বয়স্ক ডাক্তারবাবু নিজের চেম্বারে বসে শিবরাম পড়ছিলেন আর আপন মনে খ্যাঁ খ্যাঁ করে হাসছিলেন। আধুনিকা মায়ের হাত ধরে এক গোল-গাল কিশোরী চেম্বারে প্রবেশ করল। তারা ডাক্তারবাবুর খ্যাঁক খ্যাঁক হাসি শুনে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মহিলার মা বললেন, ‘আপনিই কি ডাক্তারবাবু?’
ডাক্তারবাবু বই বন্ধ করে বললেন, ‘কেন, আপনার কি সন্দেহ হচ্ছে নাকি?’
‘না, যে ভাবে হাসছিলেন…’
‘ডাক্তার হলে হাসা যায় না বুঝি? হাসি এক প্রতিবর্ত ক্রিয়া। বর্তমানের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়াও বলতে পারেন। আপনি কাশি আটকাতে পারবেন?’
‘কাশি?’ মহিলার মুখ হাঁ হয়।
‘বয়স হলে যেমন কাশি বাসের ইচ্ছা অপ্রতিরোধ্য, তেমনি কাশি পাওয়ার ইচ্ছাও অপ্রতিরোধ্য। অবশ্য প্রথম ক্ষেত্রে পুণ্যের বিষয় কাশি বাস, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কাশি বাঁশ। বিশেষ করে গভীর রাতে যদি কাশি শুরু হয়।’
কিশোরীটি এবার বেশ শব্দ করে হেসে ফেলল। ডাক্তারবাবু মুগ্ধ ভাবে চেয়ে বললেন, ‘এইতো, এই মেয়ে এখনো বড় হয়নি। হাসতে জানে, কাঁদতে জানে। পান খায়না, তবে পান বোঝে। বল মা, রোগী কে?’
‘এই যে, রোগী আমার মেয়ে।’
‘নাম?’
‘শ্রীময়ী ঘোষ। বয়স সতেরো।’
‘সমস্যাটা কি?’
‘স্যার, ওর অনেকগুলো অসুখ। কোনটা যে আগে বলি।’
‘যেখানে খুশি শুরু করুন। একবার বলতে শুরু করলে সব কথা গড় গড় করে বেড়িয়ে আসবে।’
‘ওর মাসিক ঠিক ঠাক হতো না। তাই একটা আলট্রাসোনোগ্রাফি করিয়েছিলাম। সেখানে এসেছে পলিসিস্টিক ওভারি। দুপাশের ওভারিতেই অসংখ্য সিস্ট। তাছাড়াও ফ্যাটি লিভার আছে। একজন মেয়েদের ডাক্তারবাবুর কাছে গেছিলাম। তিনি কিছু রক্ত পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন। প্রায় সব পরীক্ষাতেই গণ্ডগোল এসেছে। লিপিড প্রোফাইলে ট্রাই গ্লিসারাইড বেশী। ২৫০ এর উপর। থাইরয়েড পরীক্ষায় টি এস এইচ অনেক বেশী। উনিই আপনার কাছে পাঠালেন।’
বয়স্ক ডাক্তারবাবু বললেন, ‘শ্রীময়ী মামনি, তুমি একটু ওজন করো তো।’
শ্রীময়ী বলল, ‘ওয়েট করতে লজ্জা লাগে জেঠু।’
ওজন যন্ত্রের কাঁটা ৮৫ কেজির ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারবাবু একটা ফিতে বার করলেন। বললেন, ‘একবার তোমার কোমর মাপতে হবে মামনি।’
কোমরের মাপ পঁয়ত্রিশ ইঞ্চি। ডাক্তারবাবুর ভুরু কুঁচকালো। তিনি শ্রীময়ীর প্রেশার দেখলেন। গম্ভীর মুখে বললেন, ‘প্রেশারও বেশী আছে। উপরের টা ১৩৬, নীচেরটা প্রায় ৯০।’
মহিলা বললেন, ‘এই টুকু বয়সে আমার মেয়েটার এতোগুলো রোগ কি করে হলো স্যার? এই বয়স থেকে ওষুধ ধরলে বাকি জীবনও তো ওকে শুধু ওষুধ খেয়েই চলতে হবে!’
