দু হাজার আট সালের মার্চ মাসের কোনো এক সন্ধ্যায় কোয়ার্টারটিতে যখন প্রথমবারের জন্য পা রাখলাম আমি, তখনও বিষয়টা খেয়াল করিনি মোটেই। একে তো এটা, সরকারি চিকিৎসক হিসাবে আমার প্রথম পোস্টিং। তায়, কোয়ার্টারটি আমার আনকোরা এবং ঝকঝকে। এর আগে কোনো ডাক্তারবাবু থাকেননি এখানে। কাজে কাজেই, ফুর্তিতেই ছিলাম বেজায়। শুভ্রা তখনো কোলকাতাতেই রয়েছে। চাকরি করছে খানপুর গার্লস’ হাই স্কুলে ফিজিক্স দিদিমণির। আমি তাই ঝাড়া হাত পা কমপ্লিটলি। হাত-রুটি আর আলুর তরকারি প্যাক করে নিয়ে এসেছিলাম নিকটবর্তী শহর ময়নাগুড়ি থেকেই। সেটাই সাঁটিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুম লাগালাম চমৎকার। নিজস্ব খাট নেই। এটা হাসপাতালেরই লোহার বেড। এককালে ইনডোর খোলার প্ল্যান ছিল সরকারের এখানে। পরে সেই প্ল্যান ক্যানসেল হয়। যথেষ্ট ডাক্তার পাওয়া যায়নি। যথেষ্ট ডাক্তার তৈরি করা হয় না এ দেশে। পরিবর্তে যথেষ্ট বোমা, যথেষ্ট ট্যাঙ্ক, যথা ইষ্ট মিসাইল ইত্যাদিতে মনোযোগ বেশি। মনোযোগ মারাত্মক পাকিস্তান আর কাশ্মীরে।
সে হোক। হোক গিয়ে। মরুক গে যাক। আমি তো বাবা ফাঁকতালে ডাক্তার হয়ে গেছি! চাকরিও বাগিয়েছি চমৎকার। এবং এই ধ্যাদ্ধ্যাড়ে গ্রাম, যার চারদিকে কিলোমিটার কিলোমিটারের মধ্যে আর দ্বিতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই, সেই গ্রাম সাপ্টিবাড়ি হাসপাতালের একমেবদ্বিতীয়ম মেডিক্যাল অফিসারের পদে নিযুক্ত হয়ে পড়েছি মাস মাইনে সমেত। ছাব্বিশ বছর বয়সে, এর চাইতে আর বেশি কী বা চাই! অতএব, ঘুমটা সে রাতে খানিকটা শাহেনশা মাফিক-ই হলো বটে। উত্তরবঙ্গে তখনো সেভাবে অরণ্য ধ্বংস শুরু হয়নি। উত্তরবঙ্গে তখনো মার্চ মাসেও শীত বোধ হতো শিরশিরে। কাঁথা ছিল একটা। মায়ের তিনটে শাড়ি সেলাই ফোঁড়াই করে বানিয়ে দিয়েছিল পাশের বাড়ির কাকিমা। আর ছিল গোটা দুই হাসপাতালের মোটা সবুজ বেড শিট। সবক’টা জড়িয়ে মড়িয়ে এক সা। এতদসত্ত্বেও ভোরের দিকে শীত শীত লাগছিল বেশ। স্বপ্ন দেখছিলাম আধো জাগরনে।
চিত্তিরটা টের পেলাম পরের দিন। এমনিতে আমি সুযোগ সন্ধানী নাস্তিক। ঠাকুর টাকুরে ভক্তি নেই খুব একটা। গলায় ঝোলানো রূপোর চেনের মাদুলিটাও খুলে ফেলতে চেয়েছি বহুবার। তবে, পরীক্ষার আগে কিংবা বিপদে পড়লে সেই মাদুলিই খামচে ধরে -” হে ঠাকুর, হে ঠাকুর” করি। প্রণাম ঠুকি মসজিদ বা চার্চ দেখলেও। এবং নিজেকে নিজেই যুক্তি দি— এতে ক্ষতি তো হচ্ছে না কারো!
তো, সকাল বেলাতেই মা বললো ফোনে–” পার্থ, ধূপ দে একটা ঘরে। মা চন্ডীকে বল্ ….”
