দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ২৪
[এটা পাঁচালির ঢংয়ে পড়তে হবে]
তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলা ব্যাঙের ছা|
খায় দায় গান গায়, তাইরে নাইরে না||
সুবুদ্ধি তাঁতির ব্যাটা, কুবুদ্ধি ধরিল|
তার একটি ছানারে পায়ে চেপে’মেলো||
আর একটি ব্যাঙ ছিলো বড়ই সেয়ানা|
লিখন পাঠায়ে দিলো পরগনা পরগনা||
সুতোনাতা নিয়ে তাঁতি যাচ্ছে রাজার হাট|
লক্ষ ব্যাঙে তাড়াতাড়ি আগুলিল ঘাট||
তরাসে মরাসে তাঁতি গাছেতে উঠিল|
সেথায় ছিলো কোলা ব্যাঙ মুখে লাথি দিল||
ব্যাঙের লাথি খেয়ে তাঁতি পড়িলো ধপাস|
এবার বুঝি তাঁতির পো’র বেরিয়ে আসে শ্বাস||
লক্ষ লক্ষ ব্যাঙ এসে ঘিরিয়া ধরিলো|
সবার কাছে লাথি খেয়ে তাঁতি বুঝি মোলো||
মেরো না মেরো না ভাই তাঁতিরে গোঁসাই|
দারোগা এসে হাতকড়ি পরিয়ে দিবে ভাই||
দেখো হে সামান্য একটা হোঁৎকা ব্যাঙও মালিকের অত্যাচারে একাট্টা হয়ে তাঁতিকে শাস্তি দিলো। পরগনা পরগনায় খবর দিয়ে লক্ষ ব্যাঙ ডেকে আনলো। এমনকি যাতায়াতের পথ অবরোধ করলো।
তাতে কী বা প্রমাণ হলো?
প্রমাণ হলো আমরা ব্যাঙেরও অধম। চাষিরা পেটে লাথি খেয়ে মার খাচ্ছে আর আমরা বসে বসে ভাত খাচ্ছি।
তাই নাকি? এতো ভারি অন্যায়।
পরিবহ-র ঘিলু ফুটো হচ্ছে আর আমরা স্টেথো ঝুলিয়ে টরটরাচ্ছি।
সে আবার কি কথা?
খাঁটি ব্যাঙের মাথা। হাসপাতালে ওষুধ নেই তাই ডাক্তার মার খাচ্ছে।
ক্ষিদে পেয়েছে খাবেই তো!
আর মার খাওয়ার জন্য বাড়তি ভাতা চেয়ে আন্নোলন করছে।
ভাতা না পেলে ভাত খাবে কি দিয়ে?
সেটা অবশ্যি ঠিক। কথায় বলে পেটে খেলে পিঠে সয়। বেশী পিঠে খেলে পেটে সয় না। আর রোগীরা সব অক্সিজেন না পেয়ে পটাপট মরছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ একটা কথা বলে দিলেই হলো? বাতাস ভত্তি অক্সিজেন। আর অক্সিজেন পাচ্ছে না! নাকে আম গাছ গুঁজে দিলেই অক্সিজেন হবে।
বাজে কথা কম বলবি। দেখিসনি আমি কতো কম বাজে কথা বলি? মন্ত্রী সান্ত্রি হলে নাহয় সাত সাতকে ছাপ্পান্ন খুন মাফ। জানিস চিকিচ্ছের ব্যয়বরাদ্দ কতো? লোকে ফতুর হয়ে ফতুয়া পরে’ ঘুরছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে থালা বাজায় ঢং ঢং ঢং।
তুই কিছু দিস না, ক্যানো রে? বি আ গুঢ় সামারিটান।
দেবো আবার কি? হ্যাঁ? তুই কি আমাকে বড়ো দরিয়ার দিলদার খাঁ, জবরদস্ত জমিন্দার পেয়েছিস? সেদিন যে রাস্তার মোড়ে বক্তিমে করলাম? সবার জন্য স্বাস্থ্য চাই। সেখেনে তুই গেছিলিস?
হুঁ, ভারি আমার বক্তিমে। খামাকা চ্যাঁচাচ্ছিলি। কাক পক্ষিও ছিলো না। একটা পাগলেও হাততালি দ্যায় নি। ভারি আমার বক্তিমে। বলেছিলো ইন্দিরাজি আর জ্যোতি বাসুজি। কী চিৎকার, কী চিৎকার। জ্জ্যয় হো, জ্জ্যয় হো, যুগযুগ জ্জিও। কোঁকোর কোঁ, কোঁকোর কো।
কোঁকোর কোঁ আবার কি? মুরগি নাকি? আমি না হয় চ্যাঁচাচ্ছিলাম তো তখন তুই কি করছিলিস?
আমি তখন ডাক্তার পেটাচ্ছিলাম। ঐ টেকোমতোন নাক উঁচু বুড়োটার মাথায় একটা চেয়ার তুলে ধাঁইধাঁই করে মারছিলাম।
ক্যানো? সে ব্যাটা আবার কি করলো?
মনে হয় রোগী মেরেছে। অতো শতো জেনে কি করবো? সবাই মারছে তাই আমিও মারছিলাম।
সেটা তো বটেই। ণত্বমিচ্ছতি বর্বরাঃ। সেতো বটেই। সাথে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।
দ্যাখ জ্ঞান দিবি না। আমিও লেখাপড়া জানি। ওমেক্রণ ডেল্টাক্রণ। কাগজে বললো সাড়ে চার লাখ লোক মারা গেছে। গোপনে গোপনে সাড়ে একচল্লিশ লাখ লোক মরে গেল। কাকপক্ষিও টেরটি পায়নি।
হ্যাঁ হ্যাঁ। তুই একেবারে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই। জানিস কি টমেটর এখন একশো টাকা কিলো? জানিস কি? হাসপাতালে সরকার টুরিস্ট লজ করবে? ঝাড়গ্রাম টুরিস্ট লজ, কুচবিহার টুরিস্ট লজ। অসুখ হলেই বেসরকারি, মরলেই দু লাখ টাকা পাবি? কিছুই তো জানিস না। কেবল ফরফরানি। অল্প জলে সফরি ফরফরায়তে।
তুইই সবজান্তা নাকি? জানিস? হাসপাতালে ডাক্তার নিচ্ছে না আর ডাক্তার আসে না, ডাক্তার আসে না বলে সবাই কানছে? আর কয়েকজন হুমদো ডাক্তার বলছে টাকা দাও, কিছু শুঁটকো ডাক্তার বলছে বদলি চাই, কিছু বলছে আমি সাতে পঞ্চান্নোতে নেই। আসি যাই গুলি খাই। চলো ভাই আন্নোলন আন্নোলন খেলি। খেলা হলে আমি বাড়ি যাবো। এই আহাম্বকগুলো জানেই না ওদের কি চাই।