ডাক্তারবাবু গম্ভীর মুখে বললেন, ‘অনেকগুলো রোগ নয়, ওর একটাই রোগ হয়েছে। এই রোগের নাম মেটাবলিক সিন্ড্রোম।’
‘সেটা কি রোগ। এই রোগের নাম তো আগে শুনিনি।’
‘এই রোগকে সভ্যতার একটা অভিশাপও বলতে পারেন। শরীরে ফ্যাট সেল অর্থাৎ অ্যাডিপোজ টিস্যু থেকে নানারকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক তৈরি হয়। এই রাসায়নিক গুলি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ইনসুলিনের নাম শুনেছেন তো?’
শ্রীময়ী উত্তর দিল, ‘ইনসুলিন প্যাংক্রিয়াসের আইলেট অফ ল্যাংগারহ্যন্সের বিটা সেল থেকে তৈরি হওয়া একটি হরমোন। এটি ব্লাডে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখতে কাজে লাগে।’
‘ভেরি গুড। তবে শুধু গ্লুকোজ মেটাবোলিজম নয়, এর আরও হাজার একটা কাজ রয়েছে। দেহে অ্যাডিপোজ টিস্যুর পরিমাণ বেশী হয়ে গেলে ইনসুলিন রেজিস্টান্ট তৈরি হয়। রক্তে ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলেই সুগার, প্রেশার, ফ্যাটি লিভার, পলিসিস্টিক ওভারির মতো অসুখ দেখা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোমরের পরিমাপ ৩৫ ইঞ্চির বেশী হলে, ট্রাই গ্লিসারাইড ১৫০ মিগ্রা/ডেলি এর বেশী, এইচডিএল কোলেস্টেরল বা ভালো কোলেস্টেরল ৫০ মিগ্রা/ডেলি এর কম হলে, প্রেশার ১৩০/৮৫ মিমি. এর বেশী হলে এবং খালিপেটে ব্লাড গ্লুকোজ ১০০ মিগ্রা/ ডেলি বেশী হলে তাকে নিশ্চিত ভাবে মেটাবলিক সিন্ড্রোম বলা যায়। বস্তুত এর মধ্যে যে কোনও তিনটি থাকলেই মেটাবলিক সিন্ড্রোম। শ্রীময়ী মামনির সবকটিই আছে।’
‘কিন্তু ওর তো খালি পেটে সুগার এসেছে ১০৩। এটাকে তো নর্মাল বলেই জানতাম।’
‘নর্মাল নয়। এর জন্য ওষুধের দরকার নেই। কিন্তু এখন থেকে সাবধান হওয়ার দরকার আছে।’
‘কি রকম সাবধানতা?’
‘সবার আগে ওজন কমাতে হবে। ওজন কমাতে হলে খাওয়া-দাওয়াতে পরিবর্তন আনতে হবে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য কমাতে হবে। খাওয়া দাওয়া হবে অনেকটা সুগারের রোগীর মতো। চিনি, মিষ্টি বন্ধ করতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমাতে হবে। বেশী করে টাটকা শাক-সবজি আর ফল মূল খেতে হবে। ঘি- মাখন বন্ধ করতে হবে। খাবারে তেল খুব কম। ফাস্ট ফুড আর নিমন্ত্রণ বাড়ির খাবার খাওয়া যাবে না।’
শ্রীময়ীর মুখ কাঁদো কাঁদো। ‘সেকি জেঠু, সপ্তাহে একদিনও রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে পারব না?’