আমি উত্তরে খুব খানিক চিল্লামিল্লি করলাম। তারপর গ্রুপ ডি স্টাফকে দিয়ে একখানি ‘ভারতদর্শন আগরবাত্তি’ আনিয়ে, জ্বালিয়ে গুঁজে দিলাম দরজার ফ্রেমের খাঁজে। তারপর… কোয়ার্টারে তালা লাগিয়ে আউটডোর।
দুপুর আড়াইটে নাগাদ ফিরসে তালা খুলে ঘরে ঘুঁসে দেখি– থকথক করছে ধূপের ধোঁয়া তখনও। কেশেও নিলাম খানিক খকখক। আর তখনই বিষয়টা লক্ষ্য করলাম।
কোয়ার্টারে একটিও ভেন্টিলেটার নেই।
পরবর্তীতে উপরওয়ালাকে জিগ্যেস করেছিলাম এ বিষয়ে। ভদ্রলোক জানিয়েছিলেন– এটা জার্মান প্রোজেক্টে বানানো কোয়ার্টার। নতুন কনসেপ্ট। ইউরোপ আমেরিকা স্টাইলে। আর সেই স্টাইল অনুযায়ী, বাড়িতে ভেন্টিলেটর বানানো হয় না এখন ওসব দেশে।
লাও ঠেলা! সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। আজীবন কাটিয়ে এসেছি ভাড়া বাড়ি কিংবা বাবার আপিসের কোয়ার্টারে। সর্বত্র দেখেছি ঘুলঘুলি। চড়াইপাখিতে বাসা বাঁধে যেইখানে। আর যেখান দিয়ে বেরিয়ে যায়–” বদ্ধ গ্যাস”। তো, সেসব এখন অতীত হয়ে গেল পুরোপুরি? পাঁচতলা মল। পুরোটাই দমবন্ধ?
হবেও বা। আমি কী আর অতশত এঞ্জিনিয়ারিং বুঝি? আমি তো ডাক্তার। চিকিৎসা শাস্ত্রটুকুই তো শুধু রপ্ত করেছি। তবে, এটুকু দেখতে পেতাম যে গরম কালে কষ্ট হচ্ছে খুব কোয়ার্টারে। হাসফাঁস লাগছে। রাতে মশার ধূপ জ্বালালে নিজেরই শ্বাসকষ্ট হয়। রান্নার বা খাবারের গন্ধ বহুক্ষণ টিঁকে থাকে ঘরে। ঘুরপাক খায় অদৃশ্য গন্ধের স্তর।
দুই
“ওয়াও! ওয়াও! ওয়াও! সি… দিস ইজ হোয়াট উই নিড নাউ। ব্যাক টু দা বেসিকস্…”
তিনজন সাহেব আর একজন মেম উৎফুল্ল চিত্তে নৃত্য করছিলেন আমাকে ঘিরে। বাংলায় যেটার মানে দাঁড়ায়–” জ্জিও, জ্জিও, জ্জিও পাগলা! দেখেছেন…. ঠিক এইটাই এখন আমাদের প্রয়োজন। গোড়ায় ফিরে আসা….”
এসব কথার মাথামুন্ডু বুঝতে হলে খানিকটা খুলে বলা দরকার। সেইটাই বলি বরং।
তো, কোলকাতার স্বাস্থ্যভবন থেকে খবর পেলুম, সায়েব সুবো আসবেন কয়েকজন হাসপাতাল পরিদর্শনে। পত্র মারফৎ আমাকে তাই সতর্ক করা হয়েছে আগেভাগে–স্যার ম্যাডামদের আসার আগেই যেন হাসপাতালের সবকিছু টিপটপ থাকে।
এটা নতুন হাসপাতাল। সাপ্টিবাড়ি থেকে ততদিনে বদলি হয়ে চলে এসেছি জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালে। সে হাসপাতালে তখন সদ্য শুরু হচ্ছে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির চিকিৎসার কর্মযজ্ঞ। আমিই তার কান্ডারী। আমিই তার হোতা। ভারতের বেশিরভাগ জায়গাতেই তখনো ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট(ডি.আর) টিবি চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। সাধারণ মানুষ তো দূর অস্ত, ডাক্তারাও সেভাবে জানে না ডি.আর টিবির বিষয়ে কোনোকিছু। জানি না হোতা/ কান্ডারী আমিও।
জেনে গিছলাম অবশ্য শিগগিরিই। টিবি হাসপাতালে জয়েন করার ঠিক পনেরো দিনের মাথায় ট্রেনিং হলো আমার। দিল্লিতে। সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন সেখানে শেখাতে। ডাবলিউ এইচ ও, ইউনিয়ান এগেইনস্ট টিউবারকিউলোসিস আর ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক একজোট হয়ে আয়োজন করেছিল সেই ট্রেনিংয়ের। ট্রেইনি অর্থাৎ ছাত্র ছাত্রী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন ভারতবর্ষের হাতে গোণা কয়েকজন চিকিৎসক। নাগাড়ে সাত দিন। সকাল নটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা। হাতের কাছের কুতুব মিনার পর্যন্ত দেখবার অবসর পাইনি এক ঝলক। হোটেলে ফিরতাম মাথা ভর্তি দুশ্চিন্তা নিয়ে। বছরের পর বছর ধরে চলে যাওয়া এই টিবি প্যানডেমিককে থামাবো কি করে? বিশেষত যখন সারা পৃথিবীর ২৭% টিবি রোগী আমাদের দেশেরই? বিশেষত, যখন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ( সাধারণ কোনো ওষুধেই কাজ না করা) টিবি রোগীতে ভরে যাচ্ছে বিশ্ব?
