স্থানঃ কোনো আজব দেশের কোনো এক কল্পিত হাসপাতাল।
দৃশ্য ১ঃ এক কমবয়সী বউকে নিয়ে তিন-চারজন হুড়মুড় করে ঢুকলেন। জানা গেল, প্রবল বমি, আজ রাত থেকেই।
মেয়েটি কিরকম যেন নেতিয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো কয়েকদিন আগে জ্বর ছিল। কমে গিয়ে আবার এসেছে।
খটকা লাগায় পাঠানো হল RAT (ধেড়ে ইঁদুর নয়, Rapid Antigen Test, সংক্ষেপে) করতে। তাৎক্ষণিক ভাবে রিপোর্ট আসলো, নেগেটিভ। SpO2 (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) ৯৩ থেকে ৯৬%-এর মধ্যে। কিন্তু নেতিয়ে যাওয়া ভাবটা আছেই। ভর্তি করা হল কিছু পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে।
ঠিক তক্ষুনি, ম্যাজিশিয়ানের মতো, বাড়ীর লোক বের করলেন, গতকালের স্থানীয় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। দেখা গেল, সেই অনুযায়ী কিছু পরীক্ষাও করা হয়েছে, একটি রিপোর্ট যথেষ্ট সন্দেহজনক।
আর কি! আরো নির্দিষ্ট করে প্রয়োজনমতো অক্সিজেন চালু করার কথা লিখে দিতে হল।
দৃশ্য ২ঃ হঠাৎ করে ফিমেল ওয়ার্ড থেকে কলবুক। গিয়ে দেখা গেল এক বয়স্কা মহিলা, ৬৫ থেকে ৭০-এর মধ্যে বয়েস, শুয়ে আছেন। পরীক্ষা করে বোঝা গেল, একটু আগেই তিনি মারা গেছেন।
ঘণ্টা তিনেক আগে ভর্তি হয়েছিলেন, প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে। RAT নেগেটিভ ছিল, RTPCR করার কথা বলা হয়েছিল। ভর্তির সময় অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৬৫। স্টেরয়েড ও অন্যান্য জীবনদায়ী ওষুধ সব দেওয়া হয়েছিল। অক্সিজেনও। ডাক্তারী পরিভাষায় মৃত্যুর কারণ বলা যায়, ARDS (Acute Respiratory Distress Syndrome)!
দৃশ্য ৩ঃ প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছেন একজন বয়স্ক মানুষ। এনারও RAT করতে পাঠানো হল। পজিটিভ এল। তড়িঘড়ি কোভিড হাসপাতালে পাঠানোর কাগজপত্র তৈরী করা হল। অক্সিজেন দেওয়া হল।
এরই মধ্যে, বাড়ীর যারা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাদের একজন মিনমিন করে বলে বসলেন, আমরাও কিন্তু পজিটিভ।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, তাহলে এখানে কি করা হচ্ছে, বাড়ীতে না থেকে? উত্তর এল, বাড়ী থেকে এনাকে নিয়ে আসার মতো আর লোক নেই তো, তাই আমাদের…
দৃশ্য ৪ঃ ইমার্জেন্সির একটি টিকিট কেটে হাজির দুজন ভদ্রলোক। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে, টিকিটে নাম এক ভদ্রমহিলার। জানা গেল, রোগিনী গাড়ীতে আছেন।
ভদ্রলোকের কথায়, ওনার খুব “ডিপ্রেসন” চলছে, একটা কিছু করুন। খুব সম্ভব “রেসপিরেটরি ডিপ্রেসন” বোঝাতে চাইলেন। তাড়াতাড়ি রোগিনীকে নামাতে বলা হল।
হঠাৎ দৌঁড়ে এল এম্বুলেন্সের ড্রাইভার। বললো, আরে, এতো পজিটিভ কেস, “সেফ হোমে” ছিল, সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ী চলে গিয়েছিল। এখন খুব শ্বাসকষ্ট হওয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। গাড়ীতে রীতিমত বেশী অক্সিজেন দিতে হয়েছে।
প্রথম ভদ্রলোক এবারে সুরসুর করে মোবাইল বের করলেন। দেখা গেল RTPCR রিপোর্টের মোবাইল মেসেজ। পজিটিভ। তড়িঘড়ি কোভিড হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র তৈরী করা হল।
দৃশ্য ৫ঃ (খুব বোর হচ্ছেন বলে, এটাই শেষ!)
এক ভদ্রলোক ঢুকলেন আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে। চারদিন আগেই এখানে দেখিয়েছেন। টেস্ট লেখা হয়েছিল, ওষুধ লেখা হয়েছিল। এখন কাশতে কাশতে দম নিতে পারছেন না।
যথারীতি RAT করা হল, এবং নেগেটিভ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২-৯৩ এর মতো। রক্ত পরীক্ষা করাননি। শুধু বুকের এক্স-রে-টি করিয়েছেন। প্লেটটি বাড়িয়ে দিলেন। চমৎকার দেখা গেল, গ্রাউন্ড গ্লাস শ্যাডো, ডানদিকের অংশে।
মেল আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির ঠিকানা লেখা হল।
*****************************
এই সব দৃশ্যকল্প, পাত্র, মিত্র অমাত্য, সান্ত্রী সবই মূলত: কাল্পনিক। কোনো এক অদ্ভুত গ্রহের অদ্ভুত দেশের উপাখ্যান।
হয়তো “ভাইরাস”টিও কাল্পনিক। কোনো এক দু:স্বপ্ন-শেষে জেগে উঠে দেখা যাবে, কোত্থাও কিছু নেই, নদীতে লাশ নেই, শ্মশানে গণ-চিতা নেই, মৃদুমন্দ কর্পূরের গন্ধের মধ্যে উবে গেছে সব।
আহা! এমন করে ভাবতে তো কোনো দোষ নেই!!
*************************
ভাবলাম বটে… কিন্তু সেই…
SpO2 78%
SpO2 85%
SpO2 59%
সব হয়তো ভাইরাস নয়, তবু…