কোভিড রুগীর বাড়িতে দিন রাত এক করে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই দেবার দৃশ্য ও গল্প পড়ে মনে হচ্ছে কিছু লোক ফণী আর আম্ফানের শক্তি সম্মিলিত একটা সুপার সাইক্লোনের সামনে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি আটকানোর চেষ্টায় আছে।
বাড়িতে অক্সিজেন দিয়ে মডারেট/সিভিয়ার কোভিড নিউমোনিয়ার রোগী, যাঁর স্যাচুরেশন কমতে শুরু করেছে, তাঁকে ভালো করা যায় না। কপালজোরে কেউ ভালো হয়ে গেছেন বলে, সেটাকেই ভবিতব্য ধরে নেওয়া যাবে না।
অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই করে আর হাতে পেয়ে দাতা আর গ্রহীতার মধ্যে হিতৈষণার অনুভূতি থেকে, আত্মতুষ্টি আসে। মনে হয়, বেঁচে গেলাম এ যাত্রা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব গল্প পড়ে আবেগে ভেসে যেতেই পারি আমরা, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শেষে যা হচ্ছে সেটা মারাত্মক। সেটা আর সোশ্যাল মিডিয়া দেখাচ্ছে না।
সেই শেষটা আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখছি। দেরি করে এই রোগীরা শেষ পর্যন্ত খাবি খেতে খেতে হাসপাতাল আসেন আর দেখা যায় এসেই হয় ইমার্জেন্সিতে বেডে পড়েই ভেন্টিলেটরে যাচ্ছেন, নয়তো কোনক্রমে ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন, ততক্ষণে ফুসফুস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে খারাপ হয়ে আইসিইউ-তে আসছেন। কারণ স্যাচুরেশন কমলে শুধু অক্সিজেন নয় সঙ্গে স্টেরয়েড আর এন্টিকোয়াগুলেন্ট–এর ইঞ্জেকশনও দিতে লাগবে। সেটা সঠিক সময়ে প্রয়োগ করাও জরুরি। বাড়িতে ওটা ম্যানেজ করা সম্ভব না যদি না ব্যক্তিগত ডাক্তার-নার্স সঙ্গে থাকেন, আর বাড়িতে ঠিকঠাক আইসোলেশন এর সুবিধেওয়ালা হাসপাতাল বানিয়ে নেবার মত পকেটের জোর ও সাপোর্ট সিস্টেম থাকে।
এই মডারেট টু সিভিয়ার রুগীরা ডিসচার্জ-এর পরেও বহুদিন অবধি অসুস্থ, দুর্বল থাকেন, নানা ধরণের কোভিড পরবর্তী জটিলতা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও। এঁরা আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব কিছুর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন যুক্ত,এবং পর্যাপ্ত সংখ্যায় অক্সিজেন ডেলিভারি ডিভাইসের সুবিধে যুক্ত বেডের ব্যবস্থা করতেই হবে সরকার কে।স রকারি- বেসরকারি যেখানে যে ভাবে পারেন। এখন বেড নেই বলে নিরুপায় হয়ে ডাক্তাররা রুগীকে বাড়িতেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলছেন। কিন্তু এতে পরবর্তী কালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরেই চাপ পড়বে।
তাছাড়া, বেডের অভাব কি সত্যিই কতটা? কোভিড হাসপাতালে কারা কেন কখন কিভাবে বেড পাচ্ছে, কিভাবে এডমিশন আর ডিসচার্জ হচ্ছে, প্রোটোকল মেনে চলা হচ্ছে কিনা, কোথাও কোন দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, সেটার তত্ত্বাবধান করাতে এখন সোজা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর মডারেট /সিভিয়ার কোভিড রুগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন থেরাপির জগদ্দল ভার তুলে নেওয়ার দায়িত্ব আরোপিত হলে তাতে জনস্বাস্থ্যেরই ক্ষতি। কোয়ারান্টিনে গৃহবন্দী থাকা মাইল্ড কোভিড রুগী এবং তাঁদের পরিজনের জন্য খাবার, অত্যাবশ্যক সামগ্রী, মুখে খাবার ওষুধ সরবরাহ বা খুব বেশি হলে রক্ত/কফ থুথুর নমুনা সংগ্রহ- এই ভার টুকু অবধিই থাক স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য। অক্সিজেনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।