ট্রেনিং শেষ করে ফিরসে জলপাইগুড়ির হাসপাতালে ফেরত এলাম যেদিন, সেদিন আমার সমস্ত ধ্যান ধারণার খোল নলচে পাল্টে গেছে আমূল। পাঁচ বছর ডাক্তারি পড়েও যে সত্য বুঝিনি আমি, সেই সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে স্রেফ সাত দিনের ট্রেনিংয়ে। — টিবি শুধু রিক্সাওয়ালাদের হয় না। টিবি সব্বার হয়। আমরা রিক্সাওয়ালাদেরটাই জানতে পারি শুধু। আর বড়লোকেরা লুকিয়ে চুরিয়ে ডাক্তার দেখান মুখ ঢেকে। এবং কি আশ্চর্য্য। দিন কয়েকের মধ্যেই একজন আই এ এস অফিসার, একজন অভিনেত্রী , দু জন ইঞ্জিনিয়ার আমার কাছে এসে হত্যে দিয়ে পড়লেন—“শুনলাম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির ট্রিটমেন্ট চালু হয়েছে এখানে। আমাদের বাঁচান। বাঁচান প্লিজ।”
তাঁদেরকেই সামলাচ্ছিলাম। সাথে সামলাচ্ছিলাম আরো জনা কুড়ি ডি আর টিবি পেশেন্টদের। শিখছিলাম সামলাতে সামলাতেই। আমার আন্ডারে তখন তিনখানা জেলা। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং। অপেক্ষা করছে চিকিৎসার জন্য আরো পঞ্চাশ ষাট জন রোগী। প্রতিদিন হাজির হয় তাদের পরিজনেরা। এক আকাশ ভাঙা মুন্ডু নিয়ে আমি তখন লড়ে যাচ্ছি। এবং এরকম একটা সময়েই ওই পত্রখানি এলো।
— “WHO এবং USAID-এর যৌথ উদ্যোগে, তথা ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় আগামী মাসের অমুক তারিখে চারজন সাহেব মেম আসবেন জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতাল পরিদর্শনে। তাঁরা AIC টিমের মেম্বার। খতিয়ে দেখবেন সমস্ত ব্যবস্থা। এই ভিজিটের উদ্যেশ্য একটিই। এয়ারবোর্ন ইনফেকশন কন্ট্রোল কতখানি করা হচ্ছে জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালে। ”
চিঠি পেয়ে তো আমার মাথায় হাত। কিচ্ছুটি জানিই না AIC-র বিষয়ে। জিনিসটা খায়? না মাথায় দেয়? সায়েব মেমরা যদি আমায় ধরে পেটায় এবারে? যদি বলে–” ওয়েল..ডক্টর সাবুসাছি, ইউ ফেইলড টু কন্ট্রোল এয়ারবোর্ন ইনফেকশন। সাচ আ শেম।”
বই খুললাম তাই বাড়ি এসেই তড়িঘড়ি। আর ঝালিয়ে নিলাম–এয়ারবোর্ন ইনফেকশন হলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়া রোগ। যেমন টিবি। যেমন চিকেন পক্স। এসব রোগের জীবাণু বাতাসে ভেসে ভেসে একজন লোকের থেকে আরেকজন লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হুশহুশ করে।
কিন্তু সেসব কন্ট্রোল করবো কী ভাবে, সে নিয়ে কিচ্ছুটি লেখা নেই কিতাবে।
বোঝো! দুরুদুরু বক্ষ নিয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করলাম তাই সাহেবি খিস্তির। মনে মনে অজুহাতও প্র্যাকটিস করে নিলাম খানিকটা–” সরি স্যার। সরি ম্যাডাম। ….. সরি স্যার। সরি ম্যাডাম। ক্ষমা… ইয়ে… পার্ডন মি। আই অ্যাম পুওর ইন্ডিয়ান ডক্টর… ”
তিন
সেসবের প্রয়োজন পড়লো না যদিও এক্কেবারেই। সায়েবসুবোরা কথাবার্তার ধার ধারে না বেশি। দে মিন বিজনেস। ওরা, কাজটাকেই বোঝে স্রেফ। হাসপাতালে পৌঁছে কি পৌঁছেই বলে দিলেন–” আপনি রোগী দেখুন। আমরা ততক্ষণে আপনার হাসপাতালটা ঘুরে ফিরে দেখি একটু…।”
