোচিত হল।
আধুনিক রাষ্ট্রের চৌহদ্দির বাইরে বিপুল জনতা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের মেডিক্যাল নজরদারির আওতায় চলে এল। শুধু তাই নয়, এরা ক্রমাগত আধুনিক হাইজিন, স্যানিটেশন এবং হেলথ প্রোগ্রামগুলোর technique আয়ত্ত ও আত্মীভুত করে নিল। নতুন অর্থ নিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের চেতনায় স্থান পেল। মেডিক্যাল কলেজ তাঁর ছাত্রদের ক্ষেত্রে শুধু ক্লক-টাইম, psychic বা অন্যান্য acculturations ঘটিয়ে আধুনিকতার জন্ম দেয়নি, ভারতের বিপুল জনসমষ্টিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিসপেনসারিতে হাজিরা দেওয়া, সময়ের রুটিন মেনে ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আধুনিকতার ডিসিপ্লিনের বোধে ধীরে ধীরে সিঞ্চিত করল। প্রজার সত্তা থেকে নাগরিক সত্তায় রূপান্তরও শুরু হল।
আধুনিক ইউরোপীয় মেডিক্যাল শিক্ষা ভারতে দেওয়া সম্ভব কিনা এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ কার্যত একটি পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ করেছিল। পরবর্তী সময়ে কলেজের বৃদ্ধি ও বিকাশ এ ধারণাকে পূর্ণত সঠিক বলে প্রমাণ করেছে।
এই কলেজ তৈরির পেছনে, আমার অনুমান, প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল মেডিক্যাল কলেজ তৈরির অব্যবহিত আগে মিশরে ক্লট বে-র (Antoine Barthelemy Clot) প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ। ক্লট বে-র তৈরি করা কলেজে শবব্যবচ্ছেদও করা হয়েছিল ১৮৩১-৩২ সালে। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া নতুন “হসপিটাল মেডিসিন”-এর শিক্ষায় শিক্ষিত ক্লট বে প্রকৃত অর্থে মিশরে আধুনিক মেডিসিনের জন্ম দেন। এমনকি মিশর থেকে ছাত্রদের ফ্রান্সে পাঠিয়েছিলেন উচ্চতর ও উন্নততর শিক্ষা গ্রহণের জন্য।
১৮৩৯ সালে মেডিক্যাল কলেজের প্রথম পরীক্ষার (১৮৩৮ সালের নভেম্বর মাসে হয়েছিল) পরে যখন কলেজের পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং ৬ থেকে ৮ জন ছাত্রকে ইংল্যান্ডে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তখনও বলা হচ্ছে “The experiment under consideration, it is believed, is similar to that successfully tried in Egypt by Clot Bey.” (GCPI, 1839, পৃঃ ৯৩) এশিয়া মহাদেশে মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা প্রথমবারের জন্য সমধর্মী পরীক্ষার দরজা খুলে দিল।
প্যারিসের হাসপাতালগুলোতে ১৮শ শতাব্দীর শেষ এবং উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ জুড়ে মেডিসিনের যে নতুন অধ্যায় “হসপিটাল মেডিসিন”-এর সূচনা হয়েছিল তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল – কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা ফিজিসিয়ানের শ্রেষ্ঠত্ব লোপ পাওয়া এবং ফিজিসিয়ান এবং সার্জনের ব্যবধান মুছে গিয়ে এক নতুন ধরণের চিকিৎসকের উন্মেষ হয়েছিল। ফ্রান্সের অকালপ্রয়াত চিকিৎসক ফ্রাসোঁয়া জেভিয়ার বিখাট ছিলেন এই নতুন ধরণের প্রতিনিধিত্বকারী চিকিৎসক। তিনি ছাত্রদের শেখাতেন – “Dissect in anatomy, experiment in physiology, and make necropsy in medicine; this is the threefold path without which there can be no anatomist, no pathologist, no physician.” কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে হুবহু এর প্রয়োগ হয়নি। বিখাটের শিক্ষা, প্যারিস মেডিসিনের প্রভাব, এডিনবার ও আয়ারল্যান্ডের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে অনুসৃত পদ্ধতি – এ সমস্তকিছুর রসায়নে জন্ম নেয় মেডিক্যাল কলেজ।
টমাস বনার মন্তব্য করছেন – “a new university medical school, modeled after those on the Continent, had been started in London; a dozen provincial medical schools had been launched across England.” (Thomas Neville Bonner, Becoming a Physician – Medical Education in Great Britain, France, Germany and the United States 1750-1845, 1996, পৃঃ ১৬৬) পরে বলছেন – “In 1831, the seven faculty members at the new school in Leeds taught all the courses … claiming that they were only following the example of “every great town on the Continent of Europe, and in the United States of America.” (পৃঃ ১৬৯)
জোন লেন (Joan Lane) জানাচ্ছেন – “The changes in hospitals in the nineteenth century were in important areas; medical teaching and the whole profession expended as never before, the acute sick came to outnumber the long-term chronic patients”। (A Social History of Medicine: Health, Healing and Disease in Rngland, 1750-1950, 2001, পৃঃ ৮৭) মেডিক্যাল কলেজের ডিসপেনসারিতে এবং অন্যান্য প্রদেশের ডিসপেনসারির অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি “the acute sick came to outnumber the long-term chronic patients”।
আমরা আগে দেখেছি, মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরিতে উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে “উপনিবেশিক বিজ্ঞান” “আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান”-এর স্তরে উন্নীত হচ্ছিল, এ কথা আমি বলেছিলাম। জ্ঞানের যাত্রাপথ প্রধানত কেন্দ্র (লন্ডন) থেকে প্রান্তাভিমুখী (ভারত) হলেও সবসময়ে এটা সরল একমুখী ছিলনা। ১৮৩৮ সাল নাগাদ এমা রবার্টস নাম্নী এক ইংরেজ মহিলা এদেশে ঘুরতে আসেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল – “no small number turn the experience which they have acquired in India, to good account at home.” অর্থাৎ উপনিবেশিক ভারতে আহরিত বিদ্যা/জ্ঞান এক বড় সংখ্যক ডাক্তার দেশে ফিরে তার প্রয়োগ করছেন। এক্ষেত্রে জ্ঞানের প্রবাহ উল্টো দিকে হচ্ছে। (Emma Roberts, “The Medical Service and Its Prospects”, Parbury’s Oriental Herald, vol. II – July to December, 1838, পৃঃ ২৫১-২৫২)
আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হল, পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত (যাঁকে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঐতিহাসিক এশিয়ার প্রথম শব্যবচ্ছেদকারী হিসেবে মনে করেন) তিনি কলকাতার টাউন হলে তিন দফায় (২৭ ফেব্রুয়ারী, ১৮৩৭ থেকে ২৬ এপ্রিল, ১৮৩৭) “Municipal Enquiry, 2nd Sub-Committee”-র সামনে তাঁর সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। প্রথম দিনের (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৭) তিনি স্বাক্ষ্যে তিনি বলেন – “I am now Pundit of the Medical College; my duty is to assist Drs. Goodeve and O’Shaughnessy in explaining to the Students the Anatomy which has formed which has formed the subject of the lecture, after the lecture is over. I explain the names of the diseases in Bengallee, and the qualities of Native Medicines, according to my experience.” (Appendix D. Evidence Taken by the Second Sub-Committee upon the Fever Hospital and Municipal Improvements, 1838, পৃঃ ৮৫-৮৬) মাত্র একবছর আগে প্রথম ডিসেকশন হয়েছে। অথচ তাঁর স্বাক্ষ্যে তিনি একবারও সে ঘটনার উল্লেখ করলেননা এটা বিস্ময়জনক। অথচ তিনি ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে সমস্ত রকমের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় দিনের স্বাক্ষ্যে (৪ মার্চ, ১৮৩৭) তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। সেসময় সামাজিক কুসংস্কারের মধ্যে প্রসূতিরা যেভাবে সন্তানের জন্ম দিত তাতে মা এবং শিশু উভয়েরই মৃত্যুহার খুব বেশি ছিল। এ প্রসঙ্গে কমিটির সামনে তাঁর অভিমত ছিল – “If an Hospital with a lying-in ward were established, with proper Hindoo Midwives and attendants, a great number of married women of inferior castes would be happy to avail themselves of it, and many lives would be saved by this means.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৮) এর সঙ্গে যোগ করলেন – “If we had a sufficient number of well qualified female Hindoo Midwives, whose charges were very moderate, I think they might accomplish a great deal by good advice.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৮)
মধুসূদনের এই বক্তব্য মেডিক্যাল কলেজে ১৮৪০ সালে lying-in হাসপাতাল এবং প্রসূতিবিভাগ তৈরির ক্ষেত্রে দেশীয় শিক্ষিতদের অভিমত বুঝতে রাষ্ট্রের পরিচালকদের সাহায্য করেছিল।
GRPI 1840-41 & 1842
ষষ্ট এবং সপ্তম বছরের রিপোর্ট ১৮৪২ সালে এক সঙ্গে পেশ করা হয়। ৩০ এপ্রিল, ১৮৪১-এ কলেজের পরিচালনার জন্য যে সাবকমিটি তৈরি হয়েছিল তার সেক্রেটারি ছিলেন টি এ ওয়াইজ এবং প্রেসিডেন্ট এডোয়ার্ড রায়ান।
৩০ এপ্রিল, ১৮৪২-এ কলেজের যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে এতে মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ছাত্রদের শিক্ষকতার পদে দেখা যাচ্ছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত, নবকৃষ্ণ মিত্র (আউটডোর ডিসপেনসারির অ্যাপোথেকারি), শিবচন্দ্র কর্মকার (সেকেন্ড টিচার), প্রসন্নকুমার মিত্র (রেসিডেন্ট সার্জন)। এর আগে মেডিক্যাল কলেজে কলেজের ছাত্রদের নিয়োগ করা হয়নি। (GRPI 1840-41 & 1842, পৃঃ ৭৬)
মোট ৪৬ জন ছাত্রের মধ্যে ব্রাহ্মণ – ১৪, কায়স্থ – ১৯, বৈদ্য – ৪, ড্রাগিস্ট (সঠিক বাংলা পাইনি) – ১, শেঠ সম্প্রদায়ের – ৩, তাঁতী – ২, রজক – ১, এবং সদগোপ – ২। গভর্নর জেনারেল অকল্যান্ড জানান কলেজের সাবকমিটিকে কলেজের দৈনন্দিন কাজকর্মের এবং লেখাপড়া কেমন চলছে এ ব্যাপারে আরও বেশি নজর রাখতে হবে। নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হবে এবং ছাত্রদের মূল্যায়ন করতে হবে। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৭)
১৮৪০-৪১-এর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৪০ তারিখে। তিনভাগে পরীক্ষা চালু হল – লিখিত, প্র্যাক্টিক্যাল এবং viva voce বা মৌখিক। প্রথম দিনের লিখিত পরীক্ষায় কেবলমাত্র সে সময়ের প্রাণঘাতী রোগ স্মল পক্সের ওপরে প্রশ্ন ছিল। পঞ্চম দিনের “থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস অফ সার্জারির”র পরীক্ষার পরে মন্তব্য করা হল – “a serious want in the past curriculum of the College, that they have no Clinical Lectures on Surgical and Medical Diseases, which the Large Hospital attached to the College afforded the means of having.” (পৃঃ ৮০) ১০ম দিনের শেষ পরীক্ষার শেষে যেসব ছাত্ররা প্রাইজ পাবার জন্য বিবেচিত হয়েছিল তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল – সাতকরি দত্ত, রাজেন্দ্র মিত্র, গোবিন্দচন্দ্র দাস, তারাচাঁদ পাইন এবং প্রসন্নকুমার মিত্র। “কলেজ ডিপ্লোমা”র জন্য উপযুক্ত ছাত্ররা ছিল – মধুসূদন গুপ্ত, যাদবচন্দ্র ধাড়া, চুমন লাল, রাজকৃষ্ণ চ্যাটার্জি, গোবিন্দচন্দ্র গুপ্ত, সি টি ইমলে এবং নবকৃষ্ণ গুপ্ত। (পৃঃ ৮২) এদের মধ্যে মধূসুদন গুপ্ত এবং নবকৃষ্ণ গুপ্ত সংস্কৃত কলেজের অবলুপ্ত মেডিক্যাল ক্লাসে ছিলেন। নবকৃষ্ণ গুপ্ত সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে ১৮৩১ সালে যে হাসপাতাল যুক্ত করা হয়েছিল তাতে “মাইনর সার্জারি”ও সাফল্যের সাথে করেছিলেন – “One graduate, N. K. Gupta, who had been trained as apothecary, was apparently doing quite well in that position at the hospital … they regularly performed minor ones such as ‘opening little abscesses and dressing sores and cuts.’” (David Kopf, British Orientalism and Bengal Renaissance – The Dynamics of Indian Modernization 1773-1835, 1969, পৃঃ ১৮৪)