‘দ্যাখ মামনি, তোর জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ তোর এই শরীর। এই শরীর সুস্থ রাখাটা রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়ার চেয়ে অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। আচ্ছা তুই খেলা ধুলো বা দৌড়া দৌড়ি করিস। নিদেন পক্ষে একটু হাঁটা হাঁটি করিস।’
শ্রীময়ীর মা উত্তর দিলেন, ‘খেলাধুলো করবে কখন। পড়াশুনোর যা চাপ। এক বছর পরে ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা। তাছাড়া খেলবে কোথায়? পাড়ার যা পরিবেশ। ওর পাড়াতে বন্ধুও নেই।’
‘বন্ধু নেই তো- হতে কতক্ষণ। একবার সবার সাথে মিশতে শুরু করলেই বন্ধু হয়ে যাবে। আমার এই বুড়ো বয়েসেই কত বন্ধু। এখনও রোজ নতুন নতুন বন্ধু হচ্ছে। আর ওর মতো একটা সুন্দরী স্মার্ট মেয়ের বন্ধু হবেনা? বন্ধু ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে নাকি!’
‘কিন্তু খেলতে বা হাঁটতে বেরোলে ওর পড়াশুনোয় ক্ষতি হবে। অন্যরা যে ওর থেকে এগিয়ে যাবে।’
‘কেউ কারও থেকে এগিয়ে যাবে না মা। এরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আদৌ একটুও এগোনো যায় না। মনে রাখবে জীবনের প্রথম বাইশটা বছর শরীর গড়ার সময়। এসময় হাড়ে ক্যালসিয়াম লাগবে, মাংস পেশীতে প্রোটিন জমবে, মস্তিষ্কে নানারকম নিউরোট্রান্সমিটার জমা হবে। বাকি জীবনটা শুধু ক্ষয়। অতএব শরীর গঠনের সময় শরীরের যত্ন নিতেই হবে। না হলে পড়াশুনো শিখে দিগগজ পণ্ডিত হয়ে আদৌ কোনও লাভ হবে না।’
‘তাহলে কি করব? ওকে কি জিমে ভর্তি করে দেব?’
‘সে যা ইচ্ছা কর। কিন্তু মনে রাখবে মা সারা দিনে ওকে অন্তত দেড় ঘণ্টা জোরে জোরে হাঁটার মত পরিশ্রম করতে হবে।’
‘তাহলে কি শুধু খাওয়া দাওয়া ঠিক করলেই আর এক্সেসাইজ করলেই হবে? ওষুধের কোনও দরকার নেই?’
‘থাইরয়েডের ওষুধ খেতে হবে। প্রেশারটাও মনিটরিং করতে হবে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে খাদ্যের পরিবর্তন ও পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। শ্রীময়ী, তুমি কি বুঝতে পেরেছো?’
শ্রীময়ী বলল, ‘হ্যাঁ জেঠু, বুঝতে পেরেছি। তবে আরও একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি। পানাসক্ত হওয়া খারাপ, কিন্তু PUNআসক্ত হওয়া মোটেই খারাপ নয়।’
বয়স্ক ডাক্তারবাবু হো হো করে হেসে উঠলেন। এবং হাসতে হাসতে বিষম খেলেন। বিষম খেয়েও হাসতে থাকলেন। সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা।
trygliceride কমানো যায় কি ভাবে?৫৩ বছর বয়সে?TG বাড়ার জন্য কি কখনোgenetic factor কাজ করে?
ট্রাই গ্লিসারাইড সাধারণত সামান্য বেশী থাকলে ওষুধ ছাড়াই খাদ্যাভাস পাল্টানো এবং শারীরিক পরিশ্রমে কাজ হয়।
খুব বেশী হলে(২৫০ মিগ্রা/ডেলি) বেশী হলে ওষুধ লাগে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। ওষুধের নানা রকলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
Is Fbs 》100 mg/ dl high?
Pcod is also seen in pt. Without Met.synd.
FBS > 126, 2 hr after 100 mg glucose intake BS> 200 diabetis.
FBS > 100 is pre diabetic. Life style change is neede.
Darun upojogi lekha dada
?