বিধবাবিবাহ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, স্ত্রীশিক্ষা প্রতিটাই পরস্পর সম্পৃক্ত। তবুও আলাদা করলাম। না হলে চরিত্রটা কেবল ঘটনা বহুল এবং সমগ্র কর্মকান্ড আমার সীমিত প্রকাশ ক্ষমতার অসাধ্য হয়ে ওঠে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের একই সঙ্গে চলছিলো বিধবাবিবাহের তোড়জোড়। রাজবল্লভ রায়ের আবেদনের পরেই ইয়াং বেঙ্গল সদস্যরা, বিশেষতঃ প্যারীচাঁদ মিত্র এই বিষয়ে বেঙ্গল স্পেক্টেটরে লিখতে থাকেন, রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত “আত্মীয় সভা” এবং বিভিন্ন জায়গায় তাত্ত্বিক লেখালেখি পূর্ব থেকেই চলছিলো। রসিককৃষ্ণ মল্লিক, কিশোরীচাঁদ মিত্র, রাধানাথ শিকদার প্রভৃতি মানুষ বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখায় বিধবাবিবাহের পক্ষে লিখছিলেন।রাজকৃষ্ণ মিত্রের অনুরোধে ঈশ্বর বেঙ্গল স্পেক্টেটরে লিখলো বাল্যবিবাহের দোষ। ১৮৫৫ সনে অক্ষয়কুমার দত্ত তত্ত্ববোধিনীতে লিখলেন এক মানবিক আবেদনময় পত্র। অক্ষয়কুমার বৈজ্ঞানিক চিন্তার মানুষ ছিলেন, প্রথমে হিন্দুসমাজ ত্যাগ করে ব্রাহ্মসমাজের সদস্য হ’ন পরে ব্রাহ্মসমাজের বর্ণবাদী ও আচারসর্বস্বতায় বিরক্ত হয়ে অজ্ঞেয়বাদী এবং আমার ঈশ্বরের অনুরাগী হয়ে ওঠেন।
তাত্ত্বিক লড়াই চলতে থাকে; প্যারীচাঁদ মিত্রের দি ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় ‘ম্যারেজ অভ হিন্দু উইডো’ নামক লেখা বেরোয়(১৮৫৫)। এই লেখাটির বিশেষত্ব হচ্ছে গত এই বিষয়ে বিগত ত্রয়োদশ বৎসরের সমস্ত লেখার নির্যাস এতে ছিলো। এতদিন কেবলমাত্র তাত্ত্বিক আলোচনা হয়েছে, বক্তৃতা হয়েছে, সব মিলে গভীর জ্ঞানের প্রকাশ ব্যতীত কিছুই হয়নি। ঈশ্বর নিয়ে এলো পরাশর সংহিতার শ্লোক-“নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ||পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরন্য বিধিয়তে||”
এর অর্থ স্বামী যদি নষ্ট হ’ন, মৃত হ’ন, প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, ক্লীবত্ব লাভ করেন বা পতিত হ’ন তাহলে নারী অন্য পতি গ্রহণ করতে পারে।
লেখাটি তত্ত্ববোধিনীতে প্রকাশ পায়। যথারীতি প্যারীচাঁদ মিত্র এই শ্লোক খন্ডন করলেন; পরাশর সংহিতা নাকি কলিযুগের(?) পক্ষে অনুপযোগী। প্রত্যেকে নিজস্ব জ্ঞানের প্রভায় দিগ্বিদিক সমাচ্ছন্ন করে ফেললেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই এগোলো না। ঈশ্বর তখন বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধাচারী সকল পন্ডিতকে উন্মুক্ত সভায় তর্কে আহ্বান করলো এবং লোকাচার বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখলো; সেই তর্কযুদ্ধে (রাজা রাধাকান্ত দেব আয়োজন করেন, বিরুদ্ধে ছিলেন নবদ্বীপের বিখ্যাত পন্ডিত ব্রজনাথ তর্করত্ন; রাজা কোনও পক্ষ অবলম্বন না করায় ঈশ্বর সরকারবাহাদুরের শরণাপন্ন হয়) ঈশ্বরের প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং শাস্ত্রজ্ঞানের কাছে স্থূল শাস্ত্রজ্ঞান পরাজিত হলো। সেই অর্থে ঈশ্বরই ছিলো বিধবাবিবাহের প্রকৃত প্রবক্তা। রাজা রাধাকান্ত দেবের প্রকাশ্য মদতে প্রায় ৩৮০০০ স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি লাটসাহেবের নিকট প্রেরিত হলো। ব্রজনাথ বিদ্যারত্ন, কাশীনাথ তর্কালঙ্কার, রামতনু তর্কসিদ্ধান্ত, প্রসন্ন কুমার মুখোপাধ্যায় পত্রিকা প্রকাশ করে বিরুদ্ধমত প্রচার করা আরম্ভ করলেন। এনারা সকলেই নব্যন্যায়ের পন্ডিত ছিলেন, রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন এঁদের পৃষ্ঠপোষক। উৎপত্তি হলো পূর্ব স্বামীর সম্পত্তি এবং দ্বিতীয় বিবাহসঞ্জাত সন্তানের সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে তীব্র বাদানুবাদ।
ঈশ্বরের তীক্ষ্ণ লেখনী এবং বক্তব্যের মানবিক যুক্তিজাল পুনর্ভূ(দ্বিতীয়া স্ত্রী) এবং তৎসঞ্জাত সন্তানের (পুনর্ভৌব) সম্পত্তির দাবি নিয়ে শঙ্খ, যাজ্ঞবল্ক্য, হারীত এবং মনুসংহিতার উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ সকল বিষয়ের চমৎকার সমাধান করলো। পরাশর কলিযুগের বিধবা নারীর জন্য তিন বিধান দিয়েছিলেন-“সহগমন(সরকার বাহাদুর নিষিদ্ধ করেছেন)। ব্রহ্মচর্য অথবা বিবাহ। ব্রহ্মচর্য এই দেশে লোকাচার বিরুদ্ধ। ঐ কঠিন জীবন সন্ন্যাসী ব্যতিরকে সম্ভবে নয় (জীবে প্রেমের বিবেকানন্দ বরাহনগর আশ্রমে বহু বাধা সত্ত্বেও পাঁঠাবলি চালু করেন)। বিস্তর তর্কান্তে, ঈশ্বরের মত বহাল থাকলো।
#আইন💝
সন ১৮৫৬, লর্ড ক্যানিংয়ের হাতে পাস হলো বিধবাবিবাহের আইন। লর্ড ডালহৌসি এই আইনের খসড়া করেন। গ্রান্ট সাহেব খসড়া পেশ করেন। বিধবাদিগের ভয়ঙ্কর এই প্রথার মূলে ছিলো সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।লর্ড ক্যানিং উত্তরাধিকার সূত্র বজায় রাখলেন। ঈশ্বর সফল হলো। (নিও প্যালিওলিথিক যুগে অ্যাগ্রোলিলিক সভ্যতাতেও নারীদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য পিতৃতন্ত্রের পূর্বসূরী হিসেবে ম্যাট্রিলিনিয়ার সমাজ আসে।)
বিধবাবিবাহ প্রচলনের নেপথ্য কাহিনী হিসেবে বহু আষাঢ়ে গল্প প্রচলিত আছে। খুব সম্ভব দয়েহাটার ভগবতচরণ সিংহের বাড়ির বিধবা কন্যা রাইমণি মাতৃস্নেহে বালক ঈশ্বরকে সব ঝড়ঝাপটা থেকে রক্ষা করতেন। হয়তো এই বিধবা- পরের বাড়ির পাতানো মাতার দুঃখের চিহ্ন এসে বিধবাবিবাহ প্রচলনে প্রতিফলিত হয়েছে। (বিনয় ঘোষ, বিদ্যাসাগর ও বাঙ্গালী সমাজ)। এই অংশটুকু পাঠের জন্য হয়তো উৎসাহী পাঠকের তিন মিনিটকাল অতিরিক্ত সময় ব্যয়িত হলো, আসুন, আমরা একটু বঙ্গসমাজের (শুধু তৎকালীন নয় তৎপরবর্তীতেও) প্রতিক্রিয়ায় দৃষ্টিপাত করি।
ভিঞ্চুরের মারাঠা পন্ডিতরা বিধবাবিবাহের পক্ষে রায় দিলেন। পুনার অধিবাসীরাও সমমত প্রকাশ করলেন।