সময়টা আজ থেকে বছর দশেক আগেকার। বর্তমানের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটির তখন নামগন্ধও ছিল না। একলা মাঠে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকতো একলা একটি ‘L’ প্যাটার্নের দ্বিতল ইনডোর। একতলাটা সাধারণ টিবি রোগীদের। দোতলা– ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির। সেই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীরও আবার ভাগ আছে। ‘L’-এর একটা বাহুতে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি পেশেন্ট। অপরটিতে এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট।
এ বাদে, আরেকটি একতলা বিল্ডিং রয়েছে। সেখানে চলে আউটডোর। চারদিক ঘিরে ভাঙাচোরা পাঁচিল। দুটো কদম, একটা শিউলি, গোটা কতক জংলা বুনো আর একটা প্রকান্ড শিরিস গাছ। আর ঘাস জমি। আর কিছু গরু ছাগল। মোটের ওপর এই হলো আমার চৌহদ্দি। তো সেখানে ‘ঘুরে ফিরে’ দেখার কী আছে বুঝলাম না। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকতে ডাকতে রোগী দেখতে লাগলাম–“হে ঠাকুর, চাকরিটা যেন না যায়… হে ঠাকুর, জ্ঞানত কোনো অবহেলা করিনি কর্তব্যে…।”
ওয়ার্ডে বলে রাখাই ছিল সিস্টারদের। ভিজিটিং টিম আসছে। যা ইচ্ছে করুক। বাধা দেবেন না। এতদসত্ত্বেও মিনিট পনেরোর মধ্যেই বাদলদা এলো ছুটতে ছুটতে। –” লোকগুলা ধূপ জ্বালায়ে কিসব করতেসে। যন্তর নিয়ে আসছে অনেক গুলা… ফিতা দিয়া ঘর মাপতেসে…।”
আউটডোর ততক্ষণে ফাঁকা হয়ে গেছে অনেকটাই। ফার্মাসিস্টকে বলে ধূপ, যন্তর আর ফিতার খেল দেখে আসবো কিনা ভাবছি, দেখি সায়েবদের দল জ্বলন্ত ধূপকাঠি আর কি একটা কালো রঙের বাক্স সমেত আউটডোরেই ঢুকে পড়লো সটান। দুজনের গলায় ঝোলানো মেজারিং টেপ। আহা। মুখে কী চমৎকার হাসি ওদের। বিনয়ের অবতার সব–“আপনি বসুন বসুন। পেশেন্ট দেখুন। আমরা আমাদের কাজ করি ততক্ষণ…।”
এবং তার খানিক বাদেই সেই অমোঘ বাক্য–“ওয়াও। ওয়াও। ওয়াও। সি… দিস ইজ হোয়াট উই নিড নাউ। ব্যাক টু দা বেসিকস্…।”
সে যাত্রায় ডিস্টিংসন সহকারে পাশ করে যাই আমি। হাসপাতালের ‘এয়ারবোর্ন ইনফেকশন কন্ট্রোল’-এর বন্দোবস্ত দেখে সাহেবরা বেজায় খুশি। অথচ আমি তো এক গলা জলে। বুঝে উঠতেও পারলাম না, কেন এঁরা এত উল্লসিত।
বুঝিয়ে দিলেন অবশ্য শিগগিরই। সঙ্গে, ছোট্ট খাট্টো দু একটা সাজেশন।
চার
হাঁচি বা কাশি বা এমনকি কথা বলার সময়েও আমাদের মুখ নাক দিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, ছোট্ট ছোট্ট কফ/থুতুর কণা বেরিয়ে আসে। বা বলা ভালো কফ থুতুর বিন্দু। যার মধ্যে সাধারণ দেহরস তো থাকেই, থাকে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি জীবাণু। এদেরকেই, অর্থাৎ এই দেহরস মিশ্রিত জীবাণুপুঞ্জকেই বলা হয় ড্রপলেট।
পরীক্ষা এবং গবেষণা করে দেখা গেছে যে, মানুষের প্রতিটি হাঁচিতে প্রায় চল্লিশ হাজার, প্রতিটি কাশিতে প্রায় তিন হাজার ড্রপলেট বের হয়। এই ড্রপলেটগুলি এক মিটার পর্যন্ত যেতে পারে বাতাসে ভেসে ভেসে। তারপর থিতিয়ে পড়ে। যদি সেই ড্রপলেটটি কোনো রোগীর হাঁচি/কাশি থেকে তৈরি হয়, তবে তার এক মিটারের মধ্যে কোনো সুস্থ মানুষ এলে অথবা মেঝেতে থিতিয়ে পড়া ওই কফ/থুতুর বিন্দু স্পর্শ করার পর চোখ নাক বা মুখে হাত দিলে, সেই সুস্থ লোকটিরও রোগ হতে পারে। সাধারণ জ্বর সর্দিকাশি, টিবি, হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগ এভাবেই ছড়ায়। এবং বর্তমানে পাওয়া তথ্য বলছে SARS-CoV-2 অর্থাৎ নোভেল করোনা ভাইরাসও মূলত এভাবেই ছড়ায় মানুষ থেকে মানুষে। একেই বলে ‘ডাইরেক্ট ট্রান্সমিশন বাই ড্রপলেট ইনফেকশন’।
