আমার আলোচনার দুটি অংশ। প্রথম অংশে আধুনিক জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কিভাবে একটি প্রাণবন্ত চেহারা পেয়েছিল, সে ইতিহাসের অতি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা থাকবে। দ্বিতীয় অংশে থাকবে ছাত্র আন্দোলন বা বিদ্রোহের একেবারেই অজানা বা কম-জানা দুয়েকটি কথা। দুটি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আলোচনাতেও আসবে। কারণ কেবলমাত্র দেশীয় প্রেক্ষিতে এরকম গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের আলোচনা হয়তো একদেশদর্শিতা-ক্লিষ্ট হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের (জাতীয়/আন্তর্জাতিক) বীজ ও বিস্তারের কথা
এ কথা জানলে হয়তো একটু বিস্মিতই হতে হবে যে, মার্ক্সবাদের অন্যতম স্থপতি ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস ১৮৪০-এর দশকে ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্যের শোচনীয় অবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে অনুপুঙ্খ আলোচনা করেছিলেন তাঁর The Condition of the Working-Class in England: From Personal Observation and Authentic Sources গ্রন্থে – সেসময়ের শিল্পবিপ্লবের মূলকেন্দ্র ম্যানচেস্টারের শ্রমিকদের জীবনযাত্রার আলোকে।
আরও উল্লেখযোগ্য, সেলুলার প্যাথলজি” এবং “সোশ্যাল মেডিসিন”-এর জনক বলে পরিচিত স্বয়ং ভির্শো (রুডলফ কার্ল ভির্শো) জার্মান ভাষায় লেখা তাঁর পুস্তক Gesammelte Abhandlungen aus dem Gebiet der oeffentlichen Medizin und der Seuchenlehre, Vol. 1. (Berlin, Hirschwald, 1879, pp. 305, 321-334)-এ এঙ্গেলসের গ্রন্থটির কাছে তাঁর বৌদ্ধিক ঋণ স্বীকার করেছেন। তারপরে দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে গিয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ হাওয়ার্ড ওয়েইজকিন, “A Marxist View of Medical Care”, Annals of Internal Medicine 89: 264-278, 1978) ভির্শো তাঁর পুস্তকের ৩০৫ পৃষ্ঠায় লিখছেন “Engels, Die Lage der arbeitenden Klasse in Engand”, 1844.”
তাঁর পুস্তক থেকে জানতে পারছি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় পরিশ্রম করার ফলে শ্রমিকদের হাঁটু ভেতরের দিকে বেঁকে যায়, এবং শিরদাঁড়া কোন একদিকে বেঁকে থাকে। এগুলো শরীরের গঠনের ওপরে দীর্ঘকালীন বা সারাজীবনের প্রভাব। এছাড়াও ছিল রাতে সম্পূর্ণ নিদ্রাহীনতার মতো উপসর্গ।
শিশুরাও আক্রান্ত হয়। কারণ ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা একটানা পরিশ্রম করতে হত। ফলে খুব দ্রুত এই শিশুরা “rosy freshness of childhood” হারিয়ে ফেলে। বলার কথা – “Women made unfit for childbearing, children deformed, men enfeebled, limbs crushed, whole generations wrecked, afflicted with disease and infirmity”। (পৃঃ ১৮০)
ডঃ কে-কে উদ্ধৃত করে এঙ্গেলস এই পুস্তকে জানাচ্ছেন – “Not one house of this street escaped the cholera. In general, the streets of these suburbs are unpaved, with a dung-heap or ditch in the middle; the houses are built back to back, without ventilation or drainage, and whole families are limited to a corner of a cellar or a garret.” (নজরটান মূল লেখায়। পৃঃ ৯৩)
