মাঝরাতে কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙল। দরজা খুলে অবাক। সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছি।হাসপাতালের কাছাকাছি এক বাড়িতে ভাড়া থাকি।
সেই মাঝরাতে খুব সিনিয়ার এক দাদা অ্যামবুলেন্স নিয়ে ছুটে এসেছে, একবার চল ভাই। লেবার পেসেন্ট।’
সেই রেডিওলজিস্ট দাদাই সেদিন সুপারের চার্জে।
অগত্যা মধ্যরাতে অভিযান।
অবস্ট্রাক্টেড লেবার। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে ইমিডিয়েট সিজারিয়ান দরকার। কিন্তু আমি একদম আনকোরা নতুন। ঐ ওটি তেও প্রথম প্রবেশ। মেডিকেল কলেজের ঘেরাটোপের বাইরে সিজারের সংখ্যা শূন্য।
প্রাথমিক দ্বিধা দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান এক যুবকের সামনে সেই, টু বি অর নট টু বি।
এক মধ্যবয়স্কা সিস্টার, দাপুটে গলা, এগিয়ে এলেন, নিন রেডি হন। অত চিন্তার কি আছে। আমরা সবাই আছি।
সবাই মানে চারদিকে তাকিয়ে দেখি, আমি মহামান্য কম্পিত সার্জেন, আমারই মতো সদ্য চাকুরিপ্রাপ্ত অ্যানাস্থেটিস্ট ও সেই দৃপ্ত ওটি সিস্টার।
ঊষার আলো তখন ফুটে উঠেছে। বাচ্চাটা তীব্র স্বরে কাঁদছে। ঊষাদি,সেই ওটি সিস্টার এগিয়ে এলেন, ওয়েল ডান ডা মুখার্জী।
আমি তখন মনে মনে বলছি, আমি করলাম না আমাকে দিয়ে এক দক্ষ অ্যাসিস্টান্ট কাজটা করিয়ে নিলেন। আর আমার মধ্যে এক অদ্ভুত কনফিডেন্স এনে দিলেন।
আজ আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবসে কিছু লিখতে বসে সেই ঊষালগ্নের কথা প্রথম মনে এল। আর বারবার মনে হচ্ছে আজকের এই প্রচার সর্বস্ব যুগেও তাঁরা আড়ালে থেকেই নীরবে কাজ করে চলেছেন।
সেদিন এক অচিকিৎসক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল।বন্ধুটি বিখ্যাত বিখ্যাত ডাক্তারদের ঠিকুজি কুষ্ঠি বলে যাচ্ছিল।
-তা একজন নামকরা নার্সের নাম বলত?
সে একটু অবাক চোখে তাকাল ।
আমি বললাম, কেন তুই ভালো নার্সিং স্টাফ দেখিস নি?
–হ্যাঁ হ্যাঁ সে তো অনেক আছে ।
ঠিক কথা। সাদা পোশাকের আড়ালে তাঁরা তাঁদের আত্মপরিচয় লুকিয়ে রেখেছেন। আমরা ডাক্তাররাও অনেক সময় কৃতিত্বের সব আলোটুকু শুষে নিয়ে ওঁদের আড়ালে রেখে দিয়েছি।
সফল চিকিৎসায় এঁদের অবদান অনস্বীকার্য।
চাকরি সূত্রে একবার এক নার্সিং ডেপুটেশনে এক নেত্রী বলেছিলেন,– আপনারা স্যার ইচ্ছে করলেই গেটের বাইরে ঘুরে আসতে পারেন। কিন্তু আমরা স্যার ইউনিফর্ম পরে রুগীর পাশে ডিউটি করি। পাঁচ মিনিটের অনুপস্থিতিতে খবর হয়ে যাবে।– কঠিন কিন্তু এর চেয়ে বড় সত্যি বোধহয় হয় না।
আজ এই সংকটকালেও রুগীর সবচেয়ে নিকটজন (দ্ব্যর্থে) – আমাদের এই নার্স দিদিমণি।
আজ আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবসে, আপনাদের খুব কাছ থেকে দেখা ও অনেক কিছু শেখা এক চিকিৎসা কর্মীর সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
**পুরনো লেখা, কিন্তু যে লেখা পুরনো হয় না।
১২ই মে আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবস।।