পুবের আকাশ ফরসা হবার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রঙচটা সাইনবোর্ডের উপর এলোচুল দানবীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল যুবতী গ্রীষ্মের রাঙা রোদ্দুর।
ওই সাইনবোর্ডের নিচে, সিঁদুরকৌটোর মতো চিলতে ঘরের কোণে তেলচিটে কুলুঙ্গিতে ক্ষয়ে যাওয়া পুরোনো সিদ্ধিদাতা পরলেন নতুন টিপ।
এবড়োখেবড়ো আধভাঙা চৌকাঠে পড়ল লক্ষ্মীর ছোট্ট ছোট্ট পায়ের আলপনা, শ্রীহীন দোরগোড়ায় স্বস্তিকচিহ্ন বুকে নিয়ে বসল মঙ্গলঘট — তার মাথায় আম্রপল্লব, তার উপর স-শিষ ডাব।
ক্ষয়াটে হাতে দীন শাঁখাপলা গুছিয়ে দিচ্ছে নতুন বেতের চ্যাঙারি — তাতে গাঁদা আর মরকুটে জবার মালা, শীর্ণ ধূপকাঠি আর গুঁজিয়ার প্যাকেটের পাশে উঁচু হয়ে থাকে লাল শালু মোড়া খাতা।
‘হে মা, এইবার জমা আর খরচে ম্যালা গরমিল রেখো না মা গো — এই বছরটা যেন একটু সুখের মুখ দেখতে পাই’ —
রুক্ষ তাপে শুকিয়ে গিয়েছে দূর্বাদল, ক্ষীণ হয়েছে বহতা স্রোতস্বিনী, বিদ্রোহী ধুলোর ঘূর্ণি উড়ছে রাজপথে।
শুধু মাথায় রাঙা মুকুট পরে রুদ্র বৈশাখের বিজয়কেতন উড়িয়ে দিয়েছে কৃষ্ণচূড়া — হতাশ্বাস, নির্জীব, ক্লান্ত নাগরিককে মনে করিয়ে দিচ্ছে, আজ মলিন পুরাতনকে ত্যাগ করার দিন, আজ যে হালখাতা — আজ পয়লা বৈশাখ।
স্বাগত ১৪৩১। সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। ভালো হোক। আলো হোক।
ভোরের বাতাস নাড়ছে কড়া
হোগলাঘাসের বনে,
শুকতারাটি উঠছে ফুটে
ছাই রঙের উঠোনে।
ঘুরছে বছর বনবনিয়ে
নাগরদোলায় চ’ড়ে-
সাত-বাসি দিন, চৌকাঠে পা,
ধুঁকছে পড়ে পড়ে।
নতুন সালের পালকি কাঁধে,
ছয় বেহারার মতো,
ছয় ঋতু হনহনিয়ে হাঁটে
পায়ের তলায় ক্ষত।
আবছায়া পাপ, ধূসর মানুষ
অপূর্ণ সব আশা,
পেরিয়ে যাচ্ছে বিষুবরেখা–
বেণীমাধবের বাসা।
তবুও আসে একলা বোশেখ
তেল-সিঁদুরে লেপে
আলতা রাঙা নতুন ক’নে
চাল নিয়েছে মেপে।
ঢেঁকির পাড়ে, শাঁখ-আজানে
বর্ষবরণ হোক-
কৃষ্ণচূড়ায় আগুন লাগুক
তুচ্ছ করে শোক।