মনে রাখতে হবে, জন স্নো-র ব্রড স্ট্রিটের কলেরা সংক্রমণের জন্য আরও ১০ বছর ১৮৫৪ সাল অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। এর আগেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য কলেরা ছড়িয়ে পড়ার বিবরণ পাচ্ছি এঙ্গেলসের পুস্তকে। জনস্বাস্থ্যের একেবারে গোড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এঙ্গেলস।
এঙ্গেলস “grinders’ asthma” বলে যে রোগের উল্লেখ করেছেন, বর্ণনা থেকে মনে হয় বর্তমানে আমরা যেগুলোকে আমরা সিলিকোসিস, অ্যাসবেস্টোসিস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের রোগের সমস্যা বলে থাকি সেগুলোরই কোন বিবরণ। এসব বর্ণনাকে কি প্রাথমিক স্তরের এপিডেমিওলজি বা জনস্বাস্থ্যের বিস্তৃত বিবরণ হিসেবে দেখা হবে? কিংবা নিছকই রাজনৈতিক বিবরণ হিসেবে লঘু করা হবে? খুব প্রোজ্বলন্ত প্রশ্ন চলে এল আমাদের চিন্তা জগতে। অর্থাৎ জনস্বাস্থ্য এবং আর্থ-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সমস্যা বিচ্ছিন্ন দুটি বিষয় নয়। পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিশুদ্ধ জনস্বাস্থ্য বলে কিছু হয়না।
১৮৪৭-৪৮ সালে রুডোলফ ভির্শোকে পাঠানো হয়েছিল আপার সাইলেসিয়া প্রদেশে যে মারাত্মক টাইফাস মহামারি হয়েছিল এবং যার ফলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য। তাঁর রিপোর্টে তিনি লেখেন – “বর্তমান রিপোর্ট পাঠকদের কাছে তথ্যনিষ্ঠভাবে, যদিও পূর্ণাঙ্গ নয়, Upper Silesia-র অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে সাহায্য করবে। একইসাথে একটি বিধ্বংসী মহামারি এবং ভয়ানক দুর্ভিক্ষ ওখানকার দরিদ্র, অজ্ঞ এবং নিস্পৃহ জনসমাজকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। একবছরের মধ্যে Pless জেলায় ১০% জনসংখ্যার মৃত্যু হয়েছে, অনাহারে মারা গেছে ৬.৪%। এরসাথে যুক্ত হয়েছে মহামারি পরিস্থিতি। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শুধুমাত্র ১.৩% জনসংখ্যার মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। Rybnik জেলায় ৮ মাসে ১৪.৩% জনসংখ্যা সংক্রামিত হয়েছে টাইফাস রোগে। এদের মধ্যে ২০.৪৬%-এর মৃত্যু হয়েছে … বছরের শুরুতে ঐ দুই জেলার ৩% জনসংখ্যা অনাথ হয়ে গেছে।”
তিনি বললেন – “প্রুশিয়ার গর্ব ছিল নিজের আইন এবং সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়ে … আইন অনুযায়ী প্রোলেতারিয়ানরা সমস্ত রকমের সুযোগসুবিধে যেগুলো তাদের অনাহারে মৃত্যু থেকে বাঁচাবে এগুলোর অধিকারী ছিল … প্রয়োজনীয় আইন ছিল, ছিল সিভিল সার্ভেন্টরা – এবং হাজার হাজার মানুষ টাইফাস রোগে এবং অনাহারে মরে গেল। আইন এদের কোন সাহায্য করেনি, কারণ আইন ছিল শুধু কাগজে লেখা। সিভিল সার্ভেন্টরাও এর অতিরিক্ত কিছু করেনি। সমগ্র দেশ ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে এক কাগজের কাঠামোতে, বিভিন্ন কার্ড ভর্তি এক বিরাটাকৃতি ঘরে।”
