গত ২৯ অক্টোবর (২০২২) ল্যান্সেট-এর মতো মান্য জার্নালে “Challenges and opportunities for educating health professionals after the COVID-19 pandemic” শিরোনামে একটি বৃহৎ স্টাডি প্রকাশিত হয়েছে। এই স্টাডিতে যে সমস্ত বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হল কোভিড অতিমারির আগে এবং পরে মেডিক্যাল শিক্ষার খরচ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে। এর মধ্যে ভারতও আছে। স্বাভাবিক কারণেই ভারতের সংবাদপত্রগুলোতে, বিশেষ করে ইংরেজিতে প্রকাশিত দৈনিক এবং সাপ্তাহিকে, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ২০২২ সালের শেষে ল্যান্সেট-এর স্টাডি আমাদের কাছে মেডিক্যাল শিক্ষার ক্রয়-বিক্রয় করার অবস্থা কেমন জায়গায় রয়েছে এ বিষয়ে আমাদের নতুন করে সচকিত করল।
আমাদের আলোচনার জন্য এই স্টাডির দুটি বিষয়ের ওপরে মনোযোগ দেব – (১) গত ১০ বছরে প্রতিবছর পাস করে বেরনো মেডিক্যাল এবং নার্সিং গ্রাজুয়েটের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা দ্বিগুণ এবং নার্সিং গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ আয়ের দেশে যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে নিম্ন আয়ের দেশে এই বৃদ্ধির হার তুলনায় কম। আন্তর্জাতিকভাবে মেডিক্যাল ছাত্র-ছাত্রী, হেলথ প্রফেশনাল এবং বিভিন্ন সরকারের এ ক্ষেত্রে বার্ষিক খরচ মোটের ওপরে ১১০ বিলিয়ন ডলার। (২) কোভিড-১৯ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মেডিক্যাল শিক্ষাকে প্রভাবিত করেছে – শারীরিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত থেকে শিক্ষার পরিবর্তে অন-লাইন ক্লাসের ওপরে জোর পড়েছে। এ লেখাতে বলা হয়েছে – “অতিমারির ফলে হেলথ সার্ভিসের চাহিদা বেড়েছে, ইনফর্মেশন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং টেলিহেলথের প্রয়োগ বহুগুণ বিস্তৃত হয়েছে। পরিণতিতে মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের পারদর্শিতার ওপরে এর প্রভাব পড়েছে। হেলথ প্রফেশনালদের ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলোর কয়েকটি আগের শিক্ষা পদ্ধতির থেকে ভীষণভাবে ভিন্ন।”
এরপরে বিস্তৃতভাবে বিভিন্ন টেবিল এবং তথ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে যে প্রাক-কোভিড এবং কোভিড-পরবর্তী মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে খরচের কি পরিমাণ পার্থক্য ঘটেছে। সে প্রসঙ্গে ভারতের কথাও এসেছে। তথ্য বলছে, প্রাক-কোভিড সময় থেকে কোভিড-পরবর্তী মেডিক্যাল শিক্ষায় ভারতের ক্ষেত্রে খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। বেড়েছে চিনেও। অথচ একই সময়ে ইউরোপ এবং আমেরিকার (উত্তর ও দক্ষিণ উভয় মহাদেশেই) দেশগুলোতে মেডিক্যাল শিক্ষার খরচ কমেছে। নীচে দেওয়া টাইমস অফ ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত চিত্র থেকে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা করা যাবে।
এখানে ভিন্নতর এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের অবতারণা করতে পারি। আমরা অনেকেই জানি, আমেরিকায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য (তথা স্বাস্থ্য পরিষেবা) প্রায় সম্পুর্ণত বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলাফল যে খুব সুখের হয়েছে এমন কিন্তু নয়। ইউরোপের মতো অধিকাংশ ওয়েলফেয়ার স্টেটে (কল্যাণকামী রাষ্ট্রে) শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে এরকম নগ্নভাবে বাজারের মুঠিতে বাঁধতে দেওয়া হয়নি।
আমরা খানিকটা অতীতে ফিরে দেখতে পারি। জানুয়ারি ১৩, ২০০৫-এ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৯১.২৪) একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল “Mortgaging Our Future – The Cost of Medical Education” (পৃঃ ১১৭-১১৯) শিরোনামে। সে প্রবন্ধে জানানো হয় – ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি বা পাবলিক মেডিক্যাল স্কুলগুলোতে শিক্ষাগ্রহণের খরচ ১৬,১৫৩ ডলার, যেখানে প্রাইভেট মেডিক্যাল স্কুলগুলোতে এ খরচের পরিমাণ ছিল ৩২,৫৮৮ ডলার। এর সঙ্গে থাকা খাওয়ার খরচ, বই এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির বাৎসরিক খরচ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ ডলার ধরলে ৪ বছরে পাবলিক স্কুলে পড়ার মোট খরচ ১৪০,০০০ ডলার এবং প্রাইভেট