নির্দিষ্ট জায়গায় দু-ফোঁটা ইউরিন ফেলে অরুণিমা তাকিয়ে আছে ছোট্ট কাঁচের ভিউ-এরিয়ায়। গুঁড়ি মেরে তরলটা এগিয়ে চলেছে। আবছা প্রথম দাগটা পেরিয়ে গেল। ঐ দাগ নিয়ে অরুণিমার আদৌ মাথাব্যাথা নেই। তরলরেখা ধীরলয়ে এগিয়ে চলেছে দ্বিতীয় আবছা দাগের দিকে। অরুণিমার হৃদপিণ্ড প্রায় গলার কাছে। বিস্ফারিত চোখে দেখল ঐ দাগ পেরিয়ে যাবার সাথে আবছা দাগ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
“ইয়াহু”–চিৎকার করে উঠেছে ও।
আজই কিটটা নিয়ে এসেছিল। বিয়ে দু-বছর পেরিয়ে গেছে, বাড়িতে গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে। গত তিনমাস ধরে ও আর অয়ন ঠিক করে নিয়েছিল, হ্যাঁ, এবারেই। কিটটা আবার ভালো করে দেখল স্পষ্ট দুটো দাগ।
টাচফোনে অয়নের ছবির ওপর টোকা দিতেই ও প্রান্তে “তোমায় চিনি গো চিনি”-রিংটোন।
অয়ন ফোন বার করতেই হাস্যময়ী অরুণিমা। “কী হলো? হঠাৎ এ সময় ফোন!”
—“হয়েছে। দাগ ফুটেছে।”
মাথামুন্ডু কিছুই বুঝছে না অয়ন।
“তুমি একটা আস্তো গবেট। আজই কিটটা এনে টেস্ট করলাম,– পজিটিভ।”
“সত্যি!”
“তুমি তাড়াতাড়ি এসো। তোমাকে না দেখিয়ে কিছুতেই সিওর হতে পারছি না।” ফোনে কুঁ কুঁ আওয়াজ শুনে অয়ন বুঝতে পারছে ওদের মাঝে কেউ ঢোকার চেষ্টা করছে।
ফোন ছাড়তেই রিংটোন,–“চক্ষে আমার তৃষ্ণা”। তার মানে ও প্রান্তে মধুবন্তী, “কি রে এতক্ষণ কোথায় মাথা গুঁজে ছিলিস?”
“বৌ ফোন করেছিল।”
“সারারাত তো বৌ-কে লিপ্টে ছিলিস। আবার অফিসেও।
খবর আছে। বিকেলে আয়, কোথাও একটা জমিয়ে ট্রীট দিই।”
গতমাসে অফিস-ট্যুরে ঊড়িষ্যা গিয়েছিল অয়ন। ফেরার পথে পূরীর সমূদ্র তীরে হঠাৎই টান,”অয়ন না!” ঘুরে দেখে কলেজের মধুবন্তী। কলেজ ছাড়ার পর আর দেখা হয়নি।
চিরকালই সবার ওপর ওর একটা অদ্ভুত জোর। অয়নকে প্রায় হিড়হিড় করে ওর হোটেলে তুলে নিয়ে গেল।
“কি রে ,আছিস?”–ফোনের ওপাশে অধৈর্য মধুবন্তী।
“খবরটা কী বলে ফেল।”
“আরে আজই প্রেগানিউজ টেস্ট করলাম। একটাই দাগ, নো সেকেন্ড দাগ।”–মধুবন্তী উৎফুল্ল,”যা ভয় পেয়েছিলাম, তাড়াহুড়োয় কোনো প্রোটেকশন ছিল না, এদিকে বর বিদেশে। আর কলেজের সেই গোবেচারা অয়ন যে এমন দামাল ছেলে কী করে জানব!”
ফিরছে অয়ন। এর মধ্যেই তিনবার ফোন হয়ে গেছে অরুণিমার।
ঘরে ঢুকতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল, “অয়ন, আমরা পেরেছি।” পরম মমতায় কিটটা বার করল, এই দ্যাখো দুটো দাগ। কিটটাকে চুমো খেলো যেন ওটাই ওর আত্মজা।
অয়ন চেষ্টা করছে, খুব চেষ্টা করছে অরুণিমার আনন্দের সমান অংশীদার হতে, কিন্তু কি করে ওকে বোঝায়, অনেক দাগ না ফুটলেও ভীষণ ভাবে ফোটায় ।