এই রিপোর্টে পরের অংশে বললেন – “মানুষ যতটা খেতে পারে তার চেয়ে বেশি খাদ্য পৃথিবীতে উৎপাদিত হয়। কিন্তু মনুষ্যজাতির স্বার্থ এতে সিদ্ধি হয়না যখন কয়েকজন মানুষের হাতে অযৌক্তিকভাবে পুঁজি এবং জমির মালিকানা কেন্দ্রীভূত থাকে। উৎপাদনও সেই পথ ধরে হয় যেখানে মুনাফার প্রবাহ সে মুষ্টিমেয় হাতে গিয়ে জমা হয়।” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ২১০৪) বললেন – “আমি এসব র্যাডিকাল পদ্ধতির পরামর্শ দিচ্ছি মহামারির প্রতিকার হিসেবে, আপার সাইলেসিয়ায় পুনঃপুন ঘটে যাওয়া দুর্ভিক্ষ এবং টাইফাস মহামারির প্রতিকার হিসেবে। যারা সংস্কৃতির ইতিহাসে সমুন্নত ভূমিতে উত্থিত হতে অক্ষম তারা যেন হাসতে পারে। গভীর এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা করে এমন মানুষেরা যারা বর্তমান সময়কে বুঝতে পারে, যে সময়ের মাঝে তারা বেঁচে রয়েছে, আশা করি, আমার সাথে সহমত হবে…”। ১৮৪৭ সালে সাইলেসিয়ার টাইফাস সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পরের বছর ১৮৪৮ সালে জার্মানিতে “বিপ্লব” হল, ইউরোপের একাধিক শহরের মতো। যদিও সফল হয়নি। কিন্তু নীতি প্রণয়নের স্তরে জনস্বাস্থ্যমুখী বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন হল। ভির্শো ১৮৪৮-এর বিপ্লবে সরাসরি যুক্ত হয়েছিলেন, ব্যারিকেড তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন।
ভির্শোই প্রথম লিউকেমিয়া, কন্ড্রোমা, “zoonosis” ইত্যাদি রোগের নামকরণ করেন ও বর্ণনা দেন। বায়োলজির বিভিন্ন টার্ম যেমন ক্রোমাটিন, নিউরোগ্লায়া, বা spina bifida ইত্যাদি উদ্ভাবন করেন এবং এগুলোর ব্যাখ্যা দেন। যাহোক, ১৮৪৮-এর বিপ্লবে অংশগ্রহণ তাঁর চিন্তার দুনিয়ায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনলো। ভির্শো সাধারণ পাঠকের বোঝার উপযোগী করে মেডিক্যাল রিফর্ম নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করলেন। রোগের উৎস যে বিভিন্ন ঘটনার সমাহার এ ধারণা নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করতে শুরু করলেন। তাঁর প্রথম প্রতিপাদ্য ছিল অপুষ্টি রোগের ক্ষেত্র তৈরি করে। দ্বিতীয়, বাসস্থানের পরিবেশ কারণ ঘিঞ্জি পরিবেশ মহামারি ছড়াতে সাহায্য করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি চিকিৎসকদের নজর দিতে বললেন। সেটা এরকম – সাইলেসিয়ায় টাইফাস মহামারিতে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ ছিল পোল্যান্ড থেকে আগত। এজন্য ডাক্তারদের রোগীর সাথে ভালোভাবে যোগসূত্র তৈরি করার জন্য অন্য ভাষা শেখা গুরুত্বপূর্ণ।
একটি নতুন স্বাস্থ্যব্যস্থার অঙ্কুরোদ্গম – শতবর্ষ আগে
আধুনিক জনস্বাস্থ্যের ধারণার মৌলিক পালাবদল ঘটলো নতুন সোভিয়েত রাশিয়ার উন্মেষের পরে (১৯১৭)। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের চূড়ামণি জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেনরি সিজারিস্ট ১৯৩০-এর দশকে সদ্য গড়ে-ওঠা রাশিয়ায় গিয়েছিলেন, রুশ ভাষা শিখেছিলেন। নিবিড়ভাবে সোভিয়েত স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফিরে এসে লিখলেন সোশ্যালাইজড মেডিসিন ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৩৭)। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য – “পাঁচ হাজার বছর ধরে মেডিসিনের ইতিহাসের জগতে যা অর্জিত হয়েছে তাকে প্রথম যুগ বলা যায় – কিউরেটিভ (সারিয়ে তোলা) মেডিসিনের যুগ। এখন সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে – প্রিভেন্টিভ (প্রতিরোধী) মেডিসিনের যুগ।” (পৃঃ ১০৪) এই বইয়েই লিখলেন – “এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারেনা যে সোভিয়েত সিস্টেমের সামাজিক ইন্সিউরেন্স পুঁজিবাদী দেশের যেকোন ইন্সিউরেন্সের চেয়ে অকল্পনীয়ভাবে উৎকৃষ্ট।” লিখলেন – “এটা সম্পূর্ণত নতুন একটি মেডিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গী। এ দৃষ্টিভঙ্গীর উৎস হচ্ছে এক নতুন সামাজিক ব্যবস্থা। এ হল সোশ্যালিস্ট মেডিসিন … এর জন্য কোন জাতীয়বাদী কিংবা সাম্রাজ্যবাদী প্রোগ্রাম সফল করার তাগিদ নেই।” আরও জানালেন – “যে সব স্যানাটরিয়াম এবং হেলথ রিসর্টগুলো আগে কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ধনীর সুযোগ হিসেবে ছিল সেগুলো সবকটাই সমস্ত মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।” এক অমোঘ সত্যি তিনি তুলে ধরেন – “কেবলমাত্র জনতার স্বাস্থ্য রাষ্ট্রের বিবেচনায় রাখা হয় এবং এটা বাহ্যত স্পষ্ট যে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোন স্বাস্থ্য পরিকল্পনাকে কার্যকরী করা সম্ভব নয় … সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম দেশ যে মেডিসিনকে আক্ষরিক অর্থে সামাজিক চেহারা দিয়েছে, প্রথম দেশ যে জনতার স্বাস্থ্যকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে গ্রহণ করেছে।”
এখানে ঐতিহাসিকভাবে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালে তৈরি হল লিগ অফ নেশনস। এর অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন নরওয়ের স্বাস্থ্য প্রধান কার্ল ইভাং। তিনি জানাচ্ছেন যে “স্বাস্থ্য” বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ কোন ব্যাপার ছিলনা। ইভাং-এর বয়ানে – “একটি মজার উদাহরণ হল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন কভেন্যান্ট অফ লিগ অফ নেশনস ড্র্যাফট করা হল তখন স্বাস্থ্য ‘ভুলে যাওয়া হয়েছিল’। একেবারে শেষ মুহূর্তে লিগ অফ নেশনস-এর হেলথ সেকশনে ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটিকে ঢোকানো হয়।”
যে সময়ে পৃথিবীর তাবড় ধনতান্ত্রিক দেশগুলো “স্বাস্থ্য” শব্দটিকে ভুলে যাচ্ছিল সেসময়ে বলশেভিক রাশিয়ায় সবার জন্য, সমস্ত নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যের নতুন মহাযজ্ঞের উদ্বোধন শুধু হয়নি, প্রবল উদ্দীপনা নিয়ে সবার কাছে স্বাস্থ্যের সুযোগ পৌঁছে দেবার কর্মযজ্ঞ বিপুল গতিতে চলেছে। সিজারিস্ট তাঁর মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন গ্রন্থে বলছেন – “সোভিয়েত মেডিসিনে কোন আপোষ নেই। এর কাঠামো সহজেই বোঝা যায় কারণ এটা বাস্তবোচিত, যুক্তিযুক্ত এবং স্বচ্ছ।” (পৃঃ ২৪) তিনি সোভিয়েত মেডিসিনের চারটি বৈশিষ্ট্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন – (১) মেডিক্যাল সার্ভিস খরচবিহীন, এবং সবার কাছে লভ্য, (২) সমস্ত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে “promotion health and prevention of disease”, (৩) কেন্দ্রীয় সংস্থা, স্বাস্থ্যমন্ত্রক (পূর্বতন পিপলস’ কমিশারিয়াট অফ হেলথ) সমস্ত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে, এবং, এর ফলে (৪) অনেক বৃহৎ পরিসরে স্বাস্থ্য নিয়ে পরিকল্পনা করা যায়।
