বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়।
নতুন চেহারার ভাইরাসের বৈজ্ঞানিকদের কাছে নতুন মিউটেশনের পরিচিতি B.1.1.529 variant বলে, সাধারণভাবে যা ওমিক্রন নামে অভিহিত হচ্ছে। ২০২১-এর ৩১ মে থেকে WHO সার্স-কোভ-২-এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী করা শুরু করে। এখন অব্দি আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা এবং ওমিক্রন নাম দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয় ২৪ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে। যদিও তার আগে ৯ নভেম্বর, ২০২১-এ এক আক্রান্তের শরীর থেকে এই ভাইরাসের নমুনা মিলেছিল।
WHO ২৬ নভেম্বর, ২০২১-এ পৃথিবীর সমস্ত দেশের নিম্নোক্ত নির্দেশিকা পাঠিয়েছে।
As such, countries are asked to do the following:
- enhance surveillance and sequencing efforts to better understand circulating SARS-CoV-2 variants.
- submit complete genome sequences and associated metadata to a publicly available database, such as GISAID.
- report initial cases/clusters associated with VOC infection to WHO through the IHR mechanism.
- where capacity exists and in coordination with the international community, perform field investigations and laboratory assessments to improve understanding of the potential impacts of the VOC on COVID-19 epidemiology, severity, effectiveness of public health and social measures, diagnostic methods, immune responses, antibody neutralization, or other relevant characteristics.
২ নম্বর নির্দেশিকাটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো যেসব দেশে জেনোমিক স্টাডি এবং sero-surveillance-এর ব্যবস্থা দুর্বল জায়গায় রয়েছে, যেসব জায়গায় পাবলিক হেলথ সিস্টেম ভঙ্গুর বা দুর্বল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেহাল সেসব দেশে “associated metadata” বিশ্বাসযোগ্যভাবে সংগৃহীত হবে কিভাবে সেটা বাস্তবিকই চিন্তার বিষয়।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের চেহারা সার্স-কোভ-২-এর মতো একইরকম, পরিবর্তন শুধু জেনোমিক সিকোয়েন্সে। আমরা এতদিনে জেনে গেছি সার্স-কোভ-২ ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস এবং এতে ২৯,৯০৩টি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। আরএনএ ভাইরাস হবার জন্য চরিত্রগতভাবে “erroro-prone”। ভাইরাসের যখন রেপ্লিকেশন হয়, অর্থাৎ একটি ভাইরাস থেকে আরও অনেক ভাইরাসের জন্ম যখন হচ্ছে তখন এর আরএনএ-র অ্যামিনো অ্যাসিডের সজ্জা পরিবর্তিত হয়ে যায়। একে বিজ্ঞানীরা বলেন মিউটেশন। মিউটেশন যত বেশি হবে ভাইরাসের চরিত্রেরও তত বদল হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক হয়, কিছু বিশেষ ক্ষতি করতে পারেনা। উপরে ভাইরাসের ছবি রইল।
এখানে আরেকটি ব্যাপার ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ – একে বলা হয় R0 (রিপ্রোডাক্টিভ নাম্বার)। এই ভাইরাসের প্রথম যে জ্ঞাতি পাওয়া গিয়েছিল তার R0 কমবেশি ২-এর আশেপাশে। এর অর্থ হল একজন মানুষ ২ জনকে সংক্রমিত করতে পারবে। তারা আবার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
এর আগে যে ডেল্টা-প্লাস ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়েছিলাম তার R0 ৬ থেকে ৮-এর মধ্যে। তাহলে অনুমান করা যায়, কি বিপুল পরিমাণ মানুষ অল্পসময়ের মধ্যে আক্রান্ত হবে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে R0 এখনও নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে এটা ডেল্টা-প্লাসের মতই হবে। সেক্ষেত্রে একদিকে ভাইরাসের transmissibility (ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বিপুল), অন্যদিকে infectivity (সংক্রমণের ক্ষমতা)-ও যথেষ্ট বেশি। নেচার জার্নালে ২৭ নভেম্বর, ২০২১-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে “Heavily mutated Omicron variant puts scientists on alert”। এ প্রতিবেদনে বলা হল – “Researchers spotted B.1.1.529 in genome-sequencing data from Botswana. The variant stood out because it contains more than 30 changes to the spike protein — the SARS-CoV-2 protein that recognizes host cells and is the main target of the body’s immune responses. Many of the changes have been found in variants such as Delta and Alpha, and are linked to heightened infectivity and the ability to evade infection-blocking antibodies.”
