সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যায় শৈশব, কৈশোর, প্রথম প্রেম আরও কত কিছু। হারিয়ে গেছে পাছা পেড়ে শাড়ি, বেল বটম ড্রেন পাইপ আর ট্যুইস্ট নাচের ‘জীবনে কী পাবো না’ উন্মাদনা।
এরই মাঝে হে পাঠক আপনি খেয়াল করেননি হারিয়ে গেছেন ঘোড়ায় চড়া দশ বিশটা গ্রামে দাপিয়ে বেড়ানো এলএমএফ ডাক্তার। দু’টাকা বা তার গুণিতকে বত্রিশ টাকা চৌত্রিশ টাকা ভিজিটের এমবি ডাক্তার।
আর তাঁদের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে তাঁদের দেওয়া কত না ওষুধ। আজকের ব্যাখান সেই হারিয়ে যাওয়া ওষুধ নিয়ে।
আন্দাজ পঞ্চাশ বছর আগেও গ্রাম বাংলায় অনেক জায়গায় ডাক্তারের ফিজ নির্ধারিত হত একটা অদ্ভুত নিয়মে। আনুষঙ্গিক ওষুধ যাই দেওয়া হোক না কেন একটা মিক্সচারের শিশি অবশ্যই দেওয়া হত। শিশির গায়ে কাগজ কেটে ডোজ সাঁটানো। ওই শিশিটির দামেই নির্ধারিত হত ডাক্তারের ফি। সাড়ে সাত টাকা শিশির ডাক্তার, দশটাকা শিশির ডাক্তার… শুনতে অবাক লাগলেও এই রকম। এই মিক্সচারে কী কী মেশানো হত, তা’ একমাত্র ডাক্তারবাবু আর তাঁর কম্পাউন্ডারটি ছাড়া আর কেউ জানতেন না। এই রকমের ঠিক নয় তবে স্ট্যান্ডার্ড কিছু মিক্সচারের রমরমা ছিল, বিশেষ করে হাসপাতালে আর শহরাঞ্চলের ডিসপেনসারিগুলোতেও। তাদের নাম এখনও পুরোনো দিনের মানুষজন যথেষ্ট আক্ষেপ সহযোগে স্মরণ করেন। সেই সব মিক্সচারের এক ডোজ খেলেই রোগমুক্তি হত বলে তাঁদের স্পষ্ট মনে পড়ে। কয়েকটি মিক্সচারের নাম তাঁরা খেয়াল করতে পারেন যেমন বদহজমে কারমিনেটিভ মিক্সচার, জ্বরে অ্যালক্যালি মিক্সচার। এ’ ছাড়াও কফ মিক্সচার, ম্যালেরিয়া মিক্সচার, ব্রোমাইড মিক্সচার। আরও হরেক কমপোজিসনের পুস্তকে লিখিত এবং স্বকপোলকল্পিত মিক্সচার।
এই নিয়ে হাসির গল্পও চালু ছিল বেশ কিছু। বোতল বন্দী নানা রকম মিক্সচার নম্বর দিয়ে রাখা। ডাক্তার বাবুর প্রেসক্রিপশনে লেখা থাকছে মিক্সচারের নম্বর। কাউণ্টারে কম্পাউন্ডারবাবু সেই অনুযায়ী নম্বর মিলিয়ে শিশিতে ঢেলে দিচ্ছেন। এ’দিকে হয়েছে কী, সকাল থেকে সাত নম্বর বোতলের মিক্সচার দেদার দিয়ে, বোতল শূন্য। অথচ ডাক্তার বাবু ওই সাত নম্বর মিক্সচার লিখেছেন আবারও। কুছ পরোয়া নেই, কম্পাউন্ডারবাবু চার নম্বরের আর তিন নম্বরের বোতল থেকে রোগীর শিশিতে ঢেলে দিলেন। সহজ হিসেব, চার আর তিনে সাত।
এই প্রসঙ্গে আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনা উল্লেখ করতে ভারি লোভ হচ্ছে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমি তখন মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট ডিপার্টমেন্টে হাউসস্টাফ। একজন পুরোনো মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন ডাঃ আনসারি। কলাবাগান অঞ্চলে বিরাট পসার। তিনি ইউপির লোক। বছরে দু’একবার মুলুকে