একটা গোটা মহামারী জুড়ে কোথাও ভারতবর্ষকে পেলাম না।
স্টেজ জিরো থেকে স্টেজ আননোন, গোটা চিত্রনাট্যে শুধু বিভাজিত প্রাদেশিক চরিত্রের আনাগোনা,
যারা কেরালাইট বাঙালী তামিল মণিপুরী বা গুজরাটি,
অথবা সব পরিচয় মোছা ‘পরিযায়ী’।
কিন্তু দেশ? এ কেমন সংহতি, বিপদ এলে যা বহুঘ্রাত কর্পূরের মতো উদ্বায়ী,
এ কেমন ধারণা, সেনাবাহিনী, ক্রিকেট খেলা আর রাজনীতিবিদের আস্ফালন ছাড়া যা অনুপস্থিত?
এত নড়বড়ে নাকি একশো পয়তিরিশ কোটি মানুষের স্বপ্নের ভিত,
নাকি কোনো স্বপ্নই নেই? বুকে হাত দিয়ে বলুন মশাইরা, কেরল মারীকে সামলে নিয়েছে,
সেই খবর শুনে , ‘কেরল আমাদেরই’ বলে বলে ঠিক কতজন অ-কেরল ভারতীয়’র গর্ব হয়েছে?
হাতি মারা যাওয়ার খবরের সাথে সাথেই তীব্র ঘৃণার পোস্টগুলো একটা গোটা রাজ্যকে দোষারোপ করে,
তার মানে তো ‘কেন ওরা আমাদের থেকে ভালো’ ক্ষোভ জমেছিলো ভেতরে ভেতরে।
‘চীনে ভাইরাস’ প্রচারে আমাদের উত্তরপূর্বের সমস্ত অধিবাসী হঠাৎই হয়ে গেলেন ব্রাত্য করোনা-ভিলেন,
রাস্তায় বেরোলে টিটকিরি, সন্দেহভাজন হিসেবে নজরদারি,
কোনো দেশপ্রেমিক তো বাড়ি থেকেই বের করে দিলেন!
আজ আমেদাবাদ মৃত্যুর শীর্ষে উঠলে কলকাতাবাসীর মুখে ভীষণ তৃপ্তির হাসি,
যেন ওখানকার মানুষের পতাকায় ত্রিবর্ণ আর অশোকচক্র নেই।
আমাদের পরিচয় কি তবে শুধু কাস্তে , পদ্ম বা ঘাসই?
যে মানুষগুলো দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে হেঁটে ফিরলেন কাজ আর ভিটের দূরত্বের দুর্ভাগ্যে,
তাঁরা হয়ে গেলেন ‘পরিযায়ী’। পশ্চিমবঙ্গ ছত্তিশগড় ,মহারাষ্ট্র
তামিলনাড়ু তবে কি আলাদা দেশ?
কেউ একটা নাম দিলো এমনি সবাই তাই বলে ডাকবে?
আসলে এইখানেই আমরা আটকে গেছি। কোথাও যুদ্ধ জিতলে বাকিরা পিঠ চাপড়ায়নি এসে,
এমনকি অনুসরনও করেনি। কোথাও কেউ হারলে অমনি সে বিদ্ধ হয়েছে সহানুভূতিহীন শ্নেষে।
একটা গোটা মহামারী জুড়ে কোথাও ভারতবর্ষকে পেলাম না। ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ খেলাই চলছে শুধু প্রদেশে প্রদেশে।