সত্যি কথা বলতে কি ডাক্তারি পড়া শুরু করার দিনগুলোতে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কথাবার্তা শুনে শুনে নিজেকে একটু আধটু হিরো হিরো মনে হত এটা অস্বীকার করবো না। তার পরে যত দিন গেছে, তত সেই ইলিউশন কেটে গেছে, নিজেকে জিরো মনে না হলেও এটা বেশ বুঝতে পেরেছি যে ওসব হিরো-ফিরো কিছু নয়, একটা স্পেশাল স্কিল সেট আছে তাই দিয়ে নিজের কাজ করে যাই।
এই কোভিভ মহামারী চলার সময় আবার সেই হিরো ওয়ারশিপ এর কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। আজ ডক্টরস ডে উপলক্ষে অনেক শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছি, তার বেশিরভাগেরই থিম ওই আপনি আমাদের হিরো গোছের। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে এটুকুই বলতে চাই যে হিরো-হিরোইন চিনতে বোধহয় একটু ভুল হচ্ছে।
আমরা নই, আসল হিরো-হিরোইন হলেন সেই মানুষগুলো যাঁদের উৎসাহে ভরসায় এখনো এই কাজে টিঁকে আছি, লড়াই-এর ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাই নি। তাঁরা আর কেউ নন, আমাদের আত্মীয়-পরিজন-পরিবার। সেই বাবা যিনি তাঁর ডাক্তার মেয়েকে, সেই মা যিনি তাঁর ডাক্তার ছেলেকে, সেই স্ত্রী যিনি তাঁর ডাক্তার স্বামীকে, সেই স্বামী যিনি তাঁর ডাক্তার স্ত্রীকে, সেই ছেলেমেয়ে যারা তাঁদের ডাক্তার বাবা/মাকে এক বারের জন্যও বলেনি যে একাজ করতে হবে না, পালিয়ে এসো লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে। এঁরা প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্ত প্রিয়জনের চির বিচ্ছেদের আশঙ্কা বুকে চেপে রেখে আমাদের সাথে আছেন। আসল হিরো-হিরোইন এঁরাই, সেই বাবা সেই মা, সেই স্ত্রী, সেই স্বামী পুত্র কন্যা পরিবার।
আমি, আমরা অনেকে এখনো বেঁচে আছি। যাঁরা বেঁচে নেই, কোভিভ যুদ্ধে শহীদ হলেন সেই ডাক্তারদের পরিবার-পরিজন এখন কেমন আছেন, কি ভাবে তাঁদের দিন চলছে – তার খবর প্রায় কেউ রাখে না। ডক্টরস ডে-তে তাই খুব একটা “হ্যাপি” নই।
সেই খবর রাখাটা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের কর্তব্য। আমরা একক ও সংগঠনগত প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এই শহীদ পরিবারগুলির পাশে আপনারাও দাঁড়ান। হিরো হিরোইনদের স্যালুট জানানোর এর চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব্বাই।