সাগরের তরঙ্গ তার সীমা লঙ্ঘন না করলেও আমাদের বিদ্যাসাগর কথার সীমা লঙ্ঘন করে বিধবাবিবাহ কার্যে রূপান্তর করলো (কবি ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লক্ষ্য করে বিনয় ঘোষের লেখা, গুপ্ত কবির একটি উদাহরণ ‘করিয়াছে দলাদলি, বাধিয়াছে গোল/বিধবার বিয়ে হবে,বাজিয়াছে ঢোল)। পাত্র খাটুয়া গ্রামের বিখ্যাত কথক রামধন তর্কবাগীশের পুত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। হিন্দু কলেজ থেকে কৃতকার্য হয়ে তখন মুর্শিদাবাদের জজ-পন্ডিত।বিধবাবিবাহের পাত্রী বর্ধমানের পলাশডাঙ্গা নিবাসী ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা দশ বৎসর বয়ঃক্রমের শ্রীমতি কালীমতি। কবি ঈশ্বর গুপ্তের “সংবাদ প্রভাকর” ছিলো বিধবাবিবাহ বিরোধী। ঈশ্বর গুপ্ত আমার ঈশ্বরের নামে বিবিধ ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লিখতে আরম্ভ করলেন এবং ব্যঙ্গাত্মক সংবাদ প্রকাশ করলেন। ঈশ্বর কিন্তু নাছোড়বান্দা। যাতে কেউ অঙুলি নির্দেশ করে বলতে না পারে বিধবার বিবাহ নমো নমো করে সমাধা করেছে, তাই ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে ঋণ করেও প্রতিটি বিবাহে দশ সহস্র টঙ্কা ব্যয় করতো। বহু বার প্রবঞ্চিত হয়েছে। নৈরাশ্য ঘিরে ধরেছে। কিন্তু হাল ছাড়েনি। সোমপ্রকাশ পত্রিকা একটি ফন্ডের (ফান্ড) উল্লেখ করে (৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১২৭৪, ২৭সংখ্যা)। যে ঈশ্বর শত অন্নকষ্টেও কারও নিকট মাথা নত করে নি, সে ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে সময় ভিক্ষা চাইছে (পত্র, সুরেন্দ্রনাথের পিতা ডাক্তার দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা)।
অমূল্যচরণ বসু তৎকালে লিখলেন “বিদ্যাসাগর পথে বাহির হইলে চারিদিক হইতে লোক তাঁহাকে ঘিরিয়া ফেলিত।কেহ কেহ তাঁহাকে প্রহার করিবার এমনকি মারিয়া ফেলিবারও ভয় দেখাতো। বিদ্যাসাগর এ সকল ভ্রূক্ষেপও করিতেন না। একদিন শুনিলেন তাঁহাকে মারিবার চেষ্টা চেষ্টা হইতেছে। কলকাতার এক ধনাঢ্য ব্যক্তি মারিবার জন্য লোক নিযুক্ত করিয়াছেন।…….” আমার ঈশ্বর সরাসরি সেই মানুষটির বাটীতে উপস্থিত হলো। কারণ হিসেবে বললো “আপনার লোকেরা আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া আমার সন্ধানে ফিরিতেছে……তাহাদিগকে কষ্ট দিবার আবশ্যক কি?আমি নিজেই যাই”(খুব সম্ভব রাজা রাধাকান্ত দেব)। এই সময় পিতা ঠাকুরদাস পুত্রের জীবন রক্ষার্থে শ্রীমন্ত বলে একজন জেলে-সর্দারকে পাঠিয়ে ছিলেন। একদিন বিধবাবিবাহ সম্পন্ন করে মধ্যরাতে ফেরার সময় দেখলেন, কিছু দুর্বৃত্ত ঠনঠনিয়ার কালীতলায় তাকে মারবার জন্য জমায়েত। ঈশ্বর গলা ঝাড়া দিয়ে বললো “কই রে ছিরে সঙ্গে আছিস তো?” (বিনয় ঘোষ বিদ্যাসাগর ও বাঙ্গালী সমাজ) দুর্দান্ত লাঠিয়াল শ্রীমন্ত সর্দারকে দেখে তারা চম্পট দিলো।সাধারণতঃ অসৎ ব্যক্তির সাহসের দৌড় সীমাবদ্ধ হয়।
বিপক্ষীয় পন্ডিতগণের মত ছিলো “বিধবা গত জন্মের পাপে হয়। একবার বিবাহ দিলে আবার বিধবা হবে”।
বিবেকানন্দ বলেন (ইংরাজি রচনাবলীর vol 9, page 676) A widow is expected to never marry again.
