নাম, বয়স জানার পর জিজ্ঞাসা করলাম আমার খবর কী করে পেলি? জানালো, ফেসবুকে। আমার নতুন পেশেন্টরা অনেকেই আমার ফেসবুকতুতো বন্ধু। কথায় কথায় জানাল, আমার এক-দু লাইনের পোস্ট ওর খুব ভাল লাগে। আমি মানুষটা নাকি বেশ রসিক। কী করে বলি, সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ চেনা যায় না। এখানে আমরা সবাই নেতা। ভাবি এক, বলি আরেক। অভিনেতাও বলা যায়। যা লিখি সব সময় যে তা মনের কথা হয়, তেমন নয়। অনেকটাই অন্যের মন পাওয়ার জন্য লেখা। আর আমার সিরিয়াস ইমেজটা নষ্ট হল, এতে খানিকটা মনঃক্ষুণ্ণই হলাম। ডাক্তার হলে কমল মিত্তিরের মতো হতে হয়, জহর রায় হলে রুগী আর আসবে না। যদিও জহর রায়ই আমার বেশি প্রিয়। যে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বাজারে যেতে পারবে, ঝাঁটা দিয়ে কলতলা পরিষ্কার করতে পারবে। গাউন পরে চুরুট খাওয়া আমার কম্ম নয়। ইমেজ বা ব্র্যান্ড আমাদের মতো সাধারণ ডাক্তারদের মানায় না- লোক যাদের শহরের এক বা দুই নম্বর মনে করে তাঁদের জন্য ঠিক আছে। আসলে ইমেজ বস্তুটা বেশ গণ্ডগোলের। আপনি চাইলেই মাছওয়ালা, সবজিওয়ালার সাথে দরাদরি করতে পারবেন না, ঝগড়া না করেই চাঁদা দিতে হবে, সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনতে দুবার ভাববেন, পছন্দ না হলেও লোকের সাথে হে হে করতে হবে, না হলেই ইমেজ নষ্ট। আমি হলাম গিয়ে ফাউ-এর ফুচকা খাওয়া লোক। শালপাতা ফেলে, হাত ধুয়ে, ঝাল লাগা জিভটাকে দিয়ে শু শু আওয়াজ করতে করতে আবার একটা ফাউ-এর ফুচকা চাই।
যাই হোক পেশেন্ট দেখা শেষ করে একটা ওষুধ লিখে দিলাম। কারণ দুটো ওষুধ লেখার কোনও দরকার ছিল না। ছেলেটা প্রেসক্রিপশন দেখে বলে, শুধু একটা ওষুধ! বললাম, তুই যে বললি আমার ওয়ানলাইনার তোর ভাল লাগে। এটা তোর জন্য লেখা ওয়ানলাইনার। সে বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। নিজেকে নিয়ে হাসা আর অন্যকে হাসানো আসলে নিজের ভালো থাকা আর অন্যকে ভালো রাখার মহৌষধ।
আর হ্যাঁ, এই ফাঁকে বলে রাখি, এবারের কালীপুজোয় বাজি না পোড়ানোই ভাল। বাঙালি অবশ্য পুড়তে আর পোড়াতে ভালইবাসে। যে ছেলের প্রেমে পড়ে মন পোড়ায়, বিয়ের ফুল শুকানোর আগেই তাঁকে শুনতে হয়, তোমাকে বিয়ে করে আমার কপাল পুড়লো। তাহলে কী পোড়াবেন ভাবছেন- কেন কবি তো বলেই গেছেন, ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’…
পছন্দ সই