মেডিকেল কলেজের সুদীর্ঘ ইতিহাস, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাধীন চিন্তা ও কণ্ঠ প্রকাশের পরিসরকে টিকিয়ে রেখেছে আজও। কিন্তু এই ১৯০ বছরের ইতিহাসে যা ঘটেনি সেরকমই অভূতপূর্ব এবং লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী হলো মেডিকেল কলেজ। কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর সুহেনা সরকার যিনি কিনা আবার girls’ hostel-এরও সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন, তিনি বহুদিন যাবৎ ছাত্রীদের হস্টেলে পানীয় জলের সমস্যা, রুমের ভগ্নদশা, নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগকে উপেক্ষা করে এসেছেন এবং স্বচ্ছ হোস্টেল কাউন্সিলিং ও g+10 হোস্টেলের কিছু অংশ তাদের জন্য বরাদ্দ করার ন্যায্য দাবীর বিরোধিতা তো করেনই, তার সাথে যারা এই দাবী করছিল তাদেরকে আলাদা করে ডেকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার এমনকি রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার ভয় পর্যন্ত দেখিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদের বলেন, “হোস্টেল পেতে গেলে তৃণমূল করতে হবে।” তিনি ছাত্রীদের তৃণমূল করার বিনিময়ে অনার্স পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। এই সমস্ত ভয় দেখানোর ঘটনায় তার সহযোগী ছিলেন অ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষিকা ঈশিতা সেনগুপ্ত এবং এই সমস্ত কিছুর পর যারা তাদের অশিক্ষকোচিত ভয় দেখানো ও পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাবকে অস্বীকার করে সেরকম এক ছাত্রীর বাবা যিনি একজন সরকারী কর্মরত ডাক্তার, তাঁকে ট্রান্সফার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এই বদলির হুমকি দিয়েছিলেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসার ডা: সুহেনা সরকার, প্রসূতি বিভাগের প্রফেসার ডা: তপন নস্কর, অ্যানাটমি বিভাগের ডা: ঈশিতা সেনগুপ্ত।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই হুমকি, ভয়, লোভের রাজনীতি করা প্রফেসরদের বিরুদ্ধে প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা প্রিন্সিপালের ডাক অগ্রাহ্য করে ছাত্রছাত্রী এবং প্রিন্সিপালের সাথে দেখা না করেই কলেজ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এরপর কলেজ কাউন্সিল মিটিং থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-
১) এই দুই মহিলা প্রফেসর যারা কলেজের দুটি ছাত্রীদের হস্টেলের সুপার ছিলেন, তাদেরকে সেই সুপার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
২) এই তিন প্রফেসরের বিরুদ্ধে enquiry committee বসানো হয়েছে এবং এই কমিটির রিপোর্ট না আসা অবধি (যেটি ১৪ দিনের মধ্যে করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রিন্সিপাল) তাঁদের সমস্ত পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
৩) প্রিন্সিপালের নির্দেশ উপেক্ষা করে মিটিংয়ে না আসার জন্য তাঁদের show-cause করা হয়েছে।
এই নির্দেশ মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীন কণ্ঠস্বরের জয় এবং এই নোটিশ বেরোনোর সাথে সাথে মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দিয়েছে তারা তৃণমূলের ভয় দেখানোর ও পাইয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য রাজনীতিকে অস্বীকার করে শাসকদের সমস্ত অপচেষ্টাকে কলেজের বাইরে নিক্ষেপ করেছে।