মূল রচনা ডাঃ অতুল গাওয়ান্দে-র, ডাঃ রেজাউল করিমের অনুবাদ।
সর্বত্র একটি বার্তাই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, ঘরে স্বেচ্ছাবন্দি থাকুন। করোনাভাইরাস মহামারীর এই প্রাথমিক পর্যায়ে স্বেচ্ছাবন্দি থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এখনো অনেক অসনাক্ত রোগী লাগাতর সংক্রমণ ছড়িয়ে চলেছেন। তবে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কাজ করে চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই— মুদির দোকানদার, ক্যাশিয়ার, আপৎকালীন কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক, ইত্যাদি। স্পষ্টতই, অসুস্থদের যত্ন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী-দের প্রয়োজন, যদিও তাদের পেশাগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রশ্ন হলঃ আমরা কীভাবে তাদের সংক্রমণ ঠেকাতে পারি?!
উহানের অভিজ্ঞতায় দেখেছি করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে তেরশো স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রামিত হয়েছেন; তাঁদের সংক্রমণের সম্ভাবনাও সাধারণের চেয়ে তিনগুণ বেশি। পরিবারে ফিরে গিয়ে তাঁরাই আবার সংক্রমণের প্রধান ভেক্টর হয়ে ওঠেন। এর ফলে উহানে কর্মক্ষম ডাক্তার এবং নার্সদের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে ও অন্য জায়গা থেকে বিয়াল্লিশ হাজার লোক আনতে হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে, এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয়েছে ও নতুন করে একজন স্বাস্থ্যকর্মীও আক্রান্ত হননি।
তবে সেই ব্যবস্থাগুলো হল রীতিমত রাক্ষুসে। অবরুদ্ধ শহরটিকে বাইরের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় ও সংক্রামিত ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের দেখভাল করা স্বাস্থ্যকর্মীদের তাঁদের পরিবার থেকে আলাদা রাখা হয়। তাঁদের সারা শরীর PPE দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়-চোখে গগলস, মাথা ঢাকা টুপি, এন 95 কণা-ফিল্টারিং মাস্ক-অনেকটা হাজমত-স্যুটের মত পুরো শরীরে আবরণ বিস্তৃত করে রাখা হয়। প্রশ্ন হলঃ এদেশে এই ধরনের ব্যবস্থা সম্ভব কিনা? এককথায় বলা যেতে পারে সম্ভব নয়, এমনকি কল্পনাতেও সব রোগী পরীক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা সুদূরপরাহত।
ম্যাসাচুসেটস, যেখানে আমি সার্জেন হিসেবে কর্মরত তার চৌদ্দটি কাউন্টির মধ্যে কমপক্ষে এগারোটিই সংক্রমণের কবলে। দ্রুত কেস বেড়ে চলেছে। সুতরাং আপনি যদি কোনও করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে আসেন এবং উহান-স্টাইলের ক্ষমতা না থাকে তাহলে কি হবে? আমার হাসপাতাল-পার্টনার্স হেলথকেয়ার- ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক কর্মীকে চৌদ্দ দিনের স্বেচ্ছা-অবরোধে পাঠিয়েছে। তারা সম্পূর্ণ সুরক্ষা ছাড়াই সংক্রামিত রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে কয়েকদিন পরে আর কোন স্বাস্থ্যকর্মী পাওয়া যাবে না।
আমাদের সব কিছু নতুন করে শিখতে হবে। এই মহামারির প্রাথমিক ধাক্কা যাঁরা সামলেছিলেন ও তার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে যাঁরা সফল তাঁরাই এখন আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। হংকং এবং সিঙ্গাপুর – আয়তনের দিক থেকে প্রায় ম্যাসাচুসেটসের কাছাকাছি- উভয়েই জানুয়ারীর শেষ দিকে তাদের প্রথম কেস সনাক্ত করেছে এবং তারপর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। ওরা বড় জমায়েত বন্ধ করে দেয়, বাড়ি থেকেই যাতে সবাই কাজ চালান তার পরামর্শ দেয় এবং পাশাপাশি সামাজিক অবাধ মেলামেশায় রাশ টানে। দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল-যদিও তা পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এ দুটি দেশেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ গাউন এবং এন 95 মাস্ক নেই, এবং প্রথমদিকে, পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাও যথেষ্ট ছিল না। ছয় সপ্তাহ পরে, তারা তবু খানিকটা ঘাটতি কাটিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে আবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী অফিস খোলার কাজ শুরু হয় এবং বাইরে থেকে আসা কেস নিয়ন্ত্রণের একটা ব্যবস্থা সম্ভবপর হয়।
