তাঁকে বললাম গিয়ে, পৃথিবীতে গাছ কেমন কমে গেছে দেখেছেন?
তিনি বরাভয় মুদ্রায় হাত নিয়ে বললেন, ’কই, না তো!’
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, বড় বড় গাছগুলো কাটা পড়ছে,
আমার ছোটোবেলার খেলার মাঠে একশো বছরের ওপরে বাঁচা বটগাছ,
আমার কিশোরবেলায় কোচিং পড়ার পথে সেই ঝাঁকড়া তেঁতুলগাছ,
আর এই সেদিন অবধি বসন্তে পথ হলুদ করা বাড়ির সামনের দুটো রাধাচূড়া গাছ,
তারা একজনও নেই।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বদলে কী আছে?
আমি বিষণ্ণতায় মন ভিজিয়ে বললাম, বটগাছটার জায়গায় ওর চেয়েও উঁচু একটা বাড়ি,
তেঁতুলগাছটা আর তার সঙ্গী সাথীদের হাপিস করে এক মস্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মল
আর রাধাচূড়া দুটো যেখানে ছিলো, সেখানে এখন পিচ ঢালা রাস্তা।
তিনি চোখ মটকে বললেন, তবে, প্রগতি তো এইভাবেই আসে।
আমি আর্তনাদ করে বললাম আর গাছের সংখ্যা যে কমে যাচ্ছে তার বেলা?
তিনি বুদ্ধের মতো হেসে বললেন,
হিসেবটা ভুল করছো হে,
ধান আখ আর ভুট্টাগাছগুলো গুনলে দেখবে,
কম নয়, বরং এখন অনেক বেশি গাছ।
কেমন সার সার দাঁড়িয়ে থাকে,
যেমন বলবে তেমন ফসল দেয় তারপর নিঃশব্দে কাটা পড়ে,
সেই তুলনায় তোমার বট তেঁতুল আর রাধাচূড়া! ছোঃ!
আমি একটুখানি চুপ করে থেকে বললাম, তেমনভাবে ভাবলে মন খুলে কথা বলার মানুষও কমছে কিন্তু।
তিনি আঙুল দিয়ে রাস্তা দেখালেন।
সেখানে ফোনে মুখ নিচু করে বসে আছে কিছু লোক,
কানে হেডফোন দিয়ে দুলে চলেছে আরো কিছু
আর বাকিরা ফোনে অনর্গল কথা বলে চলেছে।
তারপরে আড়মোড়া ভেঙে ঢেউহীন কণ্ঠে বললেন,
‘কই, না তো!’