১.
বর্ডেটেলা পারটুসিস ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণে এই রোগটি হয় যা মূলত শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। ১৯০৬ সালে এই রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন জুলস্ বর্ডেট ও অক্টেভ জঁগু নামের দুই বিজ্ঞানী। মূলত এক বছরের কম বয়সী শিশুদেরই এই রোগ বেশি হয়।
২.
সংক্রামক রোগীর হাঁচি, কাশি থেকে বায়ুর মাধ্যমে সুস্থদেহে ছড়ায় এবং শরীরে প্রবেশের ৬-২০ দিনের মধ্যে রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়।
৩.
প্রথম ১-২ সপ্তাহে সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই শুরু হয়। পরের ৮-১০ সপ্তাহ অব্দি সময়ে তীব্র কাশি শুরু হয়। কাশির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হ’ল, ফুসফুস থেকে প্রায় পুরো হাওয়া বের হয়ে যাওয়া অব্দি রোগী পরপর কাশতেই থাকে। তারপর খুব তাড়াতাড়ি শ্বাস নিয়ে ফুসফুস পুনরায় হাওয়ায় ভর্তি করার চেষ্টায় তীক্ষ্ণ শব্দ করে শ্বাস টেনে নেয়। এই শব্দ করার নামই ‘হুপিং’। তবে সবসময় ‘হুপিং’ নাও থাকতে পারে। কাশি এত দীর্ঘদিন ধরে চলে বলে একে ‘একশো দিনের কাশি’ও বলা হয়।
৪.
রোগ খারাপ পর্যায়ে গেলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন, কাশতে কাশতে বারবার বমি ও জলশূন্যতা, খেতে না পারা, নিউমোনিয়া, কানের ইনফেকশন, মস্তিষ্ক-প্রদাহ, খিঁচুনি, ফুসফুসের পর্দা ফেটে ফুসফুসের চারদিকে হাওয়া জমে যাওয়া (নিউমোথোরাক্স), হার্নিয়া, বিভিন্ন জায়গায় রক্তবাহ ছিঁড়ে রক্ত জমে যাওয়া (মূলত চোখের পর্দার), বুকের পাঁজর ভেঙে যাওয়া, শিরদাঁড়ার ধমনীর দেওয়াল ফেটে যাওয়া ইত্যাদি।
৫.
রোগটি মূলত চোখে দেখেই অভিজ্ঞ ডাক্তার সনাক্ত করতে পারেন। নাক ও মুখের সংযোগস্থল থেকে রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষায় জীবাণুর উপস্থিতি বোঝা যায়। রক্ত পরীক্ষায় লিম্ফোসাইট রক্তকণিকার আধিক্য দেখা যায়।
৬.
মূলত ম্যাক্রোলাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক এবং কো-ট্রিমক্সাজোল দিয়ে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত, অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর পাঁচ দিনের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণ-ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। গরম জলের ভাপ বা নেবুলাইজার মেশিন চালিত স্যালাইন-ধোঁওয়া খুব কার্যকরী। কখনোই কাশি বন্ধ করার ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
৭.
এবার একটু সংখ্যাতত্ত্বের দিকে চোখ বোলানো যাক। সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ১০-১২ মিলিয়ন মানুষ হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে সিংহভাগই উন্নয়নশীল দেশে। ১৯৯০ সালে এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার মৃত্যু নথিভুক্ত হয়। ২০১৩ সালে সংখ্যাটা কমে আসে একষট্টি হাজারে।
৮.
রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় টিকাকরণ। বাচ্চার ছ’সপ্তাহ বয়সের পর থেকে জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচীতে টিটেনাস এবং ডিপথেরিয়ার সাথে একসঙ্গে হুপিং কাশির টিকা দেওয়া হ’ত। বর্তমানে এই তিনটি ছাড়াও আরও দুটি টিকা মিলে পেন্টাভ্যাক টিকা দেওয়া হয়। মাথায় রাখুন, এই টিকা কিন্তু আজীবন সুরক্ষা দেয় না। ৬-৯ বছর বয়সের পর থেকে টিকার প্রভাব কমতে থাকে। তাই বেশি বয়সে হুপিং কাশি ফিরে আসার সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়।
৯.
অনেক সময় হুপিং কাশি আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি বাস করা গর্ভবতী মা, এক বছরের কম বয়সী শিশু, হাঁপানি রোগী, দুর্বল অনাক্রম্যতা সমন্বিত ব্যক্তিকে রোগ হবার আগেই চিকিৎসক মনে করলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপদেশ দিতে পারেন। এ ব্যাপারে আপনার চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত নেবেন।
১০.
সম্ভব হ’লে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা, হাঁচি-কাশির সময় হাত বা রুমাল চেপে নেওয়া, অন্য কারও জিনিসপত্র ব্যবহার করার আগে পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে নেওয়া ইত্যাদি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর যে কথাটা না বললেই নয়, শিশুকে টিকা দিন। কোনও ধর্মের বিধিনিষেধ কিংবা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শিশুকে টিকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।