বলা যেতে পারে, সোভিয়েত মেডিসিনের অভিঘাতে ইংল্যান্ডের “বৈপ্লবিক” সার্বিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেবার জন্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS)-এর জন্ম হয়েছিল। আমার ধারণা অংশত সোশ্যালিস্ট মেডিসিনের প্রভাব, অংশত ইউরোপের জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অভিঘাত, অংশত ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ের বিশেষ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ – এসবের সম্মিলিত যোগফলে এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের জন্ম। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে ইংল্যান্ডের প্রতিটি বাড়িতে একটি লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। লিফলেটে বলা হয়েছিল –
“আপনার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস শুরু হবে ৫ জুলাই। এটা কি? কিভাবে আপনি পাবেন? এই সার্ভিস আপনাকে সমস্ত মেডিক্যাল, ডেন্টাল, এবং নার্সিং-এর ব্যবস্থা জোগাবে। প্রতিটি মানুষ – দরিদ্র অথবা ধনী, পুরুষ, নারী অথবা শিশু – একে পূর্ণত কিংবা এর যেকোন অংশকে ব্যবহার করতে পারবে। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এর জন্য কোন মূল্য দিতে হবেনা। এর জন্য কোন ইন্সিউরেন্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা কোন “দাক্ষিণ্য বা চ্যারিটি” নয়। আপনারা সবাই এর জন্য অর্থ দিচ্ছেন, প্রধানত একজন ট্যাক্সদাতা হিসেবে, এবং অসুস্থতার সময়ে আপনাদের অর্থের জন্য বিপুল উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেবে এই সার্ভিস।”
ভারতে বিভিন্ন সময়ে জামখেদ আন্দোলনের মতো ভিন্ন ভিন্ন জনস্বাস্থ্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন সৎ উদ্যোগ তৈরি হলেও স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারের তালিকাভুক্ত করা যায়নি। এক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থে ছাত্রদের নিজেদের রক্তে তৈরি স্টুডেন্টস হেলথ হোম আন্দোলন একটি ব্যিতিক্রমী উদ্যোগ। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এর অভিমুখ curative health-এর দিকে, প্রিভেন্টিভ হেলথ-এর দিকে নয়।
মানুষকে সমস্ত বিকাশের কেন্দ্রে স্থাপন করে আন্তর্জাতিক জগতে স্বাস্থ্য-মনস্ক নীতি প্রণেতারা সকলের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বে স্বাস্থ্যের যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছিলেন, সেগুলো সবই ধীরে ধীরে লুঠ হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ উদাহরণ বুঝিবা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত প্রবন্ধ “কর্পোরেট ইনভেস্টরস ইন প্রাইমারি কেয়ার – প্রফিটস, প্রোগ্রেস, অ্যান্ড পিটফলস”।
আমরা হীরকখণ্ড ছেড়ে কাঁচের টুকরো নিয়ে খুশি থাকছি কী? স্বাস্থ্যকে গুলিয়ে ফেলছি স্বাস্থ্যপরিষেবার সাথে? স্বাস্থ্যের সার্বজনীন অধিকারের দাবী এবং সীমিত স্বাস্থ্যবীমা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলনের কিছু ঐতিহাসিক টুকরো ছবি
