যখন হঠাৎ করে শুনলাম আমাদের ট্রান্সফার হয়েছে কোলাঘাট থেকে সাগরদীঘি মাথায় বাজ পড়ল। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
কলকাতায় এক সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের জটলার মাঝে একজন সুদর্শন বয়স্ক রাশভারী মানুষ এসে বললেন “আপনি দিগন্তর বাবা?”
সম্মতিসূচক মাথা নাড়াতে উনি বললেন দেখুন আপনার কোম্পানী আপনাদের বদলি করেছে সেই নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু দিগন্তর কলকাতায় থাকা বা এই ট্রেনিংগুলো করা উচিত। আপনি চাইলে আমি যথাযথ জায়গায় বলতে পারি।
আপনি ঠিক কে আমি বুঝতে পারছি না…ইতস্তত ভাবে বললেও উনি পাশের গাড়ির দিকে চোখ ফেরাতে বুঝলাম সিনিয়র একজন, লাল বাতিওয়ালা গাড়িতে যাতায়াত করেন সিকিউরিটি নিয়ে।
না,স্যার, এসবের দরকার নেই। ওতে আরো শত্রুতা বাড়বে আমার।
স্যার নয়, এখানে আমরা সবাই সন্তানের বাবা। আমার ছেলেদের গ্রুপটাই আপনার ছেলেকেও চায় ওদের সাথে। ওরা খুব অবাক হচ্ছে যে দিগন্ত আর আসতে পারবে না বলে।
এরপর দুর্গাপুরের কাছাকাছি প্ল্যান্টেও অনুরোধ করেছিলাম। হয়নি। যাই হোক, সব কিছুর পরে যখন সাগরদীঘিতে যাই, সাগরদীঘি স্কুলে ওকে ভর্তি করাই তখন মামুন স্যার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দিগন্তদের প্রথম ব্যাচ যারা ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল। প্ল্যান্টের স্কুলগুলোতে দুটো সেকশন থাকে। একটায় ছেলে মেয়েরা বাংলায় উত্তর লিখতো, একটায় ইংরেজিতে।
দিগন্তদের পাঁচ জন জন ছিল, যারা ইংরেজিতে উত্তর লিখতো। দিগন্ত এখন মুম্বাই। রূপকথা মাধ্যমিকে একাদশ স্থান দখল করে, গোল্ডম্যান স্যাক্স ব্যাঙ্গালোরে, মেহেদী ডাক্তার, একজন লেডি ব্রাবোর্ন থেকে ইংলিশ অনার্স , আর একজন ফিজিক্স হনার্স।
মাধ্যমিক অবধি স্যার ওদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, সেমিনার এসবে অংশগ্রহণ করাতেন , ওরা স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করতো।
আজ হেড স্যার BKTPP। আমিও।
মানুষটা সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় “অথচ” নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যেখানে আন্তর্জাতিক লেখক লেখিকা তাদের গবেষণামূলক লেখা প্রকাশ করেন।
আমার BKTPP র একমাত্র বন্ধু।
আজ ওনার এই স্বীকৃতি আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছি।
আপনি থাকছেন স্যার।