ধরুন, দেশকে বাঁচাতে গিয়ে শত্রুদের হাতে মারা গেল দেড় হাজার অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত বীর সেনানী ? অথবা পুলিশ?
ধরুন, দেশের কল্যানের জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে হলো দেড় হাজার তথাকথিত রাজনৈতিক দলের মহাবীর নেতা নেত্রীকে?
ধরুন, মানুষের জন্য প্রাণ দিল আমাদের সকলের প্রিয় দেড় হাজার বাবাজী, সাধু সন্ন্যাসী, নায়ক নায়িকা, বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী, খেলোয়াড়, কবি , সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের?
ধরা যাক, এই নির্দয় অতিমারী পেশাগত দায়বদ্ধতার জন্য দেড় বছরে কেড়ে নিল দেড় হাজার উকিল, বিচারপতিদের?
ধরে নিলাম, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম খালি হয়ে গেল একের পর এক ছাত্র ছাত্রীদের, শিক্ষক শিক্ষিকাদের অসহায় প্রতিরোধহীন মৃত্যুতে ?
কি হতো?
বিশ্বাস করুন – ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হতো ! রক্তক্ষয় হতো, মৃত্যু হতো।
ধর্মঘট হতো , প্রতিবাদ হতো চড়া দাগের,
অবশ্যই স্তব্ধ হয়ে যেত আমাদের জীবনযাপন।
নিদেনপক্ষে সরকার ক্ষমতা হারাতো আমাদের প্রতিবাদে।
হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হতো,
চাকরি দিতে হতো!
এই দেশের আইন আদালত বিচার সবাই দোষীদের শাস্তি দিতে খড়গহস্ত হয়ে উঠতেন।
কি জানি – হয়তো ফাঁসির মঞ্চে একের পর এক পড়ে থাকতো শত্রুদের লাশ !
ব্যাকগ্রাউন্ড এ আমাদের হিংস্র উল্লাস !
এই দেশের সুবিধাভোগী সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়াল ছেয়ে যেত অসম্ভব সব প্রতিবাদী বক্তব্যে !
এই দেশের হুজুগে মেতে ওঠা সংবাদসংস্থা তথা আন্তর্জাতিক মিডিয়া অব্দি উঠেপড়ে লাগতো শত্রুর বিরুদ্ধে, সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে !
সোজা কথা – একটা বড়সড় যুদ্ধ হতো। হতোই !
নির্বোধের মতো এতোক্ষণ যা কিছু পড়লেন , আসলে তার কোন কিছুই হয়নি , কোন কিছুই হবে না !
কারণ, মারা গিয়েছে দেড় হাজার এর বেশি ডাক্তার !
বলা ভালো – খুন হয়েছে অদৃশ্য শত্রুর হাতে !
মুছে গেছে সিথির সিঁদুর, চলে গিয়েছে ধরার মতো হাত।
মারা গিয়েছে দেড় হাজার এর বেশি পরিবারের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ!
হাজার হাজার সন্তানের মুখ চেয়ে আর ঘরে ফিরবে না দেড় হাজার এর বেশি বাবা মা!
চুরমার হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার সহকর্মী সহমর্মী ডাক্তারের বুক, যারা এখনো প্রতিদিন কাজ করে চলেছেন!
না , কোন যুদ্ধ হবে না।
কোন প্রতিবাদ ধর্মঘট হবে না!
কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হবে না এসব!
কোন রাজনৈতিক নেতা নেত্রী সংসদে প্রস্তাব পাঠ করবেন না!
কোন উকিল বিচারক লড়বেন না বিচার দিতে!
কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না!
কোন মিডিয়া, পরকীয়ার কেচ্ছা ছেড়ে এর প্রতিবাদে খবর লিখবে না!!
কোন কবি সাহিত্যিক খেলোয়াড় অভিনেতা অভিনেত্রী মালদ্বীপের বিলাস ভ্রমণ ভুলে এ খবর পড়বেন না!
কোন বুদ্ধিজীবী বা পরিচিত গণ্ডীতে থাকা সাধারণ মানুষ ও সভা সমাবেশ মিছিল করে মোমবাতি নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হবেন না!
না, এসবের কোনকিছুই হবে না।
লিখে রাখুন – জাস্ট কিচ্ছু হবে না!!
কারণ, মারা গিয়েছে সমাজের চোখে শত্রু, প্রতিদিন লাথি ঝাঁটা বিষ্ঠা গায়ে মাখা এককালের সব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা, এবং নিতান্তই সংখ্যালঘু ডাক্তার রা!
মানুষ কে সুস্থ রাখা ছাড়া, সুস্থ করে তোলা ছাড়া বলতে গেলে যাদের তেমন কোন ‘অবদান’ নেই ,
মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়া যাদের নামে তেমন কোন ‘অপবাদ’ নেই ,
তাঁদের মৃত্যু নিয়ে মাতামাতি করা এ সমাজের পোষায় না!!
কি এসে যায় – শহীদ হয়ে গেলে হাজার হাজার?
সভ্য এ সমাজে এক কাল্পনিক চরিত্র – ডাক্তার!