যেতেন। সেই সময় তাঁর চেম্বার সামলানোর ভার দিয়ে যেতেন অগতির গতি নাদান হাউসস্টাফ এই আমাদেরকে। ফিরে এসে হাতে গুঁজে দিতেন একশ পঞ্চাশ বা দু’শ টাকা। তখন নার্সিংহোম ইত্যাদিতে খেপ খেটে এক্সট্রা রোজগারের সুবিধে ছিল না। কাজেই আমাদের কাছেও বেশ লোভনীয় ছিল ব্যাপারটা। সেই ডাঃ আনসারির চেম্বারের ভেতরে বসে আমরা মানে তখনকার দিনের আধুনিক ডাক্তারেরা যাই প্রেসক্রিপশন করতাম, তা’ কিন্তু রোগীর হাতে দেওয়া হত না। অভিনয় শেষে সে’টি রেখে দিয়ে, জাবদা খাতায় রোগীর নামে একটা নম্বর পড়ত। আদৌ আমরা যা লিখছি সেই ওষুধ না দিয়ে ‘অভিজ্ঞ’ কম্পাউন্ডারেরা এই রোগে ডাঃ আনসারি থাকলে যা দিতেন সেই মত মিক্সচার বানিয়ে দিতেন। অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল খুলে সেই গুঁড়ো ঢেলে তা’তে গাম অ্যাকাশিয়া রঙিন সিরাপ আরও কী কী মিশিয়ে, তারপরে মাপ মত জল ঢেলে ঝাঁকিয়ে সেই তরল শিশিতে পুরে নম্বর মিলিয়ে দেওয়া হত রোগীকে। বলে দেওয়া হত শিশি ফুরোলে আবার নম্বর মিলিয়ে ওষুধ অর্থাৎ মিক্সচার নিয়ে যেতে। আমরা নিজেদের জ্ঞানলব্ধ প্রেসক্রিপশনের এই অবমূল্যায়ন দেখেও টুঁ শব্দটি করতাম না। টাকা বড় বালাই!
মিক্সচার প্রসঙ্গ শেষ করি বঙ্গদর্শনএ শ্রী দেবদত্ত গুপ্তর লেখার থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে।
লেখার শিরোনাম,
“কবির শেষ জীবনের মিক্সচার”।
“মহাত্মা অ্যান্ড কোং। যে দোকানে তৈরি হত কবির জীবনের শেষ বেলাকার মিক্সচার। আসলে তত দিনে বাঘা বাঘা ডাক্তারদের নামি দামি ওষুধগুলো ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। তখন একটু যন্ত্রণা উপশমের জন্য ডাক্তাররা বেছে নিয়েছিলেন মিক্সচার প্রয়োগের পথ। আর সেই মিক্সচার তৈরির দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই দোকানের অভিজ্ঞ কম্পাউন্ডাররা।
পিল সাইট্রাস, সোডিবাই কার্ব, পট এসিডাস, সিরাপ রোজ কিম্বা হাইড্রাগ, মেনথল, একুল বেলাডোনা, নাসিভম ইত্যাদির জটিল মাপ জোক দিয়ে মিক্সচার তৈরিতে দিন রাত এক করে লেগে পড়েছেন তাঁরা। কারণ, মুহুর্মুহু বদলে যাচ্ছে কবির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আর তার সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে ওষুধের রসায়ন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।”
এই সব মিক্সচার অন্তর্হিত হয়েছে নিঃশব্দে। বদলে এসেছে নানান পেটেন্ট ওষুধ।
মিক্সচারের পর অনিবার্য ভাবে বলতে হবে পুরিয়ার কথা।