এখানে আরও বিপত্তি তৈরি হল। প্রথম, যে স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করে ভ্যাক্সিন তৈরি হচ্ছে সে স্পাইক প্রোটিনের যদি ৩০টির বেশি পরিবর্তন ঘটে তাহলে ভ্যাক্সিন কোন স্পাইক প্রোটিনকে রিসেপ্টরের সাথে জোড় বাঁধাকে আটকাবে? এজন্য ফাইজার-বায়োএনটেক ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এদের ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে এরা নিশিত নয়। সম্ভবত কাজ করবেনা। মডার্না এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার অবস্থান এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আরও গবেষণার পরে ফলাফল বলা যাবে।
সায়ান্স পত্রিকায় ২৭ নভেম্বর, ২০২১-এ প্রকাশিত “’Patience is crucial’: Why we won’t know for weeks how dangerous Omicron is” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – “A mutation called E484K has long been worrying because it changes the shape of the site that class 2 antibodies recognize, making them less potent. Omicron carries a mutation called E484A in this site and similar changes in the sites for the other two classes of antibodies.”
দুটি বিপত্তি লুকিয়ে রয়েছে এখানে – (১) মানুষের দেহ বহিরাগত ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ফাংগাস বা অন্য যে কিছু দিয়ে আক্রান্ত হলে শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম একটি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে শরীরের রক্তে প্রবাহিত নিট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির সাহায্যে। যদি ভাইরাসটি একটি প্রোটিনের চাদর তৈরি করে চোরের মতো এর হাত থেকে পালিয়ে যেতে পারে (evade) তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা আর কার্যকরী হবেনা, এবং (২) যদি ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো উদ্দীপিত না হয় তাহলে মেমরি সেল কাজ করবেনা। পরিণতিতে আমাদের ইমিউনিটি আমাদের দেহকে ভাইরাসমুক্ত করতে পারবেনা।
নেচার-এ ২৯ জুলাই, ২০২১-এ প্রাকশিত “How the coronavirus infects cells — and why Delta is so dangerous” প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণায় জানানো হয়েছিল – “First, the virus eliminates the competition: viral protein Nsp1, one of the first proteins translated when the virus arrives, recruits host proteins to systematically chop up all cellular mRNAs that don’t have a viral tag…
Second, infection reduces overall protein translation in the cell by 70%. Nsp1 is again the main culprit, this time physically blocking the entry channel of ribosomes so mRNA can’t get inside, according to work from two research teams. The little translation capacity that remains is dedicated to viral RNAs…
Finally, the virus shuts down the cell’s alarm system. This happens in numerous ways, the virus prevents cellular mRNA from getting out of the nucleus, including instructions for proteins meant to alert the immune system to infection.” একথাগুলো হয়তো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে অধিকতর সত্যি হতে পারে। আমরা চাইবো সত্যি না হোক!
অবশ্য খানিকটা বিপরীত তথ্যও আমাদের কাছে আসছে। রয়টার্সের সংবাদ অনুযায়ী (২৯ নভেম্বর, ২০২১) “S.African doctor says patients with Omicron variant have “very mild” symptoms”। আরেকটি খবরও নজর দেবার মতো। CITY A.M. সংবাদসংস্থার খবর অনুযায়ী (২৮ নভেম্বর, ২০২১) “Blessing in disguise: Omicron variant may be ‘very positive’ news for the world if new Covid mutation kills off more lethal Delta coronavirus”। এদের রিপোর্ট অনুযায়ী, “Around 90 per cent of all new infections in the Johannesburg region are now caused by the Omicron strain but, so far, the Covid death rate and even hospital admissions appear not to be increasing significantly, local media report.” যদিও এ সংবাদেই হু-কে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে “preliminary evidence suggests the variant has an increased risk of reinfection and may spread more rapidly than other strains, including Delta.”