এই রিপোর্টেই প্রথম মেডিক্যাল কলেজে ক্লিনিক্যাল ক্লার্কের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে – “With reference to the occasional and night residence of the Clinical Clerks, the Council observed that one at least of the Ceylon pupils was Clerk to each ward” (GRPI 1840-41 & 1842, পৃঃ ৮৪) ক্লিনিক্যাল ক্লার্কদের কাজ কি ছিল? ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত Abridgment Of The Report Of The Committee Appointed By The Right Honourable The Governour Of Bengal For The Establishment Of A Fever Hospital 1845-এ এর বিবরণ পাওয়া যাবে। এফ জে মোয়াট ফিভার কমিটির সামনে সাক্ষ্যে বললেন – “একজন মেডিসিনের প্রোফেসরের (সার্জারির প্রোফেসরও বটে) অধীনে ৬ জন করে ক্লিনিক্যাল ক্লার্ক থাকবে, যাদের ৪ জন হবে এদেশীয় এবং দুজন ইউরোপীয়। These will be selected in rotation from the students. (বর্তমানে আমাদের হাউস সার্জন তথা হাউস স্টাফদের সঙ্গে তুলনীয়)।” (অ্যাপেনডিক্স কে, পৃঃ ৩০) রোগী ভর্তি হবার পরে তার সমস্ত কেস হিস্টরি থেকে ডায়েট চার্ট থেকে কি ওষুধ খাবে সবই এরা ঠিক করত। এমনকি রোগীর মৃত্যু হলে তার পোস্ট মর্টেম পর্যন্ত এরা করত। চিকিৎসা বা ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে এরা প্রয়োজনে অধ্যাপকদের ডেকে পাঠাতো। অবশ্য তার আগেই সমস্ত প্রয়োজনীয় ডিটেইলস ক্লিনিক্যাল ক্লার্কেরা নিয়ে রেখেছে।
এই রিপোর্টে সরকারিভাবে “মেডিকো-লিগ্যাল ইন্সট্রাকশন”-এর কথা বলা হয়। ১৮৪০ সালে উইলিয়াম ও’শনেসি এ বিষয়ের ওপরে ৬টি লেকচার দিয়েছিলেন। ছাত্ররা অনুপস্থিত থাকলে ফাইন দেওয়া কিংবা কলেজ থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তাবও কলেজের কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। ১৮৪১ সালের ফাইনাল পরীক্ষায় ২০ জন ছাত্রকে “লেটারস টেস্টিমনিয়াল” প্রদান করা হয়েছিল। (প্রাগুক্তঃ ৮৫) ১৮৩৮ সালের প্রথম পরীক্ষায় এ সংখ্যা ছিল ৫ জন। ৩ বছরের মধ্যে এই বৃদ্ধিটি চোখে পড়ার মতো। এখানে উল্লেখযোগ্য, যে ছাত্ররা সে বছর “লেটারস টেস্টিমনিয়াল” পেয়েছিল তাদের মধ্যে ৭ জন কলেজ যখন প্রথম খোলা হয় তখন থেকে ছাত্র ছিল ফলে “upwards of six years” তারা কলেজে পড়েছে। (পৃঃ ৮৯) এজন্য তিনজন ছাত্রকে – কৃষ্ণ সরকার, কালাচাঁদ মল্লিক এবং ব্রজমোহন শেঠ – “who joined the College at the commencement, or upwards of six years ago, should receive Certificates from the examiners, and be recommended to the Government for situations at Civil Stations on salaries of 20 or 30 Rupees, and allowed to prepare themselves, and again to come forward as Candidates for letters testimonial at any future Annual Examination.” (পৃঃ ৯০)
১৮৪২-এ ১০ জন ছাত্রকে “লেটারস টেস্টিমনিয়াল”-এর উপযোগী বলে ঘোষণা করা হয়। এরা হল – বদনচন্দ্র চৌধুরী, মোহনচন্দ্র নান, শ্যামাচরণ সরকার, দীননাথ ধর, ঈশ্বরচন্দ্র Neye, প্রসন্নকুমার মিত্র, শ্যামাচরণ ঘোষ, সাধুচরণ মল্লিক, পরমানন্দ শেঠ এবং মহেশচন্দ্র দে। (পৃঃ ৯১)
১৮৪১ সালে কলেজে অনেক বিষয়ে পরিবর্তন হল। ডেভিড হেয়ারের মৃত্যুর পরে সাময়িকভাবে উইলিয়াম ও’শনেসি সেক্রেটারি হলেন। দুজন নতুন অধ্যাপক র্যালে এবং মোয়াট (Mouat) কলেজে যোগ দিলেন। আগে গুডিভ অ্যানাটমি এবং মেডিসিন দুটি বিষয়ই পড়াতেন। দুটি পদকে একজন অধ্যাপকের দায়িত্ব থেকে আলাদা করে মেডিসিনের দায়িত্ব প্রোফেসর জ্যাকসনকে দেওয়া হল। মিডওয়াইফারি (ধাত্রীবিদ্যা) এবং মহিলা ও শিশুদের রোগের শিক্ষার জন্য আলাদা পদ তৈরি করা হল। অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন অ্যালান ওয়েব মিউজিয়ামের কিউরেটর হিসেবে নিযুক্ত হন। অধ্যাপক মোয়াট কলেজের সেক্রেটারি হলেন। “The appointment of a Steward and Apothecary also took place during the Session 1840-41”-এর ফলে রোগীদের খাবার দাবার ও কলেজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। (পৃঃ ৯২)
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, বেন্থামের প্যানপ্টিকনের আদলে ১৮৫৭-র সিপাহীদের মহাবিদ্রোহের পরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কঠোরতম ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবার জন্য আন্দামানে যে সেলুলার জেল তৈরি হয়েছিল তার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং স্থপতি ছিলেন একদা মেডিক্যাল কলেজের সেক্রেটারি ও শিক্ষক এই মোয়াট। শাস্তি দেবার জন্য আন্দামানে জেল তৈরির প্রথম প্রস্তাবও মোয়াট দেন। ১৮৫৮ সালে ডঃ এফ জে মোয়াট, ডঃ সি আর প্লেফেয়ার এবং লেফটন্যান্ট জে এইচ হীথকোটকে নিয়ে কমিশন তৈরি হয়েছিল। (দ্রষ্টব্যঃ ডি এস বশিষ্ঠ, “Administration in Andaman and Nicobar Islands” Journal of the Indian Law Institute Vol. 7, No. 1/2 (January-June 1965), pp. 123-131; এ বৈদিক, Imperial Andamans: Colonial Encounter and Island History, ২০১০) “Since its foundation, the history of the Penal settlement was merely one of the continuous official developments. In January 1858 the Andaman Commission arrived to examine the islands for a possible site for a penal settlement. It was headed by Dr. F. J. Mouat, and other members of the committee were Dr. C. R. Playfair and Lieutenant J. H. Heathcote.” (R.V.R. Murthy, “Penal System in Andaman”, Dialogue, January – March, 2009, Volume 10 No. 3)
