★
(নাটুর পুরো নাম অম্লান নট্টচৌধুরী। পেশায় রিটায়ার্ড কেমিস্ট্রি প্রফেসার। তার ইসকুলের বন্ধুরা তার স্বল্প উচ্চতার জন্য ডাকনাম দিয়েছিল নট্টচৌধুরী থেকে নাটু চৌধুরী সংক্ষেপে নাটু।
প্রামাণিক আমেরিকাবাসী ডাক্তার। পুরো নাম বিল্বদল প্রামাণিক কিন্তু ওই নামে না ডেকে সবাই তাকে প্রামাণিক বলে।
আসলেই পুরোনো বন্ধুদের ডাকটাকের কোনও ব্যাকরণ হয় না। সংলাপেরও।)
– হ্যালো নাটু, কেমন আছিস?
– আরে প্রামাণিক, বল। কদ্দিন পরে ফোন কল্লি! তোদের খবর সব ভালো?
– হ্যাঁ, ওই আর কী! কোভিড কোভিড করে তো জিনা হারাম করে দিল শুয়োরের বাচ্চা ভাইরাস।
– যা বলেছিস। সীতাংশুদা’ কেমন পট করে চলে গেল, চেনাজানার মধ্যে!
– কোন সীতাংশু?
– আরে আমাদের ননীর দাদারে। সেই যে যাকে দেখে তুইও ডাক্তার হলি। শালা কোভিডের জন্য এক বছর ঘরের বাইরে বেরুল না। প্র্যাকটিস করল না। তার পরে যেই চেম্বার করা শুরু করল, এক মাসের মধ্যে শেষ।
– ছাড় তো! ওই সব ফালতু মরার গল্প রাখ। বাঁচার কথা বল। তোর খবর বল।
– আর খবর! কী বলি বল দেখি? এই গতকালই পড়ছিলাম, কে এক সাইন্টিস না সমাজকর্মী কী যেন, তাকে নিয়ে একজন লিখেছে। নামটা… আঃ, ভুলেও গেলাম। যে লিখছে সে শেষের দিকে লিখল, অবশেষে এই বিরাট মাপের মানুষটা তার সমস্ত কাজ শেষ করে যথাকালে চৌষট্টি বছর বয়সে মারা গেলেন।
– তা, তাতে তোর কী এলো গেল?
– না, তেমন কী আর হল। শুধু মনে পড়ে গেল আমার বয়স আটষট্টি। মানে আমার ওই যথাকালটা চার বছর আগে পেরিয়ে গেছে। তোরও তো তাই। এখন আমরা এক্সট্রা টাইম খেলছি সবাই, বুঝলি তো!
– তাতে কী? যে কোনও সময়ে গোল্ডেন গোল হয়ে যাবে এই তো? এই নিয়ে ভেবে কী হবে?
– না রে প্রামাণিক। গোল্ডেন গোলের কথা ভাবছি না। ভাবি এই এক্সট্রা টাইমের খেলাতেও যদি রেড কার্ড দেখতে হয়, তার মত দুর্ভাগা…
– নাটু, ছাড় তো। সেই ছেলেবেলা থেকে এই সব আতাক্যালানে মার্কা আঁতলামি মারাচ্ছিস তুই। একই রয়ে গেলি। কে কী রেড কার্ড, ইয়েলো কার্ড দেখাবে তার জন্য বাঁচছি নাকি আমরা? তুইও তো তাই
– আমিও তাই? মানে?
– নাটু, ফোন না করেও, কথা না বলেও টের পাই রে। দিব্যি ব্যাপক মস্তিতে আছিস। রোজ রাত্তির দুটো তিনটে অবধি ফেসবুকে সবুজ আলো জ্বেলে বসে থাকিস! কী ভাবিস তুই, দেখি না নাকি? অত রাতে কোথায় কী করিস, বুঝি না?
– ওহ্, তোর ওখানে তো তখন মাঝ দুপুর, তাই না?
– কথা ঘোরাস না। যে’টা বললাম স্বীকার করলি কি না বল?
– হ্যাঁ, মানে ইয়ে, জেগে থাকি ঠিকই। ফেসবুকেও থাকি, সে’টাও ঠিক। কিন্তু সে ওই মনখারাপের জন্যেই। ফেসবুকে নিজে কিছু করি না রে!
– কিছু করিস না তো ফালতু জাগিস কেন অত রাত অবধি?
– আমার যা কাজ। ছেলে আর মেয়ে দু’টোই তো দূরে। ফোন করলে হয় বেজে যায়, নয় বিজি, নইলে আউট অফ রিচ। হোয়াটস অ্যাপে? মেসেজের সাড়া নেই। কী না, একজন অফিসে ব্যস্ত, অন্যজন তার ইউনিভার্সিটিতে।
– তো? ফেসবুকে কী?
– ফেসবুকে খুঁজে খুঁজে দেখি, চেনা লোকজনের পোস্টে কোনও রিঅ্যাকশন দিল কিনা, কমেন্ট করল কিনা ওরা কেউ।
– সে দিলে দেবে। ওদের চয়েস। তুই পাহারা দেবার কে? দিবিই বা কেন?
– আসলে ফেসবুকে দেওয়া টাইম দেখে বুঝি, ওরা তখন অবধি ভালো আছে। মনটা শান্ত হয়। কোথাও বেড়াতে গেলে ফিরে আমায় তো জানায় না! ওদের পোস্ট করা ছবি দেখে বুঝি ওরা ঠিক ভাবে ফিরেছে। রাত জেগে ওদেরই খুঁজি। বাপ হবার শাস্তি প্রামাণিক।
– ভাগ্যিস বিয়ে করিনি রে নাটু! বেঁচে গেছি, বল?