উপনিবেশিক ভারতে সুবিশাল সমস্ত ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। এ প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই। কিন্তু দুয়েকটি প্রায়-অজানা ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করা দরকার। আধুনিক অর্থে ছাত্র শব্দটির নতুন ব্যঞ্জনা, অর্থ এবং নতুন ব্যবহার শুরু হয় ১৮০০ সালের প্রথম দশক থেকেই – একদিকে, কালাশ্রয়ী পুঁথি-নির্ভর, গুরুকুল ব্যবস্থার অমোঘ প্রতিস্থাপন; অন্যদিকে, “প্রিন্ট ক্যাপিটালিজম”-এর বিস্তারের ফলে বিপুল সংখ্যায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য ছাপা বইয়ের আবির্ভাব। ফলে বইয়ের এবং শিক্ষার একটি নতুন বাজার তৈরি হল। শিক্ষা হয়ে উঠল “উপার্জনের জন্য শিক্ষালাভ”। তৈরি হল সেকুলার শিক্ষাক্রম – শিক্ষার বর্ণভিত্তিকতা চিরতরে মুছে গেল। তৈরি হল একটি নতুন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি – “ঘরেও নাহি পরেও নাহি, যেজন আছে মাঝখানে”। এরকম এক পটভূমিতে হিন্দু কলেজের সৃষ্টি, ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠির বাড়াবাড়ি রকমের সংস্কার-বিরোধী সামাজিক আন্দোলন এবং এর সীমাবদ্ধতার কথা ভাবতে হবে।
যাহোক, হিন্দু কলেজের এক ছাত্রের লেখা একটি বিশেষ লেখার উল্লেখ করা যায় এখানে। ১৮৩৫ সালে লেখা একটা প্রবন্ধ/বই-এর উদাহরণ আমাদের কাছে আছে – A Journal of Forty-Eight Hours of the Year 1945। লেখক হিন্দু কলেজের ছাত্র কৈলাশ চন্দ্র ঘোষ। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল Calcutta Literary Gazette (or, Journal of Belles Letters, Science, and Arts)-এ (vol. III, new series, number 75, June 6, 1835)। সংক্ষেপে বলা যায়, এ গল্পের নায়ক ২৫ বছরের যুবক ভুবনমোহন এবং তার দুজন বিশ্বস্ত সাথী হল গঙ্গানারায়ণ এবং পার্বতীচরণ। এ গল্পের সময় ভাইসরয়ের নামও তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেওয়া হয়েছে Lord Fell Butcher এবং তার সামরিক জেনারেলের নাম John Blood-Thirsty। হিন্দু কলেজের হোস্টেলে (১৯৪৫-এ নামকরণ হয়ে গেছে প্রেসিডেন্সি কলেজ, যদিও ১৮৩৫-এ লেখা বলে কৈলাশচন্দ্র ঘোষ এ নাম জানতেন না) এক অসম যুদ্ধের কাহিনীর বর্ণনা আছে। কর্নেল ভাইসরয়কে ২৫ জন গোরা সৈন্যের মৃত্যু ও ২৫ জনের আহত হবার সংবাদ দিচ্ছে। কিন্তু দেশপ্রেমিক বিদ্রোহীরা মারা গেছে ৬ জন, ১৩ জন আহত। যুদ্ধ শুরু হবার আগে ভুবনমোহন ইংরেজ প্রতিনিধিকে স্পষ্ট স্বরে, নিরুদ্ধ কণ্ঠে জানায় – “Worthy Magistrate, I am sorry we are not able to comply with your proposition; we defy you to do your worst.”
শেষ অবধি অসম স্বাধীনতার যুদ্ধে ভুবনমোহন ও তার বাহিনী হেরে যায়। আক্ষরিক অর্থে যূপকাষ্ঠে তাকে প্রাণ দিতে হয়। তাকে যূপকাষ্ঠে নিয়ে যাবার মূহূর্তে তার শেষ কথাগুলো ছিল – “আমার সহযোদ্ধা এবং দেশবাসী! জন্মভূমির বুকে মৃত্যু হবার সান্ত্বনা বহন করছি আমি। আর যদিও বধ্যভূমিতে আমার জীবন দেওয়াই ছিল ঈশ্বরের অভিপ্রায়, সহযোদ্ধাদের উপস্থিতি আমার শেষ মুহূর্তগুলোকে আনন্দোচ্ছল করে তুলেছে। দেশরক্ষার জন্য আমার জীবনের শেষ রক্তবিন্দু আমি ঢেলেছি এবং যদিও এখন সেই ক্ষণ সমাগত যে আমার ভঙ্গুর দেহকাঠামোর মধ্যেকার দুর্বল জীবন-স্ফুলিঙ্গ আমাকে ছেড়ে চলে যাবার মুখে, আমার আশা যে গৌরবোজ্জ্বল পথের সূচনা তোমরা করেছ সে পথেই তোমরা হাঁটবে।”