১৮৪২ সালে একটি অপারেশন থিয়েটার যুক্ত হল কলেজের সার্জারি বিভাগে। কলেজের যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক কাজকর্মের মধ্যে “The only point on which the Council regretted to have any fault to find, was regarding the irregularity of attendance”। পরবর্তী সময়ে ভালো করে অনুসন্ধানের ফলে দেখা যায় “the real amount of absence from the Lectures, Dissections and Hospital duties, had not been so great”। (GRPI 1840-41 & 1842, পৃঃ ৯৩) সেসময় কলেজ কাউন্সিল কঠোরভাবে জরিমানা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এমনকি খারাপ ক্ষেত্রে বহিষ্কার করারও। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। ছাত্রদের ক্লাসের প্রথম রোল কলের সময় অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে, অথচ পরে ডিসেকশনের সময় বা হাসপাতাল ডিউটিতে তারা তাদের কাজ করছে। কাউন্সিল এর কারণ অনুসন্ধান করে বুঝতে পারল – “many of the lads lived at great distance from the College (in several cases six miles, and in one eight) and having no means in their village of ascertaining the exact time, were oftener after than before the appointed time for calling the roll, and were consequently reported absent, although they were in fact in the College during the day specified”। (প্রাগুক্তঃ ৯৪)
লক্ষ্যণীয় হল – (১) ছাত্রদের কলেজে পৌঁছুনোর জন্য যাতায়াতে দৈনিক ১২ থেকে ১৬ মাইল পথ রোজ হাঁটতে হত (এখন আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে), এবং (২) যে গ্রামে ছাত্ররা থাকত সেখানে সঠিক সময় বলে দেবার কেউ নেই, কোন উপায় নেই। সহজভাবে বললে, মেডিক্যাল কলেজ ও হিন্দু কলেজকে কেন্দ্র করে যে নাগরিক ও সভ্য কলকাতা গড়ে উঠছে তার সাথে ৬ বা ৮ মাইল দূরের জনপদের, যা তখনো গ্রাম, চরিত্রগত পার্থক্য বিস্তর। Clock-time-কে কেন্দ্র করে এই ছাত্রদের সাথে শিক্ষা তথা রাষ্ট্রের নতুন সম্পর্ক জন্ম নিচ্ছে, নির্ণীত হচ্ছে। নাগরিক হয়ে উঠছে ছাত্ররা। অথচ এই ছাত্রদের উৎসস্থল গ্রামগুলো এই clock-time-এ বাঁধা পড়েনি। রাষ্ট্রের সাথে বন্ধন দুর্বল। নাগরিকত্ব গড়ে উঠছে এমনটাও বলা সঙ্গত হবেনা। সে কলকাতার মধ্যে একাধিক কলকাতা ছিল।
কলেজে রোল কলের পদ্ধতির কিছু পরিবর্তন এজন্য করা হল – “The morning roll was called as usual, and a daily report sent to the Secretary – and in addition to this, by order of the Council, each Professor was furnished with a list of students bound to attend his lectures, by means of which he could always ascertain and record the absent and the present.” এছাড়া বোটানিকে “bed side of nature”-এ রেখে অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে ভেষজ গাছের যে বাগান ছিল সেখানে গিয়ে ছাত্রদের হাতেকলমে শেখাচ্ছেন ওয়ালিচ। অ্যানাটমি বিভাগেও বেশ কিছু পরিবর্তন করা হল। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৪) এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল কলেজ থেকে পাস করা ছাত্ররা অধ্যাপক গুডিভের অ্যানাটমি ক্লাসের প্রয়োজনীয় প্রিপারেশন তৈরি করে দিত – “Dr. Gooedve likewise reported the zealous and valuable assistance received from Prosonnocoomar Mittre, Samachurn Sircar, Satcouree Dutt, and Mr. Kriekenback, in preparing the subjects required to illustrate his lectures.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৫) প্র্যাক্টিক্যাল অ্যানাটমির ক্লাসে ছাত্রদের কুশলতা এবং দক্ষতা নিয়ে ডেমন্সট্রেটর রিচার্ড ও’শনেসি মন্তব্য করেছিলেন – “some of them were equal to any students of their standing in the best European Schools.” (প্রাগুক্ত) ডিসেকশনের পর্ব শেষ হলে নিয়মিত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হত। সিংহলের একজন ছাত্রের কথা (Mr. Toussaint) তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন “in preparing the subjects required for demonstration”। (প্রাগুক্ত)
সার্জারির ক্লাসে অধ্যাপক র্যালে ছাত্রদের দক্ষতা এবং সফল সার্জিকাল চিকিৎসার প্রশংসা করেছেন মুক্ত কন্ঠে। এছাড়া ছাত্রদের মধ্য থেকে ড্রেসার নিয়োগ করা এবং এদের মাঝে কাজ ভাগ করে দেওয়া “and the performance of operations by the students themselves, combined with Clinical Lectures delivered on the cases under treatment appeared to the Council to be well calculated to produce a scientific and skilful body of Surgeons.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৪-৯৫) ছাত্রদের ছাত্রাবস্থায় সার্জন হয়ে ওঠার কার্যকরী এবং সফল প্রক্রিয়া শুরু হল।