হোমিওপ্যাথিতে যেমন ঠিক তেমনই অ্যালোপ্যাথি ডাক্তাররাও হরবখত পুরিয়া দিতেন সাদা কাগজের মোড়কে। একটা সে’রকম পুরিয়া বাঙালি বাড়িতে খুব আসত। এপিসি পুরিয়া, মাথাব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ বা জ্বরের জন্য। এ ছাড়াও হরেক রকন পুরিয়া দিতেন ডাক্তারেরা। ওই মিক্সচারের মতই তাতে অ্যান্টিবায়োটিক গুঁড়ো সমেত সম্ভাব্য সব ট্যাবলেট জ্ঞানবুদ্ধিমতন গুঁড়িয়ে দেওয়া হত। সংখ্যায় সেই সব ইনগ্রেডিয়েণ্ট এত বেশি হত যে পুরিয়া মাঝে মাঝে সাইজে পুঁটুলি হয়ে দাঁড়াত। আমার ক্লাসমেট ব্রত ডাঃ সাঁইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল কিছু দিন। স্যার তাকে এক রোগীর পুরিয়ায় কী কী থাকবে নির্দেশ দেওয়া শেষ করেছেন, এমন সময় রোগীর পা ফোলা রয়েছে, ব্রত সে’ দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তিনি পুরিয়ার দু’টো ইনগ্রেডিয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রতি পুরিয়ায় যা’ ছিল তার ওপরে আদ্ধেকটা করে ল্যাসিক্স আর হেট্রাজ্যান। একটা পেচ্ছাপ করিয়ে শরীরের জল কমায়, অন্যটা ফাইলেরিয়ার ওষুধ।
এই রকম পুরিয়া এখন আর দেওয়া হয় না।
হারিয়ে যাওয়া ওষুধের কথা বলতে গিয়ে মনে আসবেই, মাত্র কয়েক বছর আগের, আমাদের হাসপাতালগুলোর ইমার্জেন্সি আর আউটডোরের কথা।
আমাদের ছাত্রাবস্থায়, সুতীব্র হাঁপানির রোগী পৌছেই একজামিনেশন টেবিলে বসে হাত বাড়িয়ে দিতেন। আমরা সদ্য ডাক্তারি শিখেছি। আমরাও জানতাম তাঁর শিরায় ঢালতে হবে ফিফটি সিসি ইয়াব্বড় সিরিঞ্জে সাজানো অ্যামাইনোফাইলিন আর গ্লুকোজের মিশ্রণ। রোগী দশ পনেরো মিনিটের মাথায় কিছুটা সুস্থির হয়ে বলবেন, আঃ বাঁচালেন ডাক্তারবাবু। এ’বার বাড়ি যাই তবে! ডাক্তারবাবুরা প্রাইভেট চেম্বারেও এ জিনিস খুবই দিতেন।
শুনতে অবাক লাগে সেই মহৌষধ আর দেওয়া হয় না, সামান্য সাইড এফেক্টের ভয়ে। সামান্য সাইড এফেক্টটা হল, আকস্মিক মৃত্যু। কাজেই বইপত্রে সীমিত ব্যবহারের কথা আছে যদিও এখনও, অ্যামাইনোফাইলিন হাসপাতালের আলমারিতে নেই। পাবেন না সাধারণ ওষুধের দোকানেও।
হাত বা পা মচকেছে, ভেঙেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না এমতাবস্থায় ‘গুলার্ডস লোশন’ বলে একটা সাদা রঙের তরল দিয়ে আহত অঙ্গ ব্যান্ডেজ করা হত। পরে এক্সরে করে প্লাস্টার হবে। কালের প্রকোপে সেই লোশন হারিয়েছে।
অ্যাক্রিফ্লাভিন লোশন নামের হলুদ জীবানুনাশক তরলটির দেখা পাওয়া যায় না ইমারজেন্সিতে।
হারিয়ে গেছে, কাটা ছেঁড়ায় ব্যবহার্য সর্বজনমান্য বিখ্যাত লাল ওষুধ তথা মারকিউরোক্রোম। ড্রেসিং করার সময় তো বটেই, পোস্টার ইত্যাদি লিখতেও দেদার ব্যবহার করতাম আমরা। দোকানে কিনতে গেলে পাবেন, কিন্তু ব্যবহার প্রায় নেই। স্ট্যাম্পের কালির রঙের জেনশিয়ান ভায়োলেটও তাই। অন্যান্য ওষুধ আসায় হারিয়ে গেছে ডিসপেনসারিতে বানানো হাজা দাদ চুলকুনির মলম।
নেই টিঞ্চার আয়োডিন, টিঞ্চার বেঞ্জয়েন।