“ভ্যাক্সিন জাতীয়তাবাদ” এবং “ভ্যাক্সিন অসাম্য” ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন তৈরি হবার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ভ্যাক্সিন যত কম হবে তত বেশি সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। আবার যত বেশি সংক্রমণ হবে ভাইরাসের রেপ্লিকেশন তত বেশি হবে। রেপ্লিকেশন বেশি হওয়া মানেই মিউটেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। WHO এবছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে অন্তত ১০% জনসংখ্যাকে ভ্যাক্সিন দেবার কথা বলেছিল। ৫০টির বেশি দেশ এই টার্গেট মিস করেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকা মহাদেশে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের (২৭ নভেম্বর, ২০২১) একটি খবর – “Omicron puts focus on low vaccine coverage in developing countries”। প্রায় ৬ মাস আগে সুবিখ্যাত নিউ ইয়র্কার সংবাদপত্রের একটি খবরের (৫.০৬.২১) শিরোনাম ছিল “The Peril of Not Vaccinating the World”। এখানে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে – “যদি ভ্যাক্সিন অনুপস্থিত থাকে তাহলে বিশ্বব্যাপী এক অতল সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন তুল্য মান্য পত্রিকায় “From Vaccine Nationalism to Vaccine Equity – Finding a Path Forward” (এপ্রিল ৮, ২০২১) প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল – “বহুসংখ্যক দরিদ্রতম দেশে ভ্যাক্সিনের সরবরাহের কোন অস্তিত্বই নেই, এবং বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন কম-সম্পদ সম্পন্ন ৮০% দেশে এ বছর (২০২১) একটিও ভ্যাক্সিন পাবেনা।” এ প্রবন্ধটিতেই বলা হয়েছিল – “Vaccinating the world is not only a moral obligation to protect our neighbors, it also serves our self-interest by protecting our security, health, and economy. These goals will not be accomplished by making the world wait for wealthy countries to be vaccinated first.” মূল কথা হল, সমগ্র বিশ্বের টিকাকরণ শুধুমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, এ কাজটি আমাদের নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করবে – নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে। ধনী দেশগুলোতে প্রথম টিকাকরণ করার পরে বাকী বিশ্বের সিদ্ধিলাভ হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই।
ল্যান্সেট-এর মতো বন্দিত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল “The long road ahead for COVID-19 vaccination in Africa” (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১)। এ প্রবন্ধ জানিয়েছিল, আফ্রিকার জনসংখ্যার মাত্র ২.৫%-এর টিকাকরণ হয়েছে। সামনে অনেক বড়ো রাস্তা – সে রাস্তায় রয়েছে ওমিক্রনের মতো ভ্যারিয়েন্ট। গত ২৬ অক্টোবর, ২০২১-এ হু এর বুলেটিনে জানিয়েছিল – “Less than 10% of African countries to hit key COVID-19 vaccination goal”।
আফ্রিকা মহাদেশের ৫৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ৫টি দেশে ৪০% জনসংখ্যার টিকাকরণ হয়েছে। “ভ্যাক্সিন ইনইক্যুইটি”র জ্বলন্ত উদাহরণ আফ্রিকা। হু-র পূর্বোক্ত বুলেটিনে বলা হয় – “Africa has fully vaccinated 77 million people, just 6% of its population. In comparison, over 70% of high-income countries have already vaccinated more than 40% of their people.”