মেডিসিনের ক্লাসের ব্যাপারে অধ্যাপক জ্যাকসন রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন মূলত হাসপাতালে কিভাবে মেডিক্যাল প্র্যাক্টিস করতে হবে তার ওপরে। এর আগে বলেছি, ছাত্রদের মধ্য থেকে ক্লিনিক্যাল ক্লার্ক নির্বাচন করা হত। এই রিপোর্টে জানানো হল, প্রত্যেক ক্লিনিক্যাল ক্লার্ক “was required to interrogate and examine the patient on his admission, to exercise him in forming correct and accurate diagnoses of diasease.” (পৃঃ ৯৬) “হসপিটাল মেডিসিন”-এর অবয়ব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে চোখের সামনে। এরপরে ক্লিনিক্যাল ক্লার্করা অধ্যাপকের কাছে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে জানাতে বাধ্য ছিল তাদের “plan of treatment which he would recommend to be adopted”। এভাবে শিক্ষাদানের পদ্ধতি “very nearly, if not identical with the system pursued in the celebrated Ecoles Clinique of Paris and Strasburgh.” (প্রাগুক্ত)
মেডিক্যাল এবং সার্জিকাল মিলে Male Hospital-এ চিকিৎসিত মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৩১। এদের মধ্যে ১১০৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছিল, ১৭৯ জন মারা গিয়েছিল, এবং ৪৯ জন চিকিৎসাধীন ছিল। মন্তব্য করা হচ্ছে “The great amount of mortality had been due to causes over which Medical Officers had no control.” আমরা সময়টা খেয়াল রাখি – ১৮৪০-৪২ সাল। তখনও লিস্টারের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতি পৃথিবীর কাছে অজানা। অজানা Ignaz Semmelweis-এর হাত পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে প্রসব করানোর পদ্ধতি। লিস্টারের পুস্তক Antiseptic Principle of the Practice of Surgery প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে। Ignaz Semmelweis-এর পদ্ধতি গৃহীত হতে শুরু করে ১৮৪৭ সাল থেকে ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে। ফলে সেসময়ের তুলনায় মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুহার যথেষ্ট কম ছিল বলতে হবে। ১৩৩১ জনের মধ্যে ১৭৯ জনের মৃত্যু – শতকরা হিসেবে ১৩.৫-এর মতো। এর মধ্যেও একেবারে মরণাপন্ন অবস্থায় ১৬৩ জন ইউরোপীয় এসেছিল যারা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারা যায়। (পৃঃ ৯৬)
ডঃ গুডিভের দায়িত্বাধীন প্রসূতিবিভাগ সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হল – “although the Lying-in-Institution had only been open six months, and was opposed to the most deep-rooted of all the prejudices of Eastern Nations, the number of cases treated had been equal to those of an extensive charity in a populous district of London, viz. the Westminster Lying-in-Hospital.” (পৃঃ ৯৭) প্রসূতি মায়ের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার দেশীয় প্র্যাক্টিশনারদের ক্ষেত্রে ২০%-এর মতো ভয়াবহ মাত্রায় ছিল। কিন্তু সে সংখ্যা “which has hitherto occurred in the Medical College Hospital, has been in the ratio of 3 percent.” (পৃঃ ৯৭) যদিও এই রিপোর্টে বিচক্ষণতার সঙ্গে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম সংখ্যক রোগীর হিসেব থেকে মৌহূর্তিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সঠিক হবেনা।
প্রসূতি বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন প্রসন্নকুমার মিত্রের মূল্যবান কাজের প্রতি বিশেষ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল কলেজ কাউন্সিলের তরফে। অল্প সময়ের জন্য মেটেরিয়া মেডিকার অধ্যাপক ছিলেন পূর্বালোচিত ডঃ মোয়াট। এখানে উল্লেখযোগ্য যে “A system of arrangement, classification, and method of instruction had however been adopted, as nearly as circumstances permit, on the plan pursued in the course of Professor Christison of Edinburgh.” (প্রাগুক্ত) দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এবং পাঠ্যক্রম তৈরির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিগুলো নেওয়া হচ্ছে সেগুলো ফ্রান্স, জার্মানি কিংবা এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকেন্দ্রগুলো থেকে। একটি উপনিবেশিক দেশের প্রথম মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্বমানের উপযুক্ত করে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কেমিস্ট্রি শিক্ষার ব্যাপারে সেসময় কলেজে না থাকলেও আলাদা করে উইলিয়াম ও’শনেসির নামোল্লেখ করা হচ্ছে তাঁর “distinguished talents”-এর জন্য। (প্রাগুক্তঃ ৯৭)
অ্যালান ওয়েবের তত্ত্বাবধানে কলেজের মিউজিয়ামের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। পুরনো সমস্ত সংগ্রহকে পালিশ করে চকচকে করা হয়েছে এবং ৭৭টি নতুন স্পেসিমেন সংগৃহীত হয়েছে। একটি ক্যাটালগও তৈরি করা হয়েছিল। (পৃঃ ৯৮)
উইলিয়াম ও’শনেসি ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার আগে এশিয়াটিক জার্নাল-এর একটি সম্পূর্ণ সেট দিয়েছিলেন যে ছাত্রের তাপবিদ্যা সংক্রান্ত রচনা শ্রেষ্ঠ হবে তাকে প্রয়াত জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে দেবার জন্য। ৫ জন পরীক্ষার্থী এই প্রাইজের জন্য বসেছিল। সর্বোত্তম রচনার ক্ষেত্রে “Nil Desperandum” লিখে পুরষ্কার দেওয়া হয়। (পৃঃ ১০০)
আগ্রার লেফটন্যান্ট গভর্নর টি সি রবার্টসন ২০০০ টাকা দিয়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজের উন্নতির জন্য। তিনি জানিয়েছিলেন, এ টাকা যেন স্কলারশিপের জন্য ব্যয় করা হয়। আরেকটি নজরে আসার মতো ঘটনা হল আসাম থেকে আগত কয়েকজন ছাত্রের ভাষাজ্ঞান উন্নত করার জন্য হুগলি কলেজে (হুগলি মহসিন কলেজ) পাঠানো হয়েছিল – “In March last, the Medical College Council requested us to send to the Hooghly College, the youths who had come to the former Institution from Assam”। (পৃঃ ১০২)