বিগত কিছুদিন এই সংক্রান্ত নানা তথ্য বিচারের পাশাপাশি অনেকের সাথে আলোচনা করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার মুখ্য কৌশলগুলি সম্পর্কে আমার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরী হয়েছে।
মূল বিষয় হল
- সব স্বাস্থ্যকর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে রোগী পরীক্ষার প্রাথমিক সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে, সঠিকভাবে হাত ধুতে হবে, হাসপাতাল বা পরামর্শ-কেন্দ্রও সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
- সন্দেহজনক উপসর্গযুক্ত রোগীদের (অল্প অল্প জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি বা মাংসপেশীর ব্যথা বা মহামারীর জায়গায় ভ্রমণের তথ্য কিম্বা সংক্রামিত কারো সাথে মেলামেশা করা) সুস্থ মানুষদের থেকে পুরোপুরি পৃথক ও বিচ্ছিন্ন করতে হবে। বিশেষ ওয়ার্ডে বা অন্যত্র যেখানেই থাক না কেন তাদের দেখাশোনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে।
- সর্বত্র সোসাল-ডিস্টান্সিং চালু করতে হবে। ক্লিনিকে, হাসপাতালে, ওয়েটিং-রুমে দুজন মানুষের মধ্যে ছয় ফুটের ব্যবধান রাখতে হবে। অবশ্য পরীক্ষার সময় সেটা প্রযোজ্য নয়।
যা সমান আশ্চর্যের তাহ’ল এগুলির কোন কিছুই প্রায় পালন করা হয় না। এন 95 মাস্কস, ফেস-প্রোটেক্টর, গগলস এবং গাউনের ব্যবহার সংরক্ষিত রয়েছে কেবল যেখানে শ্বাসযন্ত্রের থেকে নির্গত দেহরস দিয়ে সরাসরি সংক্রমণের ভয় আছে বা যাঁরা সরাসরি কোন কোভিড ১৯ পজিটিভ রোগী দেখছেন, তাঁদের জন্য। তাদের কোয়ারান্টিন নীতিও বেশ সূক্ষ্ম । হংকং বা সিঙ্গাপুরে যখন কেউ অপ্রত্যাশিতভাবে সংক্রমণের শিকার হয়ে পড়ে- কোনও হাসপাতাল- সহকর্মী বা কোনও এরকম কেউ , তারা সংক্রমণের জায়গা বন্ধও করে না, স্বেচ্ছা-অবরোধেও পাঠায় না। তারা সংক্রমণের সব সূত্রগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং তারপরে কেবল সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে নিবিড় যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্ন করে। হংকংয়ে, “নিবিড় যোগাযোগ” এর অর্থ হল কোনও মাস্ক ছাড়া ছয় ফুট কম দূরত্বে পনের মিনিটের বেশি অবস্থান। সিঙ্গাপুরে তা হল ত্রিশ মিনিট। যদি ব্যবধান ছয় ফুটের কম হয়, কিন্তু সাক্ষাতের সময় দুই মিনিটের বেশি হয়, তাহলে যাঁরা মাস্ক পরে সাক্ষাৎ করেছেন তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে দৈনিক দুবার তারা তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখবেন। সংক্ষিপ্ত, আকস্মিক যোগাযোগ হয়েছে এমন কর্মীদের কেবল খারাপ উপসর্গগুলির জন্য পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়।
এইসব পদক্ষেপ কোভিড -১৯ সংক্রমণের হার কম করতে সহায়তা করেছে ও এর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব আছে।
ঘটনা হল করোনভাইরাস ফ্লুর চেয়ে সংক্রামক হলেও জনস্বাস্থ্যের সাধারণ সূত্র ব্যবহার করেই তার মোকাবিলা করা সম্ভব- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতা, অসুস্থদের পৃথকীকরণ এবং স্বাস্থ্য-সরঞ্জামের সক্ষমতা বৃদ্ধি (সরবরাহ, পরীক্ষা, কর্মী, ওয়ার্ড) এবং সুসংহত, স্বচ্ছ, আপ টু ডেট গাইডলাইন। এর সাথে দরকার সবার জন্য অভিন্ন বিধি ও তথ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ আদানপ্রদান।
