বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে,
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু,
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কলকাতা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মিনাখা। তারও আগে ঘুষিঘাটা বাজার থেকে ডান দিকে একটু ভেতরেই পুটখালী গ্রাম। মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ হয় ইটভাটায় কাজ করেন নয়তো প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যান পার্শ্ববর্তী হুগলী, বর্ধমান ইত্যাদি জেলায়।
একে লক ডাউন, তার উপর আমফান ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি। এখনও বহু ভাঙাবাড়ি সারানো হয়নি অর্থাভাবে। ২০ হাজার টাকার অনুদান কিছু মানুষ পেলেও অনেকেই পান নি। আত্মীয় পরিজনের সাহায্যে কোনও রকমে মাথাগুজে আছেন।
এইরকম এক অঞ্চলে ২৮ জুন, রবিবার আমফান সাইক্লোন ত্রাণের চিকিৎসা শিবির অনুষ্ঠিত হলো পুটখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
WBDF-SSU- ও ডাঃ ভাস্কর রাও জনস্বাস্থ্য কমিটির যৌথ টীম সকাল দশটায় রোগী দেখা শুরু করে। দলে ছিলেন ডাঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত, ডাঃ চন্দ্রকান্ত মৌর্য, ডাঃ রাহুল দেবনাথ, ডাঃ শুভজিৎ ভট্টাচার্য এবং স্বাস্থ্যকর্মী পরীক্ষীত ও প্রসেনজিৎ রায়।
প্রথমেই রোগীর ভিড়। শৃঙ্খলা বজায় রেখে চার ঘন্টার বেশি রোগী দেখা। ২৭৫ জন রোগী দেখার পর থামতে হলো। তখনও রোগী আসা চলছে। নিরুপায় হয়ে ফেরত পাঠাতে হলো আবার আসবো প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
উচ্চ রক্তচাপের প্রচুর রোগী। কেন ওষুধ বন্ধ জিজ্ঞেস করায় উত্তর মিলল – “ভাঙা ঘর সারবো, খাবার জোগার করবো না ওষুধ খাবো?” কাছাকছি একমাত্র মিনাখা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখানে মেলে কিছুটা স্বাস্থ্য পরিসেবা – তাও লকডাউনে অনিয়মিত। প্রচুর চর্ম রোগ, মানসিক অবসাদ, পেটের কৃমি, থাইরয়েড সমস্যা, হাঁটু-কোমর ব্যথা, জ্বর-সর্দি। থাইরয়েড ক্যানসার রোগীরও চিকিৎসা চলছে জরিবুটী দিয়ে – লকডাউন আর ভীতিতে অপারেশন আটকে।
শহরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে দলের নবীন চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে ভঙ্গুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করল তা তাদের বড় হাসপাতালে কাজ করে এতদিন তৈরি হওয়া ধারণাকে ধাক্কা দিয়ে দিল।
রোগীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা তাদের প্রয়োজন সাপেক্ষেই। শেখর দাশগুপ্তের দেওয়া মাস্ক তাদের কোভিড নিয়ম রাখতে সাহায্য করল।
আসার সময় সংগঠক গ্রামের আদিবাসী যুব সমাজের কাতর আহ্বান – আবার আসবেন তো?
একবার ক্যাম্পের খরচের কথা (যা বহন করা এই গরীব মানুষদের পক্ষে অসম্ভব) বলায় সবার মুখ বন্ধ।
আবার আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেও চিকিৎসকদের পাওয়া এবং আর্থিক যোগানের আশঙ্কা সঙ্গে নিয়েই ফিরতে হলো।
রিপোর্ট ডাঃ শুভজিত ভট্টাচার্যের লেখা।