আগের বার্ষিক পরীক্ষার পরে কয়েকজন ছাত্রকে পাস করানো হয়নি – “their inability to prosecute further their studies as recommended by the Examiners for want of means.” তারা ফেল করেছিল ফিজিওলজি, অ্যানাটমির কিছু অংশে এবং সার্জারিতে। কিন্তু কেমিস্ট্রি, মেটেরিয়া মেডিকা এবং “practice of Physic”-এ তাদের ফলাফল অত্যুজ্জ্বল ছিল। (পৃঃ ১০৩) ডঃ গুডিভের সুপারিশে প্রসন্নকুমার মিত্রকে প্রসূতি বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন পদে নিয়োগ করা হয় মাসে ১৬ টাকা স্কলারশিপ দিয়ে। এছাড়া প্রসন্নকুমার তার চাকরির জন্য মাসে ৫০ টাকা মাইনে পেতেন। (পৃঃ ১০৪)
আমরা ১৮৩৯-৪০ সালের রিপোর্ট থেকে জেনেছিলাম, মোট ১১টি ডিসপেনসারি খোলা হয়েছে হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে বেরিলি ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে। ১৮৩৮ থেকেই বিভিন্ন বড় শহরে ডিসপেনসারি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিকে মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক যে চিকিৎসকেরা বেরোচ্ছে তাদের ওপরে এই ডিসপেনসারিগুলোর দায়িত্ব দেওয়া শুরু হল।
বর্তমান রিপোর্টে (১৮৪০-৪১ ও ১৮৪১-৪২) যুক্ত হল আরও তিনটি ডিসপেনসারি – কলকাতা শহরের ভবানীপুর, মোরাদাবাদ এবং জবলপুর। ১৮৪১-এর ১ এপ্রিল ভবানীপুরের ডিসপেনসারি খোলা হল। সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন ছিলেন কালাচাঁদ দে। এখানে ১ বছরের কম সময়ে ৫,৮৪০ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। এদের মধ্যে ২/৩ অংশের বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছিল। ২৫ জন রোগী ভর্তি ছিল যাদের মধ্যে ১৮ জন নিরাময় লাভ করেছে। মোরাদাবাদের ডিসপেনসারিতে কোন সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন সে বছরে নিয়োগ করা হয়নি। জবলপুরের ডিসপেনসারিতে সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন ছিলেন শ্যামাচরণ দত্ত। রিপোর্টে বলা হল – “The proportion of persons cured and relieved, contrasted with the number seeking relief, is very satisfactory.” (পৃঃ ১০৭-১১০)
মেডিক্যাল কলেজের অবস্থান ছিল নেটিভ টাউনের মধ্যস্থলে কলুটোলা স্ট্রিটে (তখনও অবধি কলেজ স্ট্রিট নামকরণ হয়নি)। এরপরে কলেজের অভ্যন্তরের সমস্ত বিল্ডিং ও হাসপাতালের বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে – কি উপাদান দিয়ে তৈরি, কতটা জায়গা নিয়ে, ঘরগুলো কত বড়ো ইত্যাদি বিষয়ে। (পৃঃ ১১২-১১৪) এখানেই স্পষ্ট করে বলা হল – “The College originally formed the Petty Court jail of Calcutta, and all subsequent additions to it have been made at the expense of Government in the Education Department.” (পৃঃ ১১৪)
কলেজ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সাবকমিটি “সেক্রেটারি টু গভর্নমেন্ট” জি এ বুশবিকে একটি দীর্ঘ রিপোর্টে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানিয়েছিল।
(১) “while it might be unreasonable to expect in it the perfect efficiency of similar establishments in Europe, yet the time has arrived for enquiring strictly into its actual capabilities, and for correcting such defects”। (Appendix 10, p. lxx)
(২) মেডিক্যাল কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ব্রামলে যেভাবে ছাত্রদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মিশে এবং প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে ইউরোপীয় ধরনে তাদের মর্যাল এবং বৌদ্ধিক বিকাশের চেষ্টা করেছিলেন তার যথেষ্ট প্রশংসা করা হল। (Appendix 10, p. lxxi)
(৩) প্রতি মাসের শেষ শনিবারে সাবকমিটি নিয়মিত মিটিং করবে কলেজের ঊর্ধমুখী বিকাশের লক্ষ্যে এবং দুর্বলতার চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য। (Appendix 10, p. Lxxii)
(৪) ক্লিনিক্যাল ক্লার্কদের জন্য Printed Rules of the Clinical Clerks and Assistants of the Hospital ছাপা হয়েছিল। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল – “the eighteen Senior students will each in turn, for one day, take the night duties of the Hospital being provided with a room and light. The Student on duty is to keep memoranda of all occurrences and, in concert with the Apothecary, to attend all emergency cases.” (Appendix 10, p. lxxiii)
১৮৩৫ সালে শুরুর লগ্নে দুজন মাত্র শিক্ষক নিয়ে, নিজস্ব বিল্ডিংবিহীন, সিলেবাস ও টেক্সটবুকবিহীন একটি কলেজের ছাত্রদের ১৮৩৮ সালে মাত্র আড়াই বছরের মাথায় পরীক্ষা হল। এরপরে ৪ বছরের মধ্যে এতদূর অবধি বিকাশ ঘটলো – কলেজটিকে প্রকৃত অর্থে ইউরোপীয় শিক্ষায়তনের সমতুল্য করে তুলতে হবে এই অভীপ্সা ক্রমাগত কাজ করে গিয়েছে কলেজের অধ্যাপক, পরিচালক এবং ছাত্রদের মাঝে।
(৪) ক্লিনিক্যাল ক্লার্কদের রাতে থাকার জন্য থাকার জায়গা তৈরি করা হল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন – “Great inconvenience has arisen from there being no Operating-room attached to the Hospital, and the patients who require Surgical operations having to be removed to the Anatomical Theatre.” (Appendix 10, p. lxxiv)
১৮৪২-৪৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট
এ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে মোট ১২ দিন ধরে পরীক্ষা হয়েছিল। প্রথম দিনের লিখিত পরীক্ষায় ১১টি প্রশ্ন ছিল। এছাড়াও ছিল প্র্যাক্টিক্যাল এবং মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষার পরীক্ষক ছিলেন জে পি গ্র্যান্ট এবং টি এ ওয়াইজ।