১৯০০ সনে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বক্তৃতায় বলেন “যেহেতু পুরুষের থেকে নারী সংখ্যায় বেশী। তাই বিধবাবিবাহ হলে কুমারীদের বিবাহ হবে না”।
“স্ত্রীলোকের সতীত্বনাশ হলে ছেলেপিলে জন্মায় না। সমগ্র জাতির ধ্বংস। তবে পুরুষ মান্সে দশ গন্ডা বে করলে ক্ষতি কিছু নেই, বরং বংশবৃদ্ধি খুব হয়”(বাণী ও রচনা, ষষ্ঠ খন্ড,১৯৬ পৃষ্ঠা; বিবেকানন্দের রচনা, রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্বোধন প্রকাশনী)
“আমরা সন্ন্যাসীর জাতি, সর্বদাই তপস্যা করিতেছি এবং তপস্যা আমরা ভালবাসি। মেয়েরা কখনও মাংস খায় না। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন আমাদের কষ্ট করিয়া পানাহারে সংযম অভ্যাস করিতে হইত, মেয়েদের পক্ষে ইহা কষ্টকর নয়। আমাদের মেয়েরা মনে করে, মাংস খাওয়ার কথা চিন্তা করিলেও মর্যাদাহানি হয়” (১৯০০ খ্রীস্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারী ক্যালিফর্নিয়ার প্যাসাডেনায় শেক্সপীয়র ক্লাব হাউসে প্রদত্ত ‘ভারতীয় নারী’ শীর্ষক বক্তৃতায় বিবেকানন্দ একথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন) অথচ শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে মহা উৎসাহে পশুবলি প্রবর্তন করেছিলেন।
আজও এই বিরোধী প্রচারের ধূম চলছে। যেহেতু ঈশ্বরের প্রচলিত বিধবাবিবাহ তখন সমাজে মুক্তমনে গৃহীত হয়নি, সুতরাং ওটা বাতিলের খাতায়। অন্ধ বিরুদ্ধবাদীরা চক্ষু মেলে দেখেন না যে কতো শত অল্পবয়সী বিধবা নতুন জীবনে দিব্য সুখে আছে। কল্যাণী দত্ত মহোদয়া ‘পিঞ্জরে বসিয়া’ নামক এক গ্রন্থে বিদ্যাসাগরের ব্যক্তি জীবন না জেনে অনবদ্য কিছু লিখে একটি পিএইচডি পেয়েছেন। এতে বা অন্য বিশেষ কারো ডিলিট প্রাপ্তিতে ব্যক্তির সুনাম হয় না।বরং ডিগ্রীটি খেলো হয়ে যায়। তারাসুন্দরীদেবী (ঈশ্বরের শ্বশ্রূমাতা) জানিয়েছেন ঈশ্বরজায়া দীনময়ী স্বহস্তে সকলের জন্য রন্ধন করতেন। অবশ্যই, কেননা না দীনময়ীদেবী স্বীয় পাঠাভ্যাসে উৎসাহী ছিলেন না (‘আমাদের কালে কোনো বিদ্যাসাগর ছিলো না, এই বয়সে আরও লেখাপড়া করার ইচ্ছে নেই)।
না তিনি ঈশ্বরের বিধবাবিবাহের বা বাল্যবিবাহ প্রথা রোধের সমর্থন করেছেন, না করেছেন লেখাপড়া। বরং নারায়ণচন্দ্র বিধবাবিবাহ করলে অন্নজল আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন। সুতরাং উভয়ের মধ্যে মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। জীবনানন্দ পত্নীও মোটেই কাব্যপ্রেমী ছিলেন না, বরং ওনার বিষয়বুদ্ধি প্রবল আকার হয়ে ওনার প্রেমকে আচ্ছন্ন করেছিলো। হৃদয়বৃত্তির মিল না হলে দূরত্ব কেবল বেড়েই চলে। ঈশ্বর, মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও স্ত্রীকে তিলমাত্র অনাদর করেছে এর কোনও উল্লেখ নেই। এর পর আসেন বঙ্কিম চন্দ্র। ১২৭৯ বঙ্গাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’। বিষবৃক্ষের সূর্যমুখী একটি চিঠিতে লিখছে, ‘ঈশ্বর বিদ্যাসাগর নামে কলিকাতায় কে না কি বড় পণ্ডিত আছেন, তিনি আবার একখানি বিধবাবিবাহের বহি বাহির করিয়াছেন। যে বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা দেয়, সে যদি পণ্ডিত, তবে মূর্খ কে?’ বর্ধমানে তারকনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে ঈশ্বর স্বহস্তে (পাঁঠার মাংস, মেটের চাটনি এবং ভাত) রন্ধন করে বঙ্কিম বাবুকে ভোজন করান। উৎসাহী ব্যক্তি ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখবেন,উভয়ের বাক্যালাপ কী চমৎকার ছিলো।
শরৎচন্দ্র কিন্তু এই ঈশ্বরের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। পন্ডিতমশাই গ্রন্থে পন্ডিতকে দিয়ে এরূপ কথা বলিয়েছেন আমার বিদ্যালয় থেকে একজন মানুষ বেরোলেই আমি খুশি। নিউটন, ফ্যারাডে, রামমোহন, বিদ্যাসাগর গন্ডা গন্ডা আসে না।
অতঃপর ঈশ্বরস্য যাপনমিতি অন্তিম পর্বম।