এবার আসি এয়ারবোর্ন ইনফেকশন বা বায়ুবাহিত রোগের বিষয়ে। তো, যেসব ড্রপলেট বেরিয়ে এলো পরিবেশে/ বা যেগুলি পড়ে গেল থিতিয়ে, সেগুলির মধ্যেকার জল শুকিয়ে যায় পরিবেশের তাপে। আর তখনই তৈরি হয় ড্রপলেট নিউক্লিয়াই। এগুলো সাইজে আরো ছোটো। এগুলি বাতাসে ভেসে টিঁকে থাকতে পারে বহুক্ষণ। তবে, এই নিউক্লিয়াইয়ের মাধ্যমে রোগ ছড়াবে কিনা সেটা নির্ভর করে জীবাণুর গতিপ্রকৃতির ওপরে। জীবাণুর সাইজ, বাইরের আবহাওয়াতে জীবাণুর টিঁকে থাকার ক্ষমতা, ইত্যাদির ওপরে। চিকেন পক্স, মিজলস ইত্যাদি রোগ এভাবে ছড়ায়। ছড়ায় টিবিও।
অর্থাৎ, এক কথায় বলতে গেলে ড্রপলেট ইনফেকশন এড়ানো তবুও সহজ। রোগীর এক মিটারের মধ্যে না গেলেই হল। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্য যেতেই হয়। যেতে বাধ্য নিকট পরিজন অথবা ভিড়ের মধ্যে মানুষজনেরা।
কিন্তু এয়ারবোর্ন তার চাইতেও কঠিন। মারাত্মক। শুধু দূরত্ব বজায় রাখলেই চলবে না। এরকমও হতে পারে যে, রোগীটি হেঁচে বা কেশে চলে গেল কোনো জায়গা থেকে। তার ড্রপলেট ততক্ষণে থিতিয়ে পড়েছে মাটিতে। ঠিক সেইখান দিয়েই পেরোচ্ছেন আপনি। এবং ঠিক সেই সময়েই সেখানে খ্যাংরা ঝাঁটা দিয়ে ঝাঁট দিচ্ছে ঝাড়ুদার। ব্যাস। থিতিয়ে পড়া ওই ড্রপলেট থেকে ড্রপলেট নিউক্লিয়াই তৈরি হয়ে আপনার শরীরে ঢুকে গেল। অথবা এমনও হতে পারে যে, রোগিটি কাশলো। সেই কাশি থেকে ড্রপলেট বেরোলো। সেই ড্রপলেট মাটিতে পড়ার আগেই উষ্ণতার কারণে ড্রপলেট নিউক্লিয়াইয়ে পরিণত হল। এবং বাতাসে ভাসতে থাকলো। সেই বাতাসই নিশ্বাস ( পড়ুন প্রশ্বাস) নিলেন আপনি। রোগ চলে গেল আপনার অন্দর মহলে।
এয়ারবোর্ন ইনফেকশন ঠিক এই কারণেই মারাত্মক। এবং এ জগতের সবচাইতে মারাত্মক এয়ারবোর্ন ইনফেকশনটির নাম হলো টিবি। যেটি ড্রপলেট এবং ড্রপলেট নিউক্লিয়াই দুভাবেই ছড়ায়। ছড়ায় ডাইরেক্টলি ( টিবি রোগী আপনার মুখের ওপর হেঁচে কেশে দিল )। ছড়ায় ইনডাইরেক্টলি ( টিবি রোগি মুখ খুলে কেশে দিয়ে চলে গেল। সেই জীবাণু বাতাসে টিঁকে থাকলো। সেই বায়ু আপনি নিশ্বাস নিলেন।)
পাঁচ
বিজ্ঞান এবং তথ্য বলছে যে, ড্রপলেট এবং ড্রপলেট নিউক্লিয়াই থেকে রোগ ছড়ানো বন্ধ বা বলা ভালো কমাতে গেলে, কতগুলি পদক্ষেপ সর্বদা মেনে চলতে হবে জনসাধারণকে।
১।
হাঁচি বা কাশির সময় মুখ নাক দুটিই ঢেকে হাঁচতে/ কাশতে হবে। তাতে ড্রপলেটের বেশিরভাগটাই আটকে যাবে। রোগ ছড়াবে না বাতাসে/ সামনের লোকটিতে।
এবার আসি নাকমুখ ঢাকার পদ্ধতির প্রসঙ্গে। যদি মুখ নাক ঢাকি হাতের তালু দিয়ে, তবে সমস্ত ড্রপলেট (হাত ঢেকে হাঁচলে দেখবেন হাতের তালু ভিজে যায়) চিপকে রইল তালুতেই। এবার ওই তালু দিয়ে আপনি মেয়ের গাল টিপলেন, প্রেমিক/প্রেমিকার ঠোঁটে হাত বোলালেন, অফিসের কাগজে লেখালিখি করলেন। রোগ চলে গেল অন্য জনের শরীরে।
আর সেই জন্যই ‘কাফ এটিকেট’ মেনে চলা জরুরি। হাঁচি বা কাশির সময় কনুইয়ের উল্টো দিক দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন। কনুইয়ের উল্টো দিক দিয়ে আমরা কোনো কিছু স্পর্শ করি না। অথবা ইউজ করতে পারেন রুমাল। সে রুমাল কেচে নেবেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, যেকোনো সুসভ্য দেশে, যে কোনো সচেতন নাগরিক সর্দি কাশি হলেই মাস্ক পরে থাকেন। সাধারণ কাপড়ের মাস্ক। ওতেই ড্রপলেট তৈরি হওয়ার পথটা অনেক অনেক অংশে কমে যায়।
২। যেখানে সেখানে কফ থুতু না ফেলা
