বাচ্চাকে সুস্থ সবল রাখার জন্য কী খাওয়াবেন, কখন খাওয়াবেন তা নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ থাকে না। অন্যদিকে বন্ধুবান্ধবদের লোভনীয় খাবার, টিভিতে নানারকম খাবারের বিজ্ঞাপনের হাতছানির জন্য বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করা মায়েদের কাছে বেশ কষ্টকর কাজ। এখন বাবা, মায়েদের-ও চাকরি বা নানা রকম কাজের ব্যস্ততার জন্য শিশুকে অনেক সময়ে প্যাকেটজাত খাবারও দিতে বাধ্য হন। যদিও একথা জেনে নেওয়া দরকার, শিশুকে শুধু ছোটোবেলায় নয়, সারাজীবন সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের ভূমিকা বিরাট। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখা এমনকী বুদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলে শিশু অবসাদ, উদ্বেগ, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার বা সংক্ষেপে এডিএইচডি-এর মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। কাজেই বাবা, মায়ের সন্তানের খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতেই হবে।
জেনে নিন এর জন্য কী কী করণীয়।
• স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• নির্দিষ্ট কোনো খাবারে নয়, সামগ্রিক খাবারের দিকে জোর দিতে হবে। প্রসেসড ও প্যাকেজড ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
• সব বাচ্চার কাছে তার বাবা, মা আদর্শ মডেল। শিশু ছোটবেলায় তাদের যা কিছু দেখে তাই আত্মগত করতে চায়। কাজেই আপনার আচরণ এমন হওয়া দরকার যাতে আপনার দ্বারা পরোক্ষভাবেও শিশু প্রভাবিত না হয়। বাচ্চার কাছে আদর্শ হওয়ার চেষ্টা করুন। নিজে স্বাস্থ্যকর খাবার খান শিশুও আপনাকে অনুকরণ করতে শিখবে। নিজে চিপস, এগ রোল বা মোমো খাবেন আর শিশুকে সবজি দেবেন তা যেন না হয়।
• শিশুর খাবার বলে যেমন তেমনভাবে বানাবেন না। তা যাতে সুস্বাদু হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। দরকারে স্টুয়ের সঙ্গে সবজি কিংবা গাজর ও আলু মিশিয়ে দিতে পারেন।
• রেস্তোরাঁ বা বাইরে থেকে কেনা খাবার নয়, ঘরে বানানো খাবারই শিশুকে খাওয়ান। কারণ বাইরের খাবারে অতিরিক্ত চিনি ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর।
• বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর জলখাবার বানিয়ে দিন। সেই খাবারে ফল ও সবজি রাখুন । দুধ, ফলের রস ও জল দিয়ে শরবত বানিয়ে দিন।
• পরিমাণমতো খাবার দিন। বেশি খাওয়ানোর বদভ্যাস ত্যাগ করুন। বেশি খেলেই শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এমন চিন্তা সরিয়ে রাখুন।
• চিনি ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়ান। তাই হোয়াইট ব্রেড, পিৎজা, পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ময়দা, সাদা চালের ভাত ইত্যাদি বাচ্চাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাচ্চার মুড বদল ও এনার্জির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কাজেই এসব খাদ্যতালিকা থেকে সরিয়ে রাখুন। অন্যদিকে খাওয়ান কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। এর পুষ্টি অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া ফাইবারও যথেষ্ট। আর ধীরে ধীরে হজম হয় বলে অনেকক্ষণ কাজে এনার্জি পাওয়া যায়। এই কারণে শিশুকে খাওয়ান মাল্টিগ্রেন ব্রেড, হাই ফাইবার যুক্ত সিরিয়াল, ব্রাউন রাইস, ব্রাউন ব্রেড, বিন্স, বাদাম, ফল ও সবজি।
• শিশুকে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবারে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের মধ্যে রাখুন মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। তা পাওয়া যায় অলিভ অয়েল, পিনাট অয়েল সিসাম বা তিল বা তিল তেল, বাদাম ইত্যাদিতে।
• পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় সূর্যমুখী তেল, আখরোট, তিসি-তে।
• অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটের মধ্যে আছে কিছু মারজারিন, বিস্কুট, লজেন্স, কুকিস, প্যাকেটের ভাজা খাবার ও প্রসেসড ফুড। কোনো রকম ট্রান্স ফ্যাটেরই কোনো উপকারিতা নেই। সেগুলো নিরাপদও নয়।
• বয়সের তুলনায় বেশি ওজনের শিশুদের হার্টের অসুখ সহ, হাড় ও অস্থিসন্ধির সমস্যা, অনিদ্রা, আত্মসম্মানের অভাব দেখা দিতে পারে যার প্রভাব থেকে যায় বেশি বয়সেও। তাই ওজন নিয়ন্ত্রিণে রাখার জন্য শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার ছাড়াও খেলাধুলো বা শরীর চর্চার সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে।
• ওজন যাতে বয়স ও উচ্চাতার সঙ্গে ঠিকমতো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
• ফ্যাট জাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দেওয়া যাবে না।
• সকালের জলখাবার সারাদিন শারীরিক ও মানসিক শক্তির জোগান দেয়। তাই রাখতে পারেন, দই, দুধ, ডিম, চিজ ও সিরিয়াল, এতে ভারী চেহারার টিনএজাররা সারাদিনে বেশি খাবার খেতে চাইবে না।
• নিয়মিত শরীর চর্চার বিষয়ে উৎসাহিত করুন।
• শিশুর সঙ্গে খেলাধুলো করুন, একসঙ্গে সাইকেল চালাতে বা সাঁতারে যান।
টাইম বাউন্ড ফিডিং না ডিম্যান্ড ফিডিং ? এটা আর পরিমাণ সম্বন্ধে একটু বললে খুশি হবো ।