পেট খারাপে দেওয়া হত সালফাগুয়ানাডিন, এন্টারোকুইনল। এখন পাওয়াই যায় না। সালফাডায়াজিন মুড়িমুড়কির মত দেওয়া হত ইনফেকশন ঘটিত রোগে। অনেক পুরোনো রোগী তিক্ত অভিজ্ঞতায় সতর্ক ভাবে এখনও বলেন তাঁর ‘সালফা ড্রাগ’এ অ্যালার্জির কথা। এই অ্যালার্জির ভয়ে ওষুধটা বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেল। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সও কিছুটা দায়ী। অন্যান্য সালফা ড্রাগ যেমন সালফানিলামাইড পাউডারেরও তাই হাল।
গলা ব্যথায় দেওয়া হত থ্রোট পেন্ট। কাঠির ডগায় তুলো জড়িয়ে গলার ভেতরে টনসিলের গায়ে যত্ন করে লাগানো হত। সেইটি লাগানোর অমানুষিক অভিজ্ঞতা অনেকের স্মৃতিতেই এখনও জ্বলজ্বলে। থ্রোট পেন্ট আর দেওয়া হয় না।
দেদার ব্যবহার হত পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন। প্রাইভেট প্রাকটিশে, কোয়াক প্রাকটিশে, হাসপাতালের আউটডোরে ইনডোরেও। সেই পেনিসিলিনের দোর্দন্ড প্রতাপ অন্তর্হিত। লং অ্যাক্টিং পেনিসিলিন, বাজারে পেনিডিওর নামে পাওয়া যায়, ডাক্তারবাবুরা রিউম্যাটিক হার্টের রোগীকে লিখতে বাধ্য হন। বাজারে পাওয়া গেলেও সেইটি পুশ করার জন্য লোক পাওয়া যায় না আজকাল।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষেত্রে বিশেষ করে রেজিসস্ট্যান্সের জন্য ওষুধেরা একে একে এসেছে এবং বিদায় নিয়েছে। এই প্রসঙ্গে টেট্রাসাইক্লিন এবং তার বেশ কয়েকটি বহুব্যবহৃত ডেরিভেটিভের কথা বলতেই হবে যারা এখনও বাজারে থেকেও প্রায় নেই।
ক্লোরামফেনিকল নামে টাইফয়েডের মহৌষধ ওষুধটা প্রাণঘাতী সাইড এফেক্টের ভয়ে প্রায় অব্যবহার্য হয়ে গেল। ব্যাক্টেরিয়াল ডায়রিয়ায় ব্যবহার হত তার সাথে স্ট্রেপটোমাইসিন মেশানো ক্লোরোস্ট্রেপ বলে এক ধন্বন্তরি ক্যাপসুল। অন্যায় স্বীকার করে বলি, ছাত্রাবস্থায় বিস্তর বলতে গেলে মুঠোমুঠো খেয়েছি। যত্রতত্র খেতাম, তদুপরি হোস্টেলের জলও ভাল ছিল না। প্রায়ই ডায়রিয়া হত। সেই ক্লোরোস্ট্রেপ আমাকে বিষণ্ণ করে বিদায় নিয়েছে।
যেমন গ্রামীণ কোয়াক সহ বহু চিকিৎসককে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে স্ট্রেপটোপেনিসিলিন নামের সর্ব ইনফেকশনহর ইঞ্জেকশনটি।
অনেকেরই পরিচিত ব্যারালগান, স্প্যাসমোপ্রক্সিভন ইত্যাদিরা নাম একই রেখে কমপোজিশন পালটেও নিজেদের বাঁচাতে ব্যর্থ।
একই গতি হয়েছে লেবার রুমের ব্যবহার্য মেথারজিন ইঞ্জেকশন। আমূল পালটে গেছে গর্ভিনীর একল্যাম্পসিয়ার চিকিৎসা।
ক্লোরাল হাইড্রেট নামের পুরোনো ওষুধ কিম্বা তথাকথিত লাইটিক ককটেল আর ব্যবহার হয় না।
আগেকার জমানার ডায়াবেটিস রোগের জনপ্রিয় অগতির গতি ক্লোরপ্রোপ্যামাইড(ডায়াবিনেজ) বা টলবুটামাইড(রাস্টিনন) বাজার থেকে তথা প্রেসক্রিপশন থেকে উধাভ্যও বহুদিন আগেই।
ডায়াবেটিসের পুরোনো ওষুধের মধ্যে টিঁকে আছে একমাত্র মেটফর্মিন আর ইনসুলিন। তাও হিউম্যান ইনসুলিন। বিগত বছর
কুড়ির মধ্যে অবলুপ্ত হয়ে গেছে গরুর থেকে পাওয়া বোভাইন আর শুয়োর থেকে পাওয়া পোর্সাইন ইনসুলিন।