৩। খামোখা মুখ নাক চোখে হাত না দেওয়া
৪।হাত বারে বারে ভালো করে সাবান / হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া।
এবাদেও একটা পয়েন্ট আছে। পাঁচ নম্বরিয়া পয়েন্ট। এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত সেইটে লিখবো বলেই এতকিছু বকে যাচ্ছি। নয়তো এই কাফ এটিকেটের কথা গত তিন বছরে খুব কম করে হলেও বার চোদ্দ পনেরো বলেছি আমি।
ছয়
এয়ারবোর্ন ইনফেকশন সবচাইতে বেশি ছড়ায় বদ্ধ ঘরের মধ্যে। অথবা ভীড়ে।
তো, ভীড়ের মধ্যে যদি ড্রপলেট/ ড্রপলেট নিউক্লিয়াইয়ের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হয়, তবে উপরিউক্ত ওই চারটি পয়েন্টই হলো একমাত্র রাস্তা।
এবার আসি বদ্ধ ঘরের বিষয়ে। একই ঘরে একজন ইনফ্লুয়েঞ্জা/টিবি রোগী আর দুজন সুস্থ মানুষ থাকলে, মোটামুটি ভাবে তাদের দুজনের শরীরেই এ রোগটির জীবাণু ঢুকবেই। যদিও, রোগ হবে কি হবে না, সেটি নির্ভর করছে ইমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যের উপরে। যে স্বাস্থ্য/ ইমিউনিটি সহসা কামদেব বাবার ভেষজ ওষুধ বা আমলকি হর্তুকি খেয়ে বাড়ানো যায় না মোটেই। সুস্বাস্থ্য কিংবা শক্তিশালী ইমিউনিটি বহুবছরের সুশৃঙ্খল জীবন যাপন থেকে গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে যুগের পর যুগ ধরে অর্জিত হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমেও। এটি, ছেলের হাতের মোয়া নয়।
কিন্তু জীবাণুর প্রবেশটাকেই যদি কমিয়ে দেওয়া যায় কোনোভাবে? তেমন কোনো রাস্তা আছে কি? শুনলে হয়ত অবাক হবেন যে– আছে। তেমন রাস্তা অবশ্যই আছে। এবং সেটি নির্ভর করে ‘এয়ার এক্সচেঞ্জ পার আওয়ার’ এর উপর।
কোনো একটি ঘরে জমে থাকা বাতাস যদি প্রতি ঘন্টায় দশ থেকে পনেরো ( গড়ে বারো) বার রিপ্লেসড হয় ফ্রেশ হাওয়া দিয়ে, তবে সেখানে এয়ারবোর্ন ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
তো, কী ভাবে সম্ভব সেটা?
সম্ভব যদি যথেষ্ট পরিমাণে খোলা দরজা, জানালা, ঘুলঘুলি থাকে কোনো রুমে। এবং সেই দরজা জানালার লোকেশন যদি এরকম হয় যে, হাওয়া একদিক দিয়ে ঢুকবে, অপর দিক দিয়ে বেরোবে।
এ বিষয়েও একটি হিসাব আছে।
দরজা+জানালা+ঘুলঘুলির সাইজের যোগফল হতে হবে ঘরের সাইজের অন্তত 20%।
সোজা কথায় বলতে গেলে, কোনো ঘরের সাইজ যদি হয় একশো স্কোয়ার ফুট, তবে উন্মুক্ত দরজা জানালা ঘুলঘুলি ইত্যাদির মোট সাইজ মিনিমাম কুড়ি স্কোয়ার ফুট হতে হবে।
রাতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য দরজা জানালা বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে ঘুলঘুলিটুকুই সম্বল। যতটুকু যা হয় আর কি। তবে হসপিটালের মতো হাইলি ইনফেক্টেড জায়গাতে রাতের বেলাতেও দরজা জানালা খুলে রাখাই ভালো।
সাত
“ওয়াও ওয়াও ওয়াও… সি। দিস ইজ হোয়াট উই নিড নাও…ব্যাক টু দা বেসিকস” বলতে বলতে উৎফুল্ল এক মেমসাহেব আমার হাতে একখানি কাগজ ধরিয়ে দিলেন। তাতে চোস্ত সাহেবি হস্তাক্ষরে লিখে রাখা ছিল—
টিবি হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি
১) রেজিস্ট্রেশন এরিয়া/টিকিট রুম–
ACH 47.46
ঘরের সাইজ এবং দরজা জানালা ঘুলঘুলির সাইজের অনুপাত 31.14%
২) আউটডোর–
ACH 155
ঘরের সাইজ এবং দরজা জানালা ঘুলঘুলির সাইজের অনুপাত 37.46%
৩) ইনডোর (পুরুষ)
ACH 69.15
ঘরের সাইজ এবং দরজা জানালা ঘুলঘুলির সাইজের অনুপাত 37.8%