স্কুলে ২২৫,০০০ ডলার। ১৯৮৪-১৯৮৫ সালের তুলনায় ১৯ বছরে মেডিক্যাল শিক্ষার খরচ পাবলিক এবং প্রাইভেট স্কুলে যথাক্রমে ১৫১% ও ৩১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ৮ বছর পরে, ২০১৩ সালে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় একই জার্নালে – “Are We Living in a Medical Education Bubble Market?” শিরোনামে (পৃঃ ১৯৭৩-১৯৭৫)। এ প্রবন্ধে বলা হয় – “In medicine, students buy their education from medical schools and residency programs (which pay wages that are lower than the value of the work that residents provide in return). This education is transformed into skills and credentials that are then sold to patients in the form of services.” (পৃঃ ১৯৭৩) এখানে অনেকেরই মার্ক্সের বিখ্যাত শ্রম এবং মজুরির মৌলিক ধারণা মাথায় আসতে পারে। এরপরের অংশটিও নজর দেবার মতো – যতক্ষণ অব্দি যারা এই ‘সার্ভিস’ কিনছে তারা উপযুক্ত দাম দিচ্ছে ততক্ষণ অব্দি ছাত্র এং শিক্ষানবিশরা “should be willing to pay more and more for the education that enables them to sell those services.” (পৃঃ ১৯৭৪) বলা হয়, যদি আমরা ‘হেলথ কেয়ার’-এর খরচ কমাতে চাই তাহলে “we need to reduce the costs of medical education … Only about 20% of health care costs are attributable to physician payments”। (পৃঃ ১৯৭৫)
মেডিক্যাল শিক্ষার সমগ্র বিষয়টিকে বুদ্বুদের সঙ্গে তুলনা করে প্রবন্ধটির উপসংহারে একটি বাস্তব এবং তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ আছে – “That bubble will burst when potential students recognize that the costs of training aren’t matched by later returns. Then the optometry bubble may burst, followed by the pharmacy and dentistry bubbles. At the extreme, we will march down the debt-to-income ratio ladder, through psychiatrists to cardiologists to orthopaedists . . . until no one is left but the MBAs.” (পৃঃ ১৯৭৫) আমাদের দেশের প্রেক্ষিতেও এ পর্যবেক্ষণ গুরুত্ব দিয়ে ভাবার মতো।
২০১৪ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত আরেকটি প্রবন্ধে একেবারে স্পষ্ট করে বলা হল – “In his theory of human capital, Nobel Laureate Gary Becker explains why economists believe that residents, not the hospital where they obtain their training, bear the full cost of their education: they accept lower wages during training that offset training’s significant costs. For example, if the total cost of training a resident is $80,000 annually but his or her services generate $130,000 in hospital revenue, then the resident would appropriately be paid a salary of $50,000 — the difference between the two.” (“The Economics of Graduate Medical Education”, N Engl J Med 2014; 370: 2357-2360)
২০০৩ সালে ল্যান্সেট-এ একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল “Cost of medical education in the USA” শিরোনামে। সে চিঠিতে তীব্র শ্লেষের সাথে বলা হয় Association of American Medical Colleges-এর নাম, এদের অতি উচ্চ মূল্যের মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য, পরিবর্তিত করে An Awfully Mercenary Crew রাখা যেতে পারে! (ল্যান্সেট, জুন ১৪, ২০০৩, পৃঃ ২০৮৪) ২০০৬ সালে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে (“Medical education: at what cost?”, জুলাই ১, ২০০৬) প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যেখানে বিশ্বব্যাংক নির্ধারিত দারিদ্র্য সীমার মান হল দিনে ১ ডলার বা তার কম আয় এবং যখন পৃথিবীর ১২০ কোটি মানুষ (সে সময়ের হিসেবে) দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে সে পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল শিক্ষা এত দামী হবে কেন? ২০১৭ সালে একই জার্নালে একটি লেখায় বলা হয় (“Expanding undergraduate medical education in the UK—at whose cost?”, মে ৩, ২০১৭) – “A considerable rise in tuition fees might change students’ priorities in deciding where to work and what specialty to train in.” অর্থাৎ মেডিক্যাল শিক্ষার খরচ বাড়লে এবং শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি ব্যয় করতে হলে, পাস করার পরে সে জেনেরাল বা ফ্যামিলি প্র্যাক্টিসের মতো তুলনায় অলাভজনক ক্ষেত্রে যাবে না। সে বেছে নেবে সেসমস্ত ক্ষেত্র যেখানে অনেক বেশি আয় করতে পারে।
পরিণতি? প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালানোর উপযোগী চালানোর মতো চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবে প্রান্তিক মানুষেরা। এবং আমরা এতদিনে জেনে গেছি যে অমর্ত্য সেন সহ পৃথিবীর প্রথম সারির বহু অর্থনীতিবিদ গভীরভাবে মনে করেন – একটি দেশের শিক্ষা এবং স্বাস্ত্য অবহেলিত থাকলে মানব সম্পদ কম তৈরি হবে যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের পক্ষে প্রতিকূল।
আমেরিকায় এর বিষময় ফল প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। ২০০৬ সালে (৩১ আগস্ট, ২০০৬) নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে “Primary Care — Will It Survive?” শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধে বলা হল – “The great majority of patients prefer to seek initial care from a primary care physician rather than a specialist … action is needed to calm the brewing storm before the levees break.”। কোভিড-উত্তর পরস্থিতিতে একই জার্নালে প্রকাশিত হল “Revitalizing the U.S. Primary Care Infrastructure” (সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, পৃঃ ১১৫৬-১১৫৮)। বলা হল – “The United States has learned from the Covid-19 pandemic what is required of the federal government’s executive branch to tackle a national health crisis … Moving forward, we believe an infrastructure investment plan should include oversight, tools, and resources for rebuilding primary care, with clear accountability vested in a single council and an overarching goal of achieving health equity.” মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
ভারতের ক্ষেত্রে ব্রিটেন বা ইউরোপের মডেল নয়, আমেরিকার মুক্ত বাজার অর্থনীতির মডেল অনুস্রণ করা হচ্ছে এখন। এর পরিণতি নীচের চিত্র দুটি থেকে ভারতের অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে – শিক্ষার খরচ এবং জনসংখ্যা ও ডাক্তারের অনুপাতের রাজ্যভিত্তিক বৈষম্যের ব্যাপারে।
(২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রিপোর্ট অনুযায়ী। সৌঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া)
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে এ সমস্ত মূল্যায়নের অনেক আগে আমেরিকায় নিযুক্ত ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত Kingman Brewster “Health at any price?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন (Journal of the Royal Society of Medicine Volume 7, 2 October 1979, পৃঃ ৭১৯-৭২৩)। সে প্রবন্ধে তিনি বলেন – “সমস্যা হচ্ছে এইটে যে একজন রোগী যখন মনে করে যে তার কিছু গণ্ডগোল হয়েছে তখন সে কোন ‘অর্থনৈতিক মানুষ’ নয়। সে একজন ভীত, অজ্ঞ, অসহায়, শোচনীয় প্রাণী। সে অবশ্যই স্বাস্থ্য চায়, প্রায় যে কোন মূল্যে। অর্থনীতিবাদেরা যাকে ‘প্রোভাইডার’ বলে সেরকম কাউকে সে খুঁজছে না। সে কেবলমাত্র পেশাগত বিবেচনা প্রার্থনা করে। সে পেশাগত দক্ষতাকেও বস্তুগতভাবে তুলনা করার মতো অবস্থায় থাকে না। পেশাগত বিবেচনার গুণমানের পরবর্তীতে ধাপেই একজন রোগী অনুভব করতে চায়, যে মানুষটি তার চিকিৎসা করছে তার যেন কত ভালোভাবে তার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে এর অতিরিক্ত কোন চিন্তা যেন চিকিৎসকের মাথায় না থাকে। সে কোন দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ (second best) চিকিৎসককে চায় না … সংক্ষেপে বললে একজন রোগী আন্তরিকভাবে খোঁজে একজন ‘truste’-কে, কোন ‘প্রোভাইডার’-কে নয়।” (পৃঃ ৭২০)
এ প্রবন্ধেই তিনি একটি গভীর প্রশ্ন তুলেছিলেন – “Just as the market ‘failed’ because the physician-patient relationship is not one of a seller and a buyer bargaining for each other; so too cost regulation ‘fails’ because it cannot fairly evaluate the necessity and the quality of the care provided and therefore cannot fairly determine what its cost should be.
Is there any way out of this expensive triangle of patient, physician, and government as underwriter?” (পৃঃ ৭২২) কাকস্য পরিবেদনা! এ প্রশ্ন অনুভূতিশীল চিকিৎসক এবং মানুষকে ভাবিয়েছে সত্যি, কিন্তু কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র, ইনসিউরেন্স কোম্পানি বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ভাবনায় কোন আঁচড় কাটে নি। কিন্তু প্রশ্নগুলো থেকে যায়। তাঁর শেষ পর্যবেক্ষণ ছিল – “By groping pragmatically we may not stumble upon a new and more adequate Ideology to compete with either Adam Smith or Karl Marx. But we may find that there are solutions which allow us to keep society more voluntary than it would be under either the rule of the unfettered market or the rule of the all-pervasive State.” (পৃঃ ৭২৩)
কিংম্যান ব্রিউস্টারের লেখা যে পুঁজি এবং শিক্ষার জগতে যে কোনরকম আঁচড় কাটে নি সেটা বোঝা যায় নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত “The Cost, Price, and Debt of Medical Education” (NEJM, July 2, 2020, পৃঃ ৬-৯) থেকে। এ প্রবন্ধে বলা হল – ১৯৬০-এর তুলনায় মেডিক্যাল শিক্ষার মূল্য (price) ২০১৮ সালে ৭৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে (বছরে ৪০,০০০ ডলার থেকে বেড়ে ৩,০০,০০০ ডলার হয়েছে)। প্রায় শতকরা ৭৫ জন ছাত্র loan নিয়ে শিক্ষার খরচ বহন করে এবং যখন তারা গ্র্যাজুয়েট হয় তখন গড়ে তাদের ধারের পরিমাণ ২০০,০০০ ডলার। এ লেখার সিদ্ধান্ত হিসেবে জানানো হয়েছে – “we will serve more of our goals by lowering the cost of medical education than by merely lowering the price.”
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেব দেওয়া যায় – শিক্ষা খাতে এবং সামরিক খাতে খরচের তুলনামূলক চিত্র। কমবেশি সর্বজনবিদিত এ বাস্তবতা যে বর্তমানে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বাদ দিলে আমেরিকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে যুদ্ধবাজ দেশ। কিন্তু ও দেশেও সামরিক খাতে বিপুল ব্যয়বরাদ্দ সত্ত্বেও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ শিক্ষা খাতের চেয়ে কম। ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। দু ক্ষেত্রেই তথ্যসূত্র হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।
এর সঙ্গে স্বাস্থ্যের জন্য জিডিপির বরাদ্দ তুলনা করলে ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার হবে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আনাদের স্বাস্থ্য বরাদ্দের পার্থক্য আছে। পার্থক্য আছে সরকারি এবং বেসরকারি খরচের মধ্যে। নীচের টেবিলের সূত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
এরকম এক প্রেক্ষিতে আমাদের বিচার করতে শিক্ষা (যার মধ্যে মেডিক্যাল শিক্ষাও অন্তর্ভুক্ত) এবং স্বাস্থ্যের দায়িত্ব রাষ্ট্র পূর্ণত খোলা বাজারের হাতে ছেড়ে দেবে কিনা। আমাদের অবস্থান হচ্ছে না, এবং না। জনসাধারণের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কোন অজুহাতেই এ দায়িত্ব বিসর্জন দেওয়া চলবে না। শিক্ষার বেসরকারিকরণের একটি নমুনা নীচের টেবিল থেকে পাওয়া যাবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ল্যান্সেট-এর স্টাডিটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
৩টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস পড়ার খরচ নীচে দেওয়া হল। এর সাথে তুলনা করুন “ডিমড ইউনিভার্সিটি”তে পড়ার খরচের কথা।
College | Annual Fees | |
Management (₹) | NRI ($) | |
Jawaharlal Nehru Medical College, Aligarh Muslim University, Aligarh | 39,990 | 75,600 |
Institute of Medical Sciences, Banaras Hindu University (BHU), Varanasi | 14,874 | – |
Medical Colleges affiliated with the University of Delhi (DU) | 3,00,000 (surety bond) |
MBBS Fee Structure for Deemed Universities
GITAM Institute of Medical Sciences and Research, Visakhapatnam | 1881000 | 1881000 | 14000 |
Institute of Medical Sciences and SUM Hospital, Bhubaneswar | 1790000 | 1790000 | 4000 |
Rural Medical College and PIMS, Loni | 1275000 | 1275000 | 3333 |
Kalinga Institute of Medical Sciences, Bhubaneswar | 1600000 | 1600000 | 14000 |
Mahatma Gandhi Medical College and Research Institute, Puducherry | 2000000 | 2000000 | 14500 |
Sri Lakshmi Narayana Institute of Medical Sciences, Puducherry | 2150000 | 2150000 | 10416 |
Vinayaka Missions Medical College and Hospital, Karaikal | 1800000 | 1858550 | 5000 |
A.C.S. Medical College and Hospital, Chennai | 2300000 | 2440000 | 15417 |
Aarupadai Veedu Medical College and Hospital, Puducherry | 1950000 | 2008550 | 10000 |
Chettinad Hospital and Research Institute, Kancheepuram | 2200000 | 2200000 | 26250 |
Meenakshi Medical College and Research Institute, Chennai | 2250000 | 2250000 | 12500 |
Saveetha Medical College, Chennai | 2200000 | 2340000 | 8000 |
Shri Sathya Sai Medical College and Research Institute, Kancheepuram | 1800000 | 1800000 | 14500 |
Shree Balaji Medical College and Hospital, Chennai | 2475000 | 2475000 | 6250 |
Sri Ramachandra Medical College and Research Institute, Chennai | 2200000 | 2260000 | 200000 |
SRM Medical College Hospital and Research Centre, Chennai | 2250000 | 2260000 | 22000 |
Vinayaka Missions Kirupananda Variyar Medical College and Hospital, Salem | 2000000 | 2058550 | 5000 |
Santosh Medical College and Hospital, Ghaziabad, NCR Delhi | 2400000 | 2400000 | 16667 |
RajaRajeswari Medical College, Bengaluru | 2350000 | 2350000 | 12500 |
Sri Siddhartha Academy of Higher Education, Begur | 1115750 | 1115750 | 10000 |
ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, কাজাকাস্থান, চিন, রাশিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতো দেশে ৪-৫ বছরের এমবিবিএস কোর্স ও ১ বছরের ইন্টার্নশিপের মোট খরচ ভারতের বেসরকারি কলেজের তুলনায় ২-৪ গুণ কম। ফলে “ব্রেন ড্রেন” থেকে “ব্রেন গেন”-এর যে কথা রাষ্ট্রের তরফে মোহময়ী করে প্রচার করা হচ্ছে সেটা বাস্তবে হচ্ছে না।
একদিকে “ভারত-ইন্ডিয়া” বিভাজন, আরেকদিকে “ডিজিটাল ভারত” গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া শিক্ষা ও সামাজিক বিভাজন – এ দুয়ের জাঁতাকলে ভারতের গড়পড়তা পড়ুয়া এবং শিশুরা ক্লিষ্ট, বর্ণহীন জীবনে প্রবেশ করছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ তথা সমাজতাত্ত্বিক পার্থ চ্যাটার্জি ভারতের নতুন পথের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সাধারণ এবং গড়পড়তা মানুষদের ওপরেই জোর দিয়েছেন। এদের ট্যাক্সের টাকাতেই দেশ চলে। এদের পরিবারের সন্তানদের আমরা কেন বিপুল ব্যয় সাপেক্ষ অনিশ্চিত শিক্ষা তথা মেডিক্যাল শিক্ষার দুনিয়ায় ঠেলে দেব? কে শ্রীনাথ রেড্ডি তাঁর একটি লেখায় বলেছেন – “63 million of its people to sink into poverty each year as a result of unaffordable health care costs”। (“India’s Aspirations for Universal Health Coverage”, N Engl J Med 373;1, July 2, 2015) একদিকে “মেডিক্যাল পভার্টি ট্র্যাপ”-এর পাল্লায় পড়ে প্রায় সাড়ে ছ্য কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের খরচ মেটাতে প্রতিবছর দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে যাওয়া, অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষার বিপুল খরচ মেটাতে অপারগতা – “আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। / অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।”
এ ব্যবস্থা থেকে আমরা কবে বেরোতে পারব জানি না। কিন্তু ডাক্তারদের মনুষ্য সমাজের একটি অংশ হিসেবে এ নিয়ে ভাবার কথা। ভাবতে হবে নিজেদের সন্ততিদের কথা ভেবে। আমাদের সমস্যার কথা আমাদেরকেই বলতে হবে।
শিক্ষা ও চিকিৎসা যখন থেকে স্বাস্থ্য মাফিয়া কর্পোরেট ও তাদের দোসরদের হাতে চলে গেছে সেই দিন থেকেই সাধারণ নয় অসাধারণের জন্য ব্যাবস্থা পাকা হয়েছে। বারবার কোবিড কালের উল্লেখ করা হয়েছে এই লেখায়, বিশ্ব কে একমুখী বিশ্ব নির্মানের খসড়া চূড়ান্ত করেই কোবিড প্রটোকলের আমদানি।দেশে দেশে ফাউচি অবতার আমদানি করা হয়েছে, গনতন্ত্রের নামে বিরোধী মতের কন্ঠরোধ এমনকি নিরব করে দেবার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে।কবিড পরবর্তী সাডেন ডেথ নিয়ে চিকিৎসক গবেষক সকলে নিরব যদিও ল্যানসেট উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন লেখ জারি করেছে, কাপড়ের বুননের ছিদ্র কি করে ভাইরাসের চেয়ে ছোট হয়ে গেল কোন চিকিৎসক বোঝাতে পারেন নি কিন্তু প্রটোকলের তাবেদারী করে চলেছেন এখনো পর্যন্ত। ডিজিটাল ইকনোমি দিয়ে ৫জি দিয়ে মানব শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হচ্ছে,হীরক রাজার দেশে সাধারণ মানুষের জন্য খোঁজ চলছে সেই পন্ডিতের যিনি “দড়ি ধরে টান দেবার নয়া সূর্যদয়ের ভোরে মানবজাতির ভবিষ্যত প্রজন্ম কে সুরক্ষিত করবেন।
খুব গুুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন সরল ভাবে, রাষ্ট্র খোলাবাজারে সাস্থ, শিক্ষা সহ সবকিছু বিপণনের খালায় মেতেছে। আমাদের জাগ্রত হতেই হবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই। অসংখ্য ধন্যবাদ অনবদ্য লেখনী তুলে ধরার জন্যে
Anobaddo lekha.
Rastro Rastrer matoito cholbe, munafa aaro munafa.
janogan Pristo hobe.
Protirodh na gore tulte parle agami din aro aro voyanok hote choleche.
Very important topic sir in this scenario. Very beautifully described.
বাজারের জন্য ডাক্তার বানানোর জন্য মুনাফাবাজরা অর্থ আদায়ের চেষ্টা সার্থক। রাষ্ট্রের স্বার্থে মানুষের জন্য শিক্ষিত ছাত্র তৈরী করা যে বেশী জরুরী। সেইখানে অর্থ বেশী বাড়ালে গরীব মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। ক্ষতি হবে সমাজের।
কিন্তু ডিগ্রীওয়ালা ডাক্তার আর চিকিৎসাশাস্ত্র শেখা ডাক্তারদের সাধারণ মানুষ করবে কি করে যেখানে ভুয়ো “ডাক্তার”রাও চুটিয়ে ব্যবসা করেন।
কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
সমস্যাটা তুলে ধরার জন্য নমস্কার জানাই ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে।
অন্যান্য শিল্পের যেখানে অস্তিত্ব বিপন্ন বা অলাভজনক সেখানে মেডিক্যাল কলেজের ব্যবসা এখন পুঁজিপতিদের আশা ভরসা।
ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মেডিক্যাল কলেজে সর্বাধিক মুনাফায় শেষ কথা। না আছে ছাত্র সিলেকশনের কিছু মাপকাঠি, না আছে পড়াশুনো বা কাজ করার পরিকাঠামো। পরিকাঠামোয় বহু নতুন সরকারি কলেজেও কাছা কাছি অবস্থা।
MCI যেটুকু নজরদারি করতো এখন তাও নেই। NMC inspection হাস্যকর হয় উঠছে। কলেজেই inspector ঠিক করছে – অবশ্যই কাঞ্চন মূল্যে।
সংঘটিত ও সচেতন জনগনই পারে সমাধান করতে।