একসময় আফিম বা তার কোনও উপজাত খুব ব্যবহার করা হত পেট খারাপ, পেট ব্যথা, গা ব্যথা, কাশি ইত্যাদির ওষুধে। নেশা ধরায় বলে সেই সব বিপজ্জনক ওষুধ বাতিল হয়েছে।
মাঝে মধ্যেই সরকারি হুকুমনামায় কিছু ওষুধ বাতিল হয়। যা ক্ষতিকারক বা অপ্রয়োজনীয়। তার অনেকগুলি একক ওষুধ হলেও তার বেশির ভাগই বিচিত্র সব অবৈজ্ঞানিক ফিক্সড ড্রাগ কম্বিনেশন। বিস্তৃত তালিকা ইন্টারনেটে আর সাম্প্রতিক বইপত্রে উপলব্ধ।
নতুন ওষুধের মধ্যে এসেই বিদায় নিয়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধ রোসিগ্লিটাজোন। ব্যথার ওষুধ রোফেকক্সিব ভ্যালডিকক্সিব। রোগা হবার ওষুধ সিবুট্রামিন ইত্যাদি।
এই খানে একটা কথা না বললেই নয়। কয়েকটা পুরোনো ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড ইত্যাদি বাদ দিলে আমার সমসাময়িক ডাক্তারেরা যে সমস্ত ওষুধ লেখেন তার প্রায় পুরোটাই আমাদের ছাত্রাবস্থার পরে বাজারে এসেছে।
সরকারের তরফে যেহেতু তথ্য আপডেটের বাধ্যতামূলক সে’রকম কোনও ব্যবস্থা নেই, পুরোটাই ডাক্তারকে জানতে হয়েছে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে অথবা অন্য উৎস থেকে নিজের উদ্যোগে। এর মধ্যে কোনও কোনও ওষুধ বাতিল শুনেছেন বটে কানাঘুষো, কিন্তু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তখনও। পুরো সসেমিরা অবস্থা।
কখনও বা মিডিয়ার চাপে কোনও ওষুধ বাতিল না হয়েও প্রায় বাতিল হয়ে গেছে, যেমন নিমুসেলাইড নামের ব্যথার ওষুধটি। কখনও বা দাম কমানোর সরকারি নির্দেশের কারণে আশানুরূপ লাভ তোলা যাচ্ছে না বলে কোম্পানি নিজেই তার ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে।
এখানে একটা মজার কথা বলে শেষ করি।
বেশ বছর কয়েক আগে একটা সরকারি নির্দেশে অনেক ক’টা ক্ষতিকারক তথা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিষিদ্ধ হল। অর্ডারের
ফুটনোটে বলা ছিল, বেশ কিছুদিন পরের অমুক মাসের তমুক তারিখ থেকে হুকুম বলবৎ হবে কেন না কিছু কোম্পানিতে কিছু ওষুধ তৈরি হয়ে গুদামজাত রয়েছে।
হারিয়ে যাওয়া ওষুধ আর সেই সব ওষুধের হারিয়ে যাবার হাজার একটা কারণ। এই পরিসরে তার প্রায় কিছুই বলা হল না। জানিই বা কতটুকু!
ভালো কথা, এত সাত সতেরো কথার মধ্যে বলতে ভুলেছি ‘কোরামিন’ নামের এক তথাকথিত প্রাণদায়ী ওষুধের কথা। আমার প্রথম দিকের পেশাজীবনে মরণোন্মুখ রোগী যদি কোরামিন ইঞ্জেকশন বা নিদেনপক্ষে মুখে দু ফোঁটা কোরামিন না পেতেন, সাধারণ মানুষ তো বটেই চিকিৎসকরা অবধি বিষণ্ণ হয়ে পড়তেন খুব। হায়, সেই কোরামিন চিকিৎসকের হাত ছেড়ে হারিয়ে গেছে কবেই!
Sir cibazol hyocyamus thalazol pentid?
My father told me about sterile milk injection, which he used during internship in medical college Calcutta at the time of sixties