৪) ইনডোর ( মহিলা)
ACH 201.25
ঘরের সাইজ এবং দরজা জানালা ঘুলঘুলির সাইজের অনুপাত 43.22
( ACH হলো এয়ার এক্সচেঞ্জ পার আওয়ারের শর্ট ফর্ম)
তথ্য– Pilot Implementation of Guidelines on Airborne Infection Control in Health care and Other Settings in India ( RATB Hospital, Jalpaiguri issue)
নীচে বইটির প্রচ্ছদের ছবি রইল।
সায়েব মেমদের উৎফুল্ল হওয়ার কারণটা বুঝতে পারলাম এতক্ষণে। এরই সাথে মৃদু পিঠ চাপড়ানিও পেলাম টুকটাক। কারণ? কারণ–আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি রোগী বেশিরভাগ সময়েই সাধারণ পাতলা কাপড়ের মাস্ক পরে থাকে।
জলপাইগুড়ির রাণী অশ্রুমতী টিবি হাসপাতাল সে যাত্রা ‘ ওয়ান অফ দা বেস্ট এয়ার বোর্ন ইনফেকশন কন্ট্রোল’-এর খ্যাতি অর্জন করেছিল ভারতের মধ্যে। সে তকমা এখনো অক্ষুণ্ণ আছে। অন্তত টিবি বিশেষজ্ঞরা জানেন।
আট
এতে যদিও আমার ভূমিকা ছিল না কোনো। হাসপাতালের বিল্ডিংটি বয়সের ভারে সুপ্রাচীন। নতুন জার্মান কারিগরী বা ভারতীয় কসমোপলিটান স্টাইলে তৈরি নয়। হাসপাতালের মধ্যে কেরদানি মারা অলিগলির গোলক ধাঁধা নেই। বরং রয়েছে সপাট সোজা লবি। রয়েছে গ্রিল দেওয়া বারান্দা (গ্রিল পরে দেওয়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সে গল্প আরেকদিন)। রয়েছে মস্তো মস্তো জানালা, দরজা, ল্যুভর, ঘুলঘুলিতে ছয়লাপ ওয়ার্ড। দেওয়াল তৈরি এ হাসপাতালের বিশ ইঞ্চির গাঁথনিতে। ছাদ পুরু। শীত গ্রীষ্মে এয়ার কন্ডিশনার/হিটারের প্রয়োজন হয় না। প্রখর সূর্য্যালোকে ধুয়ে যায় চারিপাশ।
এয়ার এক্সচেঞ্চ পার আওয়ার-এর বিষয়ে কিছুটি মাত্র না জেনেই এ বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছিল বহু দশক আগে।
আমি…সেইসব দূরদর্শী এঞ্জিনিয়ারদেরই সুকর্মের ভাগীদার হয়ে গেলাম।
নয়
শেষ করতে হবে এবারে এ কাহন।
তবে, আর ছোট্ট কয়েকটা কথা বলা বাকি।
বর্তমানে, ফ্ল্যাট হোক বা বাড়ি, হাসপাতাল হোক বা অফিস, ডাক্তারের চেম্বার হোক বা উকিলের মন্ত্রণালয়, তৈরি হচ্ছে বিদেশি কেতা মেনে। ঘুলঘুলি এবং ল্যুভর তো দূর অস্ত, জানালা পর্যন্ত তৈরি হয় স্লাইডিং কাচ দিয়ে। জানালায় এখন আর পাল্লা সিস্টেম নেই। ফলতঃ, জানালা যতই বড় হোক না কেন, সবটা খুলে রাখা যায় না একসাথে। কাচের পাল্লা ডানদিকে অথবা বাঁ দিকে সরিয়ে খোলা যায় ম্যাক্সিমাম ফিফটি পার্সেন্ট। বাকি ফিফটি পার্সেন্টে জানালা থেকেও…নেই। কাচে ঢাকা।
বিল্ডিংয়ে ভর্তি মোচড়ে মোচড়ে অলিগলি দিয়ে। সেসব অলিগলির চারিপাশে জানালা দরজার নামগন্ধ পর্যন্ত নেই।
আর শুধু কি তাই? এ.সি. (এয়ার কন্ডিশনার) প্রীতি বাড়ছে দিনে দিনে। স্ট্যাটাস সিম্বল। হসপিটাল হোক বা অফিস, বাড়ি হোক বা শপিং মল, সবটাই বদ্ধ। স্রেফ এ.সি চলে। ‘এ.সি কেবিন’ না হলে চুল কাটার সেলুন হোক বা পেট কাটার হাসপাতাল, তার মান ইজ্জত নেই।
এয়ারবোর্ন ইনফেকশন ছড়িয়ে ফেলার আঁতুড় ঘর তৈরি করছি আমরা প্রতিনিয়ত। পারলে, সেটা বন্ধ করুন যতটা সম্ভব। আমরা কেউ এঞ্জিনিয়ার নই। আমরা কেউ রাতারাতি বদলে দিতে পারবোও না সবটুকু। তবুও… যতটুকু পারা যায়।
নতুন বাড়ি বানালে, পাল্লা দেওয়া জানালা অর্ডার দিন। বানান– ঘুলঘুলি।
অফিসের এ.সি বন্ধ করে জানালা দরজা খুলে রাখুন।
আসবাবপত্র যদি জানালা ব্লক করে রাখে, সেসব সরিয়ে দিন।
আর,