এ একধরনের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক, ছাত্রদের তরফে ছাত্র আন্দোলন ব্যতিরেকেই। আবার ভিন্ন ধরনের আখ্যান পাই সরলা দেবী চৌধুরানীর লেখায়। ১৯৪৪-৪৫ সালে প্রকাশিত সরলাদেবী তাঁর আত্মজীবনী “জীবনের ঝরাপাতা”-য় লিখছেন – “রাজনীতি এমন একটা ক্ষেত্র, যেখানে কোন পুরুষ কোন মেয়ের জন্য ‘seat’ ছাড়তে পরাঙ্মুখ, সবাই ‘আপ-কা-ওয়াস্তে’ – তাই অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি থেকে আরম্ভ করে বেঙ্গল কৌন্সিল-এসেম্ব্লি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য গুটিকত আলাদা ‘সেয়াত’ নির্ধারিত করা হয়েছে … কিন্তু মেয়েরা যদি পুরুষ দেবতাদের বলে বসেন – “তোমার সিংহাসনটা আমায় ছেড়ে দাও না ভাই” – তাহলেই বিপদ, তাহলেই পুরুষের পৌরুষ বেরিয়ে পড়ে চোখ রাঙা করে বলে “কভী নেই”।” (দে’জ পাবলিশিং, ২০১৬, পৃঃ ১৪৬)
সরলাদেবীর লেখার প্রায় ৮০ বছর পরেও ‘আধুনিক’ ভারত রাষ্ট্রে এ প্রশ্নের সমাধান হলনা। আমরা আমরা লিঙ্গ বৈষম্যের সমাধান খুঁজতে নিজেদের মনকে পরিচ্ছন্ন করতে পারিনি। বরঞ্চ বলা যায়, আমরা এ প্রশ্নে আমাদের বিবেককে বিবশ করে রেখেছি। হয়তো বা এতেই আমাদের আনন্দ, আমাদের সিদ্ধি। আমরা বর্তমান সময়েও কী এ পরিস্থিতির কোন মৌলিক পরিবর্তন আদৌ দেখতে পাচ্ছি? সরাসরি উত্তর হচ্ছে, না।
সরলাদেবী আরও তীক্ষ্ণ ভাষায় বলছেন – “মনুর সময় হইতে আরম্ভ করিয়া অদ্যাবধি যাহা কিছু অধিকার নারী পাইয়াছেন, তাহা কেবল পুরুষদের আরাম ও সুবিধাকল্পে, নারীর দিক ভাবিয়া নহে। ছবিটা যদি সিংহের আঁকা হইত, সিংহ যেমন আর এক রকম করিয়া আঁকিত, তেমনই ধর্ম্মশাস্ত্র-রচনা নারীর হাতে পড়িলে শ্লোক কয়টা পুরুষকে উল্টা করিয়া পড়িতে হইত।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৭) আমরা ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি উপাদান খুঁজে পেলাম – জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাঝে প্রকট লিঙ্গবৈষম্য।
প্রকৃত অর্থে প্রথম ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার প্রথম আধুনিক মেডিসিন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল কলেজে। এখানে ৩ ধরনের ক্লাস ছিল – (১) প্রথম সারির ছাত্রদের জন্য “ইংলিশ ক্লাস”, (২) “বেঙ্গলি ক্লাস”, এবং (৩) “মিলিটারি/হিন্দুস্তানি ক্লাস”, প্রধানত যুদ্ধক্ষেত্রে ডাক্তারদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্যবহারের জন্য উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের মুসলিম ছাত্র প্রধান।
বেঙ্গলি ক্লাসের ১৩৬ জন ছাত্র ডিসেম্বর মাসে “deserted the College in a body.” এই রিপোর্টে এর কারণ বলা নেই। খুব সম্ভবত ১৮৫১-৫২ সালের মতো ছাত্রদের সাথে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ, অপমানজনক কথাবার্তা এবং বর্ণবৈষম্যমূলক আক্রমণ এরকম ঘটনা ঘটিয়ে থাকবে। (দ্রষ্টব্য, জয়ন্ত ভট্টাচার্য, মেডিক্যাল কলেজের ইতিহাস (১৮২২-৬০)ঃ গর্ভাবস্থা, বিকাশ ও বৃদ্ধি, ১ম ও ২য় খণ্ড)