আমরা এখন পর্যন্ত সঠিক দিশায় এগিয়ে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে এবং এশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে সতর্কতাগুলি যে খুব অসাধারণ হতে হবে এমনও নয়। আমাদের সবাইকে বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং যদি কোন করোনা রোগীর সাথে আকস্মিক সাক্ষাৎ হয় বা খুব কম দূরত্ব থেকে তার সাথে সাক্ষাতের প্রয়োজন হয় তাহলেও অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সংক্রমণ হওয়ার মূল কারণ হল প্রাথমিক সুরক্ষার অভাব বা নিঃসৃত দেহরসের সংস্পর্শে এসেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং একাদিক্রমে দীর্ঘক্ষণ আক্রান্তকে সঙ্গদান।
কয়েকটি তথ্য বিবেচনা করুন।
সিঙ্গাপুরে শত শত কেস থাকা সত্বেও একজনও স্বাস্থ্যকর্মী এখনও অবধি আক্রান্ত হননি। এর মধ্যে এই সপ্তাহে একটি গুরুতর অসুস্থ কোভিড -১৯ কেস রয়েছে যাঁর সনাক্তকরণের চার দিন আগে পর্যন্ত একচল্লিশ জন স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে তার মেলামেশা হয়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এক্সপোজার-গলায় নল পরানো থেকে আই টি ইউ-এর নানারকম কাজ। এইসব কর্মীদের শতকরা পঁচাশি জন সার্জিক্যাল মাস্ক পরে ছিলেন। কেবলমাত্র যথাযথ ভাবে হাত ধোয়ার জন্য কেউই আক্রান্ত হননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা এখনও পর্যন্ত অনেকটা এরকমই। যদিও এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব আছে। তবু সি.ডি.সি. সুপারিশ করেছে যে, এশিয়ার চেয়ে আরো আঁটোসাঁটো ও কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, এমনকি যদি মাস্ক ও গগলস পরেও কেউ কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন তবুও। নীতির বাস্তব প্রতিফলন হয়েছে ইউ.সি. ডেভিসের একজন রোগীর ক্ষেত্রে। এটি ফেব্রুয়ারির শেষদিকের ঘটনা, রোগীর তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ঊনআশি জন কর্মীকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয় যদিও শেষমেষ কেউই আক্রান্ত হননি।
এই লেখার সময় পর্যন্ত স্যাক্রামেন্টো, সিয়াটেল এবং সান ফ্রান্সিসকো করোনভাইরাসের হট স্পট হয়ে উঠেছে। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য পেশাগত সংক্রমণ পাওয়া যায় নি।
ইতিমধ্যে এত কড়াকড়ির ফলে জরুরি বিভাগ বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন, সান ফ্রান্সিসকোতে কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। যতক্ষণ স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনীয় সুরক্ষা আচ্ছাদন পরে থাকবেন এবং যতক্ষণ তাঁর কোন বাহ্যিক উপসর্গ নেই ততক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। সিয়াটেলের অন্ততঃ একটি হাসপাতাল এখন এই জাতীয় নীতি অনুসরণ করছে। এবং রাজ্যের জনস্বাস্থ্য আধিকারিক ও সি.ডি.সি.-র সহায়তায় সারাদেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলি সম্ভবত শীঘ্রই এই নীতি অনুসরণ করবে। এই রোগ থেকে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের রক্ষা করার জন্য যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে তা হ’ল হাতের যথাযথ পরিচ্ছন্নতা, ক্লিনিক এবং হাসপাতালে রোগীদের দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ করা; ভার্চুয়াল চ্যানেল (যেমন ফোন এবং ভিডিও)র মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ চালু রাখা এবং শ্বাসরোগীদের সাথে মেলামেশায় সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন।– যেমন, ড্রপলেট না ছড়ায় (যথা-সার্জিক্যাল মাস্ক, গ্লাভস এবং গাউন ইত্যাদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করে)।
