দু-উ-ই সপ্তাহ! সেদিন মনে হয়েছিল যেন অনন্ত কাল। আজ শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ওই যে, ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। আরও নাকি তিন দিন থাকতে হবে। মোট সতেরো দিন। তারপর ছুটি। নিভৃতবাস থেকে। হোম আইসোলেশন থেকে। না, শুধু গৃহবন্দী নয়, পুরোপুরি কক্ষবন্দী দশা। ‘সেদিন’ মানে ৪ তারিখ। গত ৪ সেপ্টেম্বর। তার আগের দিন হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা শিবিরে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এসেছিলাম। ৪ তারিখ দুপুর বারোটার দিকে ফোনে খবর এলো আমার রিপোর্ট পজিটিভ। অর্থাৎ, আমি নোভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত। কোভিড-১৯ রোগী। স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে যিনি ফোন করেছিলেন, জানতে চাইলেন, আমার কী কী উপসর্গ আছে, প্রেসার-সুগার-ক্যান্সার-যক্ষ্মা-হাঁপানি ইত্যদি আছে কিনা। জানতে চাইলেন, আমি বাড়িতেই আলাদা থাকতে পারব কিনা, একদম পৃথক ঘর, ঘর সংলগ্ন বাথরুম-পায়খানা আছে কিনা। শেষে বললেন কোন সমস্যা হলে, বিশেষত শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে। ফোন কেটে দিলেন। প্রাথমিক হতবুদ্ধি দশা কাটিয়ে উঠে ওই নম্বরেই ফোন করলাম। দেখি ফোন ‘সুইচড অফ’। বুঝলাম না, আমার অসুবিধা হলে কোথায় ফোন করতে হবে।
তারপরে ফোন করলাম এসডিও অফিসে কর্মরত আমার দুই বন্ধুকে। সুব্রত আর ভাস্কর। দেখলাম ওরা আগেই জানে খবরটা। বস্তুত সুব্রত ফোন করেছিল আমাকে, ওর একটা মিসড কল ছিল। বিস্তারিত কথা হ’ল। ফোন করলাম বরুণদাকে। তারপর পুণ্যদাকে। চিকিৎসক ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ। যা যা পরামর্শ দেওয়ার দিলেন। কয়েক দিন যাবৎ প্যারাসিটামল খাচ্ছিলাম। সঙ্গে লবণ জলের গার্গল। কারণ জ্বর আর গলা ব্যাথা ছিল। সেটাই চালিয়ে যেতে বললেন। আমাকে পরিবারের অন্যদের থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকতে বললেন। এবং বললেন প্রত্যেকের পরীক্ষা করিয়ে নিতে। কিছুক্ষণ পরে মহকুমা প্রশাসন থেকে কয়েক জনের একটি দল এসে বাড়ির সামনে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘কনটেইনমেন্ট জোন’। বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁরা কিছু পরামর্শ দিয়ে গেলেন এবং কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বললেন। আমি চোদ্দো দিনের হোম আইসোলেশনে প্রবেশ করলাম।
ছবি — বরুণ সাহা।
∆ পুনশ্চ : লিখব কি লিখব না ভাবতে ভাবতে লিখেই ফেললাম। ছোট ক’রে শুরু করলাম। শিরোনামে আপাতত ‘১’ লিখে রাখলাম, কারণ – আরও কিছু লেখার ইচ্ছে আছে। ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত লেখা হয়তো হবে না। যে দিন যে রকম মনে হবে। দেখা যাক।