অয়ন আগে অনেকবার সুন্দরবনে এসেছে।জায়গাটা ওর খুব পছন্দের। কিন্তু একবারও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলেনি। শোনা যাচ্ছে কালকেই নাকি কয়েকজন পর্যটক তাঁর দেখা পেয়েছেন। অয়নরাও এবার সেই আশায় আছে।
আজ জঙ্গলের ধারের কটেজে রাত্রিটা কাটিয়ে কাল তারা ঘুরতে বেরোবে। ডিনার করে সবাই তাড়াতাড়ি বিছানায় শুয়ে পড়লো। হঠাৎ অয়নের মনে হল বারান্দায় যেন একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোন জন্তু যেন দরজায় নখ দিয়ে আঁচড় কাটছে, ধাক্কা দিচ্ছে।দরজার কী হোলে চোখ রেখে সে যা দেখল তার জন্য সে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। দরজার ওপারে রয়েছে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। প্রচন্ড ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে অয়ন।
অয়নের ঘুম ভেঙে গেছে। সে বুঝতে পারছে সে যেটা দেখছিল সেটা একটা স্বপ্ন ছিল মাত্র। যাই হোক একবার হাতমুখ ধুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তে হবে- এই ভেবে সে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখে তার পুরো শরীর অবশ, সে বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করতে পারছে না। এটাতো স্বপ্ন নয়। তাহলে এমন কেন হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হল। শেষ পর্যন্ত পুরোটাকেই সে কল্পনা বলেই ভেবে নিল।
পরের দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সে এই ঘটনার কথা বেশ রসিয়ে পরিবেশন করল এবং সবাই হাসিতে ফেটে পড়ল। হঠাৎ করে অয়ন অনুভব করল তার শরীরের পেশীগুলো যেন নিস্তেজ হয়ে গেল এবং সে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজা মাটিতে পড়ে গেল।
চিকিৎসক রোগের বর্ণনা ও ইতিহাস শুনে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন রোগটির নাম “নারকোলেপ্সি”।
“নারকোলেপ্সি” হল একজাতীয় বিরল রোগ যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন। 15-20 মিনিট ঘুমিয়ে নিলে তারপর আবার কয়েক ঘন্টা এই সমস্যা চলে যায়।এই জাতীয় রোগীরা হাসি, কান্না বা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লে অনেক সময় কয়েক মিনিটের জন্য তাঁদের শরীরের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে শরীরের এক বা একাধিক অংশ অথবা পুরো শরীর অবশ হয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে বলা হয় “ক্যাটাপ্লেক্সি”। এর সাথে সাথে ঘুমোতে গিয়ে ঘুমের মধ্যে অলীক অনুভূতি (হিপ্নোগগিক হ্যালুসিনেশন) এবং ঘুম থেকে উঠে হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়ার অনুভূতি(স্লীপ প্যারালাইসিস) দেখা যেতে পারে।
এই রোগ নির্ধারণ করতে এক বিশেষ ধরনের ঘুমের পরীক্ষা (পলিসমনোগ্রাফি) করা হয়। আমাদের মস্তিষ্কে হাইপোথ্যালামাস নামক একটি অংশ থেকে একটি বিশেষ রাসায়নিক (হাইপোক্রেটিন) ক্ষরণের অস্বাভাবিকতা এই রোগের জন্য দায়ী থাকে।
এই জাতীয় উপসর্গ থাকলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগের চিকিৎসায় মোডাফিনিল, মিথাইল ফেনিডেট, এন্টিডিপ্রেসেন্ট ইত্যাদি জাতীয় ঔষধ ব্যবহৃত হয়। ঔষধের সাথে সাথে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠা, স্লীপ হাইজিন ঠিকমত মেনে চলা, ঘুমোনোর আগে কফি জাতীয় জিনিস না খাওয়া ইত্যাদি নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।