যাঁরা কাজের সূত্রে বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকতে পারবেন না তাঁদের জন্য শিক্ষণীয় হ’ল কিভাবে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে কাজ করা যায়। দেবোরা যোকো, ইউ.সি.এস.এফ.-এর হাসপাতালের এপিডেমিওলজি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের চিকিৎসা পরিচালক। তিনি আমাকে বলেছেন যে, হাসপাতালে কঠোর সুরক্ষা অনুশীলন দেখে তাঁর মনে হয়েছে কর্মস্থলের চেয়ে বাড়িতেই বরং সংক্রমণ সম্ভাবনা বেশি। এই যুক্তি অনুসরণ করে সান ফ্রান্সিসকো জনস্বাস্থ্য কর্তারা এখন সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য প্রতি দিন কাজ শুরু করার আগে জ্বর বা ফ্লুর লক্ষণ রয়েছে কিনা তা রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায়, এই রোগের গণ-পরীক্ষার সাফল্য থেকে মনে হয় যে উপসর্গহীন হওয়া সত্বেও রোগ সংক্রমণ হতে পারে। তবে আশার কথা হল সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় এইসব উপসর্গহীন বাহক থেকে সম্ভবত মারাত্মক সংক্রমণের যে সম্ভাবনার অনুমান করা হয়েছিল তা নির্ভুল নয়। সেখানকার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা অবশ্য গণ-পরীক্ষা করেন নি। এমনকি সংক্রামিত ব্যক্তিদের জন্য জনসংখ্যার ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাননি ।বরং, তাঁরা সন্দেহজনক উপসর্গযুক্ত রোগীদের চিহ্নিত করার ব্যাপক আয়োজন করেছিলেন। তাঁরা অবশ্য জানতেন যে এইরকম উপসর্গহীন বাহক থাকতে পারে, কিন্তু সুখের বিষয় তাঁদের কর্মপদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকরী হয় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে।
একটি হ’ল সত্যই হয়তো উপসর্গহীন বাহকেরা- এমন ব্যক্তি যাঁরা করোনা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত বলে বোঝা যায় না।- তাঁদের রোগ ছড়ানোর ভয়াবহতা যতটা ভীষণ ভাবা হয়েছিল আদতে ততটা হয়তো নয়। উহানে, যেখানে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে ও বাহাত্তর হাজারের বেশি করোনভাইরাস কেস পাওয়া গেছে সেখানেও মাত্র এক শতাংশ ভাইরাস পজিটিভ মানুষ রোগের পূর্ণ লক্ষণ দেখা যায় নি। ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ জাহাজে, যেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাবের পরে, তিন হাজারেরও বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে আলাদা করে পরীক্ষা করা হয়েছিল – যা সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ণ বলে বিবেচিত হতে পারে, সেখানে ছশ চৌত্রিশ জনের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছিল। পরীক্ষার সময় তাঁদের বেশিরভাগের কোনও লক্ষণ ছিল না। বেশ কয়েক দিন পরে, এই রোগের স্বীকৃত লক্ষণগুলি দেখা দেয় ও মাত্র আঠার শতাংশ সম্পূর্ণভাবে উপসর্গহীন ছিলেন।
আমরা এখন জানি যে উপসর্গহীন লোকেরা কম সংক্রামক হন যদিও জানিনা তা কতটা কম। হংকং এবং সিঙ্গাপুরে জ্বর-বা ফ্লু জাতীয় উপসর্গ আছে এমন মানুষের স্ক্রিনিং করে জানা যায় যে উপসর্গহীন সংক্রমণের ঝুঁকি আমাদের ধারণা থেকে সম্ভবত অনেক কম। এই অভিজ্ঞতা যে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মানুষদেরই কাজে লাগবে এমন নয়, বস্তুতঃ যেখানে করোনা ভাইরাস একটি সমস্যা, সেখানকার সব মানুষের জন্যও এটি সমান শিক্ষণীয়। আমরা ধীরে ধীরে আরো অভিজ্ঞ হচ্ছি, এখন অনেক পরীক্ষা হচ্ছে, নতুন নতুন তথ্য হাতে আসছে । এতে আমাদের কৌশলগুলিতেও অনেক সামঞ্জস্য আনতে পারছি। আমরা ঠিকই পথ খুঁজে বার করবো।
যখন চারপাশে ভাইরাসের অন্তহীন স্রোতে মানুষ জেরবার, অথচ তাকে বাড়ি ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যেতেই হবে তখন আতঙ্ক খুব স্বাভাবিক। তবে সারা পৃথিবী জোড়া কাজের সুবাদে আমাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে উঠছে। মহামারীটি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত; একই রকম বিস্তৃত এ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতার পাঠও।