২১শে মার্চ দিনটিকে বলা হয় Vernal equinox, মানে আজকের দিনে শুরু হবে উত্তরায়ণ। দিন রাত সমান আজ।
আবার আজ ইন্টারন্যাশনাল ফরেস্ট ডে! আমাদের মতো
যারা তথাকথিত সুস্থ সবল মানুষ, তারা এসব দিনে জঙ্গল দিবস পালনের জন্য নানা রকম বিদঘুটে পরিকল্পনাও করবো। সারা বছর জঙ্গল কেটে সাফ করে, এরকম দিবস পালন অবশ্য আধুনিক কালচার!
সেসব যাক। যেটা বলার জন্য লেখা – এই দিনটাই ডাউন’স সিনড্রোম দিবস। না, এটি মোটেই আদিখ্যেতা দেখানোর দিন নয়।
সংক্ষেপে: এটি একটি ক্রোমোজোমাল অসুখ। ২১ নম্বরে দুটি সেটের বদলে তিন সেট ক্রোমোজোম পাওয়া যাবে। মানে টোটাল ক্রোমোজোম হবে ৪৭। নন-মিওটিক ডিসজাংশন এবং আরো কিছু কারণে এই গণ্ডগোল ঘটে। না, এটি মোটেই বিরল কোন রোগ নয়। পরিসংখ্যান বলে ৮০০ শিশুর মধ্যে একজন এই রোগের শিকার। এবং ক্রোমোজোমাল অসুখের মধ্যে সবচেয়ে কমন এটি!!
বিশদে যাবো না। শুধু বলবো – বেশ কিছু কারণ যেমন মা এর বয়স বেশি হবার সঙ্গে ডাউন’স সিন্ড্রোমের যোগাযোগ আছে।
তা বলে দয়া করে কেউ বাল্যবিবাহের সপক্ষে যুক্তি সাজাতে আসবেন না।
ডাউন’স সিন্ড্রোমের বাচ্চাদের শরীরে নানারকম সমস্যা থাকে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা দেখা দেয় – মানসিক প্রতিবন্ধকতা। আরেকটি প্রাণঘাতী সমস্যা হার্টের অসুখ।
এছাড়াও সারা শরীরে অসংখ্য সমস্যা দেখা যায়। সাধারণের বোধগম্য হবে না বলে ওদিকে গেলাম না।
যেটা ভয়ের কারণ – এইসরকম বাচ্চা কোন পরিবারে জন্মালেই শুরু হয় নানা রকম কুসংস্কারের প্রচার। গর্ভবতী মাকে দোষ দেওয়া তো সহজ কাজ, এছাড়াও নানারকম অলৌকিক শক্তির যোগাযোগ আবিষ্কার করার জন্য আমাদের সমাজে বিশেষজ্ঞ (বিশেষ ভাবে অজ্ঞ) বা বিদগ্ধ (বিশেষ উপায়ে দগ্ধ) পণ্ডিতের অভাব নেই। একজন পাথর দিয়ে শনি পূজার নিদানও দিয়েছিলেন।
বলাই বাহুল্য, যে সমাজে সোডিয়াম বাই কার্বনেট গুঁজে দিয়ে মা এর পেটের বাচ্চার সেক্স চেঞ্জ করার মত বিজ্ঞানী ও তার অগুণতি ভক্ত থাকে, সেখানে ডাউন’স সিন্ড্রোম নিয়ে বলতে যাওয়াই পাগলামি।
ফলাফল: একটি অসুখ নিয়ে জন্মানো বাচ্চা ও তার পরিবারকে আমরা, হ্যাঁ এই দোপেয়েরা মোটেই ভালো চোখে দেখি না। এবার বলি – এই মারাত্মক অসুখটিকে যদি গর্ভাবস্থায় প্রথমেই ধরে ফেলা যায়, তাহলে কিন্তু একটি বাচ্চা, মা তথা পরিবার সারা জীবনের জন্য নানা ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে পারে।
প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্টকে দিয়ে ইউএসজি (প্রথমটি ১১-১৩ সপ্তাহ ৬ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয়টি ১৭-২২ সপ্তাহে) করালেই এই রোগ ধরা পড়ে। এছাড়া আছে কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং এবং অ্যানিওসেন্টেসিস। সব সময় করা হয় না। বাকিদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ধরা পড়ে না।
অতএব, একশো জনের মধ্যে পঁচাশি জনকে অন্তত বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনি উপকার করতে পারবেন। না, এই ক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিৎসক মহাবিজ্ঞানীরা একজনকেও ডায়াগনসিস করতে পেরেছেন বলে দাবি করেননি এখনো অব্দি!!
এরপর আসুন, জন্মের পর। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকটি ডাউনস সিন্ড্রোমের বাচ্চাকে একজন সুন্দর মানুষ হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিজ্ঞান আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
জন্মের পরই একবার আপনার শিশুকে দেখিয়ে নিন শিশু বিশেষজ্ঞকে। আজকাল অনেক বাচ্চাকেই প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তোলা যায়।
এই সেদিন হস্তরেখা নিয়ে আলোচনা চলছিল। জেনে নিন – এই রোগটিতে হস্তরেখা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু। ছবি দেখুন সঙ্গের।
বিশদে আলোচনা ফেসবুকে সম্ভব নয়।
আরও বড় কথা – এই রকম বাচ্চা যাতে সারাজীবনের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে নিয়ম মেনে রক্ত পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্টকে দিয়ে ইউএসজি করানোর চেষ্টা করুন।
যদি ডায়াগনসিস হয়ে যায়, একজন বিশেষজ্ঞ গাইনিকোলজিস্টের পরামর্শ মত চলুন।
এই Vernal equinox-এর দিনে সবাই একটু সচেতন হোন, যাতে একটিও ডাউন’স সিন্ড্রোমের বাচ্চা, যদি জন্মায়, যেন সমাজে কোন অসাম্যের শিকার না হয়।
আপনার অজ্ঞানতা যেন কারো আলো ঝলমলে দিনকে রাত করে না তোলে – অনুরোধ রইলো।