যখন আমাদের দেশে ১০০ জন কিংবা আমাদের রাজ্যে ১ জন করোনা রোগী ছিল তখন যেমন ভয় বা দুশ্চিন্তা ছিল, আর এখন যখন দেশে এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে কিংবা রাজ্যের সংখ্যাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক তখন কি মনে একইরকম ভয় বা আশঙ্কা আছে? অনেকেরই উত্তর হবে, না নেই। কিন্তু কেন এমন হয়? এর ব্যাখ্যা সুন্দরভাবে দিয়েছেন এলিজাবেথ কুবলের রস নামে এক মনস্তাত্বিক। তাঁর বিখ্যাত ‘কুবলের রস মডেল’ নামে দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে। কুবলের রস মডেল-এ বলা হয়েছে, যে কোনও দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অতিমারীর ক্ষেত্রে আমরা প্রায় সবাই পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এগোই। এই পাঁচটি ধাপ হল,
**************************************
১) প্রথমে বিষয়টাকে না মানা( Denial), ২) রাগ( Anger), ৩) দর কষাকষি( Bargain), ৪) হতাশা (Depression), ৫) তার সঙ্গে আপোষ করে নেওয়া( Acceptance)। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে করোনার ক্ষেত্রে আমাদের তাই হয়েছে। যেমন,
১)প্রথমে অসুখটাকে আমরা তেমন গুরুত্বই দিইনি। ভেবেছি, চিনে অসুখটা হয়েছে বলে আমাদেরও হবে তার কোনও মানে নেই। তার ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ভুয়ো খবর যে আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এই অসুখ প্রভাব ফেলবে না তাতেও বিশ্বাস করে নিশ্চিন্তে ছিলাম।
২) যখন রোগটার বাড়বৃদ্ধির খবর আসতে লাগল তখন রাগ হতে লাগল। কেন, আমলার ছেলে ওভাবে ঘুরে বেরাল, কেন বিদেশ থেকে লোক আসায় নিষেধাজ্ঞা জারী করা হল না, কেনই বা লকডাউন করা হল– নানা বিষয়ে আমাদের রাগ বাড়তে লাগল।
৩) অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়তে লাগল ততই সবার মনে হতে লাগল, কেন লকডাউন কঠোরভাবে মানানোর চেষ্টা করা হল না? কেনই বা কিছু কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া হল? লকডাউন করে কী সুবিধা হল এসব নানারকম ভাবনা মনে দেখা দিতে লাগল।
৪) দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে গিয়ে ঘরে বসে থাকা, অসুখের ভয় মনের মধ্যে চেপে বসা এবং আর্থিক চিন্তায় মনের মধ্যে অনেকেরই হতাশা দেখা দিয়েছিল।
৫) সব শেষে বুঝলাম এই অসুখকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমরা অনেকেই এখন মনে মনে তৈরি হয়ে গেছি। বুঝে গেছি জীবনে এই অসুখ মোকাবিলার জন্য যা যা করণীয় তা করতে হবে। আর অসুখ হলে তার চিকিৎসা আছে। কাজেই আর হতাশার কোনও জায়গা নেই।
যে কোনও স্বাভাবিক মানুষ প্রথম স্তর থেকে পঞ্চম স্তরে গিয়ে জীবনে এগিয়ে চলার পরবর্তী পদক্ষেপ তৈরি করে নেন। আর যিনি তা পারেন না তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজেই সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে এই পাঁচটি ধাপ মেনে নিতে হবে। তাহলেই আস্তে আস্তে করোনার আতঙ্ক থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব।
লেখা টা খুব ভালো লাগলো। আপনি যে কোলবালিশের কথা বলেন নি তাই আরও ভালো লাগলো।