হাসপাতালে/চেম্বারে যাঁরা রোগী দেখছেন, তাঁরা চেষ্টা করুন টেবিল চেয়ারের অবস্থান এমন ভাবে পাল্টে নিতে, যাতে বায়ু চলাচল হয় রোগী এবং আপনার মধ্যে নাইন্টি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে। কিছুতেই যেন বায়ু চলাচলের পথ এবং ‘রোগী ও আপনি’ সরলরেখায় না থাকেন। আরো সোজা ভাবে বলতে গেলে,
ধরা যাক রোগী হলো A বিন্দু। আপনি হলেন B বিন্দু। জানালা হলো C বিন্দু। এবং দরজা হলো D বিন্দু।
এবার এই AB এবং CD যেন সমকৌণিকে কাটাকুটি হয়। নীচের ছবিটা দেখে নিন। এটা সবাই না বুঝলেও হবে। ডাক্তাররা বুঝে নিন।
আউটডোরের লাইনে যেসব রোগী কাশছে, হাঁচছে ( স্বাভাবিকের থেকে বেশি), তাদের আগেভাগেই লাইন ভেঙে ডেকে নিন। সিকিউরিটি গার্ডকেও বলে রাখুন, যাতে এরকম রোগীকে আগেই পাঠিয়ে দেয়।
এ পোড়া দেশে আপনাকে ‘পি পি ই’ দেবে না কেউ। এ জগতে বড়ো বড়ো দরজা জানালাওয়ালা হাসপাতালও ভীষণ কম। তাই, এটুকু মেনে চলার চেষ্টা করুন। করোনা আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু টিবি ছিল আছে থাকবে।
দশ
শেষ করার আগে কয়েকটি ছোট্ট তথ্য।
- গত কয়েকদিনে করোনাতে মারা গেছেন যতজন, তার দশ গুণ মারা গেছেন টিবি রোগে।
- গত কয়েকদিনে করোনা হয়েছে যতজনের তার দশগুণ বেশি লোকের হয়েছে টিবি।
- করোনাকে প্যানডেমিক ঘোষণা করা হয়েছে মাস খানিক হলো। টিবি প্যানডেমিক চলছে বছরের পর বছর ধরে।
- ভারতবর্ষের চল্লিশ শতাংশ মানুষের শরীরে টিবি আছে।
- সারা বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ টিবি রোগে ইনফেক্টেড ( ডিজিজ নয়)।
- এবং তিন থেকে বেড়ে বেড়ে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সাতখানি জেলা এখন আমার দায়িত্বে। গত বছরই মোটামুটি ভাবে ৬০০ জনের ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির চিকিৎসা শুরু করেছি আমরা। শুরু করেছি স্রেফ এই সাতটি জেলার লোকের মধ্যে। ড্রাগ সেনসিটিভ টিবি যোগ করলে, যে সংখ্যাটা বেড়ে যাবে আরো বহু বহু গুণ।
আশা রাখি, এ বিশ্বব্যাপী করোনা ত্রাস একদিন নির্মূল হবে। টিবি কিন্তু সেদিনও থাকবে। এবং সম্ভাবনা থাকবে নতুন কোনো করোনা জাতীয় মহামারীর।
সময় থাকতে থাকতে তাই সাবধান হন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল কথাটিই হলো
প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর।
রোগ হওয়ার আগেই, রোগটিকে আটকে ফেলতে হবে।
তথ্য সমৃদ্ধ সুন্দর লেখনী ।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি লেখা।
We r proud having such Doctor within us. Who really think about the base of the program. I personally know him and admire him.
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার বাবু। অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার এই লেখার মাধ্যমে। সত্যি বলতে বাংলা ভাষায় এত সহজ ও সাবলিল ভাবে লেখা আমি আগে দেখিনি। আপানাদের এই প্রচেষ্ঠাকে কুর্নিশ জানাই।
আরও এই ধরনের লেখা চাই।
Ato kichu jantam i na…apnar lekha pore airborne deases theke kivabe nijeder rokkha kora tar anektai janalum…thank u sir !
Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.
I really like and appreciate your blog post.
Good one! Interesting article over here. It’s pretty worth enough for me.