আজ একজনের মেসেজ পেলাম। তিনি জানাচ্ছেন, অন্যের ব্যবহারে বার বার আঘাত পাচ্ছেন। নিজেকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না একে বারেই। ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের,, কাউকে কষ্ট দিতে পারেন না,,,,,, কেউ কিছু বললে পাল্টা উল্টো উত্তর দিতে পারেন না।
এমন সমস্যা হলে কি করা যেতে পারে?
এখানে ওনার সমস্যাটাকে আমি চার ভাগে ভাগ করছি।
1. ওনার পরিস্থিতি ( অন্যের আচরণ)
2. সেই পরিস্থিতি সম্বন্ধে ওনার চিন্তা, বিশ্বাস, ভাবনা।
3. ওনার মনের অনুভূতি (দু:খ, নিজের কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা)
4. ওনার আচরণ। (চুপ করে থাকা)
উনি অন্যের আচরণ বদলানোর চান্স পাবেন না বললেই চলে। পরিস্থিতি সম্বন্ধে ওনার চিন্তা, বিশ্বাস, ধ্যান ধারণায় বদল আনা যেতে পারে।
সেটা করতে পারলে ওনার দু:খবোধের মাত্রা কমবে। “একেবারেই নিতে পারছেন না” এই জায়গার উন্নতি হবে।
স্বভাবতই ওনার চুপ করে সহ্য করা — এই আচরণে বদল আসবে।
এখানে অন্যের আচরণ ঠিক কি আমার জানা নেই। বাস্তবে ওনার পরিস্থিতি কতটা প্রতিকূল তাও আমার জানা নেই। কিন্তু ওনার মেসেজ পড়ে আমার মনে হল ওনার নিজের ব্যক্তিত্বের দুর্বল দিক হল উনি নিজের বক্তব্য স্পষ্ট ও দৃঢ় ভাষায় বলতে পারেন না। যার জন্য ওনার আশেপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।
“ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের,, কাউকে কষ্ট দিতে পারেন না,,,,,, কেউ কিছু বললে পাল্টা উল্টো উত্তর দিতে পারেন না।”
এই বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে উনি বিশ্বাস করেন দুই ধরণের যোগাযোগ সম্ভব এক শান্ত (Passive) যেখানে নিজের বক্তব্য, ভাল লাগা মন্দ লাগা প্রকাশ করা যায় না ও অন্যটি অশান্ত (Aggressive) যেখানে নিজের মতামত জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। উনি দ্বিতীয়টা পারেন না। তাই প্রথমটায় অভ্যস্ত।
আর এক ধরনের যোগাযোগ (communication) করার যে উপায় সে সম্বন্ধে ওনার ধারণা নেই।
তাকে বলা হয় Assertive communication মানে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের মতামত বা বক্তব্য অন্যকে জানানো। এর মানে ঝগড়া নয়, অশালীন ভাষার ব্যবহার নয়, অন্যের মতামতকে অশ্রদ্ধা নয়। কিন্তু নিজেরটা বলতে পারার ক্ষমতা।
এতে কি হবে?
অন্যের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কমবে।
নিজের বক্তব্য বলতে না পারার যন্ত্রণা কমবে।
তাছাড়া নিজের অসুবিধার সমাধান মেলার সম্ভাবনা বাড়বে।
প্রয়োজনে, এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ মনোবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এই ধরণের ট্রেনিং কে Assertiveness Training বলা হয়।
করোনা মহামারী আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে জীবন ক্ষণিক ও মূল্যবান। তাই অযথা কষ্টে থাকবেন না। সমস্যা আলোচনা করুন। সমস্যা যখন আছে তখন তার সমাধানও আছে।