রান্নাঘরে ঢুকলেই আমাদের মতো গৃহিণীদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা থাকে তেল নিয়ে। ভালো রান্না করতে ‘একটু’ তো তেল লাগবেই। সমস্যা এই ‘একটু’ শব্দটাতেই। দেখা যায় আমি যে পরিমাণ তেল একটু বলে মনে করি, তা অন্যের কাছে অনেকটা? আমি ভাবলাম, এইটুকু তেলে আজ রান্না করলাম আজ আর কোনও কথা শুনতে হবে না। বাড়ির সবচেয়ে স্বাস্থ্যসচেতন সদস্য ঠিক বলবে, ‘এত তেল দিয়েছো রান্নায়? আমি তো ঝোল বাদ দিয়ে শুধু সবজি তুলে নিলাম’। আবার সেই তরকারি পাতে পড়তেই রসেবশে খাওয়া সদস্য বলবে, ‘এরকম তেল ছাড়া তরকারি রান্না করলে আমাকে ঘি বা মাখন আর আলুসেদ্ধ দিয়ে খেতে দিও। বরাবর ভাল-মন্দ খেয়ে এসেছি। এসব মুখে রোচে না।’
কোথায় যাই বলুন? আবার নিজেও বুঝি, তেল ছাড়া কোনও কিছুর স্বাদ হয় না। তাই তো সেদ্ধ হোক বা স্যুপ সবেতেই একটু তেল চাই। এমনিতে কাউকে তেল দিতে ভালো না বাসলেও রান্নার ব্যাপারে কী করে যেন একটু বেশি দরাজ হয়ে উঠি। যদিও স্বাস্থ্যবিষয়ের ম্যাগাজিন বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে বিভিন্ন খবর দেখে নিজে কখনও স্বঘোষিত ডায়েটিশিয়ান, আবার কখনও ডাক্তার।
খুব জানি, ফ্যাট খাবারে স্বাদ আনে। আর স্বাদহীন খাবার যদি বা কোনওরকমে গলাধঃকরণ করা যায় তা হজম হয় না। তাই তেল বিনে গতি নেই। আবার আমাদের ত্বক অন্যের কাছে ঈর্ষণীয় করে তোলার জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড বা লিপিড দরকার। এর জোগান দেওয়ার জন্যও চাই তেল। বিভিন্ন হরমোন তৈরিতেও এর অবদান আছে। ফ্যাট ছাড়া ভিটামিন এ, ডি ও ই লিভার শোষণ করতে পারে না। তাহলে তেল ছাড়া চলবে? এতো গেল তেল খাওয়ার সপক্ষে যুক্তি।
অন্যদিকে তেল না খাওয়ার পক্ষেও জোরালো যুক্তি আছে। যেমন, তেল খেলে কোলেস্টেরল বাড়বে, হৃদয় বিকল হবে আর চর্বি তো চড়চড় করে শরীরে চেপে বসবে। অতএব তেল থেকে সাবধান। তবে যে যাই বলুন, তেল ছাড়া এক আধ দিন চলতে পারে, সারা মাস চলে নাকি? অগত্যা মাসকাবারি ফর্দে রাখতেই হয় সাদা তেল, সরষের তেল বা পকেটের জোর থাকলে ক্যানোলা অয়েল, বাদাম তেল বা অলিভ অয়েল।
ওদিকে ডাক্তারবাবু সেদিন চেম্বারে বসে পইপই করে বলে গেলেন, দেখুন বয়স বাড়ছে। এখন একটু খাওয়াদাওয়ায় সাবধান হতে হবে। আর তেলের ব্যাপারে তো কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবেই না।
বাধ্য মেয়ের মতো জানতে চাই, ‘কোন তেল খাব?’ উনি জানান, ‘যে তেলে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা মুফা আছে, সেই তেল খান।’
-‘আমার এমনিতেই কিছু খেলে অ্যাসিড হয়। আবার অ্যাসিড থাকা তেল খাব?’ অবাক হয়ে জানতে চাই।
-‘আরে এই অ্যাসিড সেই অ্যাসিড নয়। এ ফ্যাটি অ্যাসিড। তিনরকম ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তেলে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা এসএফএ, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা পুফা আর মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড মুফা। আর এসবের কোনটা কী পরিমাণে থাকে তার ওপর নির্ভর করে কোন তেল ভালো আর কোনটা মন্দ তা ঠিক করা হয়। আর সেই তেলই ভাল যাতে মুফা বেশি আর পুফা কম থাকে। সেই কারণে আমাদের রান্নাঘরের জন্য সর্ষের তেল, বাদাম তেল বা রাইস ব্রান তেলই ভাল।’
এরপরে ডাক্তারবাবু আরো জানালেন, ‘যে তেলই খান না কেন, তার পরিমাণ যেন ঠিক থাকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। রোজ যে পরিমাণ ক্যালোরি শরীরের দরকার তার ৩০% এর কম যেন ফ্যাট থেকে আসে। দিনে তাই ৪-৬ চামচের বেশি তেল খাওয়া চলবেই না।’
সব কিছু জেনে শুনে যখন রান্না বসাই তখন মনে হয়, ডালের সঙ্গে কিছু ভাজা না হলে চলে? কয়েকটা গরম গরম ফুলকপির বড়া ভেজে নিই, সবাই খুশি হবে। শীতের কটা দিনই তো এই সুযোগ আছে। রাতে না হয় স্যুপ আর রুটি করবো। কোনও ভাজাভুজি করবো না।
খুব helpful post