তাহলে আমাদের করণীয় কি? দুবছরের গবেষণায় আমরা প্রায় নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে এই ভাইরাস এরোসলের মাধ্যমে অর্থাৎ বায়ুবাহিত হয়ে মানুষের নাক, গলা হয়ে ফুসফুসে পৌঁছয়। এজন্য বাইরে বেরোলে নাক-মুখ ঢাকা মাস্ক পরতেই হবে। দ্বিতীয়, বাইরে বেরোলে ব্যক্তিগত দূরত্ব রক্ষা করার (৬ থেকে ৮ ফুট) চেষ্টা করতে হবে। তৃতীয়, হাতের পরিচ্ছনতা (২০ সেকেন্ড ধরে ফেনা ওঠা সাবান জলে হাত ধোয়া কিংবা ৭০% আইসোপ্রোপিল অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা) রক্ষা করতে হবে। চতুর্থ, ঘরে যথেষ্ট আলোবাতাস খেলতে হবে। ঘর যেন বদ্ধ না থাকে। এবং, সর্বোপরি, বলার অপেক্ষা রাখেনা অন্তত ৭০% (কোন কোন হিসবে ৮৫%) জনসংখ্যার পূর্ণ টিকাকরণ।
এছাড়া আপাতত আর কোন প্রতিরোধের হাতিয়ার আমাদের হাতে নেই। আবার ফিরে যেতে হবে বুনিয়াদি পাবলিক হেলথের কাছে। একে রাষ্ট্রের তরফে সজীব ও সক্রিয় করতে হবে। আরও অনেক জেনোমিক স্টাডি এবং সেরো সার্ভেইলেন্স করা প্রয়োজন। আমরা এগুলো দায়িত্ব নিয়ে করবো তো? শুধুমাত্র টিকার ওপরে ভরসা করে এই মারণাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবেনা।
একথাগুলো কি আমরা ভাবছি? না ভেবে, উটের মতো বালুতে মুখ গুঁজে এড়িয়ে যাওয়া যাবে কি?
(এ প্রবন্ধটির একটি স্বল্প ভিন্ন ভার্সন গুরুচণ্ডালী ওয়েবজিনে প্রকাশিত হবে)
দুটো-তিনটে ব্যাপার এখানে সাংঘাতিক রকমের গুরুত্বপূর্ণ: (১) যদিও অনুমান করা হচ্ছে যে আমরা যে ধরণের ভ্যাকসিন ব্যবহার করছি তাকে এ ভাইরাল স্ট্রেন এড়াতে সক্ষম, তাহলেও কোষ জনিত যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়েছে, মেমারী টি সেলের সূত্রে তাতে কিন্তু এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরী করা সম্ভব। অতএব, স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন এবং বিশেষ করে রিসেপটেরের বিরুদ্ধে মিউটেশন হলেও শেষ অবধি যাদের দু-দাগ এবং “বুস্টার” ডোজ নেওয়া আছে (মনে রাখতে হবে যে মাস ছয়েক পর থেকে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে), তারা অনেকটা বেঁচে যেতে পারেন। এতে করে সেই সব দেশ যেখানে ভ্যাকসিন সেভাবে পৌঁছয় নি, তারা ভুগবে |
প্রথম থেকে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গোটা বিশ্বে যাতে সবাই প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন পেতে পারে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে উদ্যোগ নিত, আজকে এই পরিস্থিতির সামনে নাও পড়তে হতে পারত; (২) ভ্যাকসিন একা কিন্তু কাজ করেনা, মুখে মাসক, এবং ঘরে হাওয়া চলাচল নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার জায়গাটি রয়েই গেল | (৩) জেনোমিক সারভেলানস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে যে রেটে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এবং আফ্রিকা মহাদেশ থেকে যাতায়াত বন্ধের হিড়িক শুরু হয়ছে (“চোর পালাবার পর বুদ্ধি বাড়ার ব্যাপারটা ছেড়ে দিলেও”), এতে করে একটা সম্ভাবনা থেকে যায় যে এর পর নতুন স্ট্রেন বেরোলে অনেক দেশই বিশেষ করে যে সব দেশে ভ্যাকসিনেশন সেভাবে হয়নি, এবং যেখানে নতুন স্ট্রেন বেরোবার সমূহ সম্ভাবনা, তারা কিন্তু রিপোর্ট করার আগে ভাববে। কাজেই আন্তর্জাতিক চলাচল নিয়েও ভাবনা চিন্তার একটা জায়গা থেকে যাচ্ছে, ওমিক্রণ মানবজাতিকে বেশ কয়েকটা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।