দু’বছর আগের একদিন।
আসন্ন নির্বাচনেও অন্য কিছুর প্রত্যাশা নেই।
শীতের উইকএন্ড। ঠান্ডাটা আগে সেভাবে না এলেও উইকএন্ডের মওকা বুঝে বেশ জমিয়ে শীত পড়ে গেল। শহরের একঘেয়ে লাইফ থেকে ছোট্ট ব্রেক নিয়ে গণতন্ত্র একটু বেড়াতে গিয়েছিল গ্রামের দিকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, জমজমাট ঠান্ডা আর সদ্য পেড়ে আনা খেজুরের রসে দিব্যি কাটল দিনটা। রীতিমতো পিকনিকের মেজাজে।
একটা দিনের জন্যে গেলেও ঘরদোর ফাঁকা রেখে যাওয়া মুশকিল। দিনকাল তো ভালো নয়। গণতন্ত্রের ঘরদোর দেখভাল করছিল অবাধ-ও-শান্তিপূর্ণ-নির্বাচন। সে ভারি হুল্লোড়ে মানুষ। এই মওকায় জমাটি শীত আর পিকনিকের আমেজে কুড়ি টাকার পাউচ সঙ্গী করে সেও দিব্যি কাটাল দিনটা। উৎসবের খোঁয়ারি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দিন শেষ। দরজায় বারবার ধাক্কা শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখে, দরজার সামনে হাসিমুখে গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে। পিকনিক সেরে সে বাড়ি ফিরে এসেছে।
অবাধ-ও-শান্তিপূর্ণ-নির্বাচন-এর গলা জড়িয়ে গণতন্ত্র বলল, থ্যাঙ্কিউ ভাই। তোমার ভরসাতেই একটু ঘুরে আসতে পারলাম। অবাধ-ও-শান্তিপূর্ণ-নির্বাচন-এর অবশ্য অতশত বোঝার অবস্থা ছিল না, সে বাড়ি যেয়ে ঘুমোতে পারলে বাঁচে। আপাতত অনেকদিনের নামে ছুটি তার। এখুনি কোনও গুরুদায়িত্ব নেই।
ওদিকে বিপ্লব লুডো খেলতে বসেছিল। সঙ্গী বলতে রাজ্য-নির্বাচন-কমিশন। বুলাদির বিজ্ঞাপনের দিন অতীত, তবু পছন্দসই কাজ না জুটলে এক রাউন্ড লুডো খেলার কালচারটা রয়ে গেছে।
জমিয়ে খেলা চলছে। রাজ্য-নির্বাচন-কমিশন-এর ব্যাপক দান পড়ছে। একের পর এক ছক্কা। বিপ্লব-ও কম খেলুড়ে নয়। পরপর দুখানা ছক্কা দেখে সে ওঁত পেতে আছে। পঞ্চায়েত আর কর্পোরেশন, দুখানা ছক্কা। আর একখানা ছক্কা হলেই বিপ্লব চেঁচিয়ে উঠবে, তিন ছক্কা পচা, তিন ছক্কা পঅঅচা…
আর লুডোর নিয়ম তো জানেন। তিন ছক্কা পড়লেই দান নতুন করে ফেলা, আগের দান ভুলে যেতে হয়।
বিপ্লব আশায় আশায় আছে। আর একটা, আর মাত্র একখানা ছক্কা পড়লেই, ব্যাস, কেল্লা ফতে। এই সব ছক্কা ভুলে নতুন করে দান ফেলা শুরু হবে। হ্যাঁ, একদম ভুলে গিয়েই।
খেলতে খেলতেই বিপ্লব জানে, চিন্তার কিছু নেই… খেলা হচ্ছে, খেলা হবেও… ভুলে থাকা, ভুলে যাওয়াও হবে…
এই মায়াবী শীত, এই আশ্চর্য খেলা, এই উৎসব, উত্তুরে বাতাসে ঘাসফুলের এই মৃদুমন্দ নাকি সুতীব্র দোলা, এই সপ্রেম দাপাদাপি – আমার চোখে তো সকলই শোভন, সকলই নবীন সকলই বিমল – এককথায় সকলই শান্তিকল্যাণ
– এই গল্পের মধ্যে কোথাও, কোত্থাও ফ্যাসিবাদ নেই। স্বস্তিতে থাকছেন নিশ্চয়ই?