১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের সময় মেডিক্যাল কলেজের প্রাইমারি/ইংলিশ ক্লাস থেকে পাস করে বেরনো সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল। মেডিক্যাল কলেজে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদীয়মান আধুনিক রাষ্ট্রের উপযোগী যে সুশীল, অনুগত এবং বাধ্য নাগরিক তৈরির প্রোজেক্ট ইংরেজরা নিয়েছিল তা প্রায় সম্পূর্ণ সফল হয়। সম্ভবত এই ছাত্র অসন্তোষ তথা বিদ্রোহের কারণে ১৮৬২-৬৩-র রিপোর্টের শুরুতেই আনুগত্য সম্বন্ধে বেশি কথা খরচ করা হয়েছিল। এবং জোর দিয়ে, খানিকটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে জানানো হয়েছে, এ দেশের পরিবার ছাত্রদের শৃঙ্খলাপরায়ন করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কি পরিমাণে অদক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজের একটি বার্ষিক রিপোর্টে “Conduct of the Students of Hindustani Class” অংশে জানানো হয় যে, এরকম “বিপজ্জনক” ঘটনার প্রেক্ষিতে কাউন্সিল অফ এডুকেশন হস্তক্ষেপ করে এবং তদন্তের পরে ৬ জন স্টাইপেন্ডিয়ারি ছাত্র এবং ৪ জন ফ্রি ছাত্র “were dismissed from the school.”
এ ঘটনা বাধ্য, অনুগত, সুশীল নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে এমন অশনি সংকেত বহন করেছিল যে লন্ডন থেকে প্রকাশিত The Medical Times and Gazette (New Series, vol. 5, July 3 to December 25, 1852)-এও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এর আগেও আমরা ছাত্রদের তরফে উপনিবেশিক সিস্টেমের subversion করার ঘটনা দেখেছি। এটাই সমাজের আভ্যন্তরীন গতিময়তা, জনসমাজের ধারা।
এরকম ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগর যুক্ত হয়ে পড়েন মেডিক্যাল কলেজের সাথে – পরোক্ষে, আবার প্রত্যক্ষও বলা যায়। সমধর্মী আরেকটি ঘটনায় ছাত্রদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেডিক্যাল কলজের বাংলা বিভাগের ছাত্র বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল বাংলা বিভাগের একটি ছাত্রকে চোর সন্দেহে পুলিসের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বাংলা বিভাগের প্রায় সব ছাত্রকেই গালমন্দ করেছিলেন। বললেন – ইতর, ছোটলোক, চোর, বদমায়েশ। এতে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে ছাত্ররা। অনেকেই একসঙ্গে কলেজ ছেড়ে দেয়। এরপরে দল বেঁধে কয়েকজন এল বিদ্যাসাগরের কাছে। বিদ্যাসগর প্রথমে ওদের কথা শুনতে চাননি। কিন্তু বিজয়কৃষ্ণ যখন জাত্যাভিমানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন তখন বিদ্যাসাগর সক্রিয় হয়ে ছোটলাটের কাছে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে চিঠি লিখলেন। যারা জাত্যাভিমানে কলেজ ছেড়েছিল তাদের অনেকেরই সংসার চলত বৃত্তির টাকায়। ছাত্রদের বৃত্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের অভুক্ত থাকার অবস্থা। তিন-চার মাস ওদের প্রায় সমস্ত খরচ জুগিয়েছেন বিদ্যাসাগর। লাটসাহেবকে বিদ্যাসাগরের লেখা চিঠির ভিত্তিতে তদন্ত হল। প্রমাণিত হল প্রিন্সিপালের দোষ। প্রিন্সিপালকে ত্রুটি স্বীকার করতে হল। (ইন্দ্র মিত্র, করুণাসাগর বিদ্যাসগর, আনন্দ, ২০১৪, পৃঃ ৪৪-৪৫)
এগুলো আধুনিক ছাত্র আন্দোলনের পূর্বসুরি। এ পথেই ছাত্র আন্দোলন এগিয়ে চলে।