“প্র্যাক্টিক্যাল অ্যান্ড সার্জিকাল অ্যানাটমি অ্যান্ড ডেমনস্ট্রেশন অফ দ্য ডেড বডি”-র পরীক্ষায় “Each of the candidates dissected and demonstrated a region of the body and performed an operation. Their dissections were neatly executed, their demonstration accurate, and their operations dexterously performed.” (GCPI, 1842-43, পৃঃ ৭৮) দুজন ছাত্রকে বাজে ফলাফল এবং অনুপস্থিতির কারণে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কলেজের বিল্ডিংযের অনেক পরিবর্তন সাধন করা হয়।
একটি উল্লেখযোগ্য তথ্যের হদিশ পাওয়া যায়। কলেজের কম্পাউন্ডের মধ্যেই নতুন সমস্ত বিল্ডিং এবং সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে “to negotiate for the purchase of certain adjacent huts, and portions of ground and roadway, with a view to the enclosure of that part of the old way” করা হয়। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৯) স্টাফ সার্জেন্ট এবং অ্যাপোথেকারির জন্য কলেজ সংলগ্ন নতুন আবাসন তৈরি করা হয়। এ রিপোর্ট অবধি অপারেশন থিয়েটার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি বলে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। সমস্ত viva voce পরীক্ষা নেবার জন্য একটি আলাদা ঘরও তৈরি হয়।
আমরা গত রিপোর্টে দেখেছিলাম বহু ছাত্রের ৬ থেকে ৮ মাইল দূরত্ব থেকে যাতায়াত করা এবং তাদের গ্রামে ঘড়ির কোন প্রচলন না থাকায় হাজিরার সমস্যা হচ্ছিল। সেজন্য কলেজ কাউন্সিল দু দফায় রোল কলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ রিপোর্টে জানানো হচ্ছে – “The new system of calling the roll, and registering the attendance of the pupils … has quite answered the expectations of the Council.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮০) সেসময়ের ভারতের সঙ্গে ইউরোপের জীবনযাত্রা এবং জীবনচর্যার বহু যোজন দূরত্ব থাকার জন্য, আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিভাবে প্রতিটি পদক্ষেপে ধাপে ধাপে মেডিক্যাল কলেজকে আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। পরে যে গৌরবোজ্জ্বল মেডিক্যাল কলেজকে আমরা দেখি তা প্রায় ৩০০ বছর আগেকার মেডিক্যাল কলেজের পরিচালকদের বিচক্ষণতা এবং তিল তিল পরিশ্রমের ফসল – এ কথা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।
অ্যানাটোমো-প্যাথোলজিক্যাল গেজ থেকে বোটানি
এপ্রিল মাসে কলেজ কাউন্সিলের সহায়তায় ডঃ ওয়ালিচ প্র্যাক্টিক্যাল বোটানিতে একটি “public examination” নেন “with a view to adjudicate two prizes, bestowed by the Earl of Auckland … the one a handsome Compound Microscope, the other a similar instrument of less value.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮০)
মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা একদিকে যেমন ভারত তথা এশিয়া মহাদেশে “হসপিটাল মেডিসিন”-এর দ্বার উদ্ঘাটন করল, অন্যদিকে তেমনি একটি বিশেষ ধরনের পর্যবেক্ষণের জন্ম দিল, যাকে ফুকোর ভাষায় আমরা বলতে পারি “অ্যানাটোমো-ক্লিনিক্যাল/অ্যানাটোমো-প্যাথোলজিকাল গেজ” – “The clinic was probably the first attempt to order a science on the exercise and decisions of the gaze.” (Foucault, The Birth of the Clinic, 1976, পৃঃ ৮৯) আরেকটু ভালো করে বললে – “In anatomo-clinical experience, the medical eye must see the illness spread before it, horizontally and vertically in graded depth, as it penetrates into the body, as it advances into its bulk, as it circumvents or lifts its masses, as it descends into its depths.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৩৬) মেডিসিনের ইতিহাসে এরপরের অধ্যায়কে আরউইন অ্যাকার্কনেখট চিহ্নিত করেছেন “ল্যাবরেটরি মেডিসিন” বলে। “Laboratory medicine was instrumental in transforming hospitals from places to be avoided into places of science and cure.” (Jacalyn Duffin, History of Medicine. A Scandalously Short Introduction, 2010, পৃঃ ৮৪) “ল্যাবরেটরি মেডিসিন”-এর উদ্ভবের সাথে সাথে রোগী ক্রমাগত কিছু প্যাথোলজিক্যাল, বায়োকেমিক্যাল, হেমাটোলজিক্যাল, জেনেটিক ইত্যাদি বিভিন্ন প্যারামিটারের সমাহার হয়ে দাঁড়ালো। পরিণতিতে রোগীর সঙ্গে পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির যে সংযোগ ছিল তা একেবারেই ছিঁড়ে গেল।
মেডিক্যাল কলেজে ১৮৪০-এর দশকের শুরুতে (এমনকি ইউরোপেও) পাঠক্রম থেকে বোটানির মতো প্রকৃতি নির্ভর সাবজেক্ট একেবারে মুছে যায়নি। এরপরের তিন দশকের মধ্যেই সে ঘটনা ঘটবে। “ল্যাবরেটরি মেডিসিন” প্রাধান্যকারী জায়গায় চলে আসবে। এবং এসময়ের ধারাতেই উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর যুগান্তকারী আবিষ্কার হবে।
১৮৪০-৪১ সালের GRPI-তে আমরা দেখেছি, অধ্যাপক ওয়ালিচ “বেড সাইড অফ নেচার”-এর পরিবেশে বোটানিকে পড়াচ্ছেন। পড়ানোর এ পদ্ধতি নিয়ে রিপোর্টে মন্তব্য করা হচ্ছে – “fully recognized in every European School”। (GRPI 1840-41 & 1842, পৃঃ ৯৪)
১৮৪২-৪৩ সালে এসে এরই পরিবর্ধিত রূপ হিসেবে বোটানির পাবলিক একজামিনেশন নেওয়া হবে, যেমনটা এ অংশের শুরুতে উল্লেখ করেছি। (GRPI, 1842-43, পৃঃ ৮০)
বোটানির সাথে উপনিবেশকতার সম্পর্ক কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে সে ইতিহাসও বিশেষ মনোযোগ দাবী করে – দ্রষ্টব্যঃ Londa Schiebinger, Plants and Empire: Colonial Bioprospecting in the Atlantic World, 2004 এবং Mary Louise Pratt, Imperial Eyes – Travel Writing and Transculturation, 2007।
GRPI, 1842-43-এ অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টে “paucity of instruments allowed for dissection”-এর উল্লেখ করা হয়। (পৃঃ ৮১) আগে যেসমস্ত যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছিল সেগুলো পুরনো এবং একেবারেই ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। খারাপভাবে যন্ত্রপাতি্র ব্যবহার ঠেকানোর জন্য “the Council of Education sanctioned a deposit of two rupees from each dissecting student, from which any deficiency, not caused by fair wera and tear, is to be made good”। (পৃঃ ৮২) ১৮৩৬ সালের আগে যেখানে ডিসেকশন শুরু করার মতো পরিস্থিত ছিলনা সেখানে ১৮৪২-এ এসে যেসব ছাত্ররা ডিসেকশন করবে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ২ টাকা করে জমা রাখতে হবে এমন নির্দেশ দেওয়া হল। বোঝা যায়, মানসিক এবং চৈতন্যগত অবস্থার রূপান্তর ঘটেছে। প্র্যাক্টিক্যাল অ্যানাটমিতে একটি গোল্ড মেডেলের জন্য কলকাতার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রুস্তমজি কাওয়াসজি ৬০০ টাকা দান করেন।
কিউরেটর মি. ওয়েবের তত্ত্বাবধানে ছাত্ররা পাঠ্যক্রমে যা আছে সেরকম ২২টি মাইনর সার্জারি করে। কিন্তু পাঠ্যবিষয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় (মেটেরিয়া মেডিকা এবং থেরাপিউটিকস, মেডিসিন, ধাত্রীবিদ্যা, প্র্যাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রি, কেমিস্ট্রি ইত্যাদি) সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। (পৃঃ ৮৩)
ধাত্রীবিদ্যা সম্পর্কে বলা হয় – “The Midwifery ward continued to prosper, was always full of patients, and presented to the students a variety of instructive cases, amongst women of all religions and nations.” (পৃঃ ৮৪) অর্থাৎ সামাজিক ক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রসব করানোর ক্ষেত্রে একটি শূণ্যতা (vacuum) ছিল। মেডিক্যাল কলেজ সে জায়গাটি ভরাট করেছে। ধাত্রীবিদ্যার শ্রেষ্ঠ ছাত্রের জন্য “গুডিভ স্কলারশিপ” চালু করা হয়। প্রসন্নকুমার মিত্র প্রথম এ স্কলারশিপ পান। তিনি ১০০র বেশি প্রসব করিয়েছিলেন, যাদের অনেকেই তাঁর প্রাইভেট রোগী ছিল। (প্রাগুক্ত)
ছাত্ররা প্রায় সবাই যেভাবে প্র্যাক্টিক্যাল অ্যানাটমি, ডিসেকশন এবং ক্লিনিক্যাল ক্লার্ক ও ড্রেসার হিসেবে সুচারুভাবে নিজেদের কাজ করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। একথাও বলা হয় – “their records and journals of cases wil bear comparison with those most well-regulated European Hospitals.” (পৃঃ ৮৫)
“ফাউন্ডেশন স্টুডেন্ট” (স্টাইপেন্ড পাবে) এবং “ফ্রি স্টুডেন্ট” (স্টাইপেন্ড পাবেনা) এই দুভাবে ছাত্রদের ভাগ করা হয়েছিল। ৯ জন ফ্রি স্টুডেন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষা গোছের পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছিল। এরা পাস করলে ডিপ্লোমা পাবে এবং “establishing themselves herafter in private practice.” (পৃঃ ৮৬)
বাংলার বাইরে থেকে ছাত্রদের জন্য থাকার ঘর এবং “cots and boxes” দেওয়া হয়েছিল। (পৃঃ ৮৭) আবাসিক শিক্ষার সূচনা হল। মোট ২০ জন ফাউন্ডেশন এবং ফ্রি স্টুডেন্ট পাস করে “লেটারস টেস্টিমনিয়াল” অর্জন করেছিল। (পৃঃ ৮৮)
আমরা পরের কিস্তিতে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের প্রথম বিদেশ যাত্রা এবং রয়্যাল কলেজ অফ সার্জন, ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন ও অ্যাপোথেকারি সোসাইটির তরফে কলেজকে স্বীকৃতি দেওয়া এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। ইউরোপীয় মেডিক্যাল শিক্ষার সাথে uniform হয়ে উঠছিল মেডিক্যাল কলেজ।
অসামান্য পরিশ্রমের ফসল এই লেখা, অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরে আপ্লুত হয়ে গেলাম।???
Many many thank you so much.
অসাধারন লেখা !
অসাধারন লেখা
অসাধারণ লেখা !
জয়ন্ত দা এই article টি খুব ভালো লাগল। এই ইতিহাস অজানাই ছিল। আপনার লেখনীতে জানলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরও লিখুন।
বড় যত্ন করে সেকালের মেডিকাল কলেজের তথ্য সংগ্রহ করে একালের পাঠকদের জন্য পেশ করে চলেছেন ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
বিদেশী শিক্ষা সম্বন্ধে অনীহা ক্রমশঃ কাটছে ভারতীয়দের। হিন্দুদের সমস্ত শ্রেণীর ছাত্রদের আগ্রহ বাড়ছে। সমাজপ্রভুদের চোখরাঙানী নিশ্চয়ই ছিল।
ভাগ্য ভাল আমাদের চেতনা অবরুদ্ধ হয় নি।
পাশ করা ডাক্তাররা সমাজে প্রতিষ্ঠা এবং সম্মান পেতে কোন সমস্যা হয় নি।
এটা সম্ভব হয়েছিল বলেই আজ আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সুফল পাচ্ছি।
দারুণ এগুচ্ছে স্বনামধন্য মেডিকাল কলেজের গর্বের ইতিহাস। ভাবতে অবাক লাগে কি নিয়মনিষ্ঠায় পড়তে হোত ছাত্রদের চিকিৎসাবিজ্ঞানী হওয়ার জন্য।
ভবানীপুরের ডিসপেনসারীটি কি এখন পুলিশ হাসপাতাল!
ডাক্তারদের দিয়ে প্রসব করানোর ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল তখনই যা পরবর্তীকালে জন্মকালীন শিশু বা মায়ের মৃত্যুর হার কমাতে শুরু করেছিল।
ধন্যবাদ, ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য
সুন্দর লেখা
টুকরো টুকরো করে এই লেখাটি পড়ে সম্পূর্ণ লেখাটি বই হিসেবে পড়ার ইচ্ছা হচ্ছে।
অসামান্য লেখা !
অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরে ধন্য হলাম
শিক্ষণীয়, লেখককে ধন্যবাদ প্রচুর অজানা বিষয় প্রাঞ্জলভাবে আমাদের কাছে পরিবেশন করার জন্য।
Gold mine of information please keep it up.