–কেমন আছ?
–এ প্রশ্ন এখন অবান্তর। এখানে
কেউ ভালো বা খারাপ থাকে না।
–মন ভালো নেই…
–যা নেই, তার আর ভালো কি?
আবার বলি।
–মনে হচ্ছে না, পাল্টে গেল সব?
–ঘটনাপ্রবাহের কিছু পাল্টায়নি।
শুধু পাল্টে গেছে আমার নাম।
হঠাৎ দেখলাম হয়ে গেছি অভয়া।
তিলোত্তমা।
–সব মন্দে একটা ভালো থাকে।
অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে গেলে।
তোমার জন্যে মিছিল।
তোমার জন্য বাংলার এই নব-জাগরণ।
গর্বিত লাগে না?
— মৃত্যুর পরের প্রাপ্তি কে চায়?
কে বোঝে? আমি তো সাধারণ হতে
চেয়েছিলাম!
–তাহলে প্রতিবাদী হয়েছিলেন কেন?
ভয় হয়নি তখন?
–কেন ভয় হবে? কলেজ কি আমার
ঘরবাড়ি নয়? শিক্ষক কি নয় মা
বাবা? মানুষ মা বাবার কথায়
প্রতিবাদ করে কি খুন হয়? ধর্ষিত
হয়?
–অনেকের তো এই দশা। সকলে কি
প্রতিবাদ করে?
–করে না তো! কিন্তু প্রতিটা সত্তা তো
ভিন্ন। আমি নাহয় বিরলের মধ্যে
বিরলতর ছিলাম!
–তাহলে মানবসভ্যতার প্রতি
অভিমান আছে বলো!
–আমি সাধারণ ছিলাম। অভিমান
কি অপরাধ! কিন্তু মানবসভ্যতার
প্রতি? অত তো ভাবিনি!
ডালভাতের মানুষ অত ভাবে?
–শহীদের মর্যাদা পাচ্ছেন। হয়ে
উঠেছেন বীরাঙ্গনা, তাও এত বুক
ভারি?
–ওগুলো তো আমার প্রাপ্তি নয়!
তাদের প্রাপ্তি, যারা আন্দোলনে।
প্রতিবাদে। মশালে।
–তোমার মতে প্রাপ্তি কি?
–সাধারণের মতো বাঁচা। তাদের
শেষদিন পর্যন্ত মা বাবার ধরে।
বড় মূল্য চুকিয়ে এ সার সত্যি
বুঝেছি।
–মানুষকে কি বলবে?
–বলব বাঁচো। বেঁচে থাকো। ততক্ষন
ঘৃণা ছোঁড়ো ঘৃণীতের দিকে,
যতক্ষন না প্রতিক্রিয়ার বিষে নীল
হয়ে যাও।
–কেন?
–কারণ তাতে তুমি সন্তানহারা করছ
তোমার বাবা মা’কে। সন্তানের মতো
বলে কিছু হয় না। যারা বলে,
তাদের এ সরল স্বীকারোক্তির সাহস
নেই।
–তাতে পৃথিবী ভালো থাকবে?
পাল্টাবে? শিশু বাসযোগ্য হবে
আবার?
–কিন্তু কেবল আমিই কেন?
তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার
কথাটার মানে আগে বুঝতাম না।
এখন বেশ বুঝতে পারি।
–আবার যদি জন্ম নাও। কি করবে?
–বাঁচব।সুখে সখে আহ্লাদে
স্বাধীনতায়। খ্যাতিতে বিশ্বাস নেই।
–তোমার এ কথা মানুষকে জানাই?
–জানাও। যারা জীবদ্দশায় পাশে
থাকেনি। অন্তিমপর্বের পর তাদের
আমি পরোয়া